সৌমেন সুর: রবীন্দ্রনাথ ক্ষণজন্মা পুরুষ। এমন প্রতিভাবান পৃথিবীতে খুব কম দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করে না, এমন মানুষ বিরল। তাই এই মানুষ যদি রোগে ভোগে, তাহলে কার না কষ্ট হয় বলুন। তিনি নিজেই একজন প্যারালাল ডাক্তারের মতো ছিলেন। হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক ওষুধকে তিনি বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করতেন। ১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি তাঁর মূত্রাশয়ে সমস্যা শুরু হয়। প্রস্রাবে জ্বালা, প্রস্রাব কমে আসার মতো উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ দু'জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়।
একজন ডাক্তার নীলরতন সরকার, অপরজন বিধানচন্দ্র রায়। সেই সময় সিটি স্ক্যান, ইউএসজি-র মতো আধুনিক রোগ নির্ণয় পরীক্ষা আবিষ্কার হয়নি। কিছুটা অনুমানের উপর ভিত্তি করে কবিগুরু চিকিৎসা শুরু করেন এই দুই নামজাদা চিকিৎসক। ডাক্তার নীলরতন সরকার গুরুদেবকে দেখে বলেন, এই রোগীর অপারেশন করা ঠিক হবে না। অপারেশন না করলে গুরুদেব অনেকদিন বাঁচতে পারেন। কিন্তু বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন নাছোড়বান্দা তিনি আবার অপারেশনের পক্ষে। ডাক্তার সরকার রাগে, ক্ষভে এক বুক অভিমান নিয়ে চলে যান ঠাকুরবাড়ি থেকে।
গুরুদেবের প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়ায় কবিগুরুর মূত্রাশয়ে মূত্র থেকে যাচ্ছে। যার ফলে ইউরোমিয়া দেখা দিচ্ছে। অতএব অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিন জন ডাক্তার। রবীন্দ্রনাথের কোনও মানা শুনলেন না। বাড়ির সদস্যরাও অপারেশনে রাজি। অতঃপর শুরু হল ক্রিয়াকলাপ। অপারেশন টেবিল থেকে অপারেশনের পর ওকে খাটে শোয়ানো হল। এরপর তিন দিন যাওয়ার পর এল অভিশপ্ত ৭ অগাস্ট। কবি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকে গমন করলেন। দেহ অদৃশ্য হল বটে কিন্তু আত্মা পঞ্চভূতে লীন হয়ে গেল। বাংলার মানুষ আজও কবিকে বুকে আঁকড়ে রয়েছেন। সঙ্গে নিয়ে আছে বিশ্ব কবির অজস্র সৃষ্টিধর্মী কাজকে।