
মুন্নি চৌধুরী: চাঁদের নিচে শুক্র, আকাশে এমন চিত্র দেখে অনেকেই গান শুরু করেছেন, 'চাঁদ কেন আসে না আমার ঘরে।' রমজানের প্রথম সন্ধ্যায় বিরল সমাবেশ এক ফালি চাঁদ (Moon) ও শুকতারা অর্থাৎ শুক্র গ্রহের (Venus)। এই দুর্দান্ত দৃশ্য ধরা দিল শহরের পশ্চিম আকাশে।
আকাশে যেন সোনালি-রুপোলির রঙের খেলা চলছিল। এই মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। অফিসে থেকে বাড়ি ফেরত সহ নাগরিকরাও একটু দাঁড়ালেন এবং এই মহাজাগতিক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করলেন। আবার কেউ দৌড়ে চলে গেলেন বাড়ির বা অফিসের ছাদে। খালি চোখে দেখা গেল এই অবিস্ময়কর মহামিলন। ছবিতে ছেয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতা। কেউ কেউ আবার ব্যাঙ্গ করে বলছেন, ফেসবুক নয় যেন বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম থেকে ঘুরে এলাম।
সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে জাঁদরেল এবং উজ্জ্বল গ্রহ শুক্র ও পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদকে এক লাইনে দেখতে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যদিও অসম্ভব বলা যায় না। এই সংযোগ হতে বহু বছর লেগে যায়। কখনও ৪০০ বছর। বা কখনও তারও বেশি। যখন সেই সংযোগ ঘটে সেই সময়টাকেই বিরলতম মুহূর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে করতে ক্রমশ পূর্বদিকে সরে যায়৷ এর ফলে আড়াল হয়ে যায় শুক্র। চাঁদের এই অন্য গ্রহ বা মহাজগতিক বস্তু ঢেকে দেওয়াকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, Lunar Occultation ৷
বৃহস্পতিবার কুন্তল (Kuntal) ঘোষকেও আদালতে তোলা হয়, আদালত (court) থেকে বেড়িয়ে বিস্ফোরক কুন্তল। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা যে ইমেজটা আমার এনেছেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইডি (Ed) চার্জশিটে আমার কোনও সম্পত্তির হদিশ নেই, আমার সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মানিক ভট্টাচার্যের কোনও সম্পর্ক ছিল না।'
একই সঙ্গে কুন্তল বলেন, 'আমার গ্রেফতারির কারণ একটাই, আমি রাজনৈতিক বিদ্বেষের শিকার। আমি কেমন মানুষ সেটা সামাজিক মাধ্যম থেকে জানতে পারবেন। আপনাদের সামনে গীতায় হাত রেখে বলতে পারি যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক ছিল না।' এছাড়া কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়ালকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন কুন্তল। মৌসুমীকে তাপস মণ্ডলের এজেন্ট বলে দাবি করেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা। কুন্তল বলেন, 'মৌসুমী তাপসের এজেন্ট ছিল বলে জানতাম। প্রচুর টাকা তুলেছে, অনেক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।' যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মৌসুমীর দাবি, 'সব মিথ্যে কথা বলছে, কুন্তল যা খুশি তাই বলছে, আমি কুন্তলকে চিনতামও না, তৃণমূলের সবাই চোর হতে পারে, কিন্তু মৌসুমী কয়াল না।'
বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বেড়িয়ে তিনি আরও জানান, 'আমার বিএড কলেজ বিক্রি করে ৭ কোটি টাকা নগদ দিয়েছি গোপাল দলপতিকে। গোপাল ৫ কোটি নগদ নিয়ে গিয়েছিল তাপসের কাছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মন্তব্য করেন তিনি যে, 'আমার ফ্যামিলি থেকে বিভিন্ন রকম প্রবলেম এসেছে। আমি আমার ছেলের স্কুলের ফিস পর্যন্ত দিতে পারছি না।'
বৃহস্পতিবার আলিপুর সিবিআই (CBI) আদালতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chaterjee) পেশ করা হয়েছে। প্রথম পক্ষের সওয়াল জবাবের পর, পার্থ বিচারককে বলেন, 'আপনি আগের দিন বলেছিলেন ৫ মিনিট সময় দেবেন।' এরপর বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিচারক কথা বলার অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়েই আদালতে পার্থ বলেন, '৮ মাস অন্ধকারে আছি। বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আমার বিশ্বাস যাই ঘটুক না কেন সত্য একদিন প্রকাশিত হবে। কিন্তু সেটা কতদিন? আমি মন্ত্রী তাই আমার অপরাধ? স্যার প্রাইমাফেসি মানে কি?' বিচারককে প্রশ্ন করেন পার্থ।
তিনি বিচারকে আরও বলেন, ' যা প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে। আমার ৭০ বছর বয়স। আমার বিরুদ্ধে থানায় কোনো ডাইরি নেই। বিরোধী নেতা থাকাকালীন আমার বিরুদ্ধে শাসককুল কিছু বলতে পারেনি। আমি কোথায় পালিয়ে যাবো স্যার? আমার মামা সাহিত্যিক। বংশপরম্পরা আছে। আমি আমার জীবদশায় এই বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা জানিনা।' এরপর বিচারক বলেন, 'প্রাইমাফেসি মানে আপাত গ্রাহ্য।'
এরপরে পার্থ বলেন, 'আপাত গ্রাহ্য ভাবে কতদিন চলবে? আমার আপনার উপর আস্থা আছে। আমি অন্ধকারে বসে আছি। আমি নিয়োগকর্তা নই। বোর্ড দ্বারা পরিচালিত সবাই। এটাই আমার বিনীত নিবেদন।' পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বেরিয়ে, সাংবাদিকদের বলেন, 'যাঁরা নিজেরা কালিমালিপ্ত, তাঁরা আমায় কী কালিমালিপ্ত করবে? আমি দলের সঙ্গে আছি আছি।'
মনি ভট্টাচার্য: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না, কুণাল (Kunal ghosh) ঘোষের টুইটে যাদের নাম, আদালতে ঢোকার সময়ে পার্থর (Partha chattopadhyay) মুখেও শোনা গেল তাদের নাম। বিতর্কের শুরু বৃহস্পতিবার। আলিপুর বিশেষ আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পেশ করে পুলিস (Central agency)। আদালতে ঢোকার মুখে পার্থ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'এখন দিলীপ বাবু, সুজন বাবু, অধীরবাবুরা বড় বড় কথা বলছেন, তারা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তারা কী করেছেন? তারা ২০০৯-২০১০-এ সিএজি রিপোর্ট পড়ুন, সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছে, যেহেতু আমি তাদেরকে বলেছি আমি সাহায্য করতে পারবো না, আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি কোনও কাজ বেআইনি করতে পারব না।'
এই নামগুলি উল্লেখ করে একই বিষয়ে পার্থ বাবুর বক্তব্যর, মিনিট ১৮ আগে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক একটি টুইট করেন, সেখানে তিনি বলেন, 'দিলীপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য আরও কয়েকজন চাকরির সুপারিশ করেছিলেন কি? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন কি? কুণালবাবু বৃহস্পতিবার তার টুইটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের খোঁচা দিয়ে বলেন, 'তদন্ত হোক, কেন্দ্রীয় এজেন্সি একমুখী কাজ না করে নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।' যারপরেই কিন্তু শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিতর্ক ঠিক কোন জায়গায় ? বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ৪২ মিনিটে কুণালের টুইট। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় সাংবাদিকদের পার্থ ওই নামগুলোই বলেন, যেগুলো তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক টুইটে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনা কি নিছকই কাকতালীয়? নাকি সমাপতন। প্রশ্ন উঠছে, কুণালবাবুর সঙ্গে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোনও যোগাযোগ আছে? পার্থবাবু কি কুণাল ঘোষকে আগাম কিছু বলেছিলেন, যার ভিত্তিতে এই টুইট করেন তিনি? যদিও তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, পার্থর সঙ্গে কুণালের সম্পর্ক একেবারেই সুমিষ্ট নয়। যদিও এই বিতর্কে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা।
এ বিষয়ে বাম নেতা, সুজন চক্রবর্তী সিএন-কে বলেন, 'যারা বলছে তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে উনি তো বিরোধীদের লোক ছিলেন, সেই সময় পার্থ কোথায় ছিলেন? এগুলো মাথা খারাপের লক্ষণ।'
একই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'পার্থ যে সময়ের (২০০৯-২০১০) কথা বলছে সেই সময়ে আমি রাজনীতিতেই আসিনি, ওর অভিযোগ প্রমাণ হলে পার্থর বদলে আমি জেলে যাবো ।' যদিও এ বিষয়ে কুণাল ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কেউ দুষলেন কুন্তলকে, কেউ সুজন, শুভেন্দুকে। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে (Education Scam) গ্রেফতার হওয়া পার্থ, তাপস-সহ আরও ৭ অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আলিপুর বিশেষ সিবিআই কোর্টে (CBI) তুলল কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদালতে তোলার সময় তাপসের গলায় শোনা গেল অন্য সুর। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'ম্যাজিশিয়ান কুন্তল সব জানে।' তিনি যে কুন্তলকে টার্গেট করলেন সেটা স্পষ্ট। এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। কুন্তল আপাতত জেল হেফাজতেই আছেন।
ওদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কোর্টে আনার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে চলতে থাকে 'চোর চোর স্লোগান', যদিও এ ঘটনা নতুন নয়। এর পূর্বেও পার্থকে উদ্দেশ্য করে চোর চোর স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিককে বলেন, 'এখন দিলীপ বাবু, সুজন বাবু, বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন? তাঁরা ২০০৯-২০১০-এ সিএজি রিপোর্ট পড়ুন, সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছেন, যেহেতু আমি তাঁদেরকে বলেছি আমি সাহায্য করতে পারবো না, আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি কোনও কাজ বেআইনি করতে পারবো না।'
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীকেও টার্গেট করেছেন তিনি। তিনি বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারীর ২০১১-২০১২ সালটা দেখুন না, ডিপিএসসি-টা দেখুন না, কী করেছিল তাঁরা।' প্রসঙ্গত, গত ১৬-ই মার্চ, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৩ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হলেও ১৬ তারিখ বিভিন্ন কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনের শুনানি হয়নি। তাই আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করে ২৩ মার্চ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনকে আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (Scam) তদন্ত এগিয়েছে। জলও গড়িয়েছে অনেক দূর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। গ্রেফতার হয়েছেন তৎকালীন বেশ কিছু সচিবও। সেই সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু, দালাল কুন্তল, অয়ন শীল সহ প্রমুখ ব্যক্তিগণ। অপরাধের তল পেতে ইডি এবার গ্রেফতার করেছে অয়ন শীল নামক এক প্রোমোটার ও সরকারি পঞ্চায়েত সচিবকে। যার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বহু নথি, সম্পত্তির কাগজ, ওএমআর শিট সহ বিভিন্ন নথি। যা ঘেটে ইডির কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু শিক্ষা দুর্নীতি নয়, দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের বহু দফতরে। নিয়োগ হয়েছে দেদারে, সেসঙ্গেই বেমালুম টাকা তুলেছেন এই অভিযুক্তরা। এখন তবে বিতর্কের কেন্দ্র কী শুধুই নিয়োগ?
শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতায় গ্রেফতার হয়েছেন এ রাজ্যের শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী সহ তৃণমূল নেতারা। কমবেশি তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগ রয়েছে এক রহস্যময়ীর নারীর। প্রত্যেকের বাড়ি, অফিস ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় নথি। তা খতিয়ে দেখে ইডির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকের সঙ্গেই রহস্যময়ীদের গভীর যোগযোগ আছে। লেনদেন হতো মোটা অঙ্কের টাকা। কেউ পেতেন বিলাসবহুল গাড়ি, আবার কেউ পেতেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর বান্ধবীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৫০ কোটি নগদ টাকা সহ মোটা অঙ্কের গহনা, সম্পত্তি ও জমিজমার নথি। যার কিছুটা পার্থ, কিছুটা পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার নামে।
ঠিক একইভাবে গ্রেফতারির পর অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে নাম পাওয়া গিয়েছে শ্বেতা চক্রবর্তী নামের এক নারীর। কে এই নারী? কী পরিচয় তাঁর? কেন তাঁর নাম উঠছে? কী করে তাঁর সঙ্গে অয়নের যোগাযোগ? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যম। শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। শিরোনামে ওঠার পর অবশ্য ফাঁস হয় আরও তথ্য।
জানা গিয়েছে, কামারহাটি পুরসভার সামনে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে থাকেন অয়ন এবং শ্বেতা। একজন বন্ধু-বান্ধবী এক ফ্ল্যাটে থাকলে সমস্যা কোথায়? খোঁজ করে ওই আবাসনের এক কর্তার মারফত জানা গিয়েছে, ওই আবাসনে মামা-ভাগ্নি পরিচয়ে থাকতেন শ্বেতা ও অয়ন। যার পরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলে সংবাদমাধ্যম। সে সঙ্গে ইডি জানিয়েছে অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে শ্বেতার ব্যাঙ্কে লেনদেনের কথা, সব মিলিয়ে জটিল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। যদিও এ সমস্ত ঘটনার পরিপেক্ষিতে বুধবার শ্বেতার স্পষ্ট জবাব, 'আমি মহিলা, আমাকে নিয়ে রঙ চড়িয়ে কথা বললে মানুষ গিলবে, টিআরপি বাড়বে, সে জন্যই মিডিয়া এমন প্রচার করছে।'
অয়নের গ্রেফতারির পর কার্যত নিখোঁজ ছিল শ্বেতা। তাঁর বাড়ি গিয়েও মেলেনি দেখা। শ্বেতার পরিবারের কেউ কথা বলতে চাননি। বুধবার সিএনকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। শ্বেতা চক্রবর্তী নৈহাটী পাল পাড়ার বাসিন্দা। ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে হুগলি জেলার একটি পঞ্চায়েতে সহকারীর চাকরি পান। সেখান থেকে ২০১৬ সালে হগুলির ডুমুরদহ ১ নং পঞ্চায়েতে পোস্টিং হন। সেখানেই অয়ন শীলের সঙ্গে আলাপ বলে জানান তিনি। আমাদের প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ২০১৮ সালে সোমরা ১ নং পঞ্চায়েতে পোস্টিং হলেও সেখানে যোগ দেননি শ্বেতা। বুধবার আমাদের সাংবাদিককে শ্বেতা জানান, '২০১৯ সালে পুরসভায় চাকরিতে যোগ দেন।'
অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে লেনদেনের প্রসঙ্গে শ্বেতাকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, 'অয়ন শীল প্রোমোটার ছিল। অয়নের থেকে ফ্ল্যাট কিনি। পরে সেই ফ্ল্যাট নেব না বলে ঠিক করি। সেই টাকাই অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে আমার ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছিলেন অয়ন।' তিনি জানান, 'আমাদের সঙ্গে যা লেনদেন ও চুক্তি ছিল সবই আইনি পদ্ধতি মেনে। অয়নের ব্যাঙ্ক থেকে আরও ব্যাঙ্কে লেনদেন হয়েছিল, তাঁদেরকে কেন ধরছেন না।'
বুধবার সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, 'আমি মহিলা, আমাকে নিয়ে রঙ চড়িয়ে কথা বললে মানুষ গিলবে, টিআরপি বাড়বে। সে জন্যই মিডিয়া এমন প্রচার করছে। আমার মান-সন্মান, ব্যক্তিগত জীবন সবই নষ্ট করছে।' এছাড়া তিনি বলেন, 'কাজের বাইরে অয়নের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ ছিল না। ইডি যদি ডাকে যাবেন? ওই প্রশ্নের উত্তরে শ্বেতা বলেন, 'অবশ্যই যাবো, এখনও ডাকে নি, ডাকলে অবশ্যই যাবো। মামা - ভাগ্নি পরিচয়ে থাকা নিয়ে উনি বুধবার কিছু বলেননি।'
নিয়োগ দুর্নীতিতে (Education Scam) ক্রমশ ফাঁস হচ্ছে হাড়হিম করা তথ্য। পার্থ (Partha), অর্পিতা, মানিক, শান্তনু, অয়ন, কুন্তলের বাড়ি, অফিস তল্লাশি করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাল গোটানোর চেষ্টা করছে ইডি (Ed)। ইডির দেওয়া রিমান্ড লেটার অনুযায়ী, বেঙ্গল প্রাইমারি বোর্ড অফ এডুকেশনের ছাত্রদের থেকে অফলাইন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য মানিক ভট্টাচার্য ২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন (Manik)।
ইডির প্রকাশ করা সেই তালিকা অনুযায়ী, ২০১৮-২০২০ বর্ষের জন্য ৩৫৩ ডিএলএড কলেজ থেকে ৯৫৪৯ প্রার্থীর থেকে মানিক তুলেছিলেন ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। ২০১৯-২০২১ বর্ষের জন্য ৩২২ কলেজ থেকে ১২,৮২৪ প্রার্থীর থেকে মানিক তুলেছিলেন ৬ কোটি ৪১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০২০-২০২২ বর্ষে ৩৬০ কলেজ থেকে ১৯০৯১ প্রার্থীর থেকে মানিক তুলেছিলেন- ৯ কোটি ৫৪ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল অর্থাৎ ৪ বছরের মধ্যে মানিক তোলেন ২০ কোটি ৭৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এমনকি এসবের পর ইডি কর্তারা জানিয়েছেন, এই বিপুল পরিমাণের অর্থ সংগ্রহের জন্য মানিক ভট্টাচার্য সেক্টর ফাইভের মহিষবাথানে অবস্থিত অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে লোক পাঠাতেন।
এছাড়া ইডি জানিয়েছে, কুন্তল ঘোষকে জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা হল, অয়ন শীল অনেক প্রার্থীর অবৈধভাবে সার্টিফিকেট মারফত শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যবস্থা করেছিলেন। ইডির দাবি, ২০১৪ টেট ও ২০১২ টেট থেকে অয়ন শীল মানিক ভট্টাচার্যের সম্মতিতে টেটের অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলেছে।
কুন্তলই (Kuntal Ghosh) ব্রিজ অর্থাৎ মিডিলম্যান, বাংলায় যাকে আমরা দালাল বলে থাকি। এ দাবি আমাদের নয়, এমন দাবি করছে ইডি (Ed)। মঙ্গলবার বিচার ভবনের বিশেষ আদালতে যে চার্জশিট ইডি পেশ করেছে, সেখানেই সদ্য তৃণমূল (Tmc) থেকে বহিস্কৃত নেতা কুন্তলকে মূল দালাল বলে দাবি করেছে ইডি। মঙ্গলবার ১০৪ পাতার চার্জশিট দেয় ইডি, সঙ্গে ৫০০ পাতার নথিও দেয়। কুন্তলকে গ্রেফতারির পর ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আর্থিক লেনদেনে সংক্রান্ত মামলায়, তদন্তে অসহযোগিতার কারণে কুন্তল ঘোষ চলতি বছর ২১ শে জানুয়ারি ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তারপর নিয়োগ দুর্নীতিতে, ইডি সূত্রের খবর ২১শে মার্চ অর্থাৎ মঙ্গলবার ইডির বিশেষ আদালতে কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিল ইডি। যে চার্জশিটে কুন্তলকে, শান্তনু ঘনিষ্ঠ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইডি। ১৮ জনের সাক্ষী-সহ ওই চার্জশিটে উল্লেখ, যে ২ কোটি টাকার সম্পত্তি আছে কুন্তলের। কুন্তলের জমি-জমা সংক্রান্ত তথ্য, নগদ সম্পত্তি-সহ বেনামে থাকা সব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছে ইডি। এছাড়া ইডির তরফে খবর, চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে, কুন্তলের সঙ্গে পার্থ-মানিকের যোগসূত্র রয়েছে। গোটা নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তল মিডিলম্যান হিসেবে কাজ করতো। অর্থাৎ দালাল হিসেবে কাজ করত। কুন্তলের বস হিসেবে কাজ করতো শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
২ কোটি টাকার সম্পত্তির যে হদিশ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকা জমি সংক্রান্ত বলে জানিয়েছে ইডি। শুধু দালাল নয়, পাচারকারী হিসেবেও কাজ করত কুন্তল এমন দাবি করেছে ইডি। কুন্তলের ব্যাঙ্কের নথি ঘেটে জানা গেছে, কুন্তলের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটির বেশি টাকা ছিল। বনি সেনগুপ্ত ও সোমা চক্রবর্তী দুজনেই টাকা ফেরত দেওয়ার পর প্রায় ১ কোটি টাকা ওঠে, সেটা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে ইডির সূত্রে খবর। ইডি আরও জানিয়েছে, বাকি টাকা একটা অন্য অ্যাকাউন্ট মারফত সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কুন্তলের অ্যাকাউন্ট ঘেটে অনেক প্রভাবশালীর যোগ পেয়েছে বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি আধিকারিকরা।
১৮ দিন পর মঙ্গলবার কলকাতা (Kolkata police) লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার বামনঘাটা ব্রিজের নিচের খাল থেকে উদ্ধার ট্যাংরার যুবক ঝুন্নু রানার দেহ। নীল ড্রামে ভরা পচা-গলা অবস্থায় উদ্ধার হয় দেহটি। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১৫ নাগাদ দেহ উদ্ধার করে পুলিস। দেহ উদ্ধারের পর শনাক্তকরণের জন্য দেহটিকে নীলরতন সরকার (Nrs) মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। এরপর দেহটির ময়না তদন্ত হলে পুলিস মারফত জানা যায়, ঝুন্নুর মাথায় বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে, ভারী কোনো অস্ত্র দিয়ে তাকে বারবার আঘাত করা হয়েছে বলে খবর।
মার্চ মাসের ৩ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিল ট্যাংরার যুবক ঝুন্নু রানা, ঝুন্নুর পরিবারের তরফে তদন্ত করে জানতে পারে ঝুন্নুকে সিসিটিভি ফুটেজে শেষ মার্চ মাসের ৫ তারিখ তার নব্য বন্ধু তিলজলার গোলাম রব্বানীর সঙ্গে বাইকে দেখা গিয়েছে। এরপর পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে থানা ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। সেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিসের কাছে গোলামের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে ঝুন্নুর পরিবার। ঝুন্নুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গোলামের খোঁজ শুরু করে পুলিস। পরে ১৬ তারিখ দিল্লি থেকে গোলাম রব্বানী, তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, ভাই-সহ আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিস।
অভিযুক্তদের জেরা করে জানা যায়, গোলামের পরিবারই ঝুন্নুকে খুন করেছে। এরপর থেকে লাগাতারভাবে ঝুন্নুর দেহ খুঁজতে থাকে পুলিস। মঙ্গলবার বামনঘাটা ব্রিজের নিচের খাল থেকে উদ্ধার হয়েছে ট্যাংরার যুবক ঝুন্নু রানার দেহ।
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে (Fire) পুড়ে ছাই শোভাবাজারের একটি বিউটি পার্লার (Parlour)। হঠাত্ করেই পার্লারের ভিতর থেকে কালো ধোঁয়া দেখতে পায় এলাকাবাসীরা। আগুন লাগায় নিমেষেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। বুধবার সকালে শোভাবাজারের ৪১ শ্রী অরবিন্দ সরণিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। দমকলে খবর দেওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন-সহ দমকল এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। দমকলের দুটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালায়।
জানা গিয়েছে, বাড়ির একতলায় অবস্থিত এই পার্লারটি। মূলত পার্লারের ভিতরে থাকা এসির কারণেই কোনওভাবে আগুন লেগে যায়। যার ফলে এই আগুনের কারণেই কার্যত কালো ধোঁয়া নির্গত হতে থাকে। সূত্রের খবর, দুটি দমকলের ইঞ্জিন কাজ করায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
একই রাতে কোথাও দেড় কোটি টাকার গাঁজা পাচার (Smuggling) রুখলেন। আবার কোথাও পুরোনো ঘটনার অভিযুক্তদের জেরা করে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করলেন বিলাসবহুল গাড়ির সঙ্গে বিপুল টাকার নিষিদ্ধ মাদক (Drug)। কোথাও কলকাতা পুলিসের এসটিএফ, আবার কোথাও বিধাননগর কমিশনারেটের এসটিএফ।
পুলিস জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার বাইপাসের অজয়নগর মোড়ে অভিযানে যায় পুলিস। একটি এসইউভি গাড়ি থামিয়ে তার ভিতর থেকে ১২৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন কলকাতা পুলিসের এসটিএফ। মঙ্গলবার রাতেই, ওই গাড়ির চালক বরকত খান ওরফে ইমরানকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, ওড়িশা থেকে ওই গাঁজা পাচার করা হচ্ছিল দক্ষিণ শহরতলীতে। গাড়ির সিটের ভিতরে ওই মাদক ১০টি ব্যাগে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে জানায় পুলিস।
পাশাপাশি গত ১৬ই মার্চ বিধাননগরের নাওভাঙা নামক জায়গায় গোপন খবরের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে বেঙ্গল এস টি এফ-র হাতে ধরা পড়েছিল মেহতাব বিবি এবং মোমিন খান নামক দুই ড্রাগ ব্যবসায়ী। সঙ্গে মিলেছিল বহুমূল্যের নিষিদ্ধ মাদক হিরোইন। এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন, মঙ্গলবার গভীর রাতে বেঙ্গল এস টি এফ-র তদন্তকারী অফিসারদের কাছে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাতেই ওই এলাকায় আবার তল্লাশি চালিয়ে মেলে দুইটি বিলাসবহুল গাড়ির হদিশ। দুইটি গাড়িতেই পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ নিষিদ্ধ মাদক (হেরোইন )। হাফ কিলো ওজনের মাদকের একটি ব্যাগ ছাড়াও, তিরিশ হাজারের উপর ক্ষুদ্র পুরিয়া পাওয়া যায় গাড়িতে। যার মোট ওজন দেড় কিলোগ্রাম।
উল্লেখ্য, ড্রাগচেইন-এর একদম শেষে বিভিন্ন মাধ্যমে নেশাড়ুদের কাছে এই পুরিয়া-ই পৌঁছে যেত। উপরোক্ত দুই ধৃতকে নিয়ে বেঙ্গল এস টি এফ-র তদন্তকারী টিম আরও তল্লাশি চালাবে বলেই আপাতত খবর।
রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক থিম শিল্পীর। বাগুইআটিতে (Baguihati) দাদার বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিস। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইহাটি থানার জগৎপুর আদর্শপল্লিতে। পুলিস (Police) জানিয়েছে, মৃত ওই শিল্পীর নাম বন্দন রাহা। বাগুইআটি থানার পুলিস জানিয়েছে, শিল্পীকে গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঝুলন্ত দেহ (Hanging Body) উদ্ধারের পর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
পুলিস সূত্রে খবর, বাগুইআটি আদর্শপল্লিতে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন থিম শিল্পী বন্দন রাহার দাদা। কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় বন্দনবাবু দাদার বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ সেই বাড়িতে একাই ছিলেন শিল্পী বন্দন রাহা। দাদা সপরিবার বাইরে ছিলেন সেই সময়। পরে দাদা ফিরে এসে দেখেন ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। ভাইকে ডাকলেও ঘরের ভিতর থেকে কোনও উত্তর দিচ্ছিলেন না বন্দন বাবু। সেই সময় স্থানীয়দের ডেকে, ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখতে পান গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফ্যান থেকে ঝুলছেন শিল্পীর দেহ। ঘটনাস্থলে পুলিস এসে দেহটিকে উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিসের তরফে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
পুলিস সূত্রে খবর, মৃত বন্দন বাবুর কয়েকবছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান বিবাহ বিচ্ছেদের অবসাদ এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই ঘটনা ঘটাতে পারেন এই ব্যক্তি। তবে আদতে কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, সেই বিষয় তদন্ত করে দেখছে বাগুইআটি থানার পুলিস।
মামা-ভাগ্নি পরিচয়ে একই আবাসনে থাকতেন অয়ন-শ্বেতা (Ayan-Shweta)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক অবাক করা তথ্য খুঁজে পেয়েছে ইডি (ED Radar)। এক অয়নকে পাকড়াও করে বিতর্কে, টলিউড (Tollywood) পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর নাম। নিয়োগ দুর্নীতিতে (Education Scam) সম্প্রতি অয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালত ১৩ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। জানা গিয়েছে, কামারহাটি পুরসভা এলাকায় এক আবাসনে থাকতেন অয়ন-শ্বেতা। মামা-ভাগ্নি সম্পর্কে তাঁরা থাকতেন বলে দাবি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীর। তবে আগে একসঙ্গে থাকলেও বছর দুয়েক দু'জন একসঙ্গে থাকছিল না বলে জানান ফ্ল্যাটের এক আবাসিক।
অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সমস্ত নথি, ওএমআর শিট যাচাই করে ইডি জানতে পেরেছে উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিট, আসল উত্তরপত্র। পুরসভা এবং শিক্ষা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অয়ন শীলের বাড়ি থেকে শুধুমাত্র স্কুল নয়, একইসঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু পুরসভারও ওএমআর শিট মিলেছে। সেই সব ওএমআর শিট থেকে মিলেছে প্রভাবশালীদের সুপারিশ সংক্রান্ত তথ্য।
স্কুল সার্ভিসের গুরগাঁওয়ের সংস্থার মতো অয়নের সংস্থা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করত গোটা পদ্ধতি, তা জানতে চাইছেন ইডি কর্তারা। পাশাপাশি ইডির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অয়নের কালো টাকা খেটেছে টলিউডে। তৈরি হয়েছে একাধিক সিনেমা! অয়নের দুর্নীতির জাল কত দূর অবধি? তা জানতে ইডির নজরে শ্বেতা চক্রবর্তীও।
ইডির সূত্র মারফত খবর, কবাডি কবাডি ছবির প্রযোজনা করেছিলেন অয়ন শীল। অয়নের সংস্থার ব্যানারে ওই ছবির প্রযোজনা হয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, সেই ছবির পরিচালনা করেছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। অয়নের বাড়ি থেকে ওই ছবি প্রযোজনার নথি উদ্ধার। চুক্তিপত্র থেকে ছবির খরচের হিসেব মিলেছে তল্লাশিতে। ২০২১ সালে তৈরি হয় ওই ছবি।
অর্জুন চক্রবর্তী, সোহিনী সরকারের মতো নামজাদা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছিলেন ওই ছবিতে। অয়ন শীলের, প্রোডাকশন হাউজের, যে প্রথম সিনেমাটি কাবাডি কাবাডি, সেই সিনেমার ট্রেলার লঞ্চয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল শ্বেতা চক্রবর্তী।
ইডি সূত্রে খবর, শ্বেতা চক্রবর্তী এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, গত ১৮ তারিখ যখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটরেট আধিকারিকরা সল্টলেকের এফডি ব্লকে যায়, তার আগে থেকে অয়ন শীলকে সতর্ক করেন মেসেজ পাঠিয়েছিলেন শ্বেতা। ইডির দাবি, 'শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রমোটিং ব্যবসা মূল দায়ভার ছিল অয়ন শীলের কাঁধে। আর এই প্রোমোটিংয়ের যে প্রজেক্টগুলি হতো, সেই প্রজেক্টের প্ল্যান পাশ করতো কামারহাটি পৌরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার শ্বেতা চক্রবর্তী। এই শ্বেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে অয়ন শীলের স্ত্রী, কাকলি শীলের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল।'
এছাড়া ইডির চাঞ্চল্যকর তথ্য, অয়নের বাড়িতে মিলেছে ইম্পার অডিট সংক্রান্ত নথিও। অয়নের অফিসে মিলেছে ইম্পার ব্যালান্স শিটও। পাশাপাশি অয়ন শীলের ছেলে অভিষেক শীলের পেট্রোল পাম্পের হদিস মিললো। সেখানে বড় আর্থিক লেনদেন হয়েছে। যার পার্টনার ইমন গঙ্গোপাধ্যায়, কে এই ইমন গঙ্গোপাধ্যায়। কী যোগসূত্র রয়েছে খতিয়ে দেখছে ইডি।
অয়নের অফিসে উদ্ধার হয়েছিল বহু তথ্য, নথি, যা হাতড়ে এজেন্ট, পুরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র, রহস্যময়ী নারী, আরও কত কী। সেই নথি ঘেটে ইডির অধিকারিকরা জানতে পারেন অয়নের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া নথির ২০১২ সালের প্রাইমারির তালিকা ও ওএমআর শিট আছে। সেই মোতাবেক মঙ্গলবারই তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিবকে।
ইডি সূত্রে দাবি, তাঁকে ২০১২ সালের নিয়োগের তথ্য নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল যে অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্যের সমন্ধে আরও জানার জন্য তাঁকে নথি-সহ ডাকা হয়েছে। ইডির নির্দেশ মোতাবেক, মঙ্গলবার সমস্ত তথ্য সহ ইডির কলকাতা দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধিরা, কিন্তু এদিন প্রাথমিকের সচিব এলেন না। ইডি সূত্রে খবর, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে যে নথি পাঠানো হয়েছে সে সমস্ত খুঁটিয়ে দেখা হবে, এরপরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ২০১২ টেটের নথি উদ্ধার নিয়ে, সোমবার ফেসবুক পোস্ট করে বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তোলেন। তিনি মঙ্গলবারের ফেসবুক পোস্টে বলেন, '২০১২ টেট খাতা খুলছে, মনে হচ্ছে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীও বেশিদিন বাইরে থাকতে পারবে না। যারা চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল তাদের বিষ্ণুমাতাও উদ্ধার করতে পারবে না।'
শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়নের গ্রেফতারির পর ইডির (Ed) হাতে এলো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডির সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, অয়নের (Ayan) অফিসের নথি ঘেটে জানা গিয়েছে, কলকাতা (Kolkata) কর্পোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে ড্রাফট লেটার যেত অয়নের মারফত। এবার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সেই মেয়র কে ছিলেন? সিএন-এ আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল যে, অয়নের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এ রাজ্যের কম বেশি ৭০টি পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে।
পাশাপাশি জানানো হয়েছিল কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ও দমকল বিভাগে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। এবার অয়নের বাড়ি থেকে ইডির উদ্ধার করা ড্রাফটের ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠছে কলকাতার কোন মেয়রের কাছে ওই ড্রাফট পৌছতো? কেনই বা পৌছতো? সমস্ত নথি উদ্ধার করে এদিন ট্রাকে করে আদালতে হাজির হয় ইডি। সোমবারই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন অয়ন শীল। তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সোমবার অয়নের পক্ষের আইনজীবী ও ইডির পক্ষের আইনজীবীর জোর সওয়াল জবাবের পর বিচারক অয়নকে ১৩ দিনের ইডির হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
অয়নের বাড়ি থেকে মেয়রের উদ্দেশ্যে ড্রাফট উদ্ধারের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে কলকাতার প্রাক্তন ও বর্তমান মেয়রের দিকে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, যার কাছে ড্রাফট পৌছতো, সেই মেয়র কে ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় না ফিরহাদ হাকিম? অয়নের বাড়ি ও অফিস থেকে ৩২টি ব্যাঙ্কের নথি, অয়নের নিজের ব্যাঙ্ক নথি এবং তাঁর স্ত্রী কাকলি শীলের যৌথ অ্যাকাউন্ট ছাড়াও একটি প্রাইভেট লিমিটেড, একটি সার্ভিস স্টেশন সংস্থা ইডির আতস কাঁচের তলায়। সোমবার ইডি সূত্রে দাবি, এ রাজ্যের কম বেশি ৭০টি পুরসভায় ৫০০০ বেনিয়মে নিয়োগ হয়েছে। মজদুর ও টাইপিস্ট নিয়োগে ৪-৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হত। চাকরি সেই চাকরির রেটও উদ্ধার করেছে ইডির গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রেই খবর, নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পুরসভাগুলিতে।
দক্ষিণমুখী জেলার পুরসভাগুলিতে হয়েছে বেলাগাম দুর্নীতি। উত্তর দমদম, দমদম, দক্ষিণ দমদম, কামারহাটি, বরাহনগর, পানিহাটি, ডায়মন্ডহারবারসহ আরও পুরসভায় চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে দাবি ইডি কর্তাদের। আগে থেকেই এ রাজ্যের একাধিক নেতা, মন্ত্রী জেলে রয়েছেন বিভিন্ন দুর্নীতিতে। আবার অয়নের নথি ঘেটে বিস্ফোরক দাবি করেছে ইডি। ইডির দাবি নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের সবকটি দফতর গুলিতে। এবং নাম উঠেছে বহু চেয়ারম্যান সহ মন্ত্রী, মেয়রদের। অয়নের নথি ঘেটে, ইডি নিয়োগ দুর্নীতির আরও গভীরে যেতেই কার ডাক আগে আসবে সেটাই এখন দেখার?