প্রসূন গুপ্ত: বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক ঘন্টা হয়ে গিয়েছে। বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া তাদের দেশে চলে গিয়েছে। শোনা গেলো বিজয়ী দলের জন্য সেরকম কিছু হৈচৈ হলো না তাদের দেশে। আসলে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নতুন করে কি আর আনন্দ করবে? এতো কাপ যেটা একরকম নিয়মই হয়ে গিয়েছে। কাঁটাছেঁড়ার পালাও শেষ। এবারে প্রচার মাধমের কাছে আর এখনই খেলার কিছু নেই যদিও টি ২০ শুরু হচ্ছে ওই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই কিন্তু তাতে বিশ্বজয়ীদের খুব একটা কেউ নিয়ে , ভারতীয়দের তো প্রায় নেইই। কি হবে আর ওই ম্যাচ নিয়ে, ধারণা যেমন দর্শকদের স্বাভাবিক ভাবে মিডিয়ারও। কিন্তু এতো কাণ্ডের পর একটি ঘটনা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সারা জাগিয়েছে , কপিল দেব কিংবা ধোনিকে ফাইনালে মাঠে দেখা গেলো না কেন ?
জানা গেলো ১৯৮৩ বিশ্বকাপের অধিনায়ক তথা ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেবকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। কপিল নিজেই তা সোশ্যাল নেটে জানিয়েছেন। কিন্তু এমন ভুল হলো কেন ? জানা যাচ্ছে যা, কপিলকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিমন্ত্রণ জানানো হয় নি। কিন্তু এই দুঃসাহস হলো কি করে প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে। যতটুকু গুঞ্জনে জানা গেলো তা, সম্প্রতি যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের সাংসদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তুলে অবস্থান করেছিল আমাদের কুস্তির খেলোয়াড়রা, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন করেছিলেন কপিল দেব কাজেই গোঁসা তো হতেই পারে । অথবা আরও একটি বিষয় তো ছিলই। কপিল বরাবরই কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ। ইন্দিরা রাজীব নারসিমার সঙ্গে অতি সুসম্পর্ক ছিল। এতেই কি কোপ পড়লো আমন্ত্রণে ? অবিশ্যি ধোনি এলেন না কেন ? তাঁকেও কি আমন্ত্রণ জানানো হয় নি ? গুঞ্জনে, তিনি নাকি বিজেপির প্রচার করতে চান নি গত ঝাড়খন্ড নির্বাচনে, অন্যটি কপিলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি বলেই নাকি তিনি আসেন নি। রাজনীতিটি কি ভয়ঙ্কর ভাবেই ছিল বিশ্বকাপে ?
প্রসূন গুপ্ত: পুজো, দীপাবলি আর বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষ হলেই ভারতের ৫ রাজ্যের বিধানসভার ভোট (Election)। ছত্রিশগড় , মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরাম। এই ৫ রাজ্যের ভোটকে অনেকেই লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল হিসাবে দেখছে। এই ৫ রাজ্যে সরাসরি ক্ষমতায় বিজেপি আছে শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশে। কাজেই তাদের লক্ষ থাকবে বাকি রাজ্যগুলির মধ্যে অন্তত ৪টি রাজ্য দখল করা। প্রশ্ন হচ্ছে, কাজটি কতটা সোজা বা কঠিন?
১০ বছর প্রায় নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রের ক্ষমতায়। এবারেও তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনিই আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ। একটি বিষয় কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভাবাচ্ছে, তৃতীয়বারের জন্য পরপর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন একমাত্র জহরলাল নেহেরু এবং তখন কংগ্রেসের বিকল্প দল বলতে কিছু ছিল না। আজকের পরিস্থিতি কিন্তু একেবারেই আলাদা। কাজেই মোদী নিজেও চাইছেন এই ৫ রাজ্যের ফল যেন ভালো হয়। ইদানিং 'ইন্ডিয়া' নামক জোট হয়েছে এবং যতটুকু খবর তারা এই রাজ্যগুলিতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেবে কাজেই হিসাব করে চলতে চাইছে বিজেপি।
নানান সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে, যে প্রতিটি রাজ্যেই অনেকটাই চাপে বিজেপি। প্রথমত ছত্রিশগড়ের মানুষ বর্তমান কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলের কাজে খুবই সন্তুষ্ট। ৯০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস আশা করছে ৭৫ আসন। অন্যদিকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নেই। মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেস কমলনাথের নেতৃত্বে পোক্ত জায়গায় রয়েছে বলেই খবর। গতবারই কংগ্রেস এখানে জিতেছিল কিন্তু দল ভাঙিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে বিজেপি, ফলে এলাকার মানুষের একটা ক্ষোভ আছেই। এমনটিই দেখা গিয়েছিল সম্প্রতি কর্নাটকে, বিজেপি পর্যদস্তু হয়েছিল। রাজস্থানে প্রতি ৫ বছর বাদে বাদে নতুন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কংগ্রেস এবং বিজেপি ক্ষমতায় আসে। এতদিন ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস কাজেই এবারে হিসাব মতো বিজেপির আসার পালা কিন্তু এখানেও সংকট। মোদীর অপছন্দের নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, তাই পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দল তাঁকে নিয়ে ভাবছে না।
বসুন্ধরা শোনা যাচ্ছে তাঁর নিজের ঘনিষ্টদের নির্দল করে সিংহভাগ কেন্দ্রে প্রার্থী দিচ্ছে। এরা ভোট কাটুয়া। ফলে ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে লাভ কংগ্রেসের। এছাড়া অশোক গেহেলথ যথেষ্ট জনপ্রিয় তিনি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে পেরেছেন। মিজোরাম কোনও দিনও বিজেপির জমি ছিল না এবারেও হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে তেলেঙ্গানায় মূল লড়াই তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয়র সঙ্গে কংগ্রেসের। বিজেপি এখানে বড়োজোর কিছু আসন পেতে পারে। জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাবে বিজেপি ১৮ সাংসদদের ফের বিধানসভার প্রার্থী করছে বিভিন্ন রাজ্যে। কাজেই কঠিন সেমিফাইনালে, দেশের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি।
গত কয়েকমাস ধরেই সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছিল। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ছাড়ার ঘোষণা করল এডিএমকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এডিএমকে প্রধান ইকে পলানীস্বামীর নেতৃত্বে কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয় তাঁরা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে অবিজেপি সহযোগী দলগুলি মিলে তামিলনাড়ুর ৩৯টি কেন্দ্রেই লড়বে বলে জানিয়েছে এডিএমকে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাইয়ের আচরণে এডিএমকে অসন্তুষ্ট। তা জানিয়েছিলেন পলানীস্বামী ঘনিষ্ঠ নেতা ডি জয়কুমার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে এডিএমকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে আগেই ইঙ্গিত দেন তিনি।
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তথা দ্রাবিড় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আন্নাদুরাই সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন আন্নাদুরাই। তার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে এডিএমকে।
বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনেই অভিষেককে তলব করেছে ইডি। নিজেই টুইট করে এমনটা জানালেন তৃণমূল সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবিবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, যে কমিটির আমিও একজন সদস্য। কিন্তু ইডি ওইদিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে! এই মাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।’ ঘটনাচক্রে, যে দিন অভিষেককে ইডি তলব করেছে, তার ঠিক এক দিন আগেই বিদেশ সফরে রওনা হচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার রাতে করা নিজের এই পোস্টের সঙ্গে একটি হ্যাশট্যাগও জুড়ে দিয়েছেন অভিষেক। ‘ফিয়ার ইন ইন্ডিয়া’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অভিষেক আদতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই কটাক্ষ করেছেন, এমনটাই মত বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
কারণ, ‘৫৬ ইঞ্চির ছাতি’ শব্দ বন্ধটির সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামই জড়িয়ে রয়েছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহই বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছাতি ৫৬ ইঞ্চির।’
গত ৩১ অগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বিরোধী জোটের যে বৈঠক বসেছিল সেখানেই এই সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেখান তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে রাখা হয়েছিল অভিষেককে। সেই সময় জানানো হয়েছিল, পরবর্তী বৈঠকের দিন পরে ঘোষণা করা হবে। সেই মতো জানিয়ে দেওয়া হয় পরবর্তী বৈঠক হবে দিল্লিতে। উল্লেখ্য, যেদিন বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠকটি হবে রাজধানীতে, সেই সময় দুবাই ও স্পেন সফরের জন্য দেশের বাইরে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার। আগামী মঙ্গলবার তাঁর বিদেশ রওনা হওয়ার কথা। আর পরদিন জোটের বৈঠকে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে অংশ নেওয়ার কথা অভিষেকের। কিন্তু সেই দিনই অভিষেককে ইডির সামনে হাজিরার নোটিস ধরানো হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের বারো তারিখ বিদেশ সফরে যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিদেশ সফরের আগে দিল্লিতে গিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপতির নিমন্ত্রণে যোগ দিয়েছিলেন জি-২০ সামিটের জন্য ডাকা বিশেষ নৈশ ভোজে। সূত্রের খবর, তার আগে দিল্লিতে ইন্ডিয়ার মিনি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, দিল্লিতে মমতার সঙ্গে দেখা করেন দিল্লি ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী-সহ নীতীশ কুমার এবং এমকে স্ট্যালিন। সূত্রের দাবি, তাঁদের আলোচনায় মূলত আগামী পাঁচ রাজ্যের ভোটকেই ফোকাস করা হয়েছে। আগামী বুধবার ফের বৈঠকে বসবে ইন্ডিয়া জোট। ওই বৈঠকে যোগ দেবেন সমন্বয় কমিটি এবং নির্বাচনী কৌশল কমিটির নেতারাই।
তার আগে ইন্ডিয়া নিয়ে মমতার এই মিনি বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। জানা গিয়েছে, আগামী বুধবারের বৈঠক থেকে ইন্ডিয়ার প্রথম জনসভার দিন ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাধীনতা উত্তর যুগ থেকেই বামেদের উত্থান। আগে একটি দল সিপিআই ছিল পরে ভেঙে বহু দলে বিভক্ত হয়েছে তারা যদিও এসইউসি ছাড়া বাকি তথাকথিত কমিউনিস্টরা একত্রে বামফ্রন্ট গড়েছিল বা কোথাও এলডিএফ বা লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ২০১১ তে পশ্চিমবঙ্গ হাতছাড়া হয় তারও কয়েক বছর পরে হাতছাড়া হয় ত্রিপুরাও। থাকার মধ্যে রয়েছে শুধু কেরালা। এই বঙ্গে ১২ বছর আগে বাম বিশেষ করে সিপিএম বিদায় নেওয়ার পরে এমন কোনও ভোটের ফল দেখা যায় নি যেখানে আদপে তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা চির রাজনৈতিক শত্রু কংগ্রেসের সঙ্গে কোথাও কোথাও হাত মিলিয়ে ভোট লড়েছে বটে কিন্তু সিপিএমের দিকে সুবিধা এসেছে এমন তথ্য নেই। কাজেই প্রশ্ন থেকে যায় বাম সূর্য কি পশ্চিম আকাশে চলে যাচ্ছে?
২০২১ এর বাংলার বিধানসভা ভোটে তারা শূন্যতে পৌঁছিয়েছে। দশা একই কংগ্রেসেরও কিন্তু কংগ্রেসের এ রাজ্য থেকে লোকসভায় দুই প্রতিনিধি রয়েছে যা সিপিএম বা বামেদের নেই। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পর ৫টি উপনির্বাচন হয়েছে এবং পৌরসভা পঞ্চায়েত ইত্যাদি নির্বাচন হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে উপনির্বাচনগুলিতে দক্ষিণবঙ্গে সিপিএম কিছু ভোট পেয়েছিলো, বিশেষ করে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে বেশ কিছু ভোট পেয়েছিলো। এরপর পৌরসভা নির্বাচনে মধ্য বাংলার একটি পৌরসভা দখলও করেছিল। পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছু আসন পেয়েছিলো বটে কিন্তু তা বুক ফুলিয়ে বলার মতো জায়গায় নেই বরং সেই বিজেপি দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে।
আসলে তৃণমূল বিরোধী বা বলা ভালো মমতা বিরোধী ভোটাররা আর বামেদের উপর আস্থা না রেখে সবেগে বিজেপির দিকেই চলে গিয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত ধূপগুড়ির নির্বাচনে লালদুর্গতে তাদের নির্মম পতন হয়েছে , জামানত জব্দ হয়েছে ফের। সম্প্রতি হয় যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপনির্বাচন হয় এবং শুক্রবার তার ফল প্রকাশিত হয়েছে। দেখা গেলো ৭টি আসনে বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী ৪টি আসনে পরাজিত এবং একই ভাবে সিপিএমও চারটি আসনে জমি খুঁজে পায় নি। সর্বত্রই পরাজয় এমনকি তাদের দখলে থাকা কেরালাতেও পরাজিত 'বন্ধু' কংগ্রেসের কাছে। রাজ্য কংগ্রেসের মধ্যে এই অবস্থান দেখে গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে এই সিপিএমের সাথে জোট বেঁধে লড়লে আখেরে তাদের ক্ষতি কাজেই ধীরে ধীরে তৃণমূলের দিকে তারা অবস্থান বদলাতে চাইছে। তাহলে বামেদের কি হবে ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা গঙ্গাই জানেন। গঙ্গা প্রাপ্তির আগে পারবে কি বামেরা কিছু করতে, লক্ষ টাকার প্রশ্ন।
সৌমেন সুর: ৮ই জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) নির্ঘন্ট যতই এগিয়ে আসছে, ততই সব দলের সাজো সাজো রব শুরু হয়ে গেছে। সবদলেরই একটা যুদ্ধং দেহি মনোভাব। ছকের পর ছক কষতে শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি (BJP), কংগ্রেস (Congress), সিপিএম (CPIM) ও তৃণমূল (TMC), ' নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী...' একেবারে আগ্রাসী মনোভাবে এগিয়ে চলেছে। কেউ এতটুকু জায়গা ছাড়তে নারাজ। কিন্তু প্রকৃতি তার স্বভাব সিদ্ধে অটল, অর্থাৎ এখন বর্ষার মরশুম। মেঘেদের রং বদলাতেও শুরু করেছে। বর্ষার প্রাণের আনন্দধারায় স্বস্তির আশা এনে দিয়েছে আমাদের মনে। কিন্তু কথা হল এই বর্ষা মরশুমে ভোটদান পর্ব কি সঠিক বিচার হল। এক-দুই ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে মানুষ ভোট দেবে? মানলাম বৃষ্টি সেদিন হলো না, কিন্তু হবে না এই গ্যারান্টি কোথায়? বিপ্লব যেমন ঘন্টা বেজে আসে না, তেমনই বৃষ্টি কিন্তু হঠাৎ প্রকাশ পায় তার আড়ম্বর নিয়ে।
যদি ৮ই জুলাই প্রবল বর্ষণ হয়, তাহলে তো সব মাঠে মারা যাবে। এত আয়োজন সব তো বিফলে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, এত বড় নির্বাচন কখনও বৃষ্টির মরশুমে আগে হয়নি। দু-একটা উপনির্বাচন হয়তো হয়েছে যা হয়েছে শীতের মরশুমে, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর বড় নির্বাচন আমার স্মরণে শীতেই হয়েছে। আচ্ছা! গ্রামের ভোটাররা বৃষ্টির জল মাথায় নিয়ে, জল কাদা ঠেঙিয়ে ভোট দেবে তো। এই মুহূর্তে বিশ্বকবির মহান কয়েকটা কথা মনে পড়ে গেল, 'নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে, তিল ঠাই আর নাইরে। ওগো আজকে তোরা যাসনে ঘরের বাইরে...।' যদি ৮ই জুলাই 'ঝরঝরো মুখর বাদর দিনে' হয় তাহলে মানুষ ভোট দিতে ঘরের বাইরে আসবে কি?
প্রসূন গুপ্তঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ ছিল, বিরোধীদের বৈঠক হোক কিন্তু দিল্লিতে নয়, হোক পাটনায়। যেদিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব নবান্নে এসেছিলেন সেদিনই এই প্রস্তাব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছে রাখেন। পরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলে মূলত নীতীশের আয়োজনে পাটনায় এই বৈঠক হচ্ছে।
এবারে প্রশ্ন, উপস্থিত থাকছেন কারা? গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যাবেন না। দেখা গেল আগে না জানালেও অধিকাংশ অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই গরহাজির। পরদিন রবিবার ছিল নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন। সেখানেও বিরোধী ২০টি বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল। যুক্তি ছিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না জানানো। যদিও বাহানা রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি কিন্তু ওই ঘটনার মাধ্যমে একটা বিরোধী ঐক্য গড়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য। একই সাথে ভারতের পদক জয়ী খেলোয়াড়দের গ্রেফতারির ঘটনাও তাঁদের নতুন তথ্য জোগান দিয়েছে।
বিরোধীদের মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী কংগ্রেস যেমন জোট হওয়ার কাজে উদ্যোগ নিয়েছে, তেমন রয়েছে নীতীশের জেডিইউ, লালুর আরজেডি, জেএমএম, ডিএমকে, এনসিপি, শিবসেনা (উদ্ধব) ইত্যাদি। তবে কংগ্রেসের বিরোধী হলেও থাকছে তৃণমূল কংগ্রেস, আপ, তেলেঙ্গানার টিআরএস।
তবে কি বিজেপি একা। না তার অনেক সমর্থক এসে গিয়েছে যাদের ঠিক জোটসঙ্গী বলা যায় না। আছে বিজেডি, এআইএডিএমকে, শিরোমনি আকালি দল। অন্ধ্রের চন্দ্রবাবুর দল বা জগন্ময় রেড্ডির দলও রয়েছে মোদীর পাশে। মজার বিষয় এক সময়ের মোদী বিরোধী দেবেগৌড়ার দল জেডিএস সম্প্রতি কর্ণাটকের ভোটে খুবই খারাপ ফল করেছে, কাজেই তাদের কোনও পছন্দ নেই। সুতরাং রবিবারে আসবো না বলেও সংসদ ভবনের উদ্বোধনে তারা উপস্থিত ছিল।
২০২৪-এর নির্বাচনের আগে সাভারকরের জন্মদিনে সংসদ ভবন উদ্বোধন করে প্রকারান্তে আরএসএস-কে বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রসূন গুপ্তঃ রবিবার বিজেপির রাজ্য কমিটির এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। আয়োজিত হয়েছিল কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে। সভার আলোচনার মূল বিষয় ছিল, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নবম বর্ষপূর্তি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাঁর বক্তব্যে জানান, সরকারের বর্ষপূর্তি এবং কাজের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে জানাতে হবে। আগামী ৩০ মে থেকে ৩০ জুন অবধি রাজ্যজুড়ে প্রচার অভিযানে নামবেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল। বনশল জানান, দলের মধ্যে ছ্যুৎমার্গ চলবে না। পরোক্ষে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে বোঝান বনশল। এই ভাবে চললে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে, জানান বনশল।
পাশাপাশি বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী ধন্যবাদ জানান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে দেওয়ার জন্য। অবশ্য সুর চড়া করে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সভাপতি, সাংসদ দিলীপ ঘোষ। দিলীপবাবু বলেন যে, সংগঠনের ত্রুটি রয়েছে। নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে উচ্চ নেতাদের যোগাযোগ নেই মোটেই। তিনি বিভিন্ন সময়ে জেলায় জেলায় গিয়ে দেখেছেন যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কর্মীদের উপর। তিনি তাঁর বক্তব্যে কড়া বার্তা দেন। তাঁর ভাষণের বিরোধিতা করতে দেখা যায় নি। বিজেপি কর্মীদের অন্দরের কথা, দিলীপবাবু যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন সংগঠন চাঙ্গা ছিল এবং এই সময়েই বিজেপির ভোট বাড়ে। গত লোকসভায় বিজেপি ১৮টি আসন জয় করে দিলীপের নেতৃত্বে। দিলীপবাবু 'চায়ের আড্ডা' যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল বলে দাবি দলের কর্মীদের।
অবিশ্যি এটাও বাস্তব যে বিজেপির ভোট বেড়েছিল মূলত সিপিএম তথা বামেদের ভোটেই। ২০১৬ তে বিজেপির ভোট এই রাজ্যে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ, কিন্তু ২০১৯-এ তা বেড়ে হয়ে যায় ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বামেদের ভোট কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭-৯ শতাংশ। কাজেই প্রশ্ন থাকে বাম ভোট কমে কি বিজেপিতে গেলো? খতিয়ে দেখছে দল যে কোনও কারণে ২০২১ ভোট পর থেকেই বিজেপির ভোট ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। সাগরদিঘিতে বিজেপির জামানত গিয়েছে এবং নদীয়া জেলায় সমবায় ভোট বিজেপি শূন্য হয়ে গিয়েছে যেখানে সিপিএমের ভোট বেড়েছে। কাজেই সুনীল বনশল দলের সংগঠনের উপর জোর দিচ্ছেন।
প্রসূন গুপ্তঃ একটা সময়ে যখন প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই ছিল না। বৈদ্যুতিন মাধ্যম, সরকারি চ্যানেল এসেছিলো অনেক পরে। ওই সময়ে 'ঘোড়ার মুখের খবর' বলতে যা হত তা নেহাতই মামুলি। ঘোড়ার মুখ বলতে কোনও রাজনৈতিক থেকে শুরু করে কোনও কিছুর গোপন খবর। তবে অনেক সময়ে অনেক প্রাজ্ঞ সাংবাদিক খবর করতেন সোর্স এবং অভিজ্ঞতা মিলিয়ে। আজকের দিনে বৈদ্যুতিন মাধ্যম অনেক শক্তিশালী, তার অন্যতম কারণ তারা সরাসরি দর্শককে দেখিয়ে দিচ্ছে। অবিশ্যি তাঁর সঙ্গে অভিজ্ঞতারও একটি মূল্য আছে।
শনিবার কেউ কেউ বলেই দিয়েছিলেন যে, অভিষেক যাচ্ছেন কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যে ফিরেও আসবেন। যুক্তিতে বুঝিয়েছিলেন, এটি মামুলি সাক্ষ্য দিতেই সিবিআই অভিষেককে ডেকেছিল। অভিষেক যখন হাসিমুখে সিবিআই দফতরে প্রবেশ করলেন এবং মিডিয়াকে দেখে হাত নাড়ালেন, তখনই বোঝা উচিত ছিল তাঁর বেরিয়ে আসাটা শুধু সময়ের অপেক্ষো। এর আগে যারা যখনই এই দফতরে এসেছেন, তাদের মুখেচোখে দেখা গিয়েছিলো আতঙ্ক যা অভিষেকের কোনও বারও দেখা যায় নি।
খবর দুই, মদন মিত্র। হঠাৎই দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করলেন। তাঁর ব্যঙ্গোক্তি শোনা গেলো শুক্রবার রাত থেকেই। কারণ তাঁর পরিচিত কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নাকি ভর্তি নেওয়া হয় নি। ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে নাকি আইসিসিইউতে ভর্তির আবেদন করেছিলেন মদন। এই সরকারি হাসপাতালে বরাবরই মদনের একটা যোগাযোগ ছিল। এমনকি বাম জমানাতেও মদনের কাছে উপকৃত হয়েছে বহু মানুষ। এ হেন মদন মিত্র বিদ্রোহী হলেন কেন?
মনে রাখতে হবে সিবিআই যখন মদনকে গ্রেফতার করে আড়াই বছর জেলে রেখেছিলো, তখনও মদন দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। অনেকেই বলেন মদন একেবারে গোড়ার দিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন অনুগত সৈনিক হিসাবে। সেই মদন হঠাৎ বিদ্রোহী হলেন কেন। প্রাজ্ঞ সাংবাদিক বলছেন, একেবারে মিডিয়াকে বোকা বানিয়েছেন মদন। অভিষেকের দিক থেকে খবর সরিয়ে নেওয়ার জন্যই নাকি 'গেম মদন'। এবারে বিবেচনার বিষয় জনতার। [সব জায়গায় এমনই গুঞ্জন ছড়িয়েছে]
মনি ভট্টাচার্য: 'আমি কংগ্রেসে ছিলাম, কংগ্রেসে আছি, কংগ্রেসেই থাকব।' সিএন ডিজিটালকে সাফ জানালেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির (Sagardighi) বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস (Bayron Biswas)। বর্তমানে শাসকদলের কাছে সাগরদিঘি যে এক্সফ্যাক্টর সেটা স্পষ্ট হয়েছে সংখ্যালঘু দফতর মমতা (Mamata Banerjee) নিজের কব্জায় নেওয়ার পরই। এরপর জনসংযোগ যাত্রায় অভিষেক বন্দোপাধ্যায় রানীনগরের সভা থেকে বায়রনকে উদ্দেশ্য করে বার্তা দেন যে তাঁর জন্য মমতার দুয়ার সবসময় খোলা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল। এবার সিএন ডিজিটালের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত মুখ খুললেন বায়রন বিশ্বাস। জানালেন কী করবেন এবং আগাম প্রস্তুতি কী।
রানীনগরে অভিষেকের বার্তার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাওয়া নিয়ে বায়রনের স্পষ্ট মত, 'অবশ্যই যাবো। সাগরদীঘির উন্নয়নের জন্য অবশ্যই যাবো। কিন্তু ওদের দলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসছে না।'
সম্প্রতি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মহলে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বায়রন বিশ্বাসকে সরকারি কোনও পদে বসাতে পারেন। সে বিষয়ে তিনি এখনও কিছু জানেন না বলেই জানান তিনি। এ বিষয়ে সোমবার সিএন-ডিজিটালকে বায়রন বলেন, 'সাগরদিঘির উন্নয়নের কাজে প্রয়োজন হলে অবশ্যই পদ গ্রহণ করব। কিন্তু দলীয় পদ গ্রহণ করব না।' বায়রন বলেন, 'সরকারি পদের সঙ্গে তৃণমূলে যোগদানের কোনও সম্পর্ক নেই, ফলে উন্নয়ন করার সুযোগ থাকলে সেই পদ গ্রহণ করব।'
রাজ্য যখন তৃণমূলের জয়ের জোয়ার, সংখ্যালঘু ভোট যখন তৃণমূলের শিয়রে। তখন সাগরদিঘিতে হঠাৎ একটা ছেলে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, দুর্নীতি হলে, কাজে গাফিলতি থাকলে সংখ্যালঘু ভোট ঘুরে যেতে পারে, আর সেটিই যে এক্সফ্যাক্টর হতে পারে সেটা ভালোমতই জানেন মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেজন্যই হয়ত সাগরদিঘির হারের পরেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর নিজের হাতে নিয়েছেন। এবার ওই কেন্দ্রের জয়ী কংগ্রেসের প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসকে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। স্পষ্ট জানিয়েছেন, তৃণমূলের দুয়ার তাঁর জন্য সবসময় খোলা।
সাগরদিঘি এক্সফ্যাক্টর বুঝেই কি তৃণমূল বায়রনকে প্রভাবিত করতে চাইছে! এ প্রশ্নের উত্তরে সিএন-ডিজিটালকে বায়রন বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'এটা নিজের উপর নির্ভর করে, ওরা প্রভাবিত করলেই যে আমি চলে যাবো এরকম কোনও ব্যাপার না। ওরা প্রস্তাব দিতে পারে, কিন্তু আমার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আমি আবার বলছি, আমি কংগ্রেসে ছিলাম, কংগ্রেসে আছি, কংগ্রেসেই থাকব।' বায়রন অবশ্য এরপরে আরও বলেন, 'উন্নয়নের জন্য কোনও সরকারি পদ দিলে আমি অবশ্যই যাবো।'
দু'মাসের সফর নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) শুরু করেছেন দলের প্রচার। প্রচার অবশ্যই পঞ্চায়েত ও লোকসভাকে কেন্দ্র করে। তিনি প্রচার শুরু করেছেন ডুয়ার্স অঞ্চল থেকে এবং এখন রয়েছেন উত্তর-মধ্য বাংলায় অর্থাৎ বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর সেরে মালদহের পথে। তাঁর এই দুই মাসের সফরে কোনও রিসোর্ট বা হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে না, থাকছেন তাঁবুতে।
ডুয়ার্স অঞ্চলে বারবার অভিষেক যাচ্ছেন এই কারণে যে, বিগত লোকসভাতে উত্তর বাংলা অঞ্চলের সবকটি আসন হারিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিধানসভা অঞ্চলে দিনাজপুরের দুটি জেলাতে মোটামুটি ফল ভালোই হয়েছিল গত বিধানসভার ভোটে। যেহেতু ডুয়ার্স অঞ্চল অর্থাৎ আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এই চার জেলাতে কিন্তু বিধানসভায় ফের ফল খুবই খারাপ হয়েছিল তৃণমূলের। ফলে অভিষেক ডুয়ার্স অঞ্চলের খোল নলচে পাল্টে ফেলতে চাইছেন। তিনি অভিনব একটি পদ্ধতি চালু করেছেন। দলের অন্দরের ব্যালট পেপার তৈরি করে বিভিন্ন সভায় সাধারণ জনতার কাছ থেকে ভোট মারফত জানতে চাইছেন যে, কে কে উপযুক্ত প্রার্থী। যদিও এই ব্যালট পদ্ধতিতে বেশ কিছু জাইগায় ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেই এলাকার ভোটারদের পালস বুঝে নিচ্ছেন অভিষেক।
মঙ্গলবার জনসভায় তিনি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন যে, মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। লোক দেখানো নেতাগিরি চলবে না। তিনি বলেছেন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তিনি বুঝেছেন, পঞ্চায়েত নেতা, বিধায়ক বা অন্য নেতাদের কিছু মানুষ কোনও যোগাযোগ রাখেন না এলাকার মানুষের সঙ্গে, এমনকী ফোন করলে তাও ধরেন না। এইভাবে চলবে না। জনসংযোগ বাড়াবার কথা বারবার বলা হচ্ছে। তিনি বলেন টিকিট কারা পাবে ভোটে তা ঠিক করবে এলাকার ভোটাররা, কাজেই ভোট নেওয়া হচ্ছে। যদিও এটা বাস্তব বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী রয়েছেন। কিন্তু সিপিএমের এখনও কোনও প্রচারের উপযুক্ত মুখ তৈরি হয়নি। অন্যদিকে, বিজেপির প্রচারক আছে, ঠিকই কিন্তু এখনও তারা মাঠেই নামেননি। ফলে যতই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকুক তৃণমূলের মধ্যে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি এখনও আসে নি।
ভারতবর্ষের একমাত্র দলসমূহ কমিউনিস্টরা (Communist), যাদের স্ট্রাটেজি বোঝা দুস্কর বিশেষ করে সিপিএম (CPIM)। বিশ্ব রাজনীতিতে যেখানেই কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় এসেছে, দেখা গিয়েছে তারা তাদের ভাষায় জাতীয় বুর্জুয়াদের হাত ধরেই এসেছে। ব্যতিক্রম নয় এ রাজ্যেও। ১৯৬৭-তে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ক্ষমতায় এসেছিলো যুক্তফ্রন্ট গড়ে, অজয় মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ৩৪ বছরের শাসন চালিয়েছিল কিন্তু ক্ষমতায় এসেছিলো তৎকালীন জনতা পার্টির এবং প্রফুল্ল সেনের হাত ধরে। বাস্তব ঘটনা এই যে তারা প্রাথমিক ভাবে পরজীবীর মতো থাকে এবং ক্ষমতায় এলে প্রথমেই বাতিলের খাতায় পাঠায় যাদের হাত ধরে আসে। এবারের নতুন বন্ধু কংগ্রেস, যাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে কয়েক বছর ধরে। বেশ কয়েকটি নির্বাচন লড়লোও তারা।
মনে রাখতে হবে আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে ,ঠিক আজকের দিনেই তাদের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আসন সংখ্যা শূন্য হয়ে গিয়েছিলো। অবশ্য পরে বেশ কিছু উপনির্বাচনে সর্বোপরি পৌর নির্বাচনে তারা বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে ফেলে দ্বিতীয়তে উঠে এসেছে। একটি পুরসভা দখলও নিয়েছে। এরপর সাগরদিঘি নির্বাচনে কংগ্রেসকে সঙ্গী করে নিজেরা মূল প্রচারে নেমে কংগ্রেসকে প্রথম আসন জিততে সাহায্য করেছে। এবারে লক্ষ পঞ্চায়েত তারপর লোকসভা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সরে যাওয়াতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিন্তু সিপিএম কারণ বিচারপতি যত আদেশ দিয়েছেন তার ফায়দা নিয়েছিল বামেরা।
পথে নেমে চাকুরী প্রার্থীদের এবং ডিএ দাবিদারদের পাশে নিয়মিত ভাবে সিপিএম দাঁড়িয়েছিল। বিজেপির মতো অত মিডিয়ার সাহায্য না পেলেও সোশ্যাল নেটে তারা বিশাল ভাবে প্রচার করেছিল। আপাতত সিবিআইয়ের দিকে তাকিয়ে সিপিএম। অবশ্যি তারা কিন্তু গ্রামেগঞ্জে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছে এবং টার্গেট করেছে মুসলিম ভোট। যদিও এই কঠিন বাস্তব আজকের বিজেপির ভোটের সিংহভাগই বাম ভোট। বামেদের ২০১১-র ভোট ছিল প্রায় ৩৯ শতাংশ। ২০১৯-এ ওই শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট চলে যায় বিজেপির বাক্সে। কাজেই ওই কমিটেড সিপিএম ভোট যদি ফেরত না আসে তবে দুর্ভোগ আছে তাদের। সুতরাং তারা এক তরফা তৃণমূলের বিরোধিতা করে ভোট ফেরত আনার চেষ্টায় রয়েছে।
প্রসূন গুপ্ত: পৌর ভোটের মতোই পঞ্চায়েত ভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে। কাজেই তিনি ভোটের দিন ঘোষণা করবেন। অবশ্য এ বিষয়ে অলিখিত আলোচনা থাকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। যতটুকু তৃণমূলের অন্দরের খবর তাতে হয়তো মে-র শেষে অথবা জুনের প্রথম দশ দিনের মধ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। এই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ইতিমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, বিরোধী দল মনে করে যে ২০১৮-র মতো যদি ভোট হয় তবে তা প্রহসনে পরিণত হবে। সমবায় ভোটের মতো বিরোধীদের এককাট্টা করে ভোট যুদ্ধে নামার একটা চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখানেও সুবিধা খুব একটা নেই।
সম্প্রতি বিধাননগরের পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী পরিষ্কার বার্তা দিয়েছিলেন, বিজেপি একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে পঞ্চায়েত ভোটে। যদি 'বিশেষ' কেউ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে চান তবে তাঁকে পদ্ম চিহ্নেই লড়তে হবে। বিজেপি কাউকে সরাসরি অথবা পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করবে না। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতা-সহ রাজ্য বিজেপির সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। দেবশ্রীর পরিষ্কার বার্তা, যে বিধানসভার বিরোধী নেতাকে দিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন, মমতা আন্দোলন করে, সংগঠন করে ক্ষমতায় এসেছেন। কাজেই রাজ্য বিজেপির নেতারা যেন সংগঠনের দিকে জোর দেন। তিনি জানিয়েছেন এজেন্সি লাগিয়ে একটি দলকে চাপ দেওয়ার বিষয়কে তিনি সমর্থন করেন না। এখন তিনি শেষবার এসে সরাসরি কথা বলেন সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে। কিন্তু সামনে নির্বাচন এখনও বিজেপির প্রস্তুতির চিত্র পরিষ্কার নয়। ফের অমিত এ রাজ্যে আসছেন ৯ মে, তা অবশ্য কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে। কাজেই ৯ মে নতুন কিছু বার্তা দেন কিনা সেটাই দেখার। তবে আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে বলেই খবর।
কোচবিহারে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির শুরুতেই বিশৃঙ্খলার ছবি দেখা গিয়েছে। নিজের প্রার্থী নিজে বেছে নেওয়ার অভিযানে ব্যালট বাক্স নিয়ে মারামারি, একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ করছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। এ বার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Bandopadhyay) জনসংযোগ যাত্রার আগে, মঙ্গলবার দল বেঁধে ইস্তফার কথা ঘোষণা করলেন তুফানগঞ্জের (Tufanganj) কয়েক জন নেতা। ওই নেতাদের অভিযোগ, তাঁরা উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অবহেলিত। তাঁদের কোনও দাবিই মানা হয়নি। কোনও আবেদনও শোনা হয়নি।
বুধবার তুফানগঞ্জে সভা রয়েছে অভিষেকের। তার আগে এই ইস্তফা নিয়ে অস্বস্তিতে শাসক শিবির। যদিও স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেছেন কেউই দল ছাড়েননি। তবে তাঁরা ব্যাপারটা দেখছেন। ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ জনসংযোগ কর্মসূচিকোচবিহারে (Cooch Behar) ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির শুরুতেই বিশৃঙ্খলার ছবি দেখা গিয়েছে। নিজের প্রার্থী নিজে বেছে নেওয়ার অভিযানে ব্যালট বাক্স নিয়ে মারামারি, একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ করছে তৃণমূলের (TMC) দুই গোষ্ঠী। এবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) জনসংযোগ যাত্রার আগে, মঙ্গলবার দল বেঁধে ইস্তফার কথা ঘোষণা করলেন তুফানগঞ্জের (Tufanganj) কয়েক জন নেতা। ওই নেতাদের অভিযোগ, তাঁরা উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অবহেলিত। তাঁদের কোনও দাবিই মানা হয়নি। কোনও আবেদনও শোনা হয়নি।
বুধবার তুফানগঞ্জে সভা রয়েছে অভিষেকের। তার আগে এই ইস্তফা নিয়ে অস্বস্তিতে শাসক শিবির। যদিও স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেছেন কেউই দল ছাড়েননি। তবে তাঁরা ব্যাপারটা দেখছেন। ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ জনসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসাবে তুফানগঞ্জের চিলাখানা এবং ক্রীড়া সংস্থার মাঠে সভা রয়েছে অভিষেকের। সেখানেই রাত্রিযাপন করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার আগে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে ৩২ জন তৃণমূল নেতা দল ছাড়ছেন বলে জানালেন। মঙ্গলবার বিকেলে তুফানগঞ্জের ১ নম্বর ব্লকের ধলপল ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই তৃণমূল নেতারা জানান, তাঁরা অনেক দিন থেকে দল করছেন। কিন্তু দলে আর পুরনো নেতা-কর্মীরা গুরুত্ব পাচ্ছেন না। বিভিন্ন অসন্তোষের কারণে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বুথ সভাপতি, অঞ্চল সম্পাদক এবং ব্লক কমিটির সদস্যেরা। ইস্তফাপত্র হাতে নিয়ে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সদস্য নিজামউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘দলের সাফল্যের সময় যেমন কোনও কাজ পাইনি, ব্যর্থতারও কোনও দায় নেব না। আমরা আলোচনা করে মোট ৩২ জন ইস্তফা দিয়েছি।’
অভিষেকের কোচবিহার সফরের মধ্যে এই ইস্তফা ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিজেপি মণ্ডল সভাপতি যুগল কিশোর দাস। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যালট বাক্স নিয়ে মারামারি, ইস্তফা তারই প্রমাণ।’র অংশ হিসাবে তুফানগঞ্জের চিলাখানা এবং ক্রীড়া সংস্থার মাঠে সভা রয়েছে অভিষেকের। সেখানেই রাত্রিযাপন করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার আগে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে ৩২ জন তৃণমূল নেতা দল ছাড়ছেন বলে জানালেন। মঙ্গলবার বিকেলে তুফানগঞ্জের ১ নম্বর ব্লকের ধলপল ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই তৃণমূল নেতারা জানান, তাঁরা অনেক দিন থেকে দল করছেন। কিন্তু দলে আর পুরনো নেতা-কর্মীরা গুরুত্ব পাচ্ছেন না। বিভিন্ন অসন্তোষের কারণে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বুথ সভাপতি, অঞ্চল সম্পাদক এবং ব্লক কমিটির সদস্যেরা। ইস্তফাপত্র হাতে নিয়ে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সদস্য নিজামউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘দলের সাফল্যের সময় যেমন কোনও কাজ পাইনি, ব্যর্থতারও কোনও দায় নেব না। আমরা আলোচনা করে মোট ৩২ জন ইস্তফা দিয়েছি।’
অভিষেকের কোচবিহার সফরের মধ্যে এই ইস্তফা ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিজেপি মণ্ডল সভাপতি যুগল কিশোর দাস। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যালট বাক্স নিয়ে মারামারি, ইস্তফা তারই প্রমাণ।’