
বিশেষ সংবাদদাতা: আশিবার রহমান রবিবার তাদের টিসিসিএফ-এর বাৎসরিক অনুষ্ঠান পালন করলো। মজার বিষয় কে এই আশিবার অথবা টিসিসিএফ? এরা কারা? অনুষ্ঠানটি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে করা হয়েছে অথচ তৃণমূল নেতৃত্ব হয়তো এই গ্রুপ বা আশিবারকে চেনেই না, তবে এরা কারা? যেকোনও রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আইটি বা সোশাল মিডিয়া সেল থাকে। এ ব্যাপারে ভারতে পয়লা নম্বরে রয়েছে বিজেপি এবং এরপরেই রয়েছে সিপিএম। বিজেপির আইটি সেল যথেষ্ট শক্তিশালী। সম্পূর্ণ টিমটি চালায় তাদের নিজস্ব আইটি সেল। ভালো-মন্দ সব বিষয় তারা ফেসবুকে পোস্ট করে। দ্রুত ভাইরাল হয় সেসব পোস্ট।
প্রধানমন্ত্রী নিজেও নিয়মিত সোশ্যাল নেটওয়ার্কে থাকেন। ভোটের সময়ে এই আইটি সেলের জোরালো প্রচারে ভর করে বিশেষ সুবিধা পায় গেরুয়া শিবির। এরপরেই সিপিএম, তাদেরও নিজস্ব টিম রয়েছে। মাঝেমধ্যে মজাদার পোস্ট কিংবা কার্টুন যেকোনও দর্শককে আকর্ষিত করে। তৃণমূলের অন্তত লক্ষাধিক ছেলেমেয়েরা দলের হয়ে পোস্ট করলেও কোথাও সংগঠনের অভাবে সেগুলি জনপ্রিয় হয় খুব কম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইটি সেল নিয়ে নিয়মিত উৎসাহ প্রদান করলেও এখনও পর্যন্ত সংগঠিত হতে পারেনি এই সেল। কারণ অবশ্যই এই আইটি সেলা ছাড়াও বেসরকারি ভাবে অজস্র গ্রুপ আছে। অন্তত কয়েকশো অথচ তাদের একছাদের তলায় আনা যায়নি। এছাড়া ওই একদল নানা পোস্ট করে নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের পয়সায়।
এতগুলো গ্রুপের খবর দলের কাছেই কোনও বার্তা নেই। অথচ এই গ্রুপগুলির সদস্যদের অনেকেই ভোটের সময়ে পোস্টার মারে, ভোটার স্লিপ বিলি করে, বুথে বসে, বিনিময়ে কিছুই চায় না তারা। সরকারি চাকরির বিতর্কে এদের কারও নাম আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
এরা পাগলের মতো দলকে ভালোবেসে কাজ করে এবং সোশ্যাল নেটে পোস্ট দেয়, এরকমই আলোচিত গ্রুপটি। নিজেরা পয়সা চাঁদা তুলে নানা অনুষ্ঠান করে। এদের অধিকাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অথবা বেকার। রবিবার এরকমই এই অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়েছে এক সঙ্গে চলতে হবে, লড়তে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে খাটতে হবে ইত্যাদি, উপস্থিতি চোখে পড়ার মতোন। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, বিধায়ক ড.রানা চ্যাটার্জী এবং অবশ্যই তৃণমূলের মুখপাত্র এবং আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাংশু ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু এক ছাতার তলায় আসার বিষয়টি আলোচিত হলেও, তা কবে বা কীভাবে পর্দার আড়ালেই রইলো।
শহিদ মিনার ডিএ আন্দোলন (DA Agitation) মঞ্চে শেখ আবদুল সালামের হাতে আক্রান্ত বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি (MLA Naushad Sidiqqui)। জানা গিয়েছে অভিযুক্ত সালাম তৃণমূলকর্মী এবং হাওড়ার বাসিন্দা। শনিবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গ দিচ্ছেন আইএসএফ বিধায়ক। জামিনের পর মুক্ত হয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, ডিএ আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াবেন। সেই মোতাবেক এদিন সকালে শহিদ মিনার মঞ্চে (Sahid Minar) হাজির হয়েছিলেন। বেলার দিকে তিনি যখন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন, তখন টুপি পরা এক ব্যক্তি তাঁর সামনে চলে আসেন। তাঁর হাতে একটি হেলমেটও ছিল।
সেই ব্যক্তি নৌশাদকে প্রশ্ন করেন, 'আপনি সংখ্যালঘুদের জন্য কী করছেন?' বিধায়ক জবাব দেন, 'শুধু সংখ্যালঘু কেন, সংখ্যাগুরুদের জন্যও করবো।' এই জবাব শুনে নিজের জামা তুলে একটি ব্যান্ডেজ দেখান সেই ব্যক্তি। তারপরেই নৌশাদকে ধাক্কা দেন ওই টুপি পরা ব্যক্তি। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই ব্যক্তির দিকে ছুটে যান ডিএ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।
যদিও নৌশাদ তখন সেই ব্যক্তির গায়ে হাত দিতে অন্যদের বারণ করেন। 'এটা একটা নাটক ওকে কিছু করো না' বলে চিৎকার করতে থাকেন আইএসএফ বিধায়ক। তারপরেও কয়েকজন মিলে অভিযুক্তকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেন। জানা গিয়েছে, বিধায়ককে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই ব্যক্তিকে। সংবাদমাধ্যমকে আইএসএফ বিধায়ক জানান, 'এই ঘটনার তদন্ত করবে পুলিস। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কারা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, পুলিস দেখবে।' তৃণমূল এই ঘটনা সমর্থন করে না বলে জানান দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। প্রবল সমালোচনায় সরব বিরোধী শিবির।
প্রসূন গুপ্ত: শুক্রবার কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী অনেকগুলি কড়া বার্তা দিয়েছেন। আগামী পঞ্চায়েত বা লোকসভা নির্বাচনে যে তিনিই প্রচার বা জেলার দায়িত্ব দেখবেন তা পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে অনেক নেতাকেই। কারা পঞ্চায়েতে টিকিট পাবেন তাও ঠিক করবেন 'দিদি'। বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যবেক্ষক নামক পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দায়িত্ব ফের বকলমে ফিরিয়ে আনলেন মমতা। দায়িত্ব পেলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতারাই। যেমন ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, গৌতম দেব, মলয় ঘটক প্রমুখরা। যাঁরা এর আগেও নানা জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন।
অন্যদিকে কাজে মন দেওয়ার কথাও শুনতে হয়েছে নব্য তৃণমূলের সায়নী ঘোষকে। এই ব্যবস্থার ফলে দলে নতুন অল্প বয়সী কর্মীরা, যারা অভিষেককে নেতা হিসাবে কাজ করেন তারা কি কিছুটা চিন্তায়? হয়তো ভাবতে পারে ফের কি পুরাতনদের প্রতি আস্থা দিদির? কিন্তু ঘাসফুলের একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি একেবারে তা নয়। দায়িত্বে কিছু নিশ্চয় রদবদল হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে অভিষেকে ভরসা নেই মমতার।
তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে জানিয়েছেন, নতুনরা কাজ করুন এখনই ভোট যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই বলেই খবর প্রচার মাধ্যমে। মমতা চিরকাল নতুন কর্মীদের উপর আস্থা রাখেন, তিনি বিভিন্ন সভায় তা জানিয়েছেন। তিনি জানান, যে কেউ যদি মনে করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে কী হবে বা দল চলবে কী ভাবে? তাদের কাছে স্পষ্ট বক্তব্য, কেউই চিরকালীন নয়। ইন্দিরা-রাজীবের মৃত্যুর পর কি কংগ্রেস উঠে গিয়েছে?
অন্যদিকে আগামী ২৯ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় সভা করবেন এরপর শুরু করবেন জেলা সফর। এপ্রিলের গোড়া থেকেই অভিষেকের সফর শুরু হবে। যত দূর জানা যাচ্ছে, তিনি আলিপুরদুয়ার থেকে তাঁর সফর শুরু করবেন। মনে রাখতে হবে এই জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনে কোনও আসন নেই তৃণমূলের। একমাত্র বিজেপি দল ভেঙে বেড়িয়ে আসা সুমন কাঞ্জিলাল ব্যতিক্রম। বার্তা কি তবে পরিষ্কার, অভিষেকই দলের সংগঠন দেখবেন।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংগঠনিক পর্যালোচনা বৈঠক কালীঘাটে (Kalighat Meet)। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে হওয়া এই বৈঠকে একাধিক সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাংগঠনিক স্তরে একাধিক রদবদল ঘোষণা হয়েছে এই বৈঠকে। শাসক দলের এই উদ্যোগকে আবার কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিজেপি (BJP)। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, 'বাংলার বর্তমান সামাজিক অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের বৈঠক, তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক, মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিন করে জেলা পরিদর্শন, এগুলো মানুষের কাছে কার্যত অর্থহীন।'
তাঁর খোঁচা, 'রাজ্যের পরিস্থিতি কী, আইনশৃঙ্খলা কোথায় দাঁড়িয়ে, সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে তৃণমূল রাজ্যকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর মানুষ জানে। আর সেভাবে কারও উৎসাহ নেই। সেখানে আমরা অন্য দলের সংগঠন নিয়ে কেন ভাববো।'
শুক্রবার বীরভূমের সাংগঠনিক দায়িত্বে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এদিন ঘোষণা করেছে শাসক দল। এই সাংগঠনিক রদবদলকেও খোঁচা দিয়েছে পদ্ম শিবির। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'বীরভূমের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট নিয়ে তৃণমূল তৃণমূলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, খুন। সব নেতা সেখানেই গিয়ে, তাঁদের কোনও কেরামতি চলেনি। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণার পরেও, কেষ্টকে বীর ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও, বীরভূম সফরের পরেও তৃণমূল নেতাদের এক ছাতার তলায় আনতে পারেননি। ভবিষ্যতেও পারবে না। কারণ ওখানে কোনও রাজনৈতিক দলের মতো তৃণমূল চলে না।'
ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা আন্দোলন (DA Agitation), নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ড, স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে লাগাতার ধর্না আন্দোলন। পাশাপাশি সাগরদিঘির (Sagardighi Bye Poll) ফল এবং একের পর এক তৃণমূল নেতার (TMC Leader) জেল যাত্রা। এই আবহে সামনেই কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Vote)। আর তাই অনুব্রত-হীন বীরভূমের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata)। যেহেতু বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢাকতে তৃণমূলকে এবার বাড়তি সময় দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বৈঠকে (Kalighat Meeting) এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, জেলা ধরে ধরে প্রতি শুক্রবার হবে সাংগঠনিক বৈঠক। এদিন দলের সুপ্রিমো একাধিক দায়িত্ব ভাগ করে দেন। আগামি পঞ্চায়েত ভোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ার ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনের বৈঠকে যুব সংগঠন শক্তিশালী না করতে পাড়ার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। এদিন সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, মালা রায় এবং বিধায়ক অতীন ঘোষ, পরেশ পালকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন মমতা। পুরনো ফরম্যাট মেনে জেলাভিত্তিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব এদিন ভাগ করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলা দেখার দায়িত্বে গৌতম দেব। কোচবিহার জেলা বিশেষভাবে দেখার জন্য পার্থপ্রতিম রায়, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং উদয়ন গুহকে নির্দেশ। সাগরদিঘি ভোটের প্রভাব তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলে। তরুণ মোশারফ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু সেলের সভাপতির দায়িত্ব। উত্তর দিনাজপুর মালদা-মুর্শিদাবাদ দেখার দায়িত্বে দুই সংখ্যালঘু মুখ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও মোশারফ হোসেন।
বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও। দক্ষিণ দিনাজপুর দেখবেন তাপস রায়, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়ার দায়িত্বে মলয় ঘটক। মানস ভুঁইয়া দেখবেন দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা। জানা গিয়েছে, ফিরহাদ হাকিম দেখবেন হাওড়া-হুগলি, উত্তর দিনাজপুর আর বীরভূম দেখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। বর্ধমান, দার্জিলিংয়ের সঙ্গে নদীয়া জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস। এই প্রসঙ্গে দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান , এঁরা কেউ অবজারভার নয়। এঁদের উপর সংগঠন দেখার দায়িত্ব।
প্রসূন গুপ্ত: শুক্রবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ সভা ডেকেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেক বিধায়ক, সাংসদ ও বিশিষ্ট নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বক্তা ছিলেন। আশা করা গিয়েছিল তিনি হয়তো বিশেষ বার্তা দেবেন, হলো তাই। তাঁর বিশেষ বার্তার মধ্যে অন্যতম, রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পের প্রচার যাতে প্রতি ঘরে পৌঁছয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মমতা সাগরদিঘি থেকে পঞ্চায়েত হয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তথা দলের ভাবমূর্তি নিয়েই কথা বলেছেন বলেই সূত্রের খবর। তিনি পরিষ্কার জানান, 'প্রতি মাসে তিনি জেলা ধরে ধরে পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। জেলার সর্বস্তরের সমস্যা দেখবেন নিজেই। দলের মধ্যে কোনও বেচাল সহ্য করা হবে না।'
তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব ইমেজ আজকেও স্বচ্ছ, তিনি অতি সাধারণ জীবনযাত্রা করেন। তাঁর সততার ভাবমূর্তি আজকেও অটুট, কাজেই তিনি চান সকলের মধ্যে সেই পরিবেশ আসুক। অন্যথায় দল থেকে বেড়িয়ে যেতে পারেন। এই বার্তাও ঠারেঠোরে দিয়েছেন দলের সুপ্রিমো।
তিনি জানান, 'আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে হবে একসঙ্গে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানা হবে না।' তিনি পরোক্ষে নাকি জানান, 'সাগরদিঘি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোট বিচার করা যায় না। আজকেও সংখ্যালঘু ভোটাররা তাঁর সঙ্গেই আছে। তাঁর কাছে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। তিনি যেমন সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ করছেন সেভাবেই চালিয়ে যাবেন। সংখ্যালঘু বন্ধুরা যদি বিদেশযাত্রা করতে চান তবে তারও ব্যবস্থা করা হবে। সমস্যা হলে তিনি বিষয়টা নিজেই দেখবেন।'
এছাড়া সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তিনি সম দূরত্ব বজায় রাখবেন বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে। তিনি মনে করেন, বিজেপি চাইছে রাহুল বিরোধী মুখ হোক এতে পদ্মশিবিরের সুবিধা। তবে তিনি এও জানান, 'যে যে রাজ্যে যে দল অধিক শক্তিশালী তিনি তাদেরই সহযোগিতা করবেন।' এবিষয়ে তাঁর সঙ্গে এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের কথা চলছে। অন্যান্য দলের কথাও উল্লেখ করেন যথা বিজু জনতা দল। ২৩ মার্চ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার বৈঠক হওয়ার কথা। অর্থাৎ কোথাও ভোটের আগে দলের ব্যাটন নিজের হাতেই রাখলেন মমতা।
শুক্রবার কালীঘাটে (Kalighat Meeting) দলের একাধিক শীর্ষ নেতা ও সাংগঠনিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহের মধ্যেই এই বৈঠক রাজনৈতিক মহলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সাগরদিঘী উপনির্বাচনে পরাজয়-সহ দুর্নীতি-কাণ্ডে দলের একাধিক নেতার নাম জড়ানো। রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে থাকা এই ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিজেপি বিরোধিতায় তৃণমূলের ভূমিকা স্থির করে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে এই বৈঠক।
সম্ভাব্য কীকী বিষয় উঠে আসতে পারে বৈঠকে?
১) সাগরদিঘী উপনির্বাচনের হার পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দলের ক্ষতি করছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই লাগাতার মানুষের কাছে পরিষেবা ও রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস দল রয়েছে তা বোঝানোর কথা বলা হবে।
২) সংখ্যালঘু এলাকায় ভোটের ফল খারাপ হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা। এটা দেখার জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক দলের সংখ্যালঘু মুখকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল পঞ্চায়েতের কাজেও একাধিক সংখ্যালঘু নেতাকে সামনের সারিতে দেখা যেতে পারে।
৩) পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কড়া হচ্ছে দল। প্রার্থী বাছাইয়ে দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত তা জানিয়ে দেওয়া হবে আরও একবার। পুরনো কারা ভোটে লড়ার সুযোগ পাবেন সেক্ষেত্রে মাপকাঠি হবে তাদের পারফরম্যান্স। গত ভোটে ও ওই পঞ্চায়েতের কাজে।
৪) পঞ্চায়েত ভোটে দল কোনও অশান্তি মেনে নেবে না৷ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রশাসন যে এবার কঠোর ভূমিকা পালন করবে তা আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
৫) দুর্নীতি প্রশ্নে দলের অবস্থান জিরো টলারেন্স। যে বা যারা এই কাজে যুক্ত থাকবেন দল তাঁদের পাশে থাকবে না।
৬) দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি থেকে মানুষের চাহিদা কী তা জেনেছে দল। একইসঙ্গে কোথায় কোথায় সমস্যা তাও জেনেছে দল। এই অবস্থায় সেই কাজ শেষ করতে এখন থেকেই ঝাঁপাবে দল। দলের কেউ তাতে বাধা দিলে কড়া শাস্তির নিদান।
৭) এছাড়া একাধিক প্রচারমূলক কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
৮) জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিজেপি বিরোধিতায় সরব হবে তৃণমূল। তবে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সাধারণ মানুষের অসুবিধাকে তুলে ধরতে চায় শাসক দল।
৯) কংগ্রেস নিয়ে ছুৎমার্গ না থাকলেও, সাগরদিঘির 'অশুভ' জোটকে প্রচারে রাখতে চায় বাংলার শাসক দল। সেক্ষেত্রে নিজ নিজ শক্তিশালী জায়গায় ফর্মূলায় জোর।
১০) গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো রাজ্যে ভালো ফল না হলেও সংগঠনের কাজ থেকে পিছিয়ে আসবে না তৃণমূল কংগ্রেস।
সর্বোপরি পঞ্চায়েত ভোটকে অ্যাসিড টেস্ট ধরে নিয়ে লাগাতার মানুষের সমস্যাকে ইস্যু করে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নেওয়া হতে পারে এই বৈঠক থেকে।, এমনটাই ঘাসফুল সূত্রে খবর।
মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata) বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার (Contempt of Court) মামলা দায়ের করতে চেয়ে হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Bhattacharya)। হাইকোর্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করুক, এমনটাই আবেদন বিকাশবাবুর। এই মর্মে বিচারপতি টি শিবাজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই আইনজীবী। তাঁর আবেদন হলফনামা আকারে জমা করতে নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের। সেই মামলা গ্রহণ হবে কিনা বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত বলেই সূত্রের খবর। মঙ্গলবার আলিপুর জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যর কয়েকটি অংশে আপত্তি তুলে আদালতের দ্বারস্থ বিকাশরঞ্জন।
সেই মন্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ এই আইনজীবীর। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ-কাণ্ডে চাকরিহারাদের পাশে ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম মন্তব্য, 'যাঁদের চাকরি গিয়েছে আইনি পথে তাঁদের চাকরি ফেরানো হোক। দরকারে আবার ওদের পরীক্ষা নেওয়া হোক। আদালত যেভাবে বলবে সরকার সেভাবেই ব্যবস্থা করবে।' এখানেই আপত্তি তোলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তার প্রশ্ন, 'মুখ্যমন্ত্রীর মতো পদে থেকে কীভাবে এই ধরনের মন্তব্য বা আবেদন করা যায়?'
পাশাপাশি তাঁর বক্তব্যের শেষদিকে জজ কোর্টের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি প্রধান বিচারপতিকে সামনে পেলাম না। সুব্রত দা-কে পেলাম, আমি শুধু বললাম এটা আমার মনের ভাবনা।' এই মন্তব্যর বিরোধিতায় সরব বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এবারে হলফনামা আকারে বিকাশবাবুর আবেদন জমা পড়ার পর আদৌ এই মামলা গ্রহণ হবে কিনা, তার জন্য অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার।
সিপিএম-কে সাফ করেছি, এবার পিসি-ভাইপোকে গ্যারেজ করবো। নন্দীগ্রামের শহিদ দিবস (Nandigram Diwas) পালনের মঞ্চ থেকে এই হুঙ্কার ছাড়লেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। তাঁর দাবি, 'পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্র ধ্বংস। এমনি তো ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। আমি এই শহিদ বেদিকে সামনে রেখে বলে গেলাম, সিপিএম-কে সাফ করেছি। এবার পিসি-ভাইপোকে একেবারে গ্যারাজ করবো। আগামি বছর দেখা হবে, বাইরে থাকবে না ভিতরে থাকবে।' যদিও শুভেন্দুর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Minister Chandrima Bhattacharya)।
মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, 'লক্ষ্মণ শেঠদের যা অবস্থা হয়েছে আপনাদেরও সেই অবস্থা হবে।' এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস উদযাপনের অনুমতি প্রাথমিক ভাবে বিজেপিকে দেয়নি রাজ্য পুলিস। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বঙ্গ বিজেপি। আদালত শর্তাধীনে এবং সময় বেঁধে দিয়ে বিজেপিকে নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালনের অনুমতি দেয়।
মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, 'শহিদ বেদীতে মাল্যদানের অধিকার সবার আছে। সব রাজনৈতিক দলের আছে। সব মানুষের আছে, যাবেন মালা দেবেন চলে যাবে। কী এমন যুদ্ধ এখানে? কেন্দ্রীয় বাহিনী, হাইকোর্ট, সাজোসাজো রব, যুদ্ধ হবে। মানুষ খেতে পায় না, চাকরি পায় না। বাংলার ছেলেরা গুজরাত, কর্নাটকে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন।'
শুভেন্দুর এই দাবিকে খোঁচা দেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, 'অহঙ্কার পতনের কারণ। সেই অহং বারবার দেখা যাচ্ছে। ২০২৪-র ১৪ মার্চের আগে উনি গ্যারাজ করবেন সেই ক্ষমতা এখনও হয়নি। নিজে গ্যারাজড হবেন, না কোথায় থাকবেন আগে নিজে ঠিক করুন। শহিদদের স্মরণ করতে এসেছেন, সেটা উপলক্ষ্য মাত্র। আসল কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ।'
এই পার্থ দা-কে (Partha Chatterjee) চিনি না। এই পার্থ দা আমার কাছে নতুন। দীর্ঘদিন পার্থ দা-র সঙ্গে রাজনীতি করছি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবতে পারি না টাকা নিয়ে কেউ চাকরি (Education Scam) দেবে। এটা অত্যন্ত লজ্জার। মঙ্গলবার এই মন্তব্য করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) । তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী জুড়েছেন, 'যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক নয়। মিডিয়া ইনভেস্টিগেশন এক জিনিস আর আদালতে যতক্ষণ না চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ সে দোষী নয়, তার আগে পর্যন্ত আন্ডার ট্রায়াল।'
মঙ্গলবার চেতলা গার্লস স্কুলের সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী। সেই সময়েই রাজ্যে আলোড়ন ফেলে দেওয়া শিক্ষা দুর্নীতি প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আমরা সকলেই চাই বেকার ছেলেদের চাকরি হোক, পার্টির ছেলেদের চাকরি হোক। কিন্তু কারও অধিকার হরণ করে যদি সত্যি সত্যি চাকরি দিয়ে থাকে তবে সেটা অন্যায়। তবে যতক্ষণ না মহামান্য আদালত বলছেন সে দোষী, ততক্ষণ সে বিচারাধীন। মিডিয়া কী বলছে, সূত্র কী বলছে সে বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না।'
তাঁর দাবি, 'এটা শাসক দলের দুর্নীতি নয়। কোনও ব্যক্তি অন্যায় করলে বা দুর্নীতি করলে সেটা পাপ। যেকোনও দুর্নীতি পাপ। আমরা মানুষের কেয়ার টেকার। মানুষ আমাদের অধিকার দিয়েছে তাঁদের কাজ করার। দুর্নীতি অন্যায় এবং দুর্নীতি যারা করেন তাঁরাও অন্যায় করেন।'
দেবশ্রী রায়ের করা ফেসবুক পোস্টে চক্রান্তের গন্ধ পেয়ে অভিনেত্রীকে আইনি নোটিস পাঠালেন শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovon Chatterjee)। জানা গিয়েছে, দেবশ্রী রায় (Debashree Ray) ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে সামাজিক মাধ্যমে (Facebook Post) শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছু ছবি শেয়ার করেন। সেই ছবি শেয়ারের জেরে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি জনমানসে খারাপ প্রভাব পড়েছে এই অভিযোগ তুলে টলিউড অভিনেত্রীকে আইনি নোটিস পাঠান শোভন চট্টোপাধ্যায়।
এই প্রসঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় শোভনবাবু বলেন, 'আমার কয়েকজন পরিচিত দেবশ্রী রায়ের দুটি প্রোফাইল থেকে কতগুলো ফেসবুক পোস্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আমার ছবি দিয়ে আমার অজ্ঞাতে, সম্মতি ছাড়াই, আমার পারিবারিক অনুষ্ঠানে, আমার পদ ব্যবহার করে ২০১৭, ১৮, ১৯ সালে সঙ্গে মেয়র, সঙ্গে শোভন--এসব উল্লেখ করে পোস্টগুলো করা হয়েছে। ছবিগুলো দেখলে মনে হবে ঘটনাগুলো ২০১৭,১৮,১৯ সালে ঘটেছে। কিন্তু ঘটনা অনেক আগের। আমি এর পিছনে পরিকল্পিত চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছি। প্রসঙ্গত দেবশ্রী রায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মানহানির মামলা করেছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে। আদালত সেই মামলা খারিজ করেছে। আমি এর জন্য দেবশ্রী রায়কে নির্দিষ্টভাবে আইনি নোটিস পাঠিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্রান্ত হলে, যতদূর যাওয়ার আমি সেভাবে ব্যবস্থা নেবো।'
যদিও এবিষয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোন উত্তর মেলেনি।
সংসদে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপি-বিরোধী একটা অংশ জোট বাঁধছে। সেই অংশে উদ্ধব শিবসেনা থেকে শুরু করে এনসিপি এবং বাম দলগুলো রয়েছে। রয়েছে তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকেও। যদিও এই অংশে খানিকটা ধরি মাছ, না ছুঁই পানি কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবিরের একাধিক প্রতিবাদ-আন্দোলনে টিএমসি-র অনুপস্থিতি দেখে এমনটাই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলের। তবে আগামি দিনে উত্তর প্রদেশের প্রধান বিরোধী দল অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বিজেপি-বিরোধী ফোরামে দেখা যেতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিশেষ সূত্র এই দাবি করেছে।
জানা গিয়েছে, বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে মজবুত করার লক্ষ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসছেন। তাও আবার মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে। সূত্রের খবর, আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে প্রস্তাবিত ওই বৈঠক হওয়ার কথা। সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি কিরণময় নন্দ জানান, 'সমাজবাদী পার্টির জাতীয় কর্মসমিতির তিনদিনের বৈঠকে যোগ দিতে অখিলেশ যাদব শুক্রবার দুপুরে কলকাতায় পৌঁছবেন। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার কথা।'
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটকে আরও মজবুত করার বিষয়ে দু'জনের মধ্যে আলোচনা হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারীরা। প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে বিরোধী ঐক্যকে মজবুত করার ডাক দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি বেশ কিছুকাল যাবত নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করছে। গত বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সমাজবাদী পার্টির হয়ে বারাণসীতে প্রচারে গিয়েছিলেন। একুশের ভোটে তৃণমূলের হয়ে প্রচার সারতে দেখা গিয়েছে সপা-র রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চনকে। এই সমন্বয়কে আগামি দিনে কীভাবে আরও মজবুত করা যায়? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বৈঠকে বসছেন মমতা-অখিলেশ, এমনটাই নাকি সূত্রের খবর।
ভাঙড়ের (Bhangar) আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে (Naushad Siddiqui) আটকাতে শওকত মোল্লাকে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ক্যানিং পূর্বের (Canning Purba) বিধায়ককে এভাবে ভাঙড়ে নিয়ে এসে আরাবুল-কাইজারদের মাথায় বসানোয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা, ভাঙরের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভায় কি আইএসএফ-কে আটকাতে ব্যর্থ আরাবুল ও কাইজার জুটি?
জানা গিয়েছে, শওকতকে ভাঙড়ের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ায় একদমই খুশি নয় আরাবুল ও কাইজার। যদিও শনিবার শাসক দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির বাড়িতে বৈঠক হয়েছে ভাঙর প্রসঙ্গে। শওকত মোল্লা ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরাবুল এবং কাইজার। কিন্তু ভাঙর তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, জোর করে তাঁদের মাথায় বসানো হল শওকত মোল্লাকে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে কি ভাঙড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বাড়বে? ঘুরিয়ে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল আরাবুল ইসলামকে। তিনি স্পষ্ট জানান, 'ভাঙড়ে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি আমাদের মতো করেই নেব।' সংখ্যালঘু ভোট কি তৃণমূলের থেকে সরছে? এই প্রশ্নের জবাবে জানান, 'এরম কোনও ব্যাপার নেই।' একইভাবে ভাঙড়ের অপর এক তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদকে বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, 'কী আলোচনা, বাইরে সংবাদ মাধ্যমকে বলা বারণ রয়েছে। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। বসে শুধু আলোচনা খাওয়া-দাওয়া হয়েছে।'
এদিন বৈঠক সেরে বেড়িয়ে শওকত মোল্লা বলেন, 'আইএসএফ জেতার পর ভাঙড়ে উন্নয়ন স্তব্ধ। আমরা সবাই একসঙ্গে নজর দেব সার্বিক শান্তি ও উন্নয়নে। সেভাবেই রাজ্য সভাপতি আমাদের নির্দেশ দেন। দলকে সাংগঠনিক ভাবে আরও শক্তিশালী করার দায়িত্ব সবার উপর পড়েছে। ভাঙরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কোনও শব্দ নেই। আমরা সবাই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী।'
এখন একটি প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে শওকত কি পারবে গোষ্ঠী কেন্দল সামাল দিতে? কারণ একসময় দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাম নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই শওকত মোল্লা। ডান হাত ছিলেন তৎকালীন বাম নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার। তখন তাঁর সঙ্গে জোর লড়াই ছিল এই আরাবুল-কাইজারদের। সেই পুরনো শত্রুতা ভুলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কি সম্ভব একসঙ্গে কাজ করা?
প্রসূন গুপ্ত: সাগরদিঘির ভোটের (Sagardighi Bye Poll) ফল দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের ফলের পর মেজাজও ঠিক ছিল না তাঁর। মহাজোট নিয়ে ব্যক্ত করেন তাঁর বক্তব্য এবং অধীর চৌধুরীকে (Adhir Chowdhury) আক্রমণ করেন তিনি। এরপর থেকেই শুরু নানা বিতর্ক। প্রথমত কংগ্রেসের নেতা এবং মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী মমতার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ করে গ্রেফতার হয়েছিলেন। গ্রেফতারির দিনেই ছাড়া পেয়ে তিনি মাথা মুড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেন মমতা সরকারকে (Mamata Government) উৎখাত না করা পর্যন্ত তিনি মাথায় চুল গজাতে দেবেন না।
অর্থাৎ রাজ্য রাজনীতিতে নাটক তুঙ্গে। এরপরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরাসরি সহকর্মীদের প্রশ্ন করেন যে, সাগরদিঘিতে সংখ্যালঘু ভোট কমল কেন? তাতে অনেকেই অনেক উত্তর দেন। কেউ বলেন, প্রার্থী পছন্দ হয়নি এলাকার মানুষের। এই উত্তরে মোটেই খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দলের সংখ্যালঘু মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, যে সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে গিয়ে সঠিক তথ্য নিয়ে আসতে।
মমতা কেন বাংলার সব রাজনৈতিক দলই জানে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩২% কাজেই এই ভোটকে অগ্রাহ্য করা যায় না। একসময়ে বামেরা এই ভোটের সিংহভাগ পেত। এরপর নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর এই ভোট ক্রমশই তৃণমূলে চলে যায়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বহু আসন বিজেপির কাছে হারায়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, যেখানে মুসলিম ভোট সেখানেই তৃণমূল জিতেছে।
মোদী ঝড়ে এই নির্বাচনে দক্ষিণ ভারত ছাড়া এক বাংলার বিজেপির থেকে তৃণমূল ৪টি আসন বেশি পেয়েছিলো। ২১-এর নির্বাচনে একবগ্গা মুসলিম ভোট পেয়েছিলো মমতা। কাজেই তিনি সাগরদিঘির ফলাফলে ক্ষুব্ধ হবেন তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে। তিনি জানেন ফের নন্দীগ্রাম ফর্মুলা যদি ফের পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘির রূপ নিয়ে আসে তবে সর্বনাশ অনিবার্য। কাজেই তৃণমূল সুপ্রিমো যেভাবেই হোক সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পেতে মরিয়া।
আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামিয়েছেন নেতাদের এবং পাক্কা খবরের অপেক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসূন গুপ্ত: সম্প্রতি দুটি ঘটনা কংগ্রেস, বাম ও বিজেপিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছিলো। প্রথমটি সাগরদিঘির উপনির্বাচন, দ্বিতীয়টি কৌস্তভ কাণ্ড। দুটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সমালোচনার জেরে তৃণমূল খানিক বিপাকে পড়ায় খুশির হওয়া বিরোধী শিবিরে। ভোটের ফলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, 'সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোট'। তিনি অভিযোগ করেন, 'এক সময়ে বামেদের ভোট যেমন বিজেপিতে গিয়েছিল, তেমন এবারে বিজেপির ভোট এসেছে বাম-কংগ্রেসের জোটে।'
তাঁর এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয় নিশ্চয়। কিন্তু এতে অবাক হওয়ার মতো নতুন ঘটনা কিছু নেই। ১৯৭৭-এ ইন্দিরাকে হারাতে এবং ১৯৮৯-এ রাজীব সরকারের পতন ঘটাতে বামেরা দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। মমতা তো সেই ঘটনা জানেন। কিন্তু এই ধরণের জোট কতদিন টিকে থাকে? বিজেপি বুঝেছে তাদের ঘোষিত স্লোগান কংগ্রেস মুক্ত দেশ। সেক্ষেত্রে বাংলায় কংগ্রেস শূন্য থেকে একটি আসন পাওয়া এবং গেরুয়া শিবিরের তৃতীয় স্থানে চলে যাওয়া মোটেই সুখকর নয়। এছাড়া কৌস্তভ-কাণ্ডে মানবিকতার খাতিরেই হোক বা রাজনীতিগত ভাবেই হোক তারা প্রাথমিক ভাবে কৌস্তভের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু রবিবার সেই অবস্থান থেকে একেবারেই সরে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের অন্দরে সাগরদিঘি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা দেখেছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান থেকে এবার ভোটে শতাংশের বিচারে বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। তাদের পূর্বতন ভোটের নিরিখে ১৯ হাজার ভোট কমেছে। প্রশ্ন উঠেছে এই ভোট গেলো কার বাক্সে? যদি জোটের বাক্সে গিয়ে থাকে তবে ভাবতেই হচ্ছে। আবার যদি ওই ভোট তৃণমূল পেয়ে থাকে তবে শুভেন্দুর ভাষায় 'সনাতনী' ভোট পাওয়া শুরু করলো কি তৃণমূল?
কাজেই দেরি না করে দলের অন্দরে স্থির হয়েছে তৃণমূল বিরোধী ঐক্য সম্মিলিত আন্দোলন করে বাম-কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেওয়া যাবে না। কৌস্তভ কাণ্ডে তারা আর নেই। অবশ্য মিডিয়ার সামনে তারা জানিয়েছে যে তাদের আটকানোর জন্য তৃণমূলই, কংগ্রেস-বামেদের 'স্পেস' দিচ্ছে।