বিহারেই হোক বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের বৈঠক। নীতীশ-তেজস্বীকে পাশে বসিয়ে এই প্রস্তাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে ছোট একটা বৈঠক তারপরে সবাই মিলে বসে একটা বার্তা দেওয়া যে বিজেপি-বিরোধী সব দল এক। এভাবেই বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে উদ্যোগী হয়ে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই সময় তাঁর পাশে হাসিমুখে দেখা গিয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং ডেপুটি সিএম তেজস্বী যাদবকে।
তিনি জানান, 'বিজেপি খুব বড় হিরো হয়ে গিয়েছে, আমি চাই ওরা জিরো হয়ে যাক। নীতীশজি সবার সঙ্গে কথা বলছে, আমিও বলছি। সবাই মিলে বসে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবো।' এদিকে জোট ফর্মুলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের মিশন, ভিশন পরিষ্কার। সবাই মিলে একসঙ্গে বসুক, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।'
নবান্নে হওয়া এই বৈঠক প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ জানান, 'পরবর্তীকালে কারা কারা জেলে যাবে, জেলে গেলে তারপর কী হবে, সেসব নিয়ে বৈঠক।' সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'বিরোধীরা একজোট হতে চাইছে, এই সমীকরণে তৃণমূল কংগ্রেস নেই। আদানি-কাণ্ডে তৃণমূলের প্রতিবাদ দেখা যায়নি। এছাড়া দুই পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একে অপরের সঙ্গে দেখা করতেই পারে।'
মঙ্গলবার কোচবিহারের (CoochBehar) দিনহাটা থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই লক্ষে সোমবার কোচবিহার পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্মসূচি শুরুর ঠিক একদিন আগে টুইট করে অভিষেককে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার টুইট করে তিনি লেখেন, ‘তৃণমূল নব জোয়ার হল একটি প্রথম অভিনব রাজনৈতিক প্রয়াস। এই প্রয়াসের জন্য আমি অভিষেক এবং দলের কর্মীদের জনসংযোগ যাত্রা শুরু করার জন্য আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। এই যাত্রা রাজ্যজুড়ে হবে।’ সোমবার বিকেলে কোচবিহার পৌঁছে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। পরদিন থেকে শুরু করবেন জনসংযোগ যাত্রা (Janasangjog Rally)।
এই কর্মসূচিতে আগামী ৬০ দিনের সূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করে ৬০তম দিনে তা সাগরে এসে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের এই কর্মসূচর ঘোষণা করেন অভিষেক। পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী খুঁজতে ২৫০টি জনসভা করবেন তিনি, সঙ্গে হবে ৬০টি অধিবেশন। ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার পাশাপাশি ৩,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করবেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তিনি অস্থায়ী ছাউনিতে রাত্রিযাপন করবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে রবিবার রাজ্য এবং জেলাস্তরে নির্বাচনী কমিটি গঠন করল তৃণমূল।
রাজ্যস্তরের এবং জেলাস্তরের কমিটির কাজ কী হবে সে বিষয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের ২২ জন শীর্ষ নেতা। জেলাভিত্তিক ৮টি জোন তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক জোনের একটি করে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে ৬ থেকে ১০ জন তৃণমূল নেতাকে। এই কমিটিগুলির কাজ হবে গোটা প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তাঁরা যাতে সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামবাংলার মতামত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ইনচার্জ এবং কো-ইনচার্জদের বিশেষভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। রাজ্যস্তরের যে নির্বাচনী কমিটি তৈরি করা হয়েছে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। কমিটির বাকি সদস্যেরা হলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মানস ভুইয়াঁ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ ২২ জন নেতা। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২২টি জেলাকে ৮টি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
প্রসূন গুপ্ত: বিজেপি বিরোধী জোট করতে তৎপর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তিনি হঠাৎ কেন এতটা উৎসাহী, এই নিয়ে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। সোমবার তিনি এলেন নবান্নে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করতে। বৈঠক একেবারেই একান্তে। অন্যদিকে কংগ্রেস চেষ্টা করছে বিজেপি-বিরোধী জোটকে একত্রিত করতে। একটা সুবিধা কংগ্রেসের আছে, তাদের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ বিহারে আরজেডি-জনতা দল(ইউ)-এর সঙ্গে জোট। ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-র সঙ্গে জোট, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র সঙ্গে, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব শিবসেনা ও এনসিপির সঙ্গে জোট।
তবে উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদব এবং বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে অনীহা। হাত শিবিরের যোগ দিতে অনীহা তেলেঙ্গানার টিআরএস, আপ পার্টিরও। এদের সমস্যা অনেক ১) মোদী বিরোধিতার জায়গা থাকলেও কংগ্রেসকে অপছন্দ ২) প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে? ৩) জোট হলে আসন সমঝোতা করতে নারাজ অনেকেই। পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর ভারত যাত্রা বেশ কিছুটা সার্থক হলেও রাহুল নিজে বিরোধী নেতা হতে চাইছেন না। তাঁরা তুলে ধরছেন মালিকার্জুন খাড়গেকে। তিনি দলিত নেতা কাজেই গ্রহণযোগ্যতা নাকি তাঁরই বেশি। এই হয়তো-নয়তো নিয়ে রাজনীতে কতটা সার্থকতা আসে তাই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলে।
তবুও শরদ পাওয়ারের মত প্রবীণ নেতা মনে করেন যে বিরোধী জোটে মমতাকে দরকার, দরকার অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ফলে অভিজ্ঞ নীতীশ কুমার ময়দানে নেমেছেন। আজ যেমন তিনি মমতার মুখোমুখি তেমনি কলকাতার পরে তিনি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে নিয়ে লখনৌ যাচ্ছেন সমাজবাদী দলের সঙ্গে কথা বলতে। এটা বাস্তব জওহরলাল নেহেরুর পরে টানা তিনবার কেউ বা কোনও দল দিল্লির মসনদ ধরে রাখতে পারেনি। পারাটাও কঠিন কারণ ত্রুটি থাকবেই কাজে এবং তাকে কেন্দ্র করে বিরোধী হাওয়া ওঠে। এটা বাস্তব আজকেও এত সমস্যার পরেও নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা যথেষ্ট ভাল। কিন্তু সবটাই ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মায় চলে না।
যদিও উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতীশের দীর্ঘদিনের নজর দিল্লির মসনদ। এদিকে, মোদী মন্তব্যর জেরে রাহুল গান্ধীর জেল যাত্রা প্রায় নিশ্চিত। যদি সত্যি সেরকম কোনও ঘটনা ঘটে, তবে টেনিস খেলার ভাষায় বলতেই হবে 'অ্যাডভান্টেজ রাহুল'।
পঞ্চায়েত ভোটকে (Panchayat Vote) শিয়রে রেখে জনসংযোগ বাড়াতে সম্প্রতি জোড়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। নাম দেওয়া হয়েছে 'জনজোয়ার' ও 'গ্রাম বাংলার মতামত।' অভিষেকের এই কর্মসূচির প্রথম সভাস্থল কোচবিহারের সভার আগেই বড় ভাঙন তৃণমূলে। সূত্রের খবর, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ প্রায় এক হাজার কর্মী শাসকদল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) নাম লিখিয়েছেন।
যার পরে সিএন-ডিজিটালকে কোচবিহারের বিজেপি জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, 'শুরুর আগেই ভাটা জোয়ারে!' যদিও এসবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি সোমবার সিএন ডিজিটালকে বলেন, 'এসব করে বা প্রচার করে বিজেপি কিছুই করতে পারবে না। চক্রান্ত করে অভিষেকের সভা বানচাল করার ধান্দা বিজেপির, আর কিছুই না।'
পঞ্চায়েতের আগে ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ এই নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে এই কর্মসূচির শুভ সূচনা। ঠিক তার আগে কোচবিহারের হাজারের অধিক কর্মী, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিলেন বিজেপিতে। মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মৃত্যুঞ্জয় রায় ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জীব চন্দ্র রায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে শাসকদল।
মমতা নয় শুধু বিরোধী জোটকে এক করার চেষ্টা জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী (Bihar Chief Minister) নীতিশ কুমারের (Nitish Kumar)। সেজন্যই কি মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে? সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর ২ টোর সময় বৈঠকে বসবেন দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বলাই বাহুল্য এই বৈঠকের প্রসঙ্গ হতে পারে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। হাতে মাত্র এক বছর।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর নবান্নে বৈঠকে বসবেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে এখনও কিছু জানা না গেলেও, বিরোধী জোট নিয়েই দুই রাজনীতিকের আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। অন্যদিকে, সোমবারই লখনউয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করার কথা নীতিশের।
সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতিশ। রাজধানীতে দাঁড়িয়ে নীতিশ জানিয়েছিলেন, বিরোধী জোট গঠনের উদ্দেশ্যে তিনি সব নেতানেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই সফরে নীতিশের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বিরোধী জোট নিয়ে বাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
তবে সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় আলাদা করে উল্লিখিত হয় মমতা এবং অখিলেশের কথা। কারণ বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান সুস্পষ্ট হলেও বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল এবং সপা। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পর অবশ্য খড়্গের ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠায় তৃণমূল। ইদানীং বিজেপির বিরুদ্ধে সকলকে এক হওয়ার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও। তিনি বহুবার জানিয়েছেন, বিরোধী দলগুলি এক হলে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না।
জোড়া কর্মসূচির মাধ্যমে, পঞ্চায়েতে (Panchayet) জনতার মত নিয়ে প্রার্থী (Candidate) বাছাইয়ের ঘোষণা তৃণমূলের (TMC)। বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তৃণমূলের এই জোড়া কর্মসূচিকে কটাক্ষ বাম-ডান দুপক্ষেরই। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এই জোড়া দুটি কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, 'এই কর্মসূচি দুটির নাম দেওয়া হয়েছে জনজোয়ার ও গ্রাম বাংলার মতামত।' অভিষেক এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, দুমাস ধরে এই কর্মসূচি চলবে, রাজ্যের প্রতিটি জেলায়। তিনি দায়িত্ব নিয়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করবেন। প্রতিটি জেলায় দিনে চারটি-পাঁচটি করে সভা হবে। তারপর রাতে ওই জেলার সমস্ত জেলা পরিষদ সদস্য, সভাপতি, বুথ সভাপতিদের নিয়ে গ্রাম বাংলার মতামত অধিবেশন হবে। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন ওই এলাকার তিন হাজার মানুষ। ওখানেই গোপন ব্যালট ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হবে।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, যদি কোনও এলাকার স্থানীয়রা বলেন, ওই অঞ্চলে সিপিএমের প্রার্থী কাজ করেছে এবং তাঁরা সিপিএমের প্রার্থীকেই চায়। তবে সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির সঙ্গে অবশ্যই কথা বলবেন তিনি। তৃণমূলের এই জোড়া কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছেন বাম-বিজেপি দু'পক্ষই।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের জোড়া কর্মসূচি বিষয়ে সিপিএম-র রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সিএন ডিজিটালকে বলেন, 'সিপিএম অভিষেকের কথার গুরুত্ব দিতে নারাজ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। তৃণমূল একটা দুর্নীতিগ্রস্ত দল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে দুর্নীতিগ্রস্ত সেটা তিনি আদালতে গিয়ে প্রমাণ করেছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থার জেরার মুখে যাতে পড়তে না হয়, সেজন্য আদালতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন দুর্নীতিগ্রস্ত। এসব কর্মসূচি ভাওতা। গ্রাম বাংলার মানুষ এসব ভাওতাবাজিতে পা দেবেন না বলে আশা করি।'
পাশাপাশি তৃণমূলের এই জোড়া কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপিও। বৃহস্পতিবার সিএন ডিজিটালকে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'প্রকাশ্যে এসব কিছু করার আগে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট সামনে আনতে বলুন। আগে সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা যারা প্রকাশ্যে আন্দোলন করছে তাঁদের চাকরি দিতে বলুন। এত বছর ধরে যারা বঞ্চিত তাঁদের চাকরি দিতে বলুন। এক কথায় তৃণমূল একটি লুটেরাদের দল। ওদের মোক্ষম টার্গেট লুট করা।'
মণি ভট্টাচার্যঃ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) করা মুকুল রায়কে (Mukul Roy) থ্রেট তত্ত্ব উড়িয়ে, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক। মুকুল রায় প্রসঙ্গে তিনি একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্যও করেন, তিনি বলেন, 'ওকে হয়ত কেউ থ্রেট করেছে।' এরপরে এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে সিএন ডিজিটালকে জানালেন, 'মুকুল রায় কোন বাচ্চা ছেলে নয়, উনি বঙ্গ রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। কাউকে থ্রেট করে নিয়ে যাওয়া হবে এতটা বাচ্চা মুকুল রায় নন।' তিনি আরও বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী হয়তো থ্রেট করে তাঁকে তৃণমূলে নিয়ে গিয়েছিলেন, এছাড়া বঙ্গ রাজনীতিতে ওনার গ্রহণযোগ্যতা কী আছে?'
এছাড়া মুকুল রায়ের অন্তর্ধান প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ এদিন স্পষ্ট বলেন, 'মুকুল রায়ের রাজনৈতিক কোন দাম এই মুহূর্তে বাংলায় নেই, তিনি এখন বেওয়ারিশ নেতা।' যদিও দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, 'কখনও ওনার ছেলে বলছেন বাবা কিডন্যাপ হয়েছেন, কখনও উনি বলছেন আমি ঠিক আছি, আবার ওনার ছেলে বলছেন উনি নাকি অসুস্থ। পাল্টা মুকুল রায় বলছেন আমি সুস্থ, আমি বিজেপি করি। উনি একজন বিধায়ক উনি উনার ইচ্ছে মত দল করতে পারেন।'
রাজনৈতিক ঘটনাচক্রে ২০২১ সালে জুন মাসে, বিজেপিতে কেউ থাকতে পারবে না বলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে মুকুল ফের দাবি করছেন, তিনি বিজেপির বিধায়ক, দলবদল প্রসঙ্গে সিএন-ডিজিটালকে বৃহস্পতিবার দিলীপ ঘোষ আরও বলেন যে, 'মুকুল রায় দীর্ঘ এক-দেড় বছর রাজনীতির বাইরে ছিলেন, কোনও ভাবেই সক্রিয় রাজনীতির মধ্যে ছিলেন না তিনি। তখন কে তাঁর খোঁজ নিয়েছে, তখন তাঁর খোঁজ নেননি কেউই।' দলবদল প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার সিএন-ডিজিটালকে আরও বলেন, 'মুকুল রায় যখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন। সেই সময় আমাদের বিজেপির মনবল নষ্ট করেছেন এবং বিজেপির অনেক অসম্মান করেছেন। এখন তাঁকে বিজেপিতে নেওয়া হবে কিনা! সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। সে বিষয়ে বিজেপির উচ্চ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।'
তৃণমূল (TMC) ভালো জায়গায় নেই, বিজেপি (BJP) তুলনামূলক ভালো ফল করেছে, দিল্লিতে (Delhi) সাংবাদিক বৈঠক করে একপ্রকার বিজেপির দিকে ঝুঁকলেন তিনি। সোমবার মুকুলের দিল্লি যাওয়ার পর মুকুলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। শুরু হয়েছিল বিজেপিতে যোগদানের গুঞ্জনও। যদিও সেসব গুঞ্জনকে সত্যি করে মঙ্গলবার মুকুল রায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান। তিনি সিএন-কে জানিয়েছিলেন, তিনি বিজেপিতে আছেন। এবং তিনি বিজেপিরই বিধায়ক।
যদিও মুকুল রায়ের এই প্রত্যাবর্তন বা প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিল বিজেপিরই একাংশ, এছাড়া বিজেপির একাংশ মুকুল রায়ের এই দলবদলের কথা নাপসন্দ বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার পুলিসের মাধ্যমে বাবা মুকুলের সঙ্গে কথা বলেন তার ছেলে শুভ্রাংশু রায়। এরপরে শুভ্রাংশু রায় জানান, 'জানি না বাবা কি বলছে, শুধু ছেলে হিসেবে চাই বাবা সুস্থ থাকুক।' বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুল রায় সরব হন তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে।
বুধবার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে মুকুল রায় সাংবাদিকদের জানান, তৃণমূলের এই অবস্থার জন্য তৃণমূলের নেতারা দায়ী। সব দুর্নীতিগ্রস্থ, যারা অপরাধ করেছে তাদের সাজা পাওয়া উচিত। এবং তিনি আরও বলেন, 'বিজেপি যদি আমাকে দায়িত্ব দেয়, আমি বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েতে মাঠে নামতে রাজি, সক্রিয় রাজনীতি করতে রাজি।' তিনি বলেন, 'আমি বিজেপিতে অনেক ভালো ফল করেছি।' পাশাপাশি তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে মুকুল রায় দিল্লিতে সাংবাদিকদের জানান, 'সেসমুয় একটু মানসিক চাপ ছিল, ঘটনাচক্রে ঘটে গেছে।' প্রসঙ্গত বুধবার মুকুল রায় ১০০ শতাংশ বিজেপির দিকে ঝুকলেও তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগদান করতে দেখা যায়নি।
প্রসূন গুপ্ত: মঙ্গলবার থেকে খবরের বাজারে চমকদার বিষয় মুকুল রায়। বেশ কিছুদিন ধরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন রাজনীতি থেকে। যদিও তিনি বর্তমানে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার বিধায়ক। বিধানসভা নির্বাচনের পরে তিনি হারান স্ত্রীকে। পরবর্তীতে ইনি সপুত্র যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তাঁকে বরণ করে নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধানসভার পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করতে চান। কিন্তু বিজেপির তরফে তীব্র আপত্তি এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা তুলে এই প্রস্তাব সায় পায়নি। তবে মুকুলের দলবদলের পরপরই আরও অনেক বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং এই তালিকায় নামজাদা নাম।
এদিকে, শোনা যায় মাঝেমধ্যে মুকুল রায় নাকি সল্টলেকের বাড়ি ছেড়ে কাঁচরাপাড়ায় নিজের বাড়িতে থাকছেন। তাঁর ছেলের দাবি, বাবা পারকিনসন ও ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। অবশ্য মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সামনে একাধিকবার সাক্ষৎকারে দিয়েছেন মুকুল রায়। সেই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। এরপরে সোমবার সকাল থেকে ফের খবরের শিরোনামে মুকুল রায়। তিনি হঠাৎ রবিবার সন্ধ্যা থেকে 'নিখোঁজ' হয়ে যান। পরে সিসিটিভিতে তাঁর ছবি ধরা পরে দিল্লি বিমানবন্দরে। জল্পনা ওঠে তিনি নাকি ফের ফেরত যাচ্ছেন বিজেপিতে। এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুত্র শুভ্রাংশু জানান, তাঁর বাবা অসুস্থ। তিনি পুলিসে অপহরণ ডায়রি করেন। অবশ্য ততক্ষণে মুকুল রায় রাজধানী নয়াদিল্লিতে। এরপর বিভিন্ন মিডিয়া জানাতে শুরু করে, মুকুল রায়ের সঙ্গে নাকি অমিত শাহের কথা হয়েছে।
যদিও মুকুল রায় সিএন-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেন, 'তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বিজেপির এমএলএ।' কিন্তু এখানেই রাজনৈতিক টুইস্ট। একেবারে দলের অন্দর থেকে জানা গিয়েছে, নাড্ডা বা শাহ মুকুলকে প্রাথমিকভাবে আমল দেয়নি। মুকুলের কথা হয়েছে নাকি পুরোনো বন্ধু কৈলাস বিজয়বর্গীর সঙ্গে। অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির একটি গোষ্ঠীর নাকি ঘোরতর আপত্তি আছে মুকুলের বিষয়। আবার অন্য গোষ্ঠীর ইচ্ছা তিনি ফিরুন। তবে জল্পনা যাই হোক না কেন, আজকের মুকুল কিন্তু প্রাক্তন মুকুলের ছায়া মাত্র। অতএব ...
মুকুল রায়ের (Mukul Roy) দাবি তিনি বিজেপিতেই (BJP) আছেন এবং তিনি বিজেপির বিধায়ক। যদিও মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশুর অভিযোগ, তাঁর বাবার মানসিক সুস্থতা নিয়ে। সোমবার সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ মুকুল রায় নিখোঁজ বলে দাবি করেন, তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর বাবা দিল্লিতে রয়েছেন। দিল্লি বিমানবন্দরে মুকুল রায়ের দিল্লি আগমন নিয়ে, সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, 'তিনি দিল্লি কাজে এসেছেন।'
যদিও তারপরেই জল্পনা শুরু হতে থাকে মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মুকুল রায়কে নিয়ে। মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু অবশ্যই তাঁর বাবাকে অপহরণের অভিযোগ করেন এবং বলেন, 'এটি বিজেপির চাল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বদনাম করার জন্য বিজেপি নোংরা খেলা খেলছে।' এরপরই মুকুল রায়ের খোঁজ শুরু করে দিল্লি এবং বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিস। ইতিমধ্যে ছেলে শুভ্রাংশুর সমস্ত দাবি খারিজ করে মঙ্গলবার রাতেই মুকুল রায় জানান, তিনি বিজেপির বিধায়ক এবং তিনি বিজেপিতেই ছিলেন। সিএনকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সিনের সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি যে তৃণমূলের পতাকা নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন সেই সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং ওটা একটা ঘটনাচক্রে ঘটে গিয়েছে। যদিও এসব কিছুর পরে মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের দাবি বাবার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
এছাড়া মঙ্গলবার, মুকুল রায় সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তৃণমূল ছেড়ে শুভ্রাংশুকেও বিজেপি করার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে মুকুল পুত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। আমি বিজেপিরই (BJP) লোক। কোনওদিন তৃণমূলে যাইনি। আমি অপহৃত নই, স্বেচ্ছায় দিল্লিতে। আমি বিজেপিতে যোগদান কেন করবো, আমি তো বিজেপির সদস্য। সিএন-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে অবশেষে এভাবেই নীরবতা ভাঙলেন মুকুল রায় (Mukul Ray)। তিনি জানান, 'কোনও অপহরণের অভিযোগ এক্ষেত্রে সঠিক নয়। বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মাঠে নামতে চান।' মুকুল জানান, 'শরীর খারাপ ছিল মাঝখানে অসুস্থ ছিলাম। বিজেপি আমাকে কর্মসূচি দিলেই উপস্থিত থাকবো। কোনওদিন তৃণমূলে যাইনি, যাবো না। আমি বিজেপিতে আছি এবং বিজেপির বিধায়ক। আমার সঙ্গে অমিত শাহর কথা হয়েছে।'
তৃণমূলে যোগদান ঘটনাচক্রে হয়েছিল। মানসিক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। মানসিক স্থিতি ঠিক ছিল না, তাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এই মন্তব্য এদিন সিএন-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানান মুকুল রায়। এদিকে, মুকুল রায় নিখোঁজ, এই খবরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। এদিন সকালে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে বাবার নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আনেন শুভ্রাংশু রায়। যদিও দিল্লি বিমান বন্দরে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের একটি সিসিটিভি ফুটেজ মুকুল-পুত্রের দাবিকে কিছুটা লঘু করে। তারপরেও শুভ্রাংশু রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি রওয়ানা দেয় বিধান নগর কমিশনারেটের একটি দল। এই বিষয়ে প্রতিবেদন লেখা অবধি মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুকে সিএন-র তরফে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা যায়নি।
মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই (CBI)। নির্দেশনামায় কোন কাণ্ডে এই তলব উল্লেখ নেই। দায়ের হওয়া এফআইআর-র ভিত্তিতে সৌমেন নন্দী বনাম রাজ্য সরকার মামলায় হাইকোর্টের ১৩ এপ্রিলের অর্ডার মেনে এই তলব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূল সাংসদকে (Abhishek Banerjee) নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে হবে মঙ্গলবার। এই মর্মেই নোটিস পৌঁছেছে রাজ্যের শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে। কিন্তু এই সিবিআই তলবেও বিজেপির ইন্ধন দেখছে তৃণমূল।
সোমবার দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি অভিষেক আতঙ্কে ভুগছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ওরা যেভাবে মাথা ঘামাচ্ছেন মানুষ বুঝতে পারছেন দিল্লিতে বিজেপির পথের কাঁটা তৃণমূল। তৃণমূলকে দমন করা, ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। তাই এজেন্সি দিয়ে, সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলছে। আজ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সিবিআইয়ের পাঠানো নোটিশে কোথাও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের যোগসূত্র নেই। কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ এপ্রিলের নির্দেশের প্রেক্ষিতেই এই নোটিশ।'
এদিকে, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই সিবিআই তলব প্রসঙ্গে জানান, 'মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকে জানলাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই ডেকেছে। সূত্রের খবর জীবনকৃষ্ণ সাহার সঙ্গে বিভিন্ন লোকের কথোপকথনের রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। আগামি দিনে উনাকে এই রেকর্ডগুলো কষ্ট দিতে পারে। ঘনিষ্ঠজনের নাম জড়িয়ে যেতে পারে। এখন যা রটছে, তা কিছু হলেও বটে। এমনকি সাম্প্রতিককালে সেগুলো সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।'
সোমবার বলতে সিবিআইয়ের হাতে তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA Arrest) জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতারি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব। রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করে তৃণমূলের এই জোড়া ধাক্কার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Home Minister Amit Shah) পদত্যাগ দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বঙ্গ সফরকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। তিনি জানান, '১৪ এপ্রিল দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় বিজেপির বৈঠক করতে এসেছিলেন। বৈঠক তিনি করতেই পারেন, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সংবিধানের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বলতে পারেন না, চব্বিশের ভোটে বাংলায় ৩৫টি আসন পাবে বিজেপি আর অপেক্ষা করতে হবে না বাংলার এই সরকার চলে যাবে। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চক্রান্ত করছেন। কোন আইনে তিনি গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার ফেলে দেবেন? এই কথা বলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি আমরা।' যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে পাল্টা খোঁচা দেন বিজেপি সাংসদ তথা বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তাঁর ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য, '৩৫টি আসন পাবে লোকসভায়। আগে ৫টি সাংসদ পেয়ে দেখাক বিজেপি।' দুর্নীতি দমন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'আমরা অনেক সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করেছি। দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করেছি। বাংলায় যার ইশারায় অমিত শাহ চলছেন তিনি বড় ডাকাত। কিছু একটা ঘটলেই কেন্দ্রীয় দল, কমিশন দিল্লি থেকে চলে আসছে। আমাদের উন্নয়নমূলক কাজও ওরা বন্ধ করে রেখেছে।'
এদিকে, সুকান্ত মজুমদার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি জানান, 'বিজেপি যদি ৫-এর বেশি সাংসদ পায় মুখ্যমন্ত্রী কি পদত্যাগ করবেন? এটুকু চ্যালেঞ্জ নিক, এত বড় উনি দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রী।' পাশাপাশি দুর্নীতি দমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা প্রশ্নে সুকান্ত মজুমদার জানান, 'এত চোর আগে কোথাও ধরা পড়েনি। জীবনকৃষ্ণ সাহা আজ ভিতরে গিয়েছেন, পিছনে আরও আসছেন। এত চোরকে ধরতে গেলে তো সিবিআই অফিসারদের রাজ্যে আসতেই হবে। তিন জন বিধায়ক, একজন জেলা সভাপতি গারদের ভিতরে ঢুকেছেন।'
এবার তৃণমূল (TMC) ছেড়ে কি বিজেপির (BJP) হাত ধরতে চাইছে বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিল বিমল গুরুং। রবিবার দার্জিলিংয়ের জিডিএনএস প্রেক্ষাগৃহে এক সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অনীত থাপার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূল বাদে সমস্ত দলের কাছেই গিয়েছে বিমল গুরুংয়ের আমন্ত্রনপত্র। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, গুরুংয়ের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চলেছে বিজেপি। পাহাড়ের রাজনীতিতে কি নতুন সমীকরণ, তা নিয়ে শুরু নয়া জল্পনা।
তৃণমূলকে বাদ দিয়ে এবার কি আবার গেরুয়া শিবিরে ভিড়তে চাইছেন গুরুং? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ রবিবারের সর্বদলীয় বৈঠকে গুরুং বিজেপিকে ডেকেছেন। বিজেপি তাতে যোগ দেবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সভাপতি কল্যাণ ডেওয়ান। তার পরেই নয়া সমীকরণের জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছে। সূত্রের খবর, রবিবারের বৈঠকে আসার আমন্ত্রণ পেয়েছে বিজেপি, হামরো পার্টি, জিএনএলএফ এবং সিপিআরএম। তাহলে কি তৃণমূল বিরোধীদের নিয়ে পাহাড়ে নতুন কোনও জোট গড়তে চাইছেন গুরুং?
রবিবারের বৈঠক নিয়ে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সভাপতি কল্যান দেওয়ান বলেন, ‘বিমল গুরুংদের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। পাহাড়ে দুর্নীতি দমনের স্বার্থে যদি গুরুং বা অনিত এবং তৃণমূল বিরোধী শক্তিগুলি একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয় তাহলে তা দলের অন্দরে আলোচনা করা হবে। তার কী নীতি বা দাবি রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। বিজেপির জোট সঙ্গী জিএনএলএফের সঙ্গেও আলোচনা হবে যে, বিমল-সহ বিরোধীদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা যাবে কি না।’ যদিও জিএনএলএফ বৈঠকের আমন্ত্রণপত্র পেয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বৈঠকে হাজির থাকবে কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র নীরজ জিম্বা। বৈঠক এবং বৈঠকে সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও। এ নিয়ে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এখন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’
রবিবারের সর্বদলীয় বৈঠকের ডাককে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না পাহাড়ের আর এক নেতা বিনয় তামাং। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোনও চিঠি আসেনি। যতদূর আমি জানি, অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টিও এমনআমন্ত্রণপত্র পায়নি। যদি চিঠি পাই তাহলে ভেবে দেখব যাব কি না।’ হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
দাপট ছিল অপরিসীম। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাতে ভাটার টান। পুরভোটে তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অনতিঅতীতে গুরুংয়ের অনশন-ধর্মঘটের কর্মসূচিও কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাহাড়ে জিটিএ ভোটের পর থেকে আরও কোণঠাসা অবস্থা গুরুংয়ের। এই পরিস্থিতিতে পাহা়ড়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন গুরুং। তাই কি তৃণমূলকে এড়িয়ে বিজেপির হাত ধরার চেষ্টা?
প্রসূন গুপ্ত: অমিত শাহ দুদিনের সফরে এসে একটাই জনসভা করেছেন, সেটা অনুব্রত-হীন বীরভূমে। শাহী ভাষণ শুনে কংগ্রেস-সিপিএম নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে দাবি করছেন, কী এমন ভাষণ দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যা যা বললেন তাতে নাকি আখেরে সুবিধা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা শাসক দল তৃণমূলের। অথচ শোনা গিয়েছে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক এবং চাঁচাছোলা বক্তব্য রেখেছেন অমিত শাহ। একাধিক ইস্যুতে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূলকে। রাজ্যজুড়ে প্রসাশনিক অব্যবস্থার জন্য দায়ী করেছেন 'দিদি'-কে। তিনি বলেছেন, 'আগামীতে মমতার পর তাঁর ভাতিজা মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না, কারণ ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।' বারবার ভাষণে আক্রমণ করেছেন 'পিসি-ভাইপোকে।' তবে কেন নেতিবাচক ভাবছে বাম-কংগ্রেস জোট?
জোট প্রতিনিধিরা বলছেন, লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে এমন ভাষণ তিনি হিসাব করে দিয়েছেন যাতে লাভ হবে মমতার। সম্প্রতি সাগরদিঘির নির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে আসন দখল করেছে বাম-কংগ্রেস জোট। মুর্শিদাবাদের এই বিধানসভা মুসলিম প্রধান। কাজেই এ রাজ্যের ৩২% মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হলে আখেরে লাভ বিজেপির। কিন্তু বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। হিন্দু ও মুসলিম ভোটের বেশিটাই গিয়েছে কংগ্রেসে, ধারণা জোটের। এটা যদি সারা রাজ্যের চিত্র হয়, তবে নাকি বিজেপি-তৃণমূল আগামীতে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে।
জোটের লোকেরা বলছে, মুসলিম ভোটে ফের যাতে তৃণমূলের বাক্সে আসে তার কারণে অমিতের বক্তব্যের কিছু অংশকে তারা তুলে ধরছে।
১) যেমন অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে
২) রাম নবমীর মিছিলে যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে
এই তিনটি লাইন কাদের উদ্দেশে বলার অপেক্ষা থাকছে কি? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে কারা ভয় পাবে? শঙ্কিত হয়ে ঠিক কাকে ভরসা করে ভোট দেবে সেই অংশ? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো সহজ ভাষায় দিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের কারবারীরা।