সৌমেন সুর: কবি সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু তাঁর 'কবিতা' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের 'সাহিত্য স্বরূপ' রচনাটি ছেপেছিলেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁর স্মৃতিচারণে উল্লেখ করে বলেছেন- লেখাটির উপসংহারে আমাদের আধুনিক কবিতার সঙ্গে 'হাড় বের করা', 'শিং ভাঙা', কাকের ঠোকর খাওয়া ক্ষতপৃষ্ট দুগ্ধহীন একটি গভীর তুলনা টেনে এনে রবীন্দ্রনাথ শেষে বাক্যটিতে বলেছিলেন যে, দৈবাৎ গরুটা যদি সুস্থ সুন্দর হয় তাহলে ভিক্টোরিয় যুগবতী অপবাদে লাঞ্ছিত হয়ে মরতে হবে সমালোচকদের কসাইখানায়।
ঠিক এভাবেই ছাপা হয়েছিল 'কবিতা' পত্রিকায়। কিন্তু কবির মৃত্যুর পরে রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশের যে কাজ চলছিল, তার মধ্যে দেখা গেল 'যুগবতী' কথাটা রূপান্তরিত হয়েছে 'যুগবতী'তে। বুদ্ধদেব বসু প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেষমেষ প্রতিবাদ কার্যকর হয়নি। যেহেতু প্রমাণ ছাড়া ইতিহাসে সিদ্ধ হয় না, তাই রবীন্দ্রনাথ রচিত একটা চমৎকার নতুন শব্দ স্থান পেল না বাংলা অভিধানে। রবীন্দ্রনাথের শব্দসৃষ্টির উদাহরণ আরও অনেক দেওয়া যায়, যা অভিধান প্রণেতারা গ্রহণ করেননি। কয়েকটি তুলে ধরলাম---
১) 'মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে' গানটিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে নৈরাশা গভীর অশ্রুজলে...'। এখানে নৈরাশা শব্দটি তাঁর বানানো। নিরাশায় যে আশাহীনতা, নৈরাশায় তার সঙ্গে যেন উদ্যমহীনতার ছায়া পড়েছে।
২) ওই যে শিমূল, ওই যে সজিনা, আমার বেঁধেছে ঋণে/কত যে আমার পাগলামি পাওয়া দিনে/কেটে গেছে বেলা শুধু চেয়ে থাকা মধুর মৈতালিতে... সেঁজুতি কাব্যের যাবার মুখে কবিতার এই উদ্ধৃত অংশে মৈতালি শব্দ নতুন। মিলনকে সুন্দর করা ও বর্ণনাকে মধুর করাই এর লক্ষ্য।
৩) আঁধার ঘনায় শূন্যে, নাহি জানে নাম/কী রুদ্র সন্ধানে সিন্ধু দুলিছে দুর্দাম-- এখানে দুর্দাম শব্দ কবির বানানো। দুর্দম শব্দের যেন জুড়ি এটা। এতে দুর্দামতা আছে, সেইসঙ্গে উদ্দামতা। (বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে)