
সৌমেন সুর: নিউ থিয়েটার্সকে প্রথম ভারতজোড়া খ্যাতি ও সাফল্য এনে দিয়েছিলেন দেবকী কুমার বসু। তাঁর তৈরি 'চণ্ডীদাস' ও 'পুরান ভগৎ' (হিন্দি) ছবি দুটি সে সময় যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের যথাযথ ব্যবহার ছবিতে এক নতুন মাত্রা এনে দেয়, সেটা দেবকী বসুর 'বিদ্যাপতি' প্রমাণ করে। তাঁর সিনেমাগুলিতে সংগীত পরিচালক রাইচাঁদ বড়ালের সুর এবং কৃষ্ণচন্দ্র দে'র গাওয়া গানগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।
সবাক যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের কাহিনী অবলম্বনে বহু সিনেমা তৈরী হয়। ১৯৩৫ সালে শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' গল্পটি প্রমথেশ বড়ুয়াকে খ্যাতি এনে দেয়। সিনেমায় উক্ত গল্পটির নায়ক দেবদাসের ব্যর্থ প্রেম ও মর্মান্তিক মৃত্যু, বাঙালির মধ্যবিত্ত মনকে বিষাদে ভরিয়ে দেয়। ছবিটি সুপারহিট হয়, এরপর প্রমথেশ বাবু 'মুক্তি' ছবি তৈরি করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছবির নায়িকা কানন দেবী। তাঁর অসামান্য অভিনয়, গান ও সৌন্দর্য তামাম সিনেমাপ্রেমী মানুষকে আকর্ষিত করে।
'পরিচয়' ও 'শেষ উত্তর' ছবিতে পর পর দুবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। সিনেমায় সামাজিক, পারিবারিক ও রোম্যান্টিক বিষয়কে কেন্দ্র করে বাণিজ্যসফল ছবি বানিয়ে তিনি এক নতুন ধারা প্রবর্তন করেন বাংলা সিনেমা শিল্পে। প্রমথেশ বড়ুয়ার কৃতিত্বের কথা স্বীকার করে ঋত্বিক ঘটক কোনও এক সাক্ষাৎকারে বলেন 'সেই বন্ধ জানালার যুগে এই লোকটা কিছু একটা করার চেষ্টা করেছে।' ভারতে প্রমথেশ বড়ুয়া প্রথম সাবজেক্টিভ ক্যামেরার ব্যবহার করেন। এদিকে বাংলাজুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী তীব্র আন্দোলন এবং শেষমেষ হাজার হাজার মানুষ গৃহছাড়া, দেশছাড়া, ভাগ্য বিড়ম্বিত উদ্বাস্তু মানুষের হাহাকার, খণ্ডিত স্বাধীনতা, বাংলা সিনেমার বদল ঘটালো।
এমন কয়েকটি ছবি তৈরি হল যা বাস্তববাদী এবং শিল্পধর্মী। সেই সময়কার বামপন্থী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী খাজা আহমেদ আব্বাস, বিমল রায়, শম্ভু মিত্র, ঋত্বিক ঘটক, বলরাজ সাহানি প্রমুখের ভূমিকায় বাংলা সিনেমায় মেলোড্রামাটিক, সামাজিক সেন্টিমেন্টাল প্লটের বদলে এল বাস্তবধর্মী জীবন আলেখ্য। বিমল রায় নির্দেশিত 'দো বিঘা জমিন', (রবি ঠাকুরের 'দুই বিঘা জমি' অবলম্বনে) সারা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে দেশভাগ, যুদ্ধ, প্রভৃতি কারণে বাংলা সিনেমার বাজার ছোট হয়ে আসে। অনেক ষ্টুডিও বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমা শিল্পে অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলার ফলে কলকাতার গুরুত্ব কমে যায়।
তবে সিনেমা শিল্পে বাংলার অবদান সৃজনশিল্পে বরাবর উচ্চস্থানে ছিল, আজও তাই বহন করে।