
সৌমেন সুর: এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনায় নেমেছি- এক একসময় মনে হয় আমি কোন জগতে বাস করছি! সামান্য নিম্নবর্ণের মানুষ নদীতে স্নান করেছে বলে সেই নদীর জল অপবিত্র হয়ে গেছে। তাই তাকে উচ্চবর্ণের মানুষ অমানুষিকভাবে বাঁশপেটা করলো। বাঁশ নিয়ে যত শক্তি আছে শরীরে সেটা প্রয়োগ করা হলো। এটা সভ্যজগতের কাজ? আমরা বড়াই করি-সভ্যজগতে বাস করি, আমরা সভ্য। আসলে আমরা এখনো অসভ্য। কারণ আমরা এখনো দাঙ্গা লাগাই, দাঙ্গাই অংশ নিই। কুসংস্কারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, নিষ্পাপ শিশু কিশোরকে ধর্ষণ করি বর্বরোচিতভাবে। অদ্ভুদ এক সমাজে বাস করছি। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিষয়-জাতিভেদ।
কোনো শিশু জন্মাবার সময় কোনো প্রতীকচিহ্ন নিয়ে জন্মায় না। কারণ সব মানুষই একটি জাতি। তাহলে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বমানব এক জাতি। মানুষ মাত্রই এক জাতি, এই ধারণা জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা বিভাজনের খেলায় মেতে সমাজে অসংখ্য জাতির প্রাচীর তুলে দিয়েছি। ঋগবেদের যুগে জাতিভেদ বলে কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে জাতি হয়ে ওঠে জন্মসূত্রে অর্জিত সামাজিক স্তর। অধ্যাপক ব্যাসামের মতে, ষোড়শ শতকে পোর্তুগীজরা হিন্দুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উপজাতিতে চিহ্নিত করে। সেই সময় থেকে 'Caste' শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কুসংস্কার মানুষের মনের জমিতে এমন গভীরে শিকড় চালিয়ে দেয়েছে যে, আজও জাতপাতের ভিত্তিতে সামাজিক অবিচার, অনিয়ম। কবি নজরুল একে 'জাতের নামে বজ্জাতি সব' বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। মানুষের কুসংস্কারকে আরও প্রশয় দিয়েছে ব্রিটিশ শাসক। কারণ এটা জিইয়ে থাকলে ওদের দিকে তাকাবার সময় থাকবে না। এদিকে মানুষের মুখটাকেও ঘুরিয়ে দেওয়া গেল। কালের চক্রে এটাই চলছে বর্তমানে। বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে জাতিভেদের চিন্তাভাবনা প্রবেশ করায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। স্বাধীনোত্তর যুগে জাতপাত নিয়ে কতবার যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। রাজনীতি থেকে জাতপাতের ভাবনাকে বিসর্জন না দিলে, জাতির সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।