সৌমেন সুর: বর্তমানে ইন্টারনেট যুগে মানুষের চেতনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বাড়লে কি হবে, কোন এক অদৃশ্য শক্তির যাঁতাকলের হাতছানিতে বিয়ের সম্বন্ধে এখনো দর কষাকষি করে কনেকে বিদায় দিতে হয়। হতভাগ্য পিতার চোখে অশ্রু নেমে আসে। কত কষ্ট করে ধার দেনা করে কিংবা জমি বিক্রি করে নতুবা পি.এফ ফাণ্ডের সব টাকা তুলে, একেবারে নিঃস্ব হয়ে কান্নামিশ্রিত হাসিতে কন্যাকে তুলে দিতে হয়- 'সো কলড' শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত পরিবারের হাতে।
কন্যাদায় একটি বড় দায়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা কন্যার বিবাহ দিতে বাধ্য হন। ফলে সেই তাড়নায় বরের দর অত্যন্ত বেড়ে যায়। এই হতভাগ্য দেশে রুপ নয়, গুন নয়, প্রেম ভালেবাসা নয়, উচ্চ অর্থমূল্যে বাজারের কাছে নিকৃষ্ট সওদার মতো অপদার্থ যুবকের দল বিক্রি হয় বিয়ের বাজারে। ফলে কন্যার স্বপ্নের পতিগৃহ হয়ে ওঠে জতুগৃহ। অবশেষে রবীন্দ্রনাথের 'দেনাপাওনা' গল্পের হতভাগ্য চরিত্র 'নিরুপমা'র দল জ্বলন্ত চিতায় খুঁজে পায় জীবনের নিস্কৃতি।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'কন্যা আমাদের মস্ত বড় দায়। কন্যাদায়ের মতো দায় নেই। একান্ন পরিবারে আমরা দূর ও নিকট, এমনকি নামমাত্র আত্মীয়কেও বাঁধিয়ে রাখিতে চাই- কেবল কন্যাকেই ফেলিয়া দিতে হয়।' ছোট থেকে বেড়ে উঠলো সংসারে, সবার ভালোবাসা অর্জন করলো, আবার কেউ বা মানুষ হলো অবহেলায়। সবাইকে অপেক্ষা করতে হয় আরেকজনের ওপর। সে যদি বিধান দেয় বা পছন্দ করে, তহলে তুমি তার। নইলে পচতে থাকো নিকৃষ্ট পশুর মতো। আসলে পুরুষশাসিত সমাজে নারীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় অবাধ স্বাধীনতা এখনো পুরুষের হাতে। সবকিছু বদলেছে-বদলে যাচ্ছেও। কিন্তু নারীর মূল্য কে বুঝছে, কজন বুঝেছেন? এখনো কাগজে, টিভিতে নারীজাতির দুর্ভাগ্যের রাহুমুক্তি আজও ঘটেনি। আসলে এই উপমহাদেশে মেয়েরা দুর্ভাগ্যের শিকার। শৈশবে তারা পিতার অধীনে, যৌবনে স্বামীর, বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে। ভারতে নারীর পরিচয় কন্যা, পত্নী ও জননী রূপে। তার স্বাধীন কোনো সত্তা নেই। তবে বর্তমানে নারীরা সাবলম্বী হতে পেরেছে। সর্বত্র নারীরা অর্বননীয় উত্থানে পৌছে চলেছে। সব ঠিক আছে। তবে এখনো কুসংস্কারে আচ্ছন্ন দেশে নারীদের প্রতি অত্যাচার অশোভনীয়।
আমার মতে, শিশুকন্যাদের যে সমস্যা তা হলো শিক্ষাগত, সমাজগত, অর্থনীতিগত। শিশুকন্যাদেরও পুত্রসন্তানদের মতো খাদ্য ও শিক্ষা দিতে হবে। এবং সঠিকভাবে মানুষ করতে হবে। যেখানে পিতা অক্ষম সেখানে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। এখন অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে এসেছে যারা এইসমস্ত কাজ দায়িত্ব সহকারে করছে। আসলে শিশুকন্যাদের ওপর মৌলিক দৃষ্টি দেওয়া একান্তই দরকার।