সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের ১ম খন্ড) সকাল থেকে আকাশটা কেমন মুখ ভার করে আছে। বুনির বাবা একটু চিন্তিত। চিন্তাটা স্বাভাবিক। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ফেরিওয়ালার দিন শেষ। সারা বছর ফেরী করার পর পুজোর চারটে দিন একটু বেশি ইনকামের আশায় বুনির বাবার মত অনেকেই হা করে বসে থাকে।। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করে বুনির বাবা। দিনান্তে তেমন লাভের মুখ হয়তো দেখতে পায় না, তবে যেটুকু হয় তাতে কোনোরকমে সংসার চলে যায়। সংসারের খরচ ছাড়া বুনির কলেজের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অপেক্ষা করতে থাকে পুজোর জন্য। বুনির বাবা অনেক আশা নিয়ে পুজোয় খাবারের দোকান দিয়েছিল রাস্তায়। কিন্তু মাথায় হাত তার। বিক্রি তেমন ভালো হয়নি। অর্ধেকটাই লস। খুব মুষড়ে পড়েছিল বুনির বাবা। এবছর আর দোকানের নাম করে না। কিন্তু বুনি ছাড়বার পাত্র নয়। বাবাকে বলে দোকান দিতে। ও বসবে দোকানে। কথাটা শুনে বুনির বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কলেজের পড়ুয়া মেয়ে বাবার সঙ্গে রাস্তার দোকানে বসবে!
আসলে বুনি তার বাবাকে বুঝতে পেরেছিল। সেই পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে তার বাবা। বর্তমানে অনেক কিছুর বদল হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছাপ বাবার ব্যবসায়ে নেই। বাবার ব্যবসার ধরন, গেট আপ, ব্যবহার, কথাবার্তা একেবারে ম্যার ম্যারে, সেকেলে। কোথায় চৌকস উজ্জ্বলতা থাকবে তা নয়- একদম বোগাস। এসব কিছু বুঝতে পেরে বাবার পাশে থাকার জন্য এগিয়ে এসেছিল সে। বুনি বাবাকে বলে, 'বাবা দোকানে থাকবে চা, ডিমটোস্ট, ঘুগনি আর চিলি চিকেন। তোমার ভয় নেই চিলি চিকেন আমি বানাবো। তুমি শুধু চা বানাবে। বাকি সব আমি সামলে নেব। সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলে থাকবে ব্যাস।'
বুনির কথা শুনে ওর বাবার মনে একটা চাপা আনন্দ ফুটে ওঠে। কোনো কথা বলেন না। মনে মনে ভাবেন, মেয়ের কি প্ল্যান আছে কে জানে। বুনির বাবা দিনমজুর, ফেরিওয়ালা। জীবন যে কত সুন্দর, এ ফিলিংস বুনি ছাড়া এ পরিবারের আর কারো হয়নি। সবাই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে চলে, তবে সে উদ্দেশ্য কারো সফল হয়, কারো হয় না। দোচালের মধ্যে এই পরিবারের জীবন। পরিপূর্ণ সুখ কোনদিন কল্পনা করেনি। ( চলবে)