সুজিত সাহা: প্রসেনিয়াম থিয়েটারের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে একটু ভিন্ন মাত্রার নাটকের উপস্থাপন বাংলায় শুরু ৭০ দশকে। নাট্যকার বাদল সরকার তথাকথিত ভাবধারার বাইরে এসে দর্শকের সঙ্গে অভিনেতাকে এক করে মুক্ত প্রাঙ্গণ, পথে বা কোনও ঘরে থিয়েটারকে অন্যভাবে মানুষের কাছে আনলেন। তাঁর নির্দিষ্ট দর্শনে জন্ম নেয় এক নতুন আঙ্গিক, যার নাম দেওয়া হয় তৃতীয় থিয়েটার। যদিও ৭০ দশকের আগেই এই আঙ্গিকের নাটক উপস্থাপন হয়েছে নাট্যব্যক্তিত্ব পানু পাল ও উৎপল দত্তের হাতে। বিদেশে অবশ্য এই ধারার নাটকের ভাবনা অনেক আগে থেকেই।
'অন্তরঙ্গ' থিয়েটার নতুন আঙ্গিক কিনা, তা বলবে সময়। তবে এই যাত্রাপথের কয়েকজন কাণ্ডারির নাম না করলেই নয়-- যেমন গৌতম সেনগুপ্ত, প্রবীর গুহ প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে নাট্য নির্দেশক সুপ্রিয় সমাজদার অন্তরঙ্গ থিয়েটারকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যান। বর্তমানে জাতীয়স্তরেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে এই 'অন্তরঙ্গ থিয়েটার'। আঙ্গিক প্রসঙ্গে সুপ্রিয় সমাজদার এক জায়গায় লেখেন, "আমার কাছে এই অন্তরঙ্গ নাটকের চর্চা, এক ভাষার অন্বেষণ- যা আমাদের সজাগ করে, ঋদ্ধ করে, আমাকে চেনায়।'
ভিন্নধর্মী নাট্যপ্ৰেমিকরা জানলে খুশি হবেন, সম্প্রতি 'বিভাবন থিয়েটার একাডেমির' উদ্যোগে জাতীয় অন্তরঙ্গ থিয়েটার ফেস্টিভেল কলকাতার থিয়ে এপেক্সে অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশ, জাতীয়স্তরে মুম্বই-সহ বিভিন্ন প্রান্তের মোট ১৯টি দল তাদের নাটক উপস্থাপন করেছে। এই ধরণের নাট্য দলগুলোকে সরকার নজর দিলে- নাট্যঙ্গনে নতুন আঙ্গিকের (অন্তরঙ্গ থিয়েটার) প্রতিষ্ঠা পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্তরঙ্গ নাট্যচর্চার উদ্যোগ ও উপস্থাপনের দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করার কৃতিত্বের যোগ্য দাবিদার বাংলার 'বিভাবন থিয়েটার একাডেমি'। সাধুবাদ জানাই তাদের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে।