
সৌমেন সুর: এক সময় বাংলার গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে তাঁতের মেশিন থাকতো। এই মেশিনে যারা মসলিন বোনায় রপ্ত থাকতো, তাদের মূল্য ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেইসময় ভারতে ইংরেজ শাসন। ইংরেজরা বাংলার মসলিন দেখে একেবারে ফিদা। মসলিনের প্রতি তারা ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়। অবশেষে নৃশংস ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর লোকজন বাংলার যত মসলিন শাড়ি শিল্পের শিল্পী আছে, তাদেরকে খুঁজে বার করে। অকারনে চলে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার। কারোর আঙুল কেটে দেয়, কাউকে মাথা নেড়া করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘোরায়। অর্ন্তনিহিত উদ্দেশ্য হলো, ইংল্যাণ্ডের কাপড় ভারতে আসবে এবং একচেটিয়া ব্যবসা করবে। তারা কখনই বাংলার গৌবর মসলিন শিল্পকে ভারত তথা বিদেশে ব্যবসা করতে দেবে না।
অবর্ণনীয় বর্বরতায় খুব কম সময়ের মধ্যে হারিয়ে যায় ভারতের গৌরবময় অনন্য মসলিন শিল্প। তবে অত্যাচার থেমে থাকেনি। সাহেবরা তাঁতিদের খুঁজে বার করে, তাদের বন্দী করে কোথায় যে নিয়ে যায়, তার কোনো হদিশ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি মসলিন তৈরির জন্য যে কার্পাস তুলো এবং বীজ, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ইংরেজ শাসক। এসব দেখে তাঁতিরা নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে শিল্প সৃষ্টির পথ থেকে সরে দাঁড়ায়। উত্তরপুরুষরা এসব দেখে উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন। আস্তে আস্তে এভাবেই সাহেবদের অমানবিক অত্যাচারে একদিন বাংলা ও বাঙালির গৌরবময় মসলিন শিল্প হারিয়ে যায়।
বাংলা তথা ভারতে মসলিন নিয়ে যে গৌরব, তার প্রারম্ভিক ব্যবহার শুরু হয়েছিল পাঁচ হাজার বছরের আগে মহেঞ্জদারো এবং হরপ্পার নাগরিক জীবনে। পুরাতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর আসল উত্সটি তুলে ধরেন। বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে তুষ্ট করার জন্য মাঝে মাঝে দিল্লীর প্রাসাদে পাঠাতেন বাংলার বিখ্যাত ঢাকাই মসলিন। যাই হোক এই মসলিন শিল্প প্রথমে ছিল মূল্যবান কিন্তু তত্কালীন ইংরেজ শাসক, এর সম্পূর্ণ ধ্বংসে ব্যপ্ত থেকে এই শিল্পকে শুন্য করে দেয়। বাংলার বহু শিল্পী প্রাণ হারান। বহু ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। আমার মতে, শিল্প ধ্বংস করতে পারো, শিল্পীকে নয়। কত মারবে তোমরা, আবার জন্মাবে--রক্তবীজের মতো। তথ্যঋণ--শেখর সেনগুপ্ত।