প্রসূন গুপ্তঃ প্রতি বছরই দুই বাংলায় আন্তরিক ভাবে পালিত হয় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। আজকাল আর কেউ ঠিক এ বছরে কত বয়স হলো তার হিসাব রাখে না। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় উৎসব। পাড়ায় কিংবা হল ভাড়া করে। স্কুল-কলেজ ছুটি থাকলেও সকালে কবি প্রণাম সেরে ফেলা হয়। যদিও আজকের পশ্চিমবঙ্গের তরুণ সমাজ কতটা উৎসবে সামিল হয় বা নেহাত রবি ঠাকুরকে নিয়ে সামান্যতম ভাবনা থাকে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভাবাবে কে?
বাম জমানাতে কমিউনিস্টরা আলাদা করে রবীন্দ্র উৎসব পালন না করলেও তাদের সরকার পালন করেছে। রবীন্দ্র সদন বা রবীন্দ্র ভারতীতে। জ্যোতিবাবুর ভিন্ন উৎসাহ বা আগ্রহ না থাকলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মননে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মহাপুরুষ। সুভাষ চক্রবর্তী ছিলেন সবথেকে উৎসাহী। তিনি মাঝেমধ্যেই চলে যেতেন বোলপুরে।
অবিশ্যি মমতা সরকার আসার পর রবীন্দ্র বন্দনা হয়ে গেল বাধ্যতামূলক। সমস্ত নেতাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হলো রবীন্দ্র উৎসব পালন করতেই হবে। মমতার প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রবল ভাবে নিয়ে আসা হলো রবি ঠাকুরকে। রাস্তার ক্রসিং-এ বাজানো হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত। এতে করে যুব মহল কতটা রবীন্দ্রনাথ কে গ্রহণ করলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরাই যদিও পাত্তা দেন নি মমতা। কিন্তু যুব মহলের হাতে এখন মুঠো ফোন, তারা কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে নিশ্চিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনে কি?
পাশাপাশি ওপার বাংলা। বাংলাদেশ। একটা দেশের জন্ম হলো বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে। তাদের কাছে মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ব্যান করেছিল পাকিস্তানের সামরিক শাষক আয়ূব খান, তারপরেই জ্বলে উঠেছিল বাঙালি সমাজ। শুরু হয়েছিল আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা। কাজেই ওদেশের মানুষের রক্তে রন্ধ্রে অনুতে পরমাণুতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ। রাষ্ট্রীয় চাপের প্রয়োজন হয় না। কয়েক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে কবি প্রণাম। এই প্রবল গরমকে আমল না দিয়ে প্রকাশ্য পথে গান গাইতে চলেছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, যার কোনও ঠিকানা নেই থাকবেই বা কেন সমস্ত বাংলাদেশটাই তো রবীন্দ্রনাথের।
কবি প্রণাম।।