সৌমেন সুর: দার্শনিক খুঁজে পান জীবনের অতলান্ত রহস্য। সঙ্গীত সাধক তার সুরের মায়াজালে করেন বাঙ্ময়। কবিও এরকম অসাধারন দৃশ্য দেখবার জন্য় প্রকৃতি প্রেমিকের মতো দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এর জন্য সময় ও অর্থ দুই-ই অকৃপন হাতে ব্যয় করেছেন তিনি। তবুও তার সৌন্দর্য দর্শন অসম্পূ্র্ন রয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে যায়, সত্যজিত্ রায়কে নিয়ে তাঁর মা এসেছিলেন, সত্য়জিত্কে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করানোর জন্য। শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক শোভা, বালক সত্য়জিতকে আকৃষ্ট করে। হাতের খাতাটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, অটোগ্রাফ দিন। তখন রবীন্দ্রনাথ সত্য়জিতকে বলেন, তুমি আধঘন্টা পরে এসো ততক্ষণ ঘুরে ঘুরে সব দেখো। খাতাটা থাক আমার কাছে।
এরপর সত্য়জিত আধঘন্টা পর কবির কাছে আসেন খাতাটা নেওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ তার খাতার প্রথম পাতায় লিখে দিলেন, বহুদিন ধরে বহুক্রোশ দূরে/ বহু ব্য়য় করি বহু দেশ ঘুরে/ দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা/দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শীষের উপর/ একটি শিশির বিন্দু।
প্রকৃতির বাইরের সৌন্দর্য সবার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে, কিন্তু তার অন্তর্স্বরুপকে উপলব্ধি করে সামান্য় কয়েকজন। যার দেখার চোখ আছে, তুচ্ছ ছোট বিষয়ও তার কাছে অপার সৌন্দর্যের আধার হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃত সৌন্দর্যরসিক সামান্যর মধ্যেও অসামান্য়কে খুঁজে পান। যেমন পেয়েছেন কবি। কবি শুধু বহিরঙ্গ রুপের প্রার্থী নন, অন্তরঙ্গ স্বরুপেরও প্রত্যাশী। তাঁর কাছে বাহ্য়িক আড়ম্বরের চেয়ে স্নিগ্ধ প্রকৃতির আন্তরিকতার সবচেয়ে কাম্য। ধানের শীষের ওপর শিশির কনার কমনীয় রুপ কবির কাছে অগোচর থেকে যায়, এই অসম্পূর্নতার বেদনাকেই তিনি সংহত বানীরুপ দিয়েছেন।