সৌমেন সুর: কোজাগরী পূর্ণিমার সন্ধ্যায় পরাশক্তি ধনদায়িনি মহালক্ষ্মীর পদ সঞ্চার প্রতি গৃহস্থের আঙিনায়। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় সেই একই মায়ের অর্চনা করবো অন্য নামে, ভিন্নরূপে, ধ্যানান্তরে। আজ যে জগৎ মাতার শুভ আগমন, তিনি মহাশক্তির এক বরণীয় রূপ, মহাকালের শক্তিমূর্তি আদ্যাশক্তি, চতুর্ভুজা, দিগবসনা, সুখপ্রদায়িনী ও বরাভয়দায়িনী। সৌন্দর্য, মাধুর্য এবং গাম্ভীর্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে দেবী কালিকার বর্ণিত ধ্যানমন্ত্রে।
'কালিকা বঙ্গদেশে চ' এই শাস্ত্রবাক্য শত শত বৎসর ধরে। পরম শ্রদ্ধায়, বড় আন্তরিকতায় ও গভীর ভক্তিতে এই বঙ্গভূমিতে এই পরম জননী কালিকারূপিণী মহাদেবী নিত্য সেবিতা ও পূজিতা। প্রচলিত কথা আছে 'যেখানে বাঙালি বাড়ি, সেখানে আছে কালীবাড়ি।' সৃষ্টিস্থিতিকারিনী কালরূপা মুক্তিদাত্রী দেবী কালিকার উপাসনাই হল কালের হাত থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র উপায়।
শ্যামা মায়ের মূর্তিতে সারল্য ও কাঠিন্যের এক অপূর্ব সমাবেশ। তাই মহাকালী নৃমুণ্ডমালিনী ও করালবদনা ভয়ঙ্করা, আবার সেইসঙ্গে তিনি বরাভয় করা। একদিকে সৃজন, অপরদিকে নিধন। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালন। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন, 'কালী কি কালো?' দূর থেকে কালো, জানতে পারলে কালো নয়। সমুদ্রের জল দূর থেকে নীল, কাছে গিয়ে দেখো আর হাতে তুলে দ্যাখো-- রঙ নেই। ব্রহ্মশক্তি এই বিশ্বমাতা বিবসনা। দেশকালে ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আদৌ আবদ্ধ নয় তিনি বলেই দিগম্বরী। এই অভয়া মা ত্রিনয়ণ দিয়ে তাঁর করুণা ধারা বর্ষণ করেন তাঁর সন্তানকে সত্য, শিব ও সুন্দরকে প্রত্যক্ষ করান।
আমাদের আর্যঋষিরা বলেন, সৃষ্টির মধ্যেই সৃজন, পালন, সংহার বিদ্যমান। সেই করুণাময়ী পরমেশ্বরী মা কালী সৃষ্টি, স্থিতি, লয় করছেন। একদিকে সংহার, অন্যদিকে তিনি অভয় বরদা। একহাতে ভীতি প্রদর্শন অপর হাতে সন্তানকে কোলে ধারণ। এই নিয়েই মা। মা আমাদের করুণাময়ী, মঙ্গলময়ী, জয় মা ওঁ তৎসাৎ।