
প্রসূন গুপ্ত: ক্রিকেট মানেই বড়লোকদের খেলা এমনই এক প্রবাদ ছিল একসময়। হবে নাই বা কেন, সাহেবসুবোরা খেলতো মাঠে আর এ দেশে বল কুড়তো হতচ্ছারা নেটিভরা। রঞ্জিত সিংজি তো ব্রিটিশ ছিলেন। অবশ্য তারপরে ভারতীয়রা ক্রিকেটের হাল ধরলেন। কিন্তু এখানেও মজা, খেলতেন রাজারাজরারা কিংবা এদেশের বিত্তশালীরা। ৬০-এর দশকে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো তৎকালীন বম্বের এক মালির ছেলে। মিডিয়া দুনিয়া তাঁর খেলার থেকে বেশি প্রচার দিল তাঁর দারিদ্রকে' কিন্তু সেই খেলোয়ার অপরিহার্য হয়ে উঠলেন টাইগার পতৌদির দলে। নাম একনাথ ঢুন্ডুরাম সোলকার। তখন থেকে শুরু গরীবরাও ক্রিকেট খেলে।
ভারতের সর্বকালের অন্যতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও তো নিম্নবিত্ত পরিবারের। আসলে দরিদ্র যারা রয়েছে, চ্যালেঞ্জ তারাই তো নেয়। রিঙ্কু সিংও তাই। অজানা অখ্যাত এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে। ক্রিকেটের বিলাসিতা যাদের মানায় না, এমনই এক পরিবার। বাবা এলপিজি গ্যাস লোকের বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসেন। মাইনে আর বকশিসে যা রোজগার হয় আর কী। ছেলে ক্রিকেট খেলতো বটে তবে বিশাল উত্তর প্রদেশে একপ্রান্তে পড়ে থাকা এক খুদে মাত্র। বাবার কোনও এক গ্রাহককে ধরে শক্ত বলের মাঠে পাঠানো গেল ছেলেকে। খেলো নতুবা ঝাড়পোছের চাকরি নাও। এরপর প্রথমে ক্লাব তারপর রাজ্য দলে সুযোগ।
ওই থেকে কিছু রোজগার বাড়লেও বাড়ির টিনের চালকে ঢালাইয়ে নিয়ে যেতে পারেনি সিং পরিবার। শেষে আইপিএল-এ সুযোগ। আইপিএল আর যাই হোক খেলোয়ারদের টাকার মুখ দেখিয়েছে। খেলতে পারলে সুযোগ নইলে গেট-আউট| আগের বছরগুলিতে দুর্দান্ত ছিল এমন নয়, কিন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিঙ্কু। এবারে এল ঐতিহাসিক ৯ এপ্রিল। গতবারে চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটন্সের সঙ্গে ম্যাচ তাও রবিবারের দুপুরে।
প্রথমে ব্যাট করে গুজরাতের সংগ্রহ ২০৪। যথেষ্ট চাপের রান, কলকাতা নাইট রাইডার্স।কিন্ত দু'উইকেট হারিয়ে মন্দ খেলছিল না। বিশেষ করে ভেঙ্কটেশ ও নীতীশ রানা। কিন্তু পরপর উইকেট হারায় তারা। শেষ ওভার, দরকার ২৯ রান, যা বিশ্বে কেউ করেনি। এক রান নিয়ে যাদব খেলতে দেয় রিঙ্কুকে। এরপরেই স্বপ্ন দেখলো ক্রিকেট প্রেমীরা। ৬ ৬ ৬ ৬ ৬। এ-ও হয়।