মণি ভট্টাচার্যঃ ঠিক জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) নয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bartya Basu) মতে জাতীয় শিক্ষা নীতির আদলে নতুন শিক্ষা নীতি চালু হল রাজ্যে। ব্রাত্য বসু জানিয়েছে, জাতীয় শিক্ষা নীতির মধ্যে যে গুলো সঠিক ও উপকারী সেটা বাছাই করে আলাদা শিক্ষা নীতি চালু করার অনুমতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। কিন্তু এই শিক্ষা নীতি নিয়ে রয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা। রীতিমত দিশেহারা পড়ুয়া, অভিভাবক সহ বিভিন্ন কলেজগুলিও।
রাজ্যে চালু হওয়া নতুন শিক্ষা নীতি অনুযায়ী চার বছরের অনার্স কোর্স আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর হচ্ছে রাজ্যে। এই অবস্থায় আগামীতে নিশ্চয়ই কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে, পরিবর্তন হবে সিলেবাসও। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে কিভাবে সমস্ত কাজ হবে তা নিয়ে অন্ধকারে পড়ুয়ারা ও কলেজগুলিও।
জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে বহু প্রশ্নের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে স্নাতকোত্তর কোর্সগুলি নিয়েও জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়াতে চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু হয়েছে এবং জানানো হয়েছে এই চার বছরের স্নাতক কোর্স করেই পড়ুয়ার পিএইচডি বা রিসার্চ সংক্রান্ত উচ্চ শিক্ষায় যেতে পারবে। পূর্বে যেখানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দরকার ছিল এখন তা নিষ্প্রয়োজন। ফলে প্রশ্ন উঠছে নতুন শিক্ষানীতিতে স্নাতকোত্তর কোর্সের কোন বৈধতা কি থাকলো!
এই প্রশ্নটাই জোরালো ভাবে উঠে এসেছে শিক্ষামহল থেকে। কারণ চার বছরের স্নাতক কোর্সের পরেই নির্দিষ্ট নম্বর পেলে মেধাবী পড়ুয়ারা সরাসরি পিএইচডি বা গবেষণার সুযোগ পাবেন। ফলে তাঁরা আর কেন এক বছরের কোর্সে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হবেন? ফলে ফি বছর কলেজ শেষ করার পর কলকাতা, কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ বা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে চেয়ে যে আবেদনের লম্বা লাইন পড়ে, পিজি কোর্সের সেই গুরুত্ব না থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কালে কালে শুধুই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলেই অনেকের অভিমত।
এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল কাফির দাবি, এই শিক্ষানীতি আমাদের রাজ্যের কলেজগুলির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। অনেক কলেজের কোনো কাঠামোই নেই এই শিক্ষানীতি চালু করার মত। প্রয়োজনীয় অধ্যাপক অবধি নেই ওই কলেজ গুলিতে। এই শিক্ষানীতি একটা ৩ মাসের বাচ্চাকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর মত।
এছাড়া আরও অভিযোগ যে রাজ্য প্রথম থেকেই জানিয়েছে যে এবারের ভর্তি প্রক্রিয়া সেন্ট্রালাইজড প্রক্রিয়ায় হবে। কিন্তু তা চালু হবে না সেটা বুধবার জানিয়েছে রাজ্য। এবার প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গুলির উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। কিন্তু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ভর্তির কোনও প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। রীতিমত তা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলি। সূত্রের খবর বুধবারের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ভর্তি প্রক্রিয়া ওই কলেজগুলোর অনলাইন মাধ্যমেই হবে। কিন্তু এই অল্প সময়ে কি করে অনলাইন মাধ্যমে একটি ভর্তি প্রক্রিয়া চালাবে কলেজ গুলি! তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগও। পাশাপাশি চিন্তায় পড়েছে পড়ুয়াদের অভিভাবক ও পড়ুয়ারাও।
প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ অধ্যাপকের কথায়, 'যে হারে জাতীয় শিক্ষানীতিতে ভার্চুয়াল ক্লাসের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও দিনে দিনে গুরুত্ব হারাবেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাল কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।' সূত্রের খবর জাতীয় শিক্ষানীতিতে দু'ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে। একটি রিসার্চ ইউনিভার্সিটি, অপরটি রিসার্চ অ্যান্ড টিচিং বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, 'কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকী যে দুটি কমিটি তৈরি করেছিল, তার রিপোর্টও আমরা পাইনি। ফলে দেশের সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষার হালও কোথায় যেতে বসেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।' যদিও রাজ্যের যুক্তি, সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা না করা হলে এ রাজ্যের পড়ুয়ারাই সমস্যায় পড়বেন।