একজন রেশন বন্টন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, অপরজন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে, অথচ দুজনের গলাতেই একই নাম 'মমতা।' রাজ্যের দুই প্রভাবশালী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দুজনই দুর্নীতির দায়ে আপাতত গারদের পিছনে। কিন্তু কোথাও যেন এই দুই মন্ত্রীই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মানেন। কিন্তু কি জানেন মমতা বন্দোপাধ্যায়? এই দুর্নীতির পটভূমিতে দুইটি দিক হওয়া সম্ভব, যে তিনি জানেন, অভিযুক্তরা নির্দোষ, অথবা অভিযুক্তরা দোষী। কিন্তু এই দুটির মধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় কি জানেন? বিরোধীদের অবশ্য দাবি সমস্ত দুর্নীতির কথা মমতা জানেন।
সম্প্রতি রেশন বন্টন দুর্নীতি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার করা হয় বর্তমান বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত আজ অর্থাৎ শুক্রবার সকালে, সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে ইডি হেফাজতে থাকা মন্ত্রী বলেন, আমি চক্রান্তের শিকার। বিজেপিকে দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তার পরেই তিনি বলেন, মমতাদি সব জানে।' ওদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভরা আদালতে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রসঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম নেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নিয়োগে আমার ভূমিকা নেই। একটা অংশ নীতি প্রণয়ন করে অন্যরা নিয়োগ করেন। সচিবরা মুখ্যসচিবের অধীনে কাজ করেন। মুখ্যসচিব কাজ করেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট যেত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।' এরপরেই শোরগোল শুরু হয়, সেই আগুনে এবার ঘি ঢাললেন মমতার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী বালু, অর্থাৎ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। যদিও সমস্ত রকম দুর্নীতি প্রসঙ্গে নিজেকে 'অজ্ঞাত' হিসেবেই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
যদিও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বারবার বিরোধীরা কালীঘটের দিদিমণিকেই টার্গেট করেছেন। বিরোধীদের দাবি, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, এ রাজ্যের সমস্ত ভাল-মন্দের দায়িত্বও তারই। সেরকমই বরাবরই ঘনিষ্ঠ বালু ও পার্থের মাধ্যম্যে হওয়া দুর্নীতিও মমতার জানাটাই স্বাভাবিক বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে ইডি হানা দিতেই তিনি চটে গিয়েছিযেন, এবং জানিয়েছিলেন, 'বালুর কিছু হলে ইডি-সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করব।' এরপরেই গ্রেফতার হয় তাঁর প্রিয় বালু। তারপরেও নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গে বামকে টার্গেট করেন। কিন্তু তাতে কি হিসেবে মিলল? একদিকে মমতার ঘনিষ্ঠ গ্রেফতার হওয়া মন্ত্রীরা ঘুরপথে দাবি করছেন, 'মমতা সব জানেন।' ওদিকে মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেই শোনা গিয়েছিল পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি নাকি তিনি টেরই পাননি। তাহলে প্রশ্ন উঠছে গোটা রাজ্য জুড়ে রেশন, গরু, কয়লা, শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি কার সূক্ষ্ম মাথার খেলা? উত্তর কে দেবেন? বঙ্গের দুর্নীতির হিমশৈলের চূড়ায় কে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখতে চায় বাংলা।