প্রসূন গুপ্তঃ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস বিপুল ভোটে তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্থ করেছিলেন। পরম তৃপ্তি ও আত্মতুষ্টিতে জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন যে, এই জয় সমস্ত বিরোধীদের সম্মিলিত জয়। শুধু তিনি নন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙ্গন ধরানো এই ভাবেই সম্ভব। এ রাজ্যে বেসরকারি মতে প্রায় ৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোট রয়েছে, কাজেই সেই ভোটে ভাঙ্গন ধারাতে পারলে তৃণমূলকে রাজ্য থেকে সরানো যেতেই পারে। একই ধারণা ছিল বিজেপিরও। বিজেপির নেতারা ভেবেছিলেন, সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে হিন্দু ভোট নিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারে। এ ছিল যেন এক অলিখিত সমঝোতা। এর সঙ্গে নওশাদ সিদ্দিকীর ইমেজও রয়েছে। অঙ্কে ভুল ছিল। বায়রন তিন মাস যেতে না যেতেই তৃণমূলে যোগ দেন এবং আবার কংগ্রেস শূন্য হয়ে যায়।
তবে অধীরবাবু বলেছিলেন যে, বায়রন জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু বায়রন মডেল পরবর্তী ভোটে কাজ দেবেই অর্থাৎ মুসলিম ভোট তাদের দিকে আসবে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটার ফলাফল সমস্ত ধারণাকেই পাল্টে দিলো। দেখা যাচ্ছে আজকেও সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগই মমতার দিকেই রয়েছে, যেমনটি ২০১৯ বা ২০২১ এ ছিল। আলোচনা করে দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘু ভোটারদের ধারণা তাদের ভোট ভাগাভাগি হলে ফায়দা আখেরে বিজেপির।
এছাড়া কংগ্রেস বা সিপিএমে ভোট দিয়ে লাভ নেই কারণ দুটি দলই শূন্যতায় ভুগছে। ভোটের ফলাফলে এটাও দেখা গিয়েছে নওশাদ সিদ্দিকীর কোনও প্রভাব ভাঙ্গর ছাড়া কোথাও নেই। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ইত্যাদি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতে মুসলিমরা ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। অন্য জেলাতেও একই অবস্থা কাজেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও এই ভোট যে তৃণমূলের দিকে হেলে থাকবে তা বোঝা যায়। অন্যদিকে, হিন্দু ভোটের একটি অংশ যে বিজেপি পেয়ে থাকতো তাতেও ফাটল ধরেছে, যথা আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার ফলাফল তাই প্রমাণ করে।