মণি ভট্টাচার্য: এর থেকে দুর্ভাগ্যের জন্মদিন কি হতে পারত! উত্তরটা হয়ত 'নয়'। আজ অর্থাৎ ৮ ই জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বামেদের অন্যতম কান্ডারী জ্যোতি বসুর জন্মদিন। আর আজই অর্থাৎ শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গোটা রাজ্যে। ১৯৭৮ সালে একদা তাঁর হাতেই শুরু হয় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। এবার তাঁর জন্মদিনের দিনই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল, আর এদিনই যেন হিংসায়-মৃত্যুতে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিল গোটা বাংলা ও রাজ্য তথা রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
নথি ও তথ্য বলছে, ১৯৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত অ্যাক্টের মাধ্যমে চালু হয় দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় গ্রাম স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরনো ইউনিয়ন বোর্ড স্তরে অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে এই আইন অনুসারে প্রথম নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৬৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ জেলা পরিষদ আইন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল জিলা পরিষদ অ্যাক্টের মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে ব্লক স্তরে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা স্তরে জেলা পরিষদ গঠিত হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামোন্নয়নে স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থাকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন ও পরিকল্পনার কাজে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। এইভাবে গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা।
এরপর ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় গ্রামাঞ্চল শাসনের ক্ষেত্রে বিপ্লব সূচিত হয়। সেসময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জ্যোতি বসু। এরপর ১৯৭৩ সাল থেকেই পঞ্চায়েত আইন পরিবর্তন হতে শুরু করে। শেষ আইনে ১৯৭৮ সালের জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের নবগঠিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে এই প্রথমবার দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে একই দিনে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের ফলে ১৫টি জেলা পরিষদ, ৩২৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩২৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য মহকুমাগুলিতে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল হওয়ায় ওই জেলার জেলা পরিষদ অবলুপ্ত হয়। তার পরিবর্তে শিলিগুড়ি মহকুমায় একটি মহকুমা পরিষদ গঠিত হয়, যা একটি স্বতন্ত্র জেলা পরিষদের ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করে। ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়ম করে পঞ্চায়েতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
শনিবার দশম বারের মত রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই রাজ্য জুড়ে বোমা, গুলি ও সন্ত্রাসের দাপট দেখেছে গোটা বাংলা, যেখানে সিপিআইএম, কংগ্রেস, বিজেপি সহ তৃণমূল কর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। গোটা বাংলা জুড়ে এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পথে সরব হয়েছে বাম-কংগ্রেস দু'পক্ষই। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে ততক্ষন পঞ্চায়েত ভোটের দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ জন। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর হিংসায় রাজ্যে মোট মৃত্যু ৩৯ জনের। যদিও নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা দুপুরে জানান, প্রাথমিক ভাবে সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতী ব্যাবস্থার স্রষ্টার জন্মদিনে ত্রিস্তরীয় নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে স্রষ্টা জ্যোতি বাবুকে রক্তে, হিংসায়, সন্ত্রাসে, বোমায়, গুলিতে, মৃত্যুতে এর থেকে দুর্ভাগ্যের শ্রদ্ধার্ঘ্য কি দেওয়া যেতে পারত!