'গোঁফচুরি' সুকুমার রায়ের কবিতা হলেও, কবিতাকে যেন একপ্রকার বাস্তবতা দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জবিরুল। পার্থক্য কেবল একটাই, জবিরুল বিখ্যাত তাঁর গোফ নয়, দাড়ির জন্য। তাতে তার কোনও আক্ষেপ নেই, বরং জবিরুল গোঁফ নয়, দাড়ি দিয়েই নিজেকে চেনাতে চান। তাই গত ২৩ বছর ধরে নিজের দাড়ি সাধনায় মগ্ন হয়ে রয়েছেন তিনি। তাঁর ইচ্ছে, সবচেয়ে দীর্ঘ দাড়ির মালিক হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড-এ নাম উঠুক।
মুর্শিদাবাদের দিয়ার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা ফকির মহম্মদ জবিরুল শেখকে এলাকার সকলেই লম্বা দাড়ির মানুষ হিসেবে চেনেন। ষাট ছুঁই ছুঁই জবিরুল গত ২৩ বছর ধরে দাড়ি পালন করে চলেছেন সযত্নে। বর্তমানে তার দাড়ির দৈর্ঘ্য নয় ফুট। তাঁর ইচ্ছা পূরণ হলেই তিনি দাড়ি কাটবেন, তার আগে নয়। জবিরুল জানান, বিশ্বের দরবারে আমি নিজেকে চেনাতে চাই। আমার দাড়িই সেই স্বপ্ন পূরণ করবে। সবচেয়ে দীর্ঘ দাড়ির মালিক হিসেবে আমাকে চিনবে লোকে।
কোন একদিন স্বপ্নাদেশ পেয়ে ২০০০ সাল থেকে দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন তিনি। বাড়তে থাকে দাড়ি। জবিরুল বলেন, দাড়ি শুধু রাখলেই হয়না। প্রতিদিন তার যত্ন করতে হয়। দাড়ি আঁচড়ানো, স্যাম্পু করা, পরে তেল দিয়ে চকচকে করে রাখতে বেশ সময় দিতে হয়। অযত্নে দাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে টোটো চালিয়ে জীবন ধারণ করেন জবিরুল। সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। সংসারে মা ও ভাই রয়েছেন। দাড়ি রাখার শখ পূরণ করতে গিয়ে তাঁর আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। তবে সেই নিয়ে তাঁর কোনও দুঃখ নেই। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর আমি লরি চালাতাম। ভালো লাগলো না বলে সেই কাজ ছেড়ে দিই। পরে টোটো গাড়ি কিনে চালাই। সারাদিনে যা রোজগার হয়, কোনও মতে চলে যায়। ভাইও রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসারে সাহায্য করে।
আগেই লম্বা দাড়ির রেকর্ড করা রাজস্থানের বিকানীরের বাসিন্দা প্রবীণ গিরধর ভায়াস বা রাম সিং-এর কথা, জবিরুল জানেন। তিনি বলেন, রাম সিং তো ১৮ ফুট দাড়ির মালিক হিসেবে রেকর্ড করেন। আমাকে তারও বেশি করতে হবে। পুরনো রেকর্ড মালিকদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চান জবিরুল শেখ। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দিনরাত দাড়ির সাধনা করে চলেছেন তিনি।