কথাতেই আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। এই কথা যেন ফের আরও একবার সত্যি প্রমাণিত হল মুর্শিদাবাদে কান্দি মহকুমায়। সেখানে রীতিমতো সিনেমার কায়দায় খুনের ঘটনাতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি একেবারে কলকাতা হাইকোর্টের বেল অর্ডারকে জাল করে কান্দি আদালতে মুক্তি পেয়েছিল বিচারকের সম্মতিতে। যদিও ফের আড়াই বছর পর ফের খুনের ঘটনার মূল ওই অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে বহরমপুর আদালতে তুললো সিআইডি।
এ ঘটনা সত্যিই নজিরবিহীন। জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে বালিঘাট দখলকে কেন্দ্র করে ঘটে খুনের ঘটনা। মূল সেই অভিযুক্ত আজ, রবিবার বহরমপুর আদালতে তুলেছে সিআইডি। যদিও আজ আদালতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে মূল অভিযুক্ত জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ জাল করার পিছনে হাত রয়েছে কান্দি মহকুমা আদালতের আইনজীবীদের। শাস্তি যেন তাঁদেরও হয়।
পাশাপাশি সে তার বাবারও শাস্তি দাবি তুলেছে ক্যামেরার সামনে। যদিও পুরো ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কান্দি মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ১২ এপ্রিল ২০১৫ সাল। মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানা হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বালির ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বোমাবাজি হয়। আর সেখানেই মৃত্যু হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা একটা ট্রাক্টর চালকের। পরে ১৫ এপ্রিল ভরতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিস তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল এবং তাদের মধ্যেও ৩১ শে জানুয়ারি ২০১৮-তে অভিযুক্ত লালু শেখ যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে কান্দি মহকুমা আদালত। কিন্তু সেই সাজার বিরুদ্ধে গিয়ে ৬ ই মার্চ ২০২১-এ অভিযুক্ত লালু শেখকে হাইকোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে যাবজ্জীবন সেই সাজা প্রত্যাখ্যান করে নিয়েছিল কান্দি মহকুমা আদালতের তৎকালীন বিচারক। এবার কার্যত তার আড়াই বছর পর হাইকোর্টের করা সেই নির্দেশ ভুয়ো বলে দাবি তুলে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কান্দি মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা। তারপর কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে সিআইডির হাতে সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার রাতে সেই ঘটনার তদন্তে কলকাতার হাওড়া থেকে মূল এই অভিযুক্তকে গ্ৰেফতার করে সিআইডি।
এই ঘটনায় প্রশ্ন হচ্ছে স্বয়ং হাইকোর্টের নির্দেশ যদি এভাবে জাল করে আদালতকে বোকা বানায় জনগণ, তাহলে আগামী প্রজন্ম কি সত্যিই আইনকে মান্যতা দেবে সেভাবে? এই প্রশ্ন রইল ওয়াকিবহুল মহলের কাছে।