সংসারের নিত্য অভাব এবং অশান্তিকে সঙ্গী করে আজও ভারোত্তলক তৈরির প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন দেউলপুরের দ্রোণাচার্য অষ্টম দাস। গত কয়েকদিনে পাঁচলা (Panchla) বিধানসভার দেউলপুর গ্রামের নাম মানুষের মুখে মুখে। কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games) সোনার পদক জিতেছেন দেউলপুরের বাসিন্দা অচিন্ত্য শিউলি (Achinta Shiuli)। সোনার ছেলে অচিন্ত্যর প্রথম কোচ (coach) স্থানীয় দ্রোণাচার্য অষ্টম দাস।
এক ভ্যান রিক্সাচালকের ছেলের এই লম্বা যাত্রায় অষ্টম দাসের অবদান অনেকটাই। নিজের সংসারের অভাবের কথা না ভেবেই, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে প্রয়োজনে সুদে টাকা ধার করেও এগিয়ে আসতে পিছুপা হননি তিনি। ছেলেরা মেডেল জেতে, চাকরি পায়, তাঁদের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হলেও আজ পর্যন্ত কোনও সাহায্যই পাননি দ্রোণাচার্য অষ্টম দাস। তাঁর প্রিয় ছাত্র বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তলনে সোনা জেতায় খুশি হলেও, কিছুটা আক্ষেপ জমে রয়েছে মনের কোণে।
তৃণমূল জমানায় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তাঁকে প্রশিক্ষকের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, শেষ পর্যন্ত তা অধরাই রয়েছে। সেই আক্ষেপেই মঙ্গলবার দেউলপুরে সমবায় মন্ত্রীর প্রিয় ছাত্র অচিন্ত্যকে দেওয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন তিনি। যদিও বিকেলে স্থানীয় ক্লাব আয়োজিত শোভাযাত্রায় মান-অভিমান সরিয়ে রেখে প্রিয় ছাত্রের পাশে দেখা যায় তাঁকে।
অষ্টম দাসের থেকে হাতেখড়ি করে অনেক ভারোত্তলক আজকে জেলা, রাজ্যে এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এখন তাঁর অনেক ছাত্র-ছাত্রীর ঝুলিতে একাধিক পদক। তাঁদের অনেকেই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাঁর জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে যাওয়ার খরচ, তো কাউকে প্রতিযোগিতার জন্যে প্রয়োজনীয় পোষাক পরিচ্ছদ দেওয়া, এমনকি কারও জন্যে পুষ্টিকর খাওয়ার যোগানো, সবরকমভাবেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়েছেন দেউলপুরের দ্রোণাচার্যকে। তাঁর এই পরিস্থিতির কথা জানা স্বত্তেও, যেসব কৃতীরা আজকে সুপ্রতিষ্ঠিত, তাঁরা কখনও এগিয়ে আসেনি।
সেই আক্ষেপও বেদনা দেয়। একজনের জায়গা ভাড়া নিয়েই অষ্টম দাস তাঁর অনুশীলন কেন্দ্র চালান। অভাবের সংসারে এসব নিয়ে লেগে থাকে নিত্য অশান্তি। সোমবার দমদম বিমানবন্দরে প্রিয় ছাত্রকে আনতে গিয়েও যথেষ্টই অপদস্থ হতে হয়েছে তাঁকে। ঘরে ফিরেও মেলেনি শান্তি। তবুও আগামীদিনে চ্যাম্পিয়ন তৈরির কাজ চালিয়ে যাবেন অষ্টমবাবু, কারণ এটাতেই তাঁর আনন্দ।