তাঁদের জীবনের গল্পটা ঠিক অন্যদের মতন নয়, একজনের বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন, অন্যজন অ্যাসিড আক্রান্ত। দুজনেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দুজনের অবস্থান থেকেই হয়ত সিংহভাগই লড়াইটা ছেড়ে দিতেন। কিন্তু তা হয় নি। লড়েছে, শিখেছে, এবং জিতেছে আর আমাদের শিখিয়েছে বাস্তবেই 'ডর কে আগে জিত হ্যায়।'
মাধ্যমিক (Madhyamik) পরীক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে জয়জয়কার শুরু হয়েছে রাজ্যের জেলাগুলিতে। তবে সেই দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল কলকাতা (Kolkata)। মাধ্যমিকের প্রথম দশের মধ্যে নেই কলকাতার কোনও স্কুল। এবারের মাধ্যমিকে পাশের হার ৮৬.১৫ শতাংশ। মাধ্যমিকের এই ফল নিয়ে বরাবরই উচ্ছাস থাকে পড়ুয়া সহ অভিভাবকদের মধ্যে। এর পিছনে থাকে কমবেশি লড়াইও। কখনও কখনও ভীষণ ব্যতিক্রমী লড়াইও দেখেছে এ রাজ্য। ঠিক তেমনভাবেই এবারও দুটি ব্যতিক্রমী গল্পের নাম হল জগন্নাথ ও রাজলক্ষী।
বর্ধমানের নুদিপুর ভুপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ছাত্র জগন্নাথ মাণ্ডি। প্রতিবন্ধকতাকে সাইডে রেখে পায়ে লিখেই মাধ্যমিক জয় করল জগন্নাথ। মাধ্যমিকে ২৫৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। জানা গিয়েছে, বর্ধমানের মেমারীর সিমলা আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা জগন্নাথ মাণ্ডি। সেই আদিবাসী পাড়া থেকে জগন্নাথই একমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে এবছর। আর উত্তীর্ণও হয়েছে। তাই তার পরিবারের সদস্যরা সহ সিমলা আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দারাও এই জয়ে বেজায় খুশি। মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের পরে চরম খুশি জগন্নাথও। জানা গিয়েছে, শুধু প্রতিবন্ধকতায় নয় প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই প্রবল জেদ নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় জগন্নাথ। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। ৯০ বছরের ঠাকুমার কাছে থেকে পড়াশুনা করত জগন্নাথ। দাদা এক জায়গায় কাজ সংসার খরচ দেয়। সেই খরচ দিয়েই কোনরকমে পড়াশুনা করেছে জগন্নাথ। পরীক্ষার এই ফলাফল দেখে পরবর্তীতে জগন্নাথের স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষক হয়ে তার মত বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষদের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে। জগন্নাথের এই ফলাফলে খুশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।
পাশাপাশি কঠিন লড়াই করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে বীরভূমের রাজলক্ষী দে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করেছে সে। জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই অ্যাসিড হামলার মুখে পড়েছিল রাজলক্ষী। তবে অসামান্য জেদের কারণেই রাজলক্ষী ওই অবস্থাতেই পরীক্ষা দিতে যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার সেন্টারে। রাইটার নিয়ে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। তবে সেই পরীক্ষার্থীর হাতেই এবার এল সাফল্যের শংসাপত্র। যদিও এই ধরনের ঘটনা না ঘটলে ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া যেত বলে, জানিয়েছে পরীক্ষার্থী। আগামী দিন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করতে চায় রাজলক্ষী।