মনি ভট্টাচার্য: 'মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য 'ফ্রি' কোনও ব্যবস্থা নেই। বারবার আকুতি করার পরেও আমার আবেদন হাসপাতালের কেউ শোনে নি। শেষে নীরজকে ব্যাগে নিয়ে বাড়ি ফিরি।' শুধু স্বাস্থ্যদফতর নয়, সরকার নয়, অভিযোগ সরাসরি মানবিকতার বিরুদ্ধে। মৃত সন্তানকে সমাধিস্থ করার পর মানবিকতার পরাজয়ের গল্প শোনালেন কালিয়াগঞ্জের মৃত শিশুর বাবা অসীম দেব শর্মা।
শববাহী গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার পয়সা ছিল না। কারোর কাছেই পায়নি সাহায্য। অবশেষে নিজের সন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে করে নিয়ে বাসে চেপে বাড়ি ফিরলেন বাবা। অমানবিক এই ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর দিনাজপুর। রবিবার এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য।
সোমবার সকালে সিএন-ডিজিটালের প্রতিনিধি ওই সন্তানহারা বাবা অসীম দেব শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, '৫ মাসের যমজ দুই ছেলের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। রবিবার দুই সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। দুই হাসপাতালে পরীক্ষা ও চিকিৎসার পর মঙ্গলবার অবশেষে ঠাঁই হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসা চললে বড় ছেলে নিলয় দেব শর্মা সুস্থ হয়ে যায়। শনিবার ছোট ছেলে নীরজ দেব শর্মাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ মৃত বলে ঘোষণা করে।'
অসীম যেমনটা জানিয়েছে, এ ঘটনার পর মৃত শিশুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক, শববাহী গাড়ির চালক সবাইকে বলি। তাঁরা চিকিৎসকদের কাছে পাঠায়। চিকিৎসকদের বললে হাসপাতাল সুপারের কাছে পাঠায়।
অসীম আরও বলেন, 'একদিকে সমস্ত টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে আমার বাচ্চাও মারা গিয়েছে। আমি ওই হাসপাতালের সুপারকে জানাই। সুপার জানায়, মৃতদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্রি-এর কোনও ব্যবস্থা নেই। বারবার আকুতি করার পরেও কোনও চিকিৎসক, কেউই আমার কোনও আবেদন শোনেন নি। এরপর কোনোভাবেই গাড়ি জোগাড় করতে না পেরে জামা-কাপড়ের ব্যাগে জামা-কাপড়ের বদলে নীরজকে ঢুকিয়ে বাসে করে ফিরে আসি।'
যদিও এ খবর পেয়ে ততক্ষণে কালিয়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ দাস। কিন্তু এ ঘটনায় মানবিকতার পরাজয় দেখছে গোটা রাজ্যবাসী। এ ঘটনা জানতে চেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের সুপারকে ফোন করা হলে তিনি পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন। এরপর বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ওই জেলার স্বাস্থ্যদফতরের অধিকর্তাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করা হলে তারও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।