Breaking News
Abhishek Banerjee: বিজেপি নেত্রীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগ, প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জাতীয় মহিলা কমিশনের      Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?     

অন্যান্য

Special story: মহামিলনের প্রতীক দেবী দুর্গার অর্থ ও মাহাত্ম্য কি

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) রথ যাত্রার দিন থেকে দেবীর কাঠামো তৈরি হয়, কাঠামো তৈরি থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গাপুজোর উপকরণ সংগ্রহের জন্য মালি, তাঁতি, কুম্ভকার, পতিতা, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শুদ্র, কায়স্থ সব শ্রেণীর মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন এই পুজোয়। তাই এই পুজো মহামিলনের পুজো অন্যদিকে শারদীয় উৎসবকেই বলা হয় মহামিলন উৎসব। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন এবং বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অন্তরের মিলনে প্রতিবছর নতুন করে জীবন দান করে, কারণ দেবীর শক্তি ও আসরিক শক্তির যে গুণাবলী তা মানুষের শরীরে বিদ্যমান। তাই বিজয়া দশমীতে মাকে বিসর্জন দেবার পর মাকে প্রার্থনা করি, মা আমাদের আসরিক শক্তিকে তুমি নাশ করো। দেবী শক্তি প্রদান করে আমাদের মানুষ করো। এটা করলে তবে সমাজ থেকে হিংসা-দ্বেষ হানাহানি কাটাকাটি ভুলে মানুষের আবার সুখ শান্তি লাভ করতে পারবে।

আমরা যে দুর্গা পুজো করি, এই দুর্গার অর্থ কি বলেছে? 'দ' অক্ষরটি দৈত্য নাশক 'উ' কার হল বিঘ্ননাশক, 'রেফ' হল রোগনাশক, 'গ' কার হল পাপনাশক এবং 'অ' কার হল শত্রুনাশক। তাহলে দৈত্য বিঘ্ন ভয় বা শত্রু হতে যিনি রক্ষা করেন তিনি দুর্গা।

ষষ্ঠীর দিন থেকে পুজো শুরু হয়। সকালে কল্পারম্ভ। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজো করার সংকল্প করে দুর্গা মন্ডপের একপাশে ঘর স্থাপন করা হয়। পুজোয় চণ্ডীপাঠ করতে হয় ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত। শুদ্ধ মনে এই দেবী মাহাত্ম্য পাঠ করা হয়ে থাকে। এদিন সন্ধ্যাবেলায় বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে বোধন করা হয়। এবং অধিবাস ও আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণ করা হয় এই বলে যে, পরের দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুজোর জন্য মন্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে। সপ্তমীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় ও চক্ষুদান করা হয়। অষ্টমীতে কুমারী পূজোর বিধান শাস্ত্রে আছে। এক থেকে ১২ বছর বালিকাকে কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। এক বছর বয়সের নাম হবে- সন্ধ্যা,  দুই বছর হলে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে-কালিকা, পাঁচ বছরে সুভাগা, ছয় বছরে-উমা, ৭ বছরের মালিনী, আট বছরের-কুঞ্জিকা, নয় বছরের কালসন্দর্ভা ইত্যাদি। তন্ত্রে কুমারীকে সাক্ষাৎ যোগিনী ও পরম দেবতা বলা হয়।

দেবী দুর্গার দশ হাত শ্রী শ্রী চন্ডিতে আছে, দেবতাদের পুঞ্জিভূত তেজ থেকেই এই দেবী মূর্তি আবির্ভাব হন তার দশ হাতে দশটি অস্ত্র আছে। দশ জন দেবতা অসুর নাচের জন্য দশ হাতের ১০ টি অস্ত্র প্রদান করেছেন। শিব দিয়েছেন ত্রিশূল, মহাকাল দিলেন খড়গ, বিষ্ণু দিলেন চক্র বায়ু দিলেন তীক্ষ্ণ বান অগ্নি দিলেন গদা যম দিলেন কাল দন্ড, বরুণ দিলেন নাগ পাশ, ইন্দ্র দিলেন অঙ্কুশ, বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার, আর বাহন হলেন সিংহ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে পশু ভাব আছে যখন পুরুষাকার সাধনভজনের মাধ্যমে মানুষ পরিণত হয় তখন পশুভাব কেটে গিয়ে দেবভাব জাগ্রত হয়। দেবীর চরণ তলে সিংহের সেই ভাবেরই প্রতীক।

8 months ago
Special story:অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা)

একমাত্র বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজো সবচেয়ে বেশি আনন্দের। এই পুজোতেই দেখা যায়, মহামিলনের অবিশ্বাস্য় ছবি। মহামিলন বললাম এই জন্য় যে, বিবিন্ন জাতের মানুষেরা এই উৎসবে মিলিত হয়ে সমস্ত মানুষের সাথে আনন্দে লীন হয়ে যায়। যেমন কামার কুমোর, কুম্ভকার, ঝাড়ুদার, পতিতা, শোলা শিল্পী, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য়, শুদ্র, কায়স্থ, অবাঙালি সমস্ত শ্রেণীর মানুষ এই পুজো উৎসবে মেতে ওঠে আনন্দে। দৃশ্য়ত এ এক অভূতপূর্ব মহামিলন। শারদীয়ার এই পুজো যেন অগ্রিম জানান দেয়-আমি আসছি। সাদা কাশফুল, নীল আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া খণ্ড সাদা মেঘ, মেঘ রোদের খেলা, বর্ষার পর মাটির সোঁদা গন্ধ, শিউলি ফুলের সুবাস, সব মিলিয়ে দুর্গাপুজা যে আসন্ন, তা চোখ বুজে বলা যায়। মহালয়ার দিন থেকেই উৎসব শুরু। প্রথমে মহালয়ার তাৎপর্য তুলে ধরি আপনাদের কাছে। মহালয়া কথাটি এসেছে মহাআলয় থেকে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আবার বলা যায় মহৎদের আলয় বা পরমস্থান। 'মহা' 'লয়'- অর্থাৎ পরমলীন। মহতীদের লয় হয় যেখানে। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। এইদিন থেকেই মহাপুজা আরম্ভ।

এই মহাপুজা ঠিক কবে থেকে শুরু, তার হিসেব বলা মুশকিল। তবে মনে হয় দুর্গাপুজা শুরু পৌরাণিক কাহিনী-'রামায়ন' থেকে। কৃত্তিবাসী রামায়নে এই পুজার উল্লেখ আছে। ভক্তি, বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে এই পুজা করেছিলেন। তাই এই পুজাকে অকালবোধন বলা হয়। অকালবোধন কেন? দেখুন, আমাদের ছ'মাসে দেবতাদের একদিন। অন্য় ছ'মাসে দেবতাদের একরাত। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্য়ৈষ্ঠ, আষাঢ়- এই ছমাস দেবতাদের উত্তরায়ন। দেবতারা উত্তরায়নে জাগ্রত থাকেন। আর শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ- এই ছমাস দেবতাদের দক্ষিণায়ন। দেবতারা এই দক্ষিণায়নে নিদ্রিত থাকেন। এই দক্ষিণায়নে রামচন্দ্র মাকে আহবান জানিয়ে ছিলেন অর্থাৎ মাকে জাগালেন। অসময়ে মাকে বোধন করেছিলেন বলে এই পুজাকে বলা হয় অকালবোধন। অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।   

8 months ago
Life: এক নিমেষে জীবনটা চলে গেল...

সৌমেন সুর: এক নিষ্পাপ যুবকের  জীবনটা চলে গেল। চিরদিনের মতো। কয়েকজন আলটপকা সো কলড মনুষ্যত্বহীনের জন্য সে হারিয়ে গেল। কত আশা করে বাবা-মা একবুক স্বপ্ন নিয়ে, তাঁদের একমাত্র ছেলেকে যাদবপুরে পাঠিয়েছিলেন- তাঁদের ছেলে একদিন তাঁদেরকে দেখবে। নতুন ঘর বাঁধবে। স্বপ্নের ইরামত গড়বে। সব স্বপ্ন এক নিমেষে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পাশ আউট ছেলেরা কী করে হোস্টেল দখল করে থাকে বছরের পর বছর। কর্তৃপক্ষ কি কিছুই জানেনা। জানে না বললে অবিশ্বাসযোগ্য। জানলে, কেন প্রশাসনকে আগেভাগে জানানো হয়নি।

জে.ইউ-তে যে সুনাম একসময় ছিল এখন তার বিন্দুবিসর্গ নেই। এই ইউনিভারসিটির প্রতিটা ইটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অমানবিকতা, নেপোটিজম, ভায়োলেন্সের ছড়াছড়ি। উদ্ভব যখন হয়েছে, এর নিঃশেষ হলো না কেন? কোন শক্তির বলে মাথাচাড়া দিলো! আড়ালে কাদের মদত- সব প্রকাশ্যে আসুক। মানুষ বুঝুক এখানকার শিক্ষা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। কথা হচ্ছে এত সাহস পায় কোত্থেকে? কোন পেশীবলে তারা বলীয়ান- সব খুলে দেওয়া হোক। যারা দোষী তাদের চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

একটা জীবনের দাম দেওয়া যায় না। জীবনের দাম অনেক।  জীবন হেলায় ফেলায় নয়।  জীবন শেষ হতে এক মিনিট। কিন্তু জীবন গড়তে কয়েকশো কোটি মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এখনো কানে বাজে নিষ্পাপ যুবকের ফোনের কথা, 'মা, আমার খুব ভয় লাগছে। তোমরা আমাকে নিয়ে যাও।' তারা আর নিয়ে যেতে পারলো না, মাত্র কয়েকজন পাষণ্ড, পাশবিক , উদভ্রান্ত হত্যাকারীদের জন্য। যারা ৱ্যাগিং করে, সে ছাত্রই হোক আর শিক্ষকই হোক- তাদের ষড় রিপু ঠিক নেই। অনতি বিলম্বে তাদের সাইক্রিয়াটিসদের কাছে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করা দরকার। কারণ তারা অমানবিক, অমানবিক, অমানবিক।

8 months ago


Durgapuja: আসন্ন দুর্গাপুজোয় পশুবলি একদম নয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) আকাশের মেঘ আর রোদের খেলা দেখে, চোখ বুজে বলতে পারা যায় দুর্গাপুজো আসন্ন। এখন বেশকিছু মাঠের কিনারে সাদা কাশফুলের দোলা আর শিউলি ফুলের উল্লাস দেখে মনে হয়- মা আসছেন। মা অর্থাৎ দুর্গা মা। কোনো কোনো বাঙালির ঘরে কন্যা উমা মর্তে আসছেন। মায়ের কাছে কটা দিন মেয়ে আসছে তার পুত্রকন্যা নিয়ে। এই আনন্দে সারা বাংলায় সাজো সাজো রব।

দুর্গাপুজো মূলত শাক্ত পুজো। শক্তির আরাধনাই এখানে মূল বিষয়। রক্তের মাধ্যমে অশুভ অসুর শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং দুর্গাপুজো বা যে কোন শক্তির আরাধনায় পশুগুলি জড়িয়ে আছে রক্তপাতের মাধ্যমে শুভ শক্তির জয় আর অশুভ শক্তির পরাজয়। দুর্গাপূজোই পশু বলি নিয়ে নানা ঘটনার উল্লেখ আছে। মার্কেন্ডেয় পুরাণ-এর দেবী মাহাত্ম্য নিয়ে প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ও লোকশিল্পের গবেষক মোহিত রায় তাঁর 'রূপে রূপে দুর্গা' নামক বইটিতে লিখেছেন বোলপুরের আদি ইতিহাস। এক সময় রাজা সুরথ তাঁর রাজধানীর সুপুরে এক লক্ষ বলি দিয়ে দেবীকে পুজো দিয়েছিলেন। এক লক্ষ বলির পর তার রাজধানীর নাম বদলে হয় বলিপুর। কালক্রমের সেই বলিপুর হয়ে উঠল বোলপুর নামে।

খোদ কলকাতাতেই আছে ৪০০ বছরের পুরনো চিত্তেশ্বরী মন্দির। চিতপুরের চিতে ডাকাত এই মাকে পুজো করতেন। সুতরাং বলা যায় ডাকাত কালীর মতো ডাকাতের দুর্গাপুজোয় বলিদান নিত্য ঘটনা। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের বিজয় উৎসব পালনের জন্য বসন্তকালের দুর্গাপুজো শরৎকালে নিয়ে এসে নবপত্রিকা পুজোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজ করেছিলেন নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র ও কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব। এদের উৎসাহিত করেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। প্রমাণ হচ্ছে সপারিষদ ক্লাইভের উপস্থিতি ও একশো এক টাকা দক্ষিনা ও ঝুড়ি ঝুড়ি ফলদান। তিনি নব কৃষ্ণের বাড়িতে পশুবলি সহ পুজো দিয়েছিলেন শোনা যায়।

বর্তমানে বিভিন্ন বারোয়ারি এবং অধিকাংশ রাজবাড়িতে পশুবলি না হয়ে সন্ধিপুজোয় আঁখ, চালকুমড়ো, শশা প্রভৃতি বলিদান প্রথায় অনুষঙ্গ হিসাবে বলি দেওয়া হয়ে থাকে। শাক্ত পুরুষ মাতৃভক্ত রামপ্রসাদ সেনের এই গানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক- " মেষ, ছাগ, মহিষাদি কাজ কিরে তোর বলিদানে/ তুই জয় কালী জয় কালী বলে বলি দাও ষড়রিপুগনে।" অবলা পশুদের হত্যা করে পুজো- মা কখনই তা চায় না।  আসুন, আসন্ন দুর্গাপূজায় শপথ করি প্রাণী হত্যা করে পুজো আমরা কখনোই দেব না। এই প্রথায় আমরা ঘোরবিরোধী। তথ্য সংকেত- সুমিত তালুকদার

8 months ago
Celebration: ১৫ই অগাস্ট শপথের দিন

সৌমেন সুর: গৌরী কর্মকার। একটা নাম, একটা আবেগ। একটা নক্ষত্র। এত প্রতিভার মানুষ খুব কমই দেখা যায়। গৌরী ক্লাস সেভেনে পড়ে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। সুবারর্বন অঞ্চলে গৌরী থাকে। বিধবা মা ছাড়া সংসারের ওর আর কেউ নেই। কিছু কিছু মানুষ প্রতিভা নিয়েই জন্ম নেয় এই পৃথিবীতে। গৌরী তাদের মধ্যে একজন। যেমন লেখাপড়ায় তেমনি আঁকায় তেমনি কবিতা লেখায়। গৌরী এরমধ্যে শ'দুয়েক ছবি এঁকে ফেলেছে। তার আঁকা দেখে মনে হবে এই ছবি যেন কোন এক বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা। অঞ্চলের এক শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে ওর ছবি ক্যালিফর্নিয়ায় প্রদর্শিত হয়। সেখান থেকে খবর আসে ওর ছবি দর্শকদের ভালো লাগছে। এত কম বয়সে এত ট্যালেন্ট এটা দেখে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষ একটা প্রশংসা পত্র পাঠায়। গৌরীর মা সেটা যত্ন করে বাঁধিয়ে রাখেন ঘরে। পাড়া-প্রতিবেশী, বাইরের লোক সবাই গৌরীকে স্নেহ করে, ভালবাসে।

গৌরী প্রতিবছর ১৫ ই অগাস্ট একটা সাদামাটা অনুষ্ঠান করে। এই অনুষ্ঠানে দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বই-খাতা, পেন বিতরণ করে। গৌরী ও তার বন্ধুরা কোনরকম চাঁদা না তুলে,  প্রত্যেকে টিফিনের টাকা জমিয়ে- সেই টাকায় অনুষ্ঠান করে। এবার কেউ যদি স্বেচ্ছায় ডোনেট করে সেটা গ্রহণ করে। গৌরীরা চার বন্ধু। এরা চারজনই মেধাবী,  কর্মঠ। গৌরী এদের লিডার। দেখতে দেখতে ১৪ ই অগাস্ট এসে যায়। গৌরী ও চার বন্ধু মিলে ১৫ ই আগস্ট এর জন্য ফ্ল্যাগ কিনতে বেরোয়। সকাল সকাল চলে আসে, বড় রাস্তার দোকানে। একটা স্লিকের ফ্ল্যাগ কেনে। ফ্ল্যাগ কেনার পর গৌরী তিন বন্ধুকে বলে লজেন্স আর চকলেট কিনে মাঠে চলে আসতে। সবাই স্থান ত্যাগ করে।

গৌরী এক বুক আনন্দ নিয়ে ফ্ল্যাগটা ডান্ডায় ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে ফ্ল্যাগের দিকে তাকিয়ে। স্বাধীনতার পতাকাটা হাওয়ায় পত পত করে উড়তে থাকে। কিছুটা এগোতেই একটা বাইক অসাবধানতাবশত গৌরীকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। গৌরী ছিটকে লুটিয়ে পড়ে। ও দেখছে- উঁচু থেকে পতাকাটা নীচে নামছে। যন্ত্রণার কথা চিন্তা না করে, এক অদম্য শক্তিতে উঠে দাঁড়িয়ে ফ্ল্যাগটা হাতে ধরে ফেলে। মাটির নোংরা স্পর্শ করতে পারেনা পবিত্র পতাকাকে। এ দৃশ্য দেখে জড়ো হওয়া সব মানুষ গৌরীকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। গৌরীর শুকনো মুখে কষ্টার্জিত হাসি ফুটে ওঠে। এমন সময় দূর থেকে মাইকে ভেসে ওঠে দেশাত্ববোধক গান- "হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির নাহি ভয়....।"

স্বাধীনতার মান রক্ষার দায়-দায়িত্ব সমস্ত নাগরিকের। স্বাধীনতার ৭৬ বছরে কি পেলাম আর কি পেলাম না- সেই হিসাবে না গিয়ে, আসুন আমরা সবাই মিলে ১৫ ই অগাস্ট  শপথ করি, আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো।

8 months ago


Independence: স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির অবদান

সৌমেন সুর: বাংলার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, বাংলাতেই শুরু হয়েছিল ভারতের নবজাগরণ। রাজা রামমোহন রায় প্রথম নবচেতনার উদ্বোধন করেছিলেন। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র 'বন্দেমাতরম' মন্ত্র দিয়ে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এরমধ্যে সিপাহী বিদ্রোহ, নীলচাষ বিদ্রোহ, স্বাধীনতার আকুতিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে বাঙালি সেদিন পরাধীনতার জ্বালাকে প্রকাশ করেছিল।

১৯০৫ সাল। লর্ড কার্জন বাংলা ভাগ করতে চাইলেন। বাঙালি প্রতিবাদ জানালো। সভা,  সমিতি, মিটিং, মিছিলের প্রতিবাদ আরও গর্জে উঠল। এখান থেকে বাংলার মুক্তি সংগ্রাম শুরু। কবিরা কবিতা রচনা করলেন, ও দেশাত্মবোধের গান। অন্যদিকে স্বদেশী আন্দোলনের সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন জননায়ক। বহু মানুষকে তিনি স্বদেশী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে তিনি 'রাখি' পরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪২-৪৩ সাল পর্যন্ত বাংলার মুক্তি সংগ্রামের দ্বিতীয় ধাপ। মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন, লবণ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন বাঙালি দেশ প্রেমিকের সহযোগিতায় এক অন্য মাত্রা নেয়। ১৯৩০ সালে অবিভক্ত বাংলায় চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম। তৈরি হয় স্বদেশী সরকার। ১৯৩৯ শে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। গান্ধীজীর সঙ্গে নেতাজির মতের অমিল হয় নেতাজি দেশ ছাড়েন। ছাড়লেন কংগ্রেস। ১৯৪২ এর ৯ই অগাস্ট গান্ধীজী 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের ডাক দিলেন। পরের দিনই মহাত্মা গান্ধী সহ অনেক নেতার কারাবরণ হয়। শুরু হয় দেশ জুড়ে গণ বিপ্লব। তমলুকে মাতঙ্গিনী হাজরা ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতে নিহত হন। প্রথম শহীদ হন ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। ওদিকে দেশের পূর্ব সীমান্তে নেতাজীর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান। একেবারে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি আক্রমণ।

স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঘা যতীন, বিনয়-বাদল- দীনেশ, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনী, রাজবিহারী বসু, চারুচন্দ্র বসু,কল্পনা দত্ত, সুশীল সেনগুপ্ত, বসন্ত বিশ্বাস, এমনকি আরও কত বিপ্লবী বাঙালি নিজের প্রাণকে আহুতি দিয়েছিলেন তার অন্ত নেই। ১৯৪৭ সাল স্বাধীনতা এলো। তবে এই স্বাধীনতার অন্যতম দুই শরিক বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করে দিল চতুর ইংরেজ। এ এক নজির বিহীন অপমানিত ইতিহাস। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। এবং এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সিংহভাগই বাঙালি।

8 months ago
Special story: আমরা সভ্য, না অসভ্য-কোনটা!

সৌমেন সুর: এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনায় নেমেছি- এক একসময় মনে হয় আমি কোন জগতে বাস করছি! সামান্য নিম্নবর্ণের মানুষ নদীতে স্নান করেছে বলে সেই নদীর জল অপবিত্র হয়ে গেছে। তাই তাকে উচ্চবর্ণের মানুষ অমানুষিকভাবে বাঁশপেটা করলো। বাঁশ নিয়ে যত শক্তি আছে শরীরে সেটা প্রয়োগ করা হলো। এটা সভ্যজগতের কাজ? আমরা বড়াই করি-সভ্যজগতে বাস করি, আমরা সভ্য। আসলে আমরা এখনো অসভ্য। কারণ আমরা এখনো দাঙ্গা লাগাই, দাঙ্গাই অংশ নিই। কুসংস্কারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, নিষ্পাপ শিশু কিশোরকে ধর্ষণ করি বর্বরোচিতভাবে। অদ্ভুদ এক সমাজে বাস করছি। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিষয়-জাতিভেদ। 

কোনো শিশু জন্মাবার সময় কোনো প্রতীকচিহ্ন নিয়ে জন্মায় না। কারণ সব মানুষই একটি জাতি। তাহলে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বমানব এক জাতি। মানুষ মাত্রই এক জাতি, এই ধারণা জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা বিভাজনের খেলায় মেতে সমাজে অসংখ্য জাতির প্রাচীর তুলে দিয়েছি। ঋগবেদের যুগে জাতিভেদ বলে কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে জাতি হয়ে ওঠে জন্মসূত্রে অর্জিত সামাজিক স্তর। অধ্যাপক ব্যাসামের মতে, ষোড়শ শতকে পোর্তুগীজরা হিন্দুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উপজাতিতে চিহ্নিত করে। সেই সময় থেকে 'Caste' শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কুসংস্কার মানুষের মনের জমিতে এমন গভীরে শিকড় চালিয়ে দেয়েছে যে, আজও জাতপাতের ভিত্তিতে সামাজিক অবিচার, অনিয়ম। কবি নজরুল একে 'জাতের নামে বজ্জাতি সব' বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। মানুষের কুসংস্কারকে আরও প্রশয় দিয়েছে ব্রিটিশ শাসক। কারণ এটা জিইয়ে থাকলে ওদের দিকে তাকাবার সময় থাকবে না। এদিকে মানুষের মুখটাকেও ঘুরিয়ে দেওয়া গেল। কালের চক্রে এটাই চলছে বর্তমানে। বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে জাতিভেদের চিন্তাভাবনা প্রবেশ করায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। স্বাধীনোত্তর যুগে জাতপাত নিয়ে কতবার যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। রাজনীতি থেকে জাতপাতের ভাবনাকে বিসর্জন না দিলে, জাতির সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।  

9 months ago
Special Story: নিঝুম রাতে (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: ঝড়ের গতিতে ভ্যান চলে আসে সুকুমার ব্যানার্জীর বাড়ি। কিশোর বলে, 'দিদি, ওই যে সুকুমার কাকুর বাড়ি।' নন্দিনী ভ্যান থেকে নেমে বলে, 'ভাই কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ জানাবো সে ভাষা আমার নেই। যাক, তোমার কথা দেব বলো!' 'বেশি দিতে হবে না দিদি, ৫০ টাকা দিন।' নন্দিনী টাকাটা বের করে ওর হাতে দিতেই চমকে ওঠে। কিশোরের হাত বরফের মত ঠান্ডা। কিছু বোঝার আগেই ভ্যান চালিয়ে চলে যায় কিশোর। নন্দিনী ঠিক না, মনের ভুল এসব ভাবতে ভাবতে সুকুমারদার বাড়ি চলে আসে। গেটের হ্যাজবোল্ড নাড়াতেই সুকুমার বলে ওঠেন, ' এসো এসো নন্দিনী, এসো। নন্দিনী ঘরে ঢোকে। একটা চেয়ারে বসে। পথে তোমার একটু কষ্ট হল। 'প্যান্টোগ্রাফ ভেঙেছে বলে কিশোরকে বলে রেখেছিলাম, তোমাকে রিসিভ করবার জন্য।' ' ধন্যবাদ সুকুমার দা।' 'যাক স্ক্রিপ্টটা এনেছো?' ' হ্যাঁ এনেছি, এই নিন।' নন্দিনী সুকুমারদা কে দেয়। সুকুমারবাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে বলেন, ' আলোচনা করবার আগে তোমার ভাবনাটাকে আমি পরিষ্কার করে দিই। তুমি কলেজে জিজ্ঞাসা করেছিলে,  আমি গ্রামে থাকি কেন।' 'দেখ নন্দিনী, প্রথম দিকে আমি কলকাতাতেই থাকতাম। কিন্তু পরে শুনি, আমার অনেকটাই বাস্তু জমি রাজনৈতিক দল হড়প করে নেয়। খবর দেয় আমার জমির কেয়ারটেকার কিশোর আর তার দিদি। একদিন আমি পুলিশ নিয়ে এসে ওই রাজনৈতিক দলের দুজনকে ধরি। এরপর একদিন সন্ধ্যায় আমরা মানে, কিশোর, ওর দিদি আর আমি বেশ মজা করে মুড়ি তেলেভাজা খাচ্ছিলাম, এমন সময় রাজনৈতিক দলের গুন্ডারা হঠাৎই উপস্থিত হয়। কিশোরের দিদি। ' দাঁড়ান সুকুমার কাকু, বাকিটা, আমাকে বলতে দিন।' নন্দিনী খুলে তাকায়, কিশোরের দিকে ভালো করে দেখে। মেয়েটি কথা বলতে বলতে দুই পা এগিয়ে আসে। ' ওই গুন্ডারা প্রথমে সুকুমার কাকুর ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে। তারপর আমাদের সবাইকে খুন করে।' নন্দিনী ঘরে তাকাতেই দেখে সুকুমার ব্যানার্জি অদৃশ্য। চকিতে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়, দেখে মেয়েটি অদৃশ্য। নন্দিনী কি করবে ভেবে পায় না। ঘামতে থাকে। কাঁপতে থাকে সারা শরীর। নন্দিনী অজ্ঞান হয়ে যায়। (সমাপ্ত)

9 months ago


Haunted: নিঝুম রাতে (২য় পর্ব)

সৌমেন সুর: কিশোর আপনমনে ভ্যান চালাতে থাকে। নন্দিনী ভয়ে কিশোরকে জিজ্ঞাসা করে, 'এত জোরে ভ্যান চালাচ্ছ কেন, আস্তে চালাও না?' কিশোর উত্তর দেয়, 'দিদি, আমার জন্য আমার দিদি একটা গাছের তলায় অপেক্ষা করছে- তাই জোরে চালাচ্ছি।  ভয় নেই আপনি পড়বেন না।' নন্দিনী আর কথা বলে না। সুকুমার দার কথা ভাবে। এত গুণী মানুষ, এত বড় একজন লেখক, সে কেন এই গ্রামে পড়ে আছে! আবার কলেজের লেকচারার। এখান থেকেই নন্দিনীর সাথে আলাপ। নন্দিনীর মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন সুকুমার ব্যানার্জি। ভবিষ্যতে নন্দিনী একজন ভালো প্রবন্ধকার হতে পারবে।

আজ নন্দিনী চলেছে নতুন একটা লেখা নিয়ে। সুকুমার বাবুই ওকে আসতে বলেছিলেন। আসতে গিয়ে যত বিপত্তি। সাত পাঁচ ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ভ্যানটা থামে। নন্দিনী অবাক হয়ে বলে, 'ভ্যান থামালে কেন!' 'দিদি ওই গাছটার নিচে আমার দিদি অপেক্ষা করছে। আমি যাব আর আসবো।' কথা বলে কিশোর দৌড়ে চলে যায়। চারদিক নিকষ অন্ধকার। শুধু জোনাকির মিটমিটে আলো। দূরে কোথাও কুকুর ডেকে ওঠে। ভেসে উঠছে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না। রাত কত হল কে জানে। নন্দিনী ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে।

'শালাদের দেখা পেয়েছিস'- কিশোরের দিদি উত্তেজিত হয়ে বলে। কিশোর দিদিকে বলে, ' না দিদি। লাস্ট ট্রেনের একজন প্যাসেঞ্জার নামে। যে আমার গাড়িতে আছে।' 'কোথায় যাবে?' 'সুকুমারদার বাড়ি।' 'তাই! যা, ওনাকে নামিয়ে দিয়ে আয়।' কিশোর চলে আসে ভ্যানে। 'দিদি ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছি। টেনশন করবেন না।'

9 months ago
Haunted: নিঝুম রাতে (১ম পর্ব)

সৌমেন সুর: রাতে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ট্রেনটা নিঝুমপুর স্টেশনে থামে। প্লাটফর্ম ফাঁকা। কোনো মানুষজন নেই। ট্রেন থেকে নন্দিনী নামে। হাত ঘড়ির দিকে তাকায় নন্দিনী। রাত প্রায় দেড়টা। চারিদিক শুনশান। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। নন্দিনীর একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। একা মেয়ে মানুষ। এই নির্জন স্টেশনে কোন মানুষের দেখা নেই। কিভাবে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাবে! মোবাইলটা বার করে। তারপরেই চমকে ওঠে। নেট নেই। একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে মোবাইলটা রেখে দেয়। নন্দিনী নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। নিঝুমপুরে আরো তিন ঘন্টা আগে আসতে পারতো যদি না প্যানটোগ্রাফ ভেঙে পড়তো। ওটা সারাতেই তিন ঘন্টা চলে গেল। তারপর যে ট্রেনটা ছেড়েছে এটা ঠাকুরের অসীম কৃপা। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নন্দিনী আস্তে আস্তে এগিয়ে চলে। একটা রিক্সা বা ভ্যান কিছুই চোখে পড়ছে না।

এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল নন্দিনী। সুকুমারদা বলেছিলেন, সব ঠিকঠাক পেয়ে যাবে। কোথায় ঠিকঠাক! তবে সুকুমার দা'র দোষ কোথায়। বাদ সাধলো  তো প্যানটোগ্রাফ ভেঙ্গে। এইসব ভাবতে ভাবতে নন্দিনী লাইন পেরিয়ে রাস্তায় নামে। পিছন থেকে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে একটা গলা ভেসে ওঠে, 'দিদিভাই, কোথায় যাবেন?' চকিতে এদিক ওদিক তাকায় নন্দিনী। একটা ভ্যান ভেঁপু বাজিয়ে কাছে আসে। নন্দিনী ভ্যানচালকের পা থেকে মাথা অব্দি দেখে। পরক্ষণে ভ্যানচালক বলে, 'কোথায় যাবেন?' নন্দিনী কোনরকম ভণিতা না করে বলে, 'ঘোষপুর যাব।' 'ঘোষপুর কার বাড়িতে যাবেন?' 'সুকুমার ব্যানার্জীর বাড়ি।' 'ও, সুকুমার কাকুর বাড়ি যাবেন-বসুন বসুন। আপনাকে ওনার বাড়ি দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। বসুন' নন্দিনী আর কোনো কথা না বলে ভ্যানে উঠে পড়ে।

ভ্যান চলতে থাকে। চলতে চলতে কথাবার্তা বিনিময় হতে থাকে। অন্ধকার রাস্তা। চোখে কিছু ঠাওর করতে পারেনা নন্দিনী। অথচ কি দ্রুত ভ্যান চালাচ্ছে যুবক ছেলেটি। নন্দিনী একসময় বলে ওঠে, 'তুমি এত তাড়াতাড়ি ভ্যান চালিও না। অন্ধকার রাস্তা। পড়ে যাব।' ভ্যান চালকটি হাসিমুখে জবাব দেয়, 'কিছু চিন্তা করবেন না দিদি, এ রাস্তা আমার খুব চেনা। ' এমন সময় দূরে কোথাও শেয়াল ডেকে ওঠে। নন্দিনী চমকে ওঠে। ভ্যান চলতে থাকে আপন মনে। নন্দিনী জিজ্ঞাসা করে, 'তোমার নাম কি ভাই?' 'আজ্ঞে কিশোর দাস।' 'আচ্ছা কিশোর, তুমি এত রাতে ভ্যান চালাও কেন? বাড়িতে রেস্ট নিতে পারো না?' হাসিমুখে কিশোর বলে, 'দিদি রাতে ভ্যান চালালে লাভ আছে। প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে ডবল ভাড়া পাওয়া যায়।' 'তাই বুঝি, যাক আর কতদূর কিশোর!' 'দিদি, ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে কাকুর বাড়ি চলে আসবো।'

হঠাৎ ভ্যানের গতি বেড়ে যায় নন্দিনী শক্ত করে ভ্যানটা ধরে অবাক হয়ে তাকায় কিশোরের দিকে। ( চলবে)

9 months ago


Holiday: ছুটির আনন্দে, ডুবে যাই সানন্দে

সৌমেন সুর: ছুটির মধ্যে কোন কাজের তাড়া থাকেনা। সেখানে থাকে না কোনো আজ্ঞাপালনের নির্দেশ। থাকে না একঘেয়েমি, থাকে না ক্লান্তি। ছুটি মানুষের কাছে মহৎ প্রাপ্তি। ছুটির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একরাশ আনন্দ। ছুটি মানুষের চোখে পরিয়ে দেয় অনিন্দ্য সুন্দর মায়া কাজল। ছুটি তার অভ্যস্ত জীবন থেকে নিয়ে যায় সুন্দরের জগতে। ছুটির মধ্যেই রয়েছে জীবনের বিচিত্র লীলারঙ্গ। নতুন নতুন সৃষ্টি সুখের উল্লাস। কথা হলো, অবকাশ যাপনের রসিকরা জানে, অবকাশের মাহাত্ম্য কেমন, গতি কেমন। একটানা কাজের মধ্যে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে, অবসাদ তাকে ঘিরে ধরে, নিরানন্দে তার মন বিষাদে ভরে ওঠে, তখন ছুটিই তাকে দিতে পারে একমাত্র স্বস্তি।

ছুটি শব্দের মধ্যে রয়েছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। একটানা কাজের মধ্যে হঠাৎ আলোর এক উদ্দাম ঝলকানি। এই ঝলকানির আলোয় যখন আলোকিত হয় মন, তখন অনুভব করা যায় ছুটির আনন্দে, ডুবে যায় সানন্দে। ছুটি শুধু জীবনের ছুটি নয়, জীবনের মধ্যে ছুটি। ছুটিই মানুষকে নতুন করে কাজের উৎসাহ দেয়। তার মধ্যে ফুটে ওঠে কাজ করবার এক যোজন উদ্দীপনা। কাজের পাহাড়ে যখন মানুষের উঠে আসে নাভিশ্বাস, তখন ছুটির হাতছানি তাকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মানুষ বিচিত্র। বিচিত্র তার মন, তার রুচি। এই রুচি বৈচিত্র্যই ছুটিতে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। কারন সে মুক্ত। এক মুক্ত বিহঙ্গ।

কর্মের ফাঁকে ফাঁকে ছুটি পাওয়ার মধ্যে আছে গভীর আনন্দ। বর্তমানে রাজনৈতিক ডামাডোলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে আসছে- এই চরম হিংসা পরিস্থিতি থেকে নিজেকে আনন্দে দূরে সরিয়ে রাখতে, একমাত্র ছুটিই মানুষকে দিতে পারে এক অনাবিল আনন্দ। আসলে ছুটির মজাই আলাদা।

9 months ago
Water: জল নিয়ে ছেলেখেলা নয়-একটু ভাবুন

সৌমেন সুর: জলের আরেক নাম জীবন। তাই জলের জন্য যদি জীবন বিপর্যস্ত হয় তাহলে দায়ী আমরাই। আমাদের অসচেতনতা। কারণ অনেক সময় আমরা অযথা জল নষ্ট করি। জল যে আমাদের জীবনে কত বড় বন্ধু, তা মাঝেমাঝে সেটা আমরা ভুলে যাই। সমগ্র মানবকূলকে জলের প্রয়োজনে বাঁচতে প্রথমে চাই গণ-সচেতনতা। জল কোনোভাবেই নষ্ট করা চলবে না। আমাদের এই বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় রাস্তাঘাটে দেখা যায়, কল থেকে জল নির্গত হয়ে চলেছে অনর্গল, অথচ কেউ একজন এগিয়ে এসে কলটা বন্ধ করে দিচ্ছে নানা- এটা সম্পূর্ণভাবে মানব মনের অসচেতনতা। শুধু রাস্তাঘাট নয়, বাড়ির কলের ব্যাপারেও আমাদের জাগ্রত থাকতে হবে। জলের ব্যাপারে যেভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে জল তোলা হচ্ছে তাতে একদিন না একদিন হয়তো দেশবাসীকে ওয়াটার ক্রাইসিসে ভুগতে হতে পারে। তাই এখন থেকে যদি আমরা সচেতন হই জল আমরা অযথা নষ্ট হতে দেব নানা, এই ভাবনা নিয়ে এখন থেকেই এগোতে হবে।

মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হয়- তার অনেকগুলি জলবাহিত। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- আমাশয়, কলেরা,  জন্ডিস, চর্মরোগ। ইদানিং কোন কোন অঞ্চলে আর্সেনিক পরিমাণ মাত্রারিক্ত হওয়ার ফলে ভয়ংকর রোগ দেখা দেয়। এইগুলি আমাদের ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। এসবের জন্য প্রয়োজন নাগরিক কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়া।  ২০০০ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘ W. H. O মাঝেমধ্যেই বিশুদ্ধ পরিশ্রুত জলের অভাব মেটাতে গড়ে উঠেছে এক নতুন শিল্প। জল শিল্প। কিছু সংস্থা বোতলে মিনারেল ওয়াটার তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে। ১ লিটার মিনারেল ওয়াটার, এক লিটার দুধের দামের মধ্যে সামান্য পার্থক্য। তবে এইসব সংস্থার দাবি মতো, ওই পানীয় জল কতটা বিশুদ্ধ সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

প্রাত্যহিক জীবনে একটা দিন অনাহারে কাটানো যায়, কিন্তু জল ছাড়া একটা দিন ভাবা যায় না। সভ্যতার অগ্রগতি একটার পর একটা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। এবার জলের পালা। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, সমস্ত প্রাণীকুলকে বাঁচাতে জল যেন আমরা সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। তেড়ে গণ আন্দোলন করা উচিত। আগামী দিনে জল অপচয় যেন আমরা না করি। অপচয় করলে একদিন না একদিন আমাদের বিশাল বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

9 months ago
Rabindranath: রবীন্দ্রনাথ মহাপর্বতই বটে, যাঁর জন্ম-মৃত্যু সমান, অমর ও অনন্ত

সৌমেন সুর: আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। কারণ রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক। কবি স্রষ্টার দৃষ্টি নিয়ে যা তিনি অনেক আগেই দেখে গিয়েছিলেন, আজ এতদিন পরে তা অবিশ্বাস্য ভাবে সত্য হয়ে উঠেছে। কবি বলেছেন, নিজেকে প্রাসঙ্গিক করো অন্য মানুষে, মানুষ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে বৃক্ষলতায়, নদী-পর্বত সমুদ্রে, গ্রহে-নক্ষত্রে, মহাবিশ্বে। মনে রেখো, ক্ষুদ্র অস্তিত্ব মানুষের জন্য নয়। তাই মহৎ হয়ে বাঁচো। আমরা যদি ভয়ের প্রতিক্রিয়ায় দুবেলা মরার আগে ভয়েই মরতে থাকি, তাহলে কবি বলেছেন, 'দুঃখ যদি না পাবে তো/ দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে?'

রবীন্দ্রনাথ যদি মহাপর্বত হন, তাহলে তাকে কতটুকু মাপতে পেরেছি? কজনই বা তার চূড়ায় উঠতে পেরেছি? রবীন্দ্রনাথ কখনও পুরোনো হবেন না। কারণ তিনি নিজেকে কখনও পুরনো হতে দেননি। 'শেষের কবিতা' উপন্যাসে নিজেই বলেছেন কবিদের পাঁচ বছরের বেশি বাঁচা উচিত নয়। কেন নয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, আবার নিজেকে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- কবি কিভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সারা জীবন ধরে, এবং জীবনের অনেক পরেও। এমন একদিন আসতে পারে যেদিন কবিতার রবীন্দ্রনাথ, নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রসংগীতের রবীন্দ্রনাথকে মানুষ আলাদা আলাদা স্রষ্টা বলে ভাববে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থাকবেন বহু ভাবে ছড়িয়ে। আমাদের কবি জীবনের প্রতিটা স্তরে কতভাবে কত কিছু চিন্তা করেছেন, যেমন শিক্ষার কত সমস্যার কথা, সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন তার ঋষিকল্প অভিজ্ঞতার প্রজ্ঞায়। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা গল্পের অনেক বিবর্তন ঘটেছে। গল্পের রূপান্তর ঘটে গেছে অনেক, তবু আজও বাংলা ভাষায় এমন গল্প লেখা হয়। যা রবীন্দ্রযুগে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।

রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের কথা ভাবেননি। শিক্ষিত বাঙালি জীবনের রবীন্দ্রনাথ আজ এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যে ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছাই হোক, প্রতিদিন তাঁকে আমাদের স্মরণ করতে হয়। আসলে প্রতিদিন তার জন্ম। কোনদিনও তার মৃত্যু নেই। একটা ঠাকুরের বেদী চিরকাল মাটির সঙ্গে থাকবে গাঁথা, সে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। সবার প্রিয় রবি ঠাকুর। তাই পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ, দুটো তারিখই সমান। অমর, অনন্ত।

9 months ago


Job: চাকরির ব্যাপারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, ঠিক কি করবে!

সৌমেন সুর: শিক্ষা সভ্যতার অগ্রদূত। শিক্ষা দেশ ও জাতিকে আলো দেখায়, অন্ধকার দূর করে। শিক্ষা হল শুদ্ধ বিবেকের মন্ত্র। শিক্ষা নিয়ে অনেকের অনেক কথা শুনি। শুনেই মনের কোনে প্রশ্ন জাগে, শিক্ষা যদি আলোই দেখায়, তাহলে এই পর্যায়ে এত দুর্নীতি কেন? ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎটা কি? তারা ক্যারিয়ার গড়বে কিভাবে! আমাদের সময় স্কুল ফাইনালের পর হায়ার সেকেন্ডারি ছিল প্রধান। কারণ হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর কে-কি নিয়ে পড়বে তাই নিয়ে জল্পনা চলতো। অর্থাৎ আর্টস, কমার্স, সায়েন্স, এই তিন বিভাগের মধ্যে কে কোন বিভাগ নিয়ে পড়ে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। জীবনের চলার পথকে মসৃণ করবে। তবে চলার মধ্যে একটা জিজ্ঞাসা আছে। প্রত্যেকের মনে একটা স্বপ্ন বিরাজ করত, আমি চাকরি পেয়ে সবাইকে খুশি করব। যাই হোক, শিক্ষাক্ষেত্রে তখন আমাদের সময়। উচ্চমাধ্যমিকে পাস করতো এক-দেড় লাখ তারপর কলেজে ভর্তি হওয়া। দেখা যেত কলেজ একেবারে ভর্তি। কিন্তু এখন! হায়ার সেকেন্ডারি পাস করছে ছয়-সাত লাখ। এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কলেজে ভর্তি হলে তো কলেজ পূর্ণ হয়ে যাওয়া উচিত। তাহলে কলেজগুলো ফাঁকা যাচ্ছে কেন! বাকিরা কোথায় যাচ্ছে!

আমার মতে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে বর্তমানে টেকনিক্যাল লাইনে যাওয়া উচিত নয়তো, ম্যানেজমেন্ট পড়া উচিত। বর্তমানে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট-এ ভর্তি হওয়া শ্রেয়। তাতে চাকরির ব্যাপারে নিজের জায়গাটা শক্তপোক্ত থাকে। বর্তমানে অতি সাধারণ গ্রাজুয়েশনের কোন দাম নেই, অথচ টেকনিক্যাল সাউন্ড যদি হওয়া যায় তাহলে নিজের সম্পর্কে জোর থাকা যায়। তবে চাকরির ব্যাপারে নিজেকে শক্তপোক্ত করতে গেলে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করাই পরই টেকনিক্যাল লাইনে প্রতিষ্ঠিত কর নতুবা ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রতিষ্ঠিত কর। তাতে আমার মনে হয় চাকরির ব্যাপারে চাকরিপ্রার্থীদের আখেরে লাভই হবে।

9 months ago
Corrupction: রকেট ছোড়ার মত ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি

সৌমেন সুর: মানুষ যাবে কোথায়! কাকে বিশ্বাস করবে! বিশ্বাস তো কখনো কাউকে করতেই হবে, নইলে বেঁচে থাকার মানে কি! সমাজ বদলায়। বদলায় মানুষ। পরিবর্তন হয় সমাজ-মানসিকতার। আজ একদিকে কিছু মানুষের বিপুল ঐশ্বর্য বিলাস, অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও শোষণের জ্বালা। একদিকে সভ্যতার উজ্জ্বল চিত্র, অন্যদিকে দূর বিস্তৃত জমাট অন্ধকার। আজও মানুষের প্রতিকার হীন বিচারের বাণী, নীরবে নিভৃতে কাঁদে। আজ ধর্মে ধর্মে বিভেদের প্রাচীর। সম্প্রদায়িকতার বিষ নিঃশ্বাসে, জাত-পাতের বজ্জাতি, যুদ্ধের মহড়া, অশুভ বুদ্ধিরই আজ আধিক্য। এইরকম ডামাডোলে সমাজের কোনায় কোনায় ছেয়ে গেছে দুর্নীতি।

দুর্নীতির সমাজ বললে অত্যুক্তি হয় না। আর বলব নাই বা কেন! শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, প্রাণীতে দুর্নীতি, কয়লায় দুর্নীতি, রেশনের দুর্নীতি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দুর্নীতি, আর কত বলব! এরপর ভেজাল আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বললে তো সামান্য এইটুকু অংশে ফুরোবে না। এরকম অন্ধকার সময় সমাজে আগে ছিল না। কম্বলের লোম বাছলে যেমন 

কম্বলের অস্তিত্ব থাকে না, তেমনই সমস্ত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের মহলকে যদি ধরা হয় তাহলে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে কিনা সন্দেহ। তবুও বলব মানুষ আজ জীবনে বিশ্বাস হারায়নি, এখনও বিশ্বাস করে হিংসায় উন্মক্ত পৃথিবীর বুকে প্রেমের দেবতার অভিষেক হবে। মনুষ্যত্বের মহিমাকে  হারালে তার যে আর কিছুই থাকেনা। তাই এখন মানুষকে প্রকৃত সৎ হতে হবে, দেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে। আপামর মানুষ তাকিয়ে থাকে প্রতিনিধিত্বকারী মানুষের দিকে, তাই যতদিন না পর্যন্ত নির্লোভ ও সৎ মানসিকতায় কেউ না ফিরছেন, ততদিন দুর্নীতি সমাজ থেকে মুছবে না। মনে রাখা উচিত, দেশবাসী নির্বাচিত করে আপনাদের পাঠিয়েছেন, তাই মানুষের প্রতি একটু দয়াশীল হোন নইলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।

9 months ago