জীবজগতে মানুষ হল শ্রেষ্ঠ জীব। কখনো প্রতিকূলতার সঙ্গে সে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়েছে আবার কৌশলগত বুদ্ধির প্রয়োগেও কখনো সে এগিয়েছে। এগোনোর পেছনে আছে অনেক রক্তপাত, হিংসা, মারামারি, দলাদলি। আমরা সবাই জানি মানুষের মধ্যে আছে দুটো শক্তি, একটা শুভশক্তি আর একটা পশুশক্তি বা একটা দেবত্ব শক্তি, অন্যটা আসুরিক শক্তি। এই দুই শক্তির সমন্বয়ে মানুষের মধ্যে নিরন্তর দ্বন্দ্ব।
এদিকে মানুষের সভ্যতা ধীরে ধীরে এগিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক মহৎপ্রাণ মহাপুরুষ। তারা বোঝালেন মানুষের ধর্ম কী, বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়! দেখতে দেখতে জগতে এলো- সনাতন হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, ইসলাম ধর্ম। সব ধর্মের মূল কথা প্রেম। কিন্তু ধর্মের মূল বাণীটা মানুষ ভুলে গেল। সেখানে এলো ধর্মীয় গোঁড়ামি, হিংসা, মারামারি, কাটাকাটি। এর ফলে আমরা দেখতে পেলাম, ধর্মে ধর্মে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বাঁধলো সংঘাত। প্রকৃত ধর্মের মূল সত্যকে জানার বদলে প্রকাশ পেল স্বার্থচিন্তা। ফলে মানুষ ভুলে গেল প্রেম ও মৈত্রীর কথা। পরিবর্তে এলো রক্তপাত ও দাঙ্গা। ব্যক্তিগত প্রাপ্তিকে মানুষ বড় করে দেখলো। ধর্মকে মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করলো। অন্যদিকে কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের হাতিয়ার করলো।
আসলে একটা কথা বুঝতে হবে ঠান্ডা মাথায়, মানুষ কিন্তু মানব ধর্মের দিকে তপস্যা করতে বলছে, সেখানেই মানুষ সর্বজনীন। তাই তো মানুষ নিজের আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে, অন্যের আত্মার মধ্যে নিজের আত্মাকে জানে। যে জানে, সেই সত্যকে জানে। এই সত্যই হলো মানবধর্ম। এজন্যই 'সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' এই ধর্মে রয়েছে অপার ধৈর্যশক্তি, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। যে ধর্মের মধ্যে সহনশীলতা আছে, শান্তির কথা আছে, সেই ধর্মই মানুষের ধর্ম। এই ধর্মেই একমাত্র মানুষ নির্মল নিঃশ্বাস পেতে পারে।
সৌমেন সুর: যার সম্পর্কে কলম ধরেছি আমি তার শরীরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি। সে কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায় আবার কখনো ভাবায়। কে বলুন তো? যাক, আমি খোলসা করে দিচ্ছি। তিনি আমাদের সবার প্রিয় কলকাতা। এই কলকাতার বুকে নিত্যদিনে কত ঘটনাই না ঘটে চলেছে। আঘাতে আঘাতে কলকাতা একেবারে জর্জরিত। কলকাতা বৈচিত্রের শহর। আজব শহর। কারো কাছে কলকাতা মিছিল নগরী। কারো কাছে দুঃস্বপ্নের নগরী, আবার কারো কাছে আনন্দ নগরী। সব মিলিয়ে কলকাতা স্মার্ট নগরী। তবুও এর বাতাসে বিষ নিঃশ্বাস। কোথাও বা পথে-ঘাটে মৃত্যুর ফাঁদ। তবু কলকাতা কলকাতা। ভালো-মন্দ দুই-ই বহন করছে। আধুনিকতা ও প্রাচীনত্ব-এর সহাবস্থান। সংস্কৃতি অপসংস্কৃতি দুয়েরই মিলন ক্ষেত্র কলকাতা।
ঢাকার নবাব আজিম ওসমানের কাছ থেকে ইংরেজরা সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা তিনটি গ্রাম কেনার অনুমতি নিলেন। বরিশার সার্বণ রায়চৌধুরীদের জমিদারি কিনে নিলেন ইংরেজরা। সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও ডিহি কলকাতা নিয়ে হল 'কলকাতা'। বণিকের মানদন্ড একদিন রাজদণ্ডে পরিণত হলো। সুতানুটি গোবিন্দপুরের পৃথক সত্তা গেল হারিয়ে। কলকাতা নামেই হলো তার পরিচয়। রাস্তাঘাটের সংখ্যা বাড়লো। বাড়লো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। বদলালো শহর। মানুষজনে ভরে উঠল কলকাতা। জন্ম নিল সংস্কৃতি। কলকাতা হল সংস্কৃতির শহর।
এদিকে ইংরেজ শোষণ শাসনে জর্জরিত মানুষের প্রাণ। স্বাধীনতার জন্য উত্তাল হয়ে উঠল শহর। কত সংগ্রাম, কত রক্তপাত। অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা এলো। এদিকে কলকাতাকে সাজাতে পরিকল্পনা নিল রাজ্য সরকার। কলকাতা সেজে উঠলো। কলকাতার সব কিছু সুন্দর হয়ে উঠলো। কল্লোলিনী কলকাতা থেকে হয়ে উঠল তিলোত্তমা। কলকাতা এখন দেখার মত। ঝা চকচকে রাস্তা। রাস্তায় রং বে-রঙের এল.ই. ডি লাইট। সাইন্স সিটি, বিড়লা প্লানেটোরিয়াম, মিউজিয়াম, রবীন্দ্র সদন, শহীদ মিনার, বাবুঘাট, আকাশবাণী ভবন, মিলেনিয়াম পার্ক, ইডেন গার্ডেন, চক্ররেল প্রভৃতির সমন্বয়ে কলকাতা যেন রত্নময় নগরী। সব মিলিয়ে কলকাতা যেন স্বপ্নের শহর।
সৌমেন সুর: যে রং তখন ছিল আজও সেই রং বহমান। প্রাচীন লগ্নে মানুষের গুহাবাসকালে হিংস্রতায়, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দ্বন্দ্বের কারণে জীবন হয়ে উঠেছিল অতিষ্ঠ-আজও তেমনি বার্তা বয়ে চলেছে। সারা দেশ জুড়ে ক্ষমতার লড়াই। কে কাকে কোনঠাসা করতে পারে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ হিংসার ছোবলে প্রাণ হারাচ্ছে। আজও কত রক্তপাত, কত খুন, নির্লজ্জ বেআব্রুর বীভৎস ছবি। এত খুন এত রক্তপাত স্রেফ হিংসার জন্য। সভ্যতার সেই আদি যুগেও মানুষ মানুষের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছে, এই প্রাধান্য বিস্তারের জন্যই সেদিন মারামারি কাটাকাটির শেষ ছিল না। পাশাপাশি রাজ্যগুলোর মধ্যে পরস্পর পরস্পরে ঠোকাঠুকি লেগেই থাকতো।
রাজ্য জয়ের নেশায় মেতে উঠতো দল। শুরু হতো ঘরবাড়ি জ্বালানো, মুড়ি মুড়কির মতো খুন। যুদ্ধ আর রক্তপাতের মধ্যে দিয়েই সূচনা হতো জয়যাত্রা। এমনি করেই দিন বদলায়। সমাজ বদলায়। মেন্টালিটি বদলায়। যুদ্ধ কিন্তু থামেনা। রূপ বদলে নতুন কৌশলে আবার আক্রমণ। আবার রক্তে হোলি খেলা। শুরু হয় অন্য মুডে খেলা। কত যে নিরীহ মানুষের প্রাণ অকালে চলে যায় সেদিকে দলের ভ্রুক্ষেপ নেই। সর্বত্র চলছে স্টান্টবাজির খেলা। বর্তমানে চলছে সমস্ত মানুষের শান্ত রিপুগুলোকে মিথ্যে ভাষণ দিয়ে ধ্বংস করে ফেলে, দলে তুলে নিয়ে এসো তাকে। তারজন্য তৈরি করে হিংসার ছক। যে ছকে পা দিলেই আজ নয়তো কাল মৃত্যু। দেওয়ালে ছবি হয়ে দলের সৌন্দর্য বাড়াও। যত ছবি টাঙ্গানো হবে-তত দলের আপডেট। দলের লোক খারাপ হলেও ভাল। আবার ভাল লোক অন্য দলের হলে খারাপ। এক অদ্ভুত খেলা। অদ্ভূদ যুক্তি।
আমার মতে, যদি আপনার মন সত্যি সত্যি মানুষের কাঁদে তাহলে নিঃস্বার্থভাবে আত্মশুদ্ধি করে, মানুষের পাশে দাঁড়ান। হিংসা দিয়ে সাময়িক ক্ষমতার জয় করা যায় অবশ্য, কিন্তু সেটা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আজ নয়তো কাল সরে যেতেই হবে। এটাই নিয়ম। কেউ যদি ভাবেন আমি সব পাল্টে দেব ক্ষমতার বলে, হিংসার আশ্রয়ে-তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, হিংসা মানুষের জীবনে সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। হিংসা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।
সৌমেন সুরঃ ছুটির দিনে একটু অন্যভাবে দিন কাটাবো, এটা ভাবতেই শরীরের তন্দ্রীগুলো আনন্দে ঝনকে উঠলো। ছুটি মানে একটু থামা। ছুটি মানে চলমান জীবনে ক্ষনিকের বিশ্রাম। বর্তমানে চলমান জীবনে যা ঘটছে- গা যেমন শিউরে উঠছে তেমনি আতঙ্কও বাড়ছে। দেশের বর্তমান অবস্থা বড় ভয়াবহ। কখন যে কী হয়, আমরা কেউ জানি না। যাইহোক এমনি ডামাডোল অবস্থায় হাতে আসছে একটি ছুটির দিন। ভাবতেই মনটা পুলকে ভরে উঠছে। ছুটি মানে জীবনের মধ্যে ছুটি, ছুটি মানে জীবনের ছুটি নয়।
অবশেষে হাতে এলো ছুটির দিন। মহররমের ছুটি। মানে অফিস ছুটি। এদিকে শ্রাবণ মাস। বৃষ্টি ঝরার মাস। অনর্গল কোথায় বৃষ্টি পড়বে তা নয়, মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি, একটু রোদ, আবার মন ভার করে থাকা উড়ো মেঘের আনাগোনা। গ্লোবালাইজেশনের জন্য সব ভালো মুহূর্তগুলো হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। কী আর করা। সকাল হতেই জলখাবার খেয়ে অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো বলে, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি অজ গ্রামে থাকি। আমার সব বন্ধুরা শহরে থাকে। আমার বাড়ি থেকে শহর প্রায় চার মাইল। যাইহোক এক বুক আনন্দ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলেছি। আলের দুপাশে ধূ ধূ মাঠ। শুধু ধান আর পাট গাছ সারি সারি। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। বৃষ্টির জল পড়ে প্রত্যেক গাছের পাতা যেন যৌবনবতী হয়ে গেছে। মাতাল হাওয়ায় ধানের শীষগুলো মাতালের মতো দোল খাচ্ছে। মনটা ভারী ভালো লাগছে। কারণ একটাই- আড্ডায় ছুটিটা উপভোগ করবো।
কথায় আছে- 'Man proposes, God disposes।' হালকা মেঘলা আকাশে হঠাৎ ভিড় করে আসে, পাহাড় প্রমাণ কালো মেঘ। আমি প্রাণপণে সাইকেল চালাতে শুরু করলাম। আমাকে শহরে পৌঁছতেই হবে। কিন্তু হায় যখন দেখলাম পুকুরের হাঁস গুলো সাঁতার কেটে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে এগোতে থাকছে, তখন বুঝলাম- আমার Journey এখানেই শেষ। দেখতে দেখতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি সাইকেলটা নিয়ে একটা বটগাছের তলায় দাঁড়ালাম। ভিজছি অঝোরে। আর ভাবছি ছুটির দিনটা বৃথা গেল। ভাবনাটা এই মুহূর্তে আপনাদের হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার নয়। কারণ দূরে একঝাঁক বাচ্চা ছেলে পুকুরে সাঁতার কেটে খেলছে। আনন্দ করছে। ওদের দেখে তাৎক্ষণিক আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। আমিও তো একসময় ওদের মতই উদ্দাম ছিলাম। মুহূর্তে মনটা আমার আনন্দে ভরে গেল। ছুটির দিনটা আমার বৃথা গেল না। নাই বা দিতে পারলাম আড্ডা। কিন্তু প্রকৃতি তো এখন আমার সঙ্গে ছিল। একেবারে লাজুক বধূর মতো। এই উপলব্ধি যে আমার মনের একটা দরজা খুলে দিল, যা আগের মুহূর্ত পর্যন্ত টের পাইনি।
সৌমেন সুর: আজ অদ্ভুত একটা ছবি চোখের সামনে কদর্যভাবে ফুটে ওঠে। যে যার চেয়ার সামলে রাখার জন্য যত রকম প্রক্রিয়া আছে কাজে লাগাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা ভাবার দরকার নেই, আমার অস্তিত্ব টিকে থাক এটাই বড় কথা। আজ সারা দেশে একটা ঘৃণ্য চক্রের জন্য মানুষের নাভিশ্বাস উঠে চলেছে। এ যেন এমনই 'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এই পৃথিবীতে আজ।' জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে আমাদের দেশ, ঠিক চীনের পরেই। ১৪০ কোটি সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে একটা আতঙ্কময় বিভীষিকার পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষের সংখ্যা বাড়লে জনসংখ্যা ও খাদ্যের যোগানের ভারসাম্য নষ্ট হয়। অনিবার্যভাবেই খাদ্যাভাব,অপুষ্টি, দুর্ভিক্ষ মহামারী ইত্যাদি দেখা দেয়। দারিদ্র্যের কবলে পড়ে ছটফট করে মানুষ। চাকরির বাজার ভেঙে পড়ে, যাকে বলে মন্দার বাজার। বেকারের সংখ্যা বাড়ে, প্রতিযোগিতার রেষারেষি তীব্র হয়। মূল্যরোধে চিড় ধরে। সামাজিক অপরাধের মাত্রা বাড়ে। একটা আতঙ্কময় জীবন যাত্রা।
যে কোন উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতি ও জনসংখ্যা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। দুজনের সঙ্গে সখ্যতা দারুন, উৎপাদন ও বন্টন এই দুটোই অর্থনীতির প্রধান বিষয়। এই দুটোই জনসংখ্যা কে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। আজ জনসংখ্যা দুনিয়া জুড়ে মহাসমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা আরও বেশি। উন্নতিশীল দেশের সমস্যা সেখানে তুলনায় অনেক কম। ভারতের পরিস্থিতি আরো অগ্নিগর্ভ। বর্তমানে ১৪০ কোটি অতিক্রম করে গেছে বোধহয়! এই হারে জনবৃদ্ধি চলতে থাকলে ভারতের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হবে। ভারতের ঐতিহ্য সংস্কৃতির উপর নেমে আসবে অভিশাপ। জনবৃদ্ধি হওয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বায়ুতে অক্সিজেন কমছে আর কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে, অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, নানা রোগে জনজীবন আক্রান্ত হচ্ছে, আর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আর কালবিলম্ব না করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার জন্য জাতিধর্মনির্বিশেষে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে প্রয়োজন। নয়া দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবমুখী নয়া অর্থনীতির রূপায়ন। রুপায়ন না করলে দেশকে দাসত্ব স্বীকার করতে হবে অন্যের কাছে।
সৌমেন সুর: যার সম্বন্ধে লিখতে বসেছি তিনি বাংলার মানুষের একমাত্র ম্যাটিনী-আইডল। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন বুঝি? না ভাবনার কিছু নেই। ম্যাটিনী আইডল বাংলা সিনেমা জগতে একজনই, সে উত্তম কুমার। কেন উত্তম কুমার? অন্যদেরই বা মানুষ মনে রাখেন না কেন! সিনেমার জগতে মহানায়ক তিনি উত্তম কুমার। তিনি 'নায়ক' ছবি করেছেন, আবার 'অমানুষ' করেছেন। দুটো ছবি আকাশ পাতাল তফাৎ। অথচ উত্তম কুমারের বিচরণ সর্বত্র। 'নায়ক' এর মত ছবিতে সুপার্ব অভিনয়। উত্তম কুমার আবার অমানুষ ছবিতেও অনবদ্য। আসলে মহানায়ককে বিচার করা বড় দুষ্কর। বাংলা ছবিতে এমন এমন কিছু চরিত্র করেছেন যা আলোচনার ঊর্ধ্বে। তিনি এক কথায় সিনেমা জগতে সব্যসাচী ছিলেন, গান গাইতে পারতেন, সুর দিতে পারতেন, ছবি প্রযোজনা করেছেন, এমনকি পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। এরপরেও তো আছে অভিনয়। আজ ৪৩ বছর হয়ে গেল উত্তম কুমার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এত বছর বাদেও তিনি সমান জনপ্রিয়। 'নায়ক' ছবিতে ওই অসম্ভব সুন্দর সংলাপ ডেলিভারি আজও বহু মানুষের মুখে মুখে, 'I will go to the top, The top, The top'। ৪৩ বছর পেরিয়েও মুছে যাননি মহানায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাণিজ্যকারি সংস্থা ছবি প্রদর্শন করেন সেই উত্তম কুমাররেরই। এতেই বোঝা যায়, জনপ্রিয়তা এতটুকু ভাটা পড়েননি। তাঁর ক্রেজ তাঁর ইমেজ, আজও আমরা সিনেমার অভিনয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে উত্তম কুমারের প্রসঙ্গ চলে আসে। বেশ কিছু ছবির মহানায়কের অনবদ্য অভিনয় বাংলার মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। হয়তো ছবি বিশ্বাসকে মানুষ ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু উত্তম কুমার বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আরও অনেক অনেক দিন।
অভিনয় পর্ব ছাড়া দান ধ্যান কর্মে ছিলেন মানুষের মনের মনিকোঠায়। অবশ্য এই পর্বটি ছিল অত্যন্ত গোপন অবস্থায়, কেউ জানতে পারতেন না, একমাত্র গ্রহীতা ছাড়া। যুগে যুগে অবতার যেমনই মাটিতে নামেন তার কর্ম মানুষের কাছে ফলপ্রসূ করতে। তেমনই উত্তম কুমার বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়ে তার কর্মের শিষ্টতা দেখে আজও মানুষ তাকে ভুলতে পারেননি। তিনি যে কত বড় মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তার মহাপ্রস্থানের পথের সময় চাক্ষুষ কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল, মহানায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। উত্তম কুমার একবারই জন্ম নেয়, এবার হয়ত তাকে পাবো, অন্য নামে অন্য কোনও খানে, তবে বাংলার মানুষের কাছে উত্তম কুমার ছিলেন, আছেন, থাকবেনও।
সৌমেন সুর: এই বিষয়টি নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। তারাই দেশের আগামী শেকড়। তাদেরকে সুন্দরভাবে বাঁচতে হবে। বাঁচতে গেলে রসদ চাই। সেই রসদের একটা অংশ- সাহিত্য। সাহিত্যকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। এই প্রজন্ম, মন্মথ রায় কে জানে না। রমাপদ চৌধুরীকে চেনে না, প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের নাম শোনেনি, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনে না- শুনে আমি ভীষণ স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এরপর ভাবলাম, আমার কর্তব্যটুকু অন্তত করি। সাহিত্যের উপযোগিতাটা তুলে ধরি। প্রথমে বলি, ' Feeling is not a particular content, but the whole universe Subspecie intuition। ' সাহিত্য সমাজের দর্পণ, তবে হুবহু অনুকরণ নয়, এর সাথে আছে কবি- সাহিত্যিকের আপন মনের মাধুরী, তখনই সৃষ্টি হয় ধ্রুপদী সাহিত্য। সাহিত্যের অর্থ হলো পারস্পরিক যোগ। একেরসঙ্গে বহুর মিলন ঘটিয়ে সাহিত্য আত্মীয়তার সূত্র তৈরি করে। তবে বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে সাহিত্য পাঠের অবকাশ কমলেও এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। মানুষ আর প্রকৃতি নিয়েই সাহিত্যের জীবন। সাহিত্য না পড়লে জ্ঞান সঞ্চয় হয় না। একজন জ্ঞানী মানুষ আর একজন অজ্ঞান মানুষ আকাশ পাতাল তফাৎ।
সাহিত্য সমাজের মাটিতে ফোঁটা ফুল। তবে হুবহু দর্পণ নয়, তার সঙ্গে মিশে আছে আপন মনের মাধুরী। সাহিত্য সমাজের একটি বিচিত্র সুন্দর সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালা থেকে আহরণ করে নিতে হবে অজানা তত্ত্ব। আসলে পড়তে হবে। পড়লে দোষ কোথায়! পড়লে বরং জ্ঞান বাড়ে। না পড়লে অজ্ঞানী হয়ে থাকতে হয়। কোনটা শ্রেয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কে নাট্যকার, কে কবি, কে সাহিত্যিক, কে লেখক- তারা কি লিখেছেন, তারা কেন নক্ষত্র, এগুলো বুঝতে হবে। জানতে হবে।
সবশেষে বলি, সাহিত্য হল আমাদের আনন্দের আশ্রয়, অবকাশের সঙ্গী, দুঃখের সান্ত্বনা এবং ন্যায় বিচারের হাতিয়ার। সাহিত্য আমাদের হৃদয়কে প্রস্ফুটিত করে। নব প্রজন্মকে অনুরোধ- সাহিত্যকে মনে প্রাণে ভালোবেসে- অফুরন্ত জ্ঞান আহরণ কোরে, নিজেকে প্রকাশ করুন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে।
সৌমেন সুর: আমরা যে কখন কি বলি, তা কখনই আগাম বুঝে বলি না। বলতে হয় তাই বলি। এখন বলার মধ্যে যদি লাগাম টেনে না ধরি তাহলে একসময় না একসময় আমাদের হোঁচট খেতেই হবে। তাই যে কথাটা পেশ করবো তার মাথা আর লেজ কেমন হবে! তার একটা খসড়া আগে থেকেই তৈরি করে রাখার শ্রেয়।
হুটহাট করে যদি সব বাঁধন ছিড়ে বেরিয়ে পড়ি তাহলে গন্ডগোল বেধে যাবে। বেরিয়ে পড়ার আগে এক কদম চিন্তা করে নেওয়া- আমার বক্তব্যর মধ্যে শালীনতা থাকবে, মর্যাদা থাকবে। ধরুন এগুলো তর্কের খাতিরে থাকলো। তাহলে দেখা যাবে ধৈর্য ধরে মানুষ শুনছে। আর যদি কথায় লাগাম ছাড়া থাকে, তাহলে সে কথা হৈ হট্টগোলে শেষ হবে। কিছু মানুষ দাঁত বার করে হাসবে, বুঝলো কি বুঝলো না- সে কথা পরে। হাততালি দিয়ে আগে উৎসাহ তো দিই। আরেক শ্রেণীর মানুষ বিরক্ত হয়ে শুধু এদিক-ওদিক বিক্ষিপ্ত দেখবে। আর মনে মনে গালাগাল দেবে।
তাহলে রেজাল্টা কি দাঁড়ালো? রেজাল্ট হল, কথার মাপ ঠিক করো। অধ্যাবসায়ী হও। পরিষ্কার মোদ্দা কথা ব্যক্ত করো। মানুষকে কাছে পাবার জন্য তুমি মননশীল হও। দেখবে - পথ একদিন না একদিন খুলে যাবে, যে পথে মানুষ এক নতুন দিগন্তের পথ খুঁজে পাবে।
সৌমেন সুর: আজ বিষয়টা একটু অন্যদিকে ঘোরাবো। প্রতিদিন খুনখারাবি, মারামারি, মিছিল, হাম বড়াভাব, বৌদ্ধত্য এসব দেখতে দেখতে মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। মন একটু বিশ্রাম চাইছে। কিন্তু চাইলে তো সব ঠিকঠাক হয় না। তাই ঠিক করলাম আজ একটু আধ্যাত্মিক পথের কথা বলে মনটাকে অন্য পথে চালিত করবো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদাকে কে না চেনে, কে না জানে। ঠাকুর অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে অধ্যাত্ম ও উপনিষদের কথা ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এত সহজ কথা অথচ কী গভীর তার অর্থ। আমরা বৃন্দাবনকে চিনি জানি। কিন্তু বৃন্দাবন যে বাংলায় অবস্থিত আছে এটা আমরা অনেকেই জানিনা। ঠাকুর আমাদেরকে নিয়ে গেলেন বিষ্ণুপুর। এখানেই তিনি অনুভব করেন বৃন্দাবনের পরশ। উচ্চারণ করে বলেন এই হল গুপ্ত বৃন্দাবন।
আজ আমি মা সারদাকে নিয়ে বিষয়কেন্দ্রিক গল্প বলতে বলতে এগিয়ে যাব। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা বীরহাম্বিরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের মানুষ ভেসেছিল বৈষ্ণব ধর্মের জোয়ারে। বিষ্ণুপুরকে সাজানো হয় বৃন্দাবনের মতো করে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাই বিষ্ণুপুর বলতে গুপ্ত বৃন্দাবনের কথা বলতেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী কামারপুকুর ও জয়রামবাটী এই দুই স্থানে আবির্ভাব হয়েছিলেন। এই দুই স্থান থেকে বিষ্ণুপুর খুব দূরে নয়। ঠাকুর বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন একটা মামলার সাক্ষ্য দিতে। তখন রাজার তৈরি মায়ের মন্দিরে মৃন্ময়ী মাকে তিনি দর্শন করেন আর সারদা মাকে জানান, 'তুমি বিষ্ণুপুরে গুপ্ত বৃন্দাবন দেখো।' উত্তরে মা সারদা বলেন, 'আমি মেয়েমানুষ, কি করে দেখবো।' ঠাকুর বলেন, 'দেখবে দেখবে, ঠিক দেখবে।' একদিন ঠাকুরের কথা ফলে যায়। বিষ্ণুপুর হয়ে বেঙ্গল নাগপুর ট্রেন চালু হয়। আগে বিষ্ণুপুর দুর্গম ছিল এখন সুগম হয়। মা তখন জয়রামবাটী থেকে বিষ্ণুপুর আসতেন ট্রেনে করে। ঠাকুরের ভবিষ্যৎবাণীকে কেন্দ্র করে মা একদিন সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রাঙ্গণে বসে বলেন, 'ঠাকুরের কথা আজ সত্যি হল। ' মা প্রথম বিষ্ণুপুর যান ১৩১২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে, কলকাতা থেকে জয়রামবাটী যাওয়ার পথে। আরেকবার মা বিষ্ণুপুর স্টেশন এ অপেক্ষা করছিলেন, তখন একজন অব বাঙালি কুলি মাকে দেবী ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। কি করবেন মনস্থির করতে পারেন না- এত আনন্দ উদ্ভব হয়েছিল তার মনে। সম্ভবত স্বপ্নে হয়তো মাকে দেখেছিলেন। ১৯২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মা বিষ্ণুপুর থেকে কলকাতা বাগবাজার অঞ্চলে উদ্বোধনের পথে শেষবার গমন করেন।
ভাবের কথা বললাম বলে সবটাই ভাব নয়। তবে ভাবেই ভক্তি। আর ভক্তিতেই মুক্তি। সংসার আবদ্ধ জীব আমরা। সংসারের মধ্যে থেকে যদি দিনান্তে একবার তাঁকে স্মরণ করা যায়, তাহলে আমাদের উতক্ত রিপু গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে, মন শান্ত হবে। তখন মনে হবে অনেক ভুলভাল কর্ম করেছি, আর নয়। এবার ঈশ্বরকে স্মরণ করে পথ চলব।
আজ বিষ্ণুপুর তাই শুধু গুপ্ত বৃন্দাবন, মন্দিরের দেশ, সংগীতের পিঠস্থানই নয়, গর্বিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার পদধূলিতে ধন্য হলো ভুবন।
সৌমেন সুর: এখনো দেশের বহু মানুষ জীবনধারণের জন্য নূন্যতম উপকরণগুলো থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চিতের কারণে তরুণ সমাজকে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও কর্তব্য পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যে কোনও কর্মে যুব সমাজের অগ্রাধিকার থাকে। তারা সাহসী, কর্মঠ, সবুজের ন্যায় তারুণ্যে, প্রাণপ্রিয়, সূর্যের মতো উজ্জ্বল। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ভারতের সংবিধান রচনার আগে দেশের মানুষের কোন মৌলিক অধিকার ছিল না। গণপরিষদ মৌলিক অধিকার বিধিবদ্ধ করার ব্যাপারে একটি পরামর্শদাতা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। এর ফলে ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের সংবিধান রচনা হয়।
দেশের নাগরিক হিসেবে দেশ সেবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সমস্ত মানুষ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের পূর্ণ অধিকার হয়তো পাইনি। তাই মানুষের অধিকার কর্তব্য পালনে যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জন্য আমরা দেশ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপর্যস্ত এ কথা উপলব্ধি করলে দেশ গঠনের উপযোগিতা ধরা পড়বে। অন্যদিকে নাগরিকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে অধিকার গুলো ভোগ করে সেগুলোর বিনিময়ে রাষ্ট্রকে কর দিতে হয়, সেই কর দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য। এজন্য যুব সমাজের এই কর্তব্য পালন করা উচিত। যুব সমাজের কর্তব্য প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। মানুষের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য যুব সম্প্রদায়কে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। দেশের যুবসমাজ যে কোন সংগ্রামে আপোসহীন লড়াই করে। এরাই সমস্ত শক্তির উৎস। দেশের মানুষ যুব সম্প্রদায়ের প্রতি অনেক আশা করে। যুব সমাজ যদি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ মনে বলা প্রায়। তাই তাত্ত্বিক ও তুর্কি তরুণেরা যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে একদিন না একদিন শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবেই।
সৌমেন সুর: প্রথমে আমি পাঠক সমাজকে অনুরোধ করছি- আপনারা প্লিজ সত্যজিৎ রায়ের 'বঙ্কুবাবুর বন্ধু' গল্পটি পড়ুন। গল্পটি এইজন্যে পড়তে বলছি- ফেলুদা সিরিজের এই গল্পটি আপনার মনে একটু অদ্ভুত একটা Sense Create করবে, যার স্বাদ অনেকদিন পর্যন্ত আপনার মনে গেঁথে থাকবে। যদি আপনার সমাজের ব্যাপারে কোনো Possitive Mode থাকে তাহলেই এই গল্পটার সার্থকতা।
বর্তমান সমাজ এক অস্থির পদচারনে ধূলায় লুটাচ্ছে। সমাজটার কোনায় কোনায় নেগেটিভ ভাইরাস বাস করে আছে। এ ওকে মানছে না, সে তাকে মানছে না। আমিই সবার থেকে বড়। আমার অস্তিত্বই আগামীর ভবিষ্যৎ। দাও সব বাড়িয়ে। দুদিন আন্দোলন হবে, তিন দিনের দিন সব ধামাচাপা। এ যেন কবির ভাষায়, 'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ...।' এমন সুস্বাদু খাওয়ার আচার বিলানো হচ্ছে যার স্বাদে কিছু মানুষ ঠান্ডায় আরাম খাচ্ছে, আর কিছু মানুষ কপাল চাপড়াচ্ছে। দেশের এ কী হাল হলো! যাই হোক গল্পটা পড়ে আমি এত আনন্দিত হয়েছি যার জন্য আপনাদের কাছে শেয়ার না করে পারলাম না। দেখুন, যদি কোনো মানুষকে অযথা অসামাজিক ভাবে আচরণ বা বিদ্রুপ করা হয় তাহলে সে মানুষটার পজিসন কেমন হয়, সেটা একবার Feel করুন। যদি আপনার ক্ষেত্রে হয় ভাবুনতো।
অর্থবান উকিল শ্রীপতি বাবুর বাড়িতে, শ্রীপতিবাবু তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেন। এই আড্ডার মাঝে সহজ সরল বঙ্গ বাবুকে নিয়ে আলোচিত উপহাস, মস্করা করা হয়, যা অত্যন্ত বিষাক্তজনক। বঙ্কুবাবু সব সহ্য করেন নীরবে। প্রতিবাদ করেন না। মনে মনে ভাবেন, আপনারা যা করছেন করুন। একদিন না একদিন একটা ফল, আপনাদের শিক্ষা দেবে। দেখতে দেখতে বঙ্কুবাবুর জীবনে হঠাৎ একদিন ভাল সময় চলে আসে। যেন এক আকোস্মিক পরিবর্তন ঘটে ওর জীবনে।
পথে যেতে যেতে বাঁশবাগানে উপুড় করা একটা কাঁচের বাক্স থেকে যন্ত্রের মতো বেরিয়ে আসে অদ্ভুত এক জীব। সে নাকি ক্লোনিয়াস গ্রহের অ্যাং। অ্যাং-এর জন্য বঙ্কুবাবুর জীবনে ঘটে যায় পরিবর্তন। শ্রীপতি বাবুর বাড়িতে বঙ্কুবাবু স্পষ্ট ভাষায় প্রতিবাদ কোরে, সমালোচনা কোরে বীরদর্পে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। লেখক আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রকৃত বন্ধু কে? আসলে প্রকৃত বন্ধু হল অ্যাং। যারা জীবনে মাথা উঁচু করে পথ চলতে প্রেরণা দেন।
গল্পটা, বহুগুনের অধিকারী হয়েও আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেক মানুষ নিগ্রহের শিকার হন, বঙ্কুবাবুর মতো। সেই আত্মবিশ্বাস জীবনে পথ চলার চালিকা শক্তি। বাস্তব জীবন অত্যন্ত কঠিন। প্রতি পদে লড়াই। গল্পটি শিখিয়েছে- লড়াইটা কিভাবে করতে হয়। এখন আমাদের দেশের সমস্ত শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ও সাধারণ মানুষকে অনুরোধ, লড়াইটা সঠিকভাবে করুন বেনোজল বাদ দিয়ে। সমাজে বঙ্গবাবুর বন্ধুর মতো সবাই বন্ধু যদি হতো, তাহলে সমাজটা সত্যি পাল্টে যেত।
সৌমেন সুর: একটা টিলার ওপর বাদক ঢ্য়ারা পিটিয়ে বলে, 'শুনুন...শুনুন..শুনুন। নিশ্চিন্তপুরের প্রজারা মন দিয়ে শুনুন, আমাদের রাজ্য়ে কৃষিফলনে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান যাতে করতে পারে তার জন্য় দলভিত্তিক কৃষকরা তার জমিতে চাষ করবে। এক একটা দলে ৪ জন করে থাকবে। যে বেশী ফলন দেখাতে পারবে- সে রাজার তরফ থেকে পুরস্কার পাবে। ...ঘোষণা করতে করতে বাদক চলে যায়। এদিকে প্রচুর কৃষক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যথারীতি শুরু হয় চাষ। মন্ত্রীরা রাজাকে বলে, সারা রাজ্য়ে কৃষি ফলন দেখবার মতো। সারা মাঠ ধনধান্য়ে পুষ্পে ভরা। অনেক চাষী তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে এই ফলন করেছে। তবে সব থেকে বেশী উলন ফলিয়েছে হোসেন মিঞা। সবাই হোসেনকে প্রশংসা করতে থাকে। মন্ত্রীরা রাজার কাছে গুনাগুন গায়। বলে, হোসেন মিঞা আমাদের রাজ্য়ে সেরা কৃষক। ওর হাতে জাদু আছে। ও আমাদের দেশের গর্ব। রাজামশায় আপনি একবার নিজের চোখে দেখে আসুন।
রাজা একদিন রাজ্য়বিহারে বের হন। নিজের চোখে হোসেনের কৃতকর্ম দেখে মুগ্ধ হন। তিনি নির্দেশ দেন, হোসেন মিঞাকে পাঁচটা মোহর আর মানপত্র দিয়ে পুরস্কৃত করো। রাতারাতি হোসেন মিঞার মানে লেখা হলো মানপত্র। এবার পাঁচটা মোহর থেকে একটা মোহর সরিয়ে রেখে প্রথম মন্ত্রী দায়িত্ব দিলো দ্বিতীয় মন্ত্রীকে। দ্বিতীয় মন্ত্রী একটা মোহর সরিয়ে তৃতীয় মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলো। তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রী মোহর সরিয়ে রাখলো। পঞ্চম মন্ত্রী শেষ মোহরটা নিজে সরিয়ে রেখে, শুধু মানপত্রটা নিয়ে হোসেনের বাড়ির পথে রওনা হয়।
এদিকে রাজা সিংহাসনে বসে ভাবতে লাগলেন, রাজ্য়ে যা কৃষিফলন হয়েছে তা, কয়েক হাজার কোটি টাকার মতো। আমি সব ফলন বিক্রি করে দেবো। রপ্তানি করবো বিদেশে। যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ফিফটি পারসেন্ট আমি আমার পরিচিত জনের নাম দিয়ে বিদেশের ব্য়াংকে টাকাটা গচ্ছিত রাখবো।
ওদিকে হোসেন মিঞার বাড়িতে ৫ম মন্ত্রী ও পেয়াদা এসে হাজির। মন্ত্রী হোসেন মিঞাকে রাজার কথা বলে, রাজা তার কাজে ভীষণ খুশি হযেছেন। তাই রাজা এই মানপত্র দিয়ে তোমায় সম্মান জানিয়েছেন। হোসেন মিঞা মানপত্রটা এদিক ওদিক দ্য়াখে। এটার মর্ম উদ্ধার হয় না তার মাথায়। শুকনো মুখে মন্ত্রীকে হোসেন মিঞা বলে, রাজামশাইকে বলবেন- মানপত্রের দরকার নেই। আমরা পেটভরে দুমুঠো ভাত খেতে চাই। মন্ত্রী কথাটা শুনে চমকে ওঠেন। আজ অস্তাচলের সূর্যের রং বড় ফ্য়াকাশে। ম্রিয়মান। (সমাপ্ত)
সৌমেন সুর: রাজ্যের নাম নিশ্চিন্তপুর। নিশ্চিন্তপুরের সমস্ত প্রজারা বেশ সুখেই আছে। এই খবরটা রাজ্যের মন্ত্রীরা রাজাকে রিপোর্ট করেছে। কী কৃষিতে, কী শিল্পে, কী সাহিত্যে, কী সংস্কৃতিতে আমাদের রাজ্য একমেবাদ্বিতীয়ম্। রাজা শুনে পরম আহ্লাদিত। ভাবলেন-আমাদের রাজ্য তাহলে কোথায় পৌছে গেছে। মন্ত্রীদের চোখে ঘুম নেই, প্রজারা যাতে ভালো থাকতে পারে, তারজন্য কত পরিশ্রম করছে।
রাজা রাতে বিছানায় শুয়ে আপনমনে বলতে থাকেন- আমি তো মূর্খ, অশিক্ষিত। গায়ের জোরে রাজা হয়েছি। রাজা হওয়ার মতো কোনো ক্যালি আমার নেই। তবু রাজা হয়েছি বুদ্ধির জোরে। কিন্তু একদিন তো আমার গদির আয়ু শেষ হয়ে যাবে- তখন আমার দশা তো ছাতু মাখার মতো হয়ে যাবে, তাহলে? এক কাজ করি, এখন থেকে প্রজাদের ভয় দেখাতে থাকি, আইনি প্যাচে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলি- তাতে ওরা সবাই আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকবে, আর আমার অস্তিত্ব টিকে থাকবে বছরের পর বছর। আমার মন্ত্রীগুলোও হয়েছে একেবারে চুপ শয়তান। কোনোটা ভালো নয। ওপর ওপর দেখায় ভালো, ভেতরে চরম শয়তানী। তার চেয়ে আমি এক কাজ করি, আমি আমার আখের গুছিয়ে নিই। যখন ক্ষমতা থাকবে না তখন ঠ্যাংয়ের ওপর ঠ্যাং তুলে আরাম করে দিন কাটাবো। এবার থেকে যা ভেবেছি তাই করবো। তার আগে আমাকে কয়েকটা চমক দিতে হবে। এমন কিছু প্রচার করবো যাতে প্রজারা নিঃশর্তে সেটা মেনে নেয়। তবে যে প্রতিবাদ করবে তার আর রক্ষে নেই। প্রতিবাদ করলেই ফাঁসি নয়ত কারাগারে সারাজীবন বন্দী। জীবন একেবারে বরবাদ করে ছাড়বো। স্টেস্টাস, সম্মান একেবারে ধূলোয় মিশিয়ে দেবো। মুর্খ প্রজাদের থেকে শুষে শুষে সব খেয়ে নেবো। ওদেরকে ফকির বানিয়ে ছাড়বো, আর আমরা আমির হয়ে থাকবো। কিন্তু একটা ছুঁতো বার করতে হবে- এমন কিছু জিনিস, যা দেখে বা শুনে প্রজারা মোহিত হয়ে যাবে। কাল থেকেই প্রচার কার্য শুরু হয়ে যাক। (চলবে)
সৌমেন সুর: ভারতের প্রাণস্পন্দনকে ধরে আছে দুই মহাকাব্য। রামায়ণ ও মহাভারত। ভারতের রাজনীতি, জাতীয় জীবনের ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক ঐতিহ্য, নীতিবোধ, আধ্যাত্মিকতা-সবকিছুর ধারক ও বাহক এই দুই মহাকাব্য।
কেন্দ্র ও রাজ্য- দুজনেই উল্লেখিত বিষয়গুলির ধারক ও বাহক। যদি তাই হয় তাহলে এত হানাহানি, মারামারি কেন? একটু চিন্তা করলে দৃশ্যত ধরা পড়ে-কোনো জিনিসই Moveable নয়। দেহ যখন থাকবে না তখন কোনোকিছুই সাথে যাবে না-তাহলে? তাহলে পড়ে থাকবে শুধু সুকর্ম আর ব্যবহার। এখন যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সখ্যতায় বাসা বাঁধে, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মলিনতা থাকে না। তবে বাধা কিসের! কিসের এত ইগো!
রামের প্রজাবাত্সল্য, লক্ষণের স্বেচ্ছায় দুঃখবরণ, ভারতের অমায়িক ভাতৃপ্রেম, সীতার পরিভক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা-এসবই প্রাচীনকাল থেকে ভারতবাসীর কাছে পরম আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। রামায়ণের প্রভাব ভারতীয় সমাজকে বিশ্বের যে কোনো জনসমাজ থেকে পৃথক এক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। তাহলে দেশে এখনো কেন জাতপাত নিয়ে নৃশংস ধাষ্টামী, কেন এত দাঙ্গা, কেন এত লোভ! যখন রামায়ণের সার জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এত বৈষম্য কেন? চারিদিকে এত শোকের ছায়া কেন! তাহলে সবটাই কি গিমিক?
এবার আসি মহাভারতে। মহাভারতে পরিবেশিত রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ভারতীয় সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতীক। মহাভারতের মূলকথা ধর্মের জয়, অধর্মের পরাজয়। ভোগ যে মানব জীবনের কাম্য নয়, বৈরাগ্যেই মুক্তি- এই মর্মকথা মহাবারতের কাহিনীতে ফুটে উঠেছে। তাহলে বাজারে এত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি কেন? কাদের স্বার্থে? চাহিদার তো শেষ নেই। থামবে কখন? একটা মানুষের কত দরকার একসময় না থাকলে, পরিস্থিতির চেহারা তো রণভূমিতে পরিণত হবে। তাহলে আমাদের মূল্যবান এই দুই মহাকাব্যের দাম কোথায় রইল! সবটাই কি ক্তঁ গঙ্গায় নমঃ। দুটো মহাকাব্য শুধু আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবই নয়, ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের মূর্ত প্রতীক। পথপ্রদর্শক। দুটি মহাকাব্যের সারবস্তু বুঝে শয়তানী না করে, যদি সত্ভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে পারা যায়, তাহলে একদিন ভারতবর্ষ হবে সূর্যের আর এক নাম।
সৌমেন সুর: সুপ্রিয় নির্মল দৃষ্টিতে তাকায় হিয়ার দিকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলে, 'আমার জীবন হলো, 'কিছুতেই যায় না মনের ভার, দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার।' হিয়া অবাক হয়ে তাকায়। কথাটা বলে সুপ্রিয় সিট থেকে উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। বলা শুরু করে।
--অনেক আশা নিয়ে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিলাম কলকাতায়। দাদা-বৌদির সংসারে। ওখানে থেকে চাকরির চেষ্টা করছিলাম। দেখতে দেখতে একটা বছর ভালমন্দ নিয়ে বেশ কাটছিলো। হঠাৎ একদিন দুপুর বেলায়, বৌদি ভাতের থালাটা দড়াম কোরে টেবিলের ওপর রেখে বলে, 'আর কতদিন যে সহ্য করতে হবে এই জ্বালা।' কথাটা বলে বৌদি গজগজ করতে করতে ঘরের ভেতর চলে যায়। আমার তখন সারা শরীর অপমানে কাঁপতে থাকে। মনে হচ্ছিল খাবার ছেড়ে উঠে পড়ি। কিন্তু পরক্ষণে ভাবি, না খেলে তো সারাদিন উপোস থাকতে হবে। তারপর আমি যাবো কোথায়। সাতপাঁচ ভেবে কোনোমতে ভাতটা খেয়ে, ঘরে বসে চিন্তা করি। একটা আশ্রয়, কোথায় পাই! এখানে কে আছে আমার! এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে যায় পিসিমার কথা। হালিশহরে থাকে। ব্যস, ওইদিনই দাদার টেবিলে চিঠি লিখে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ি।
ভেজানো দরজা ঠেলে স্টেশন মাস্টার অশোক সামন্ত ঘরে ঢোকেন। দু'জনকে দেখে বলেন, 'তোমরা ঘুমোওনি! অবশ্য ঘুমোবেই বা কোথায়! যাক সুপ্রিয়, আমার রিলিভার এসে গেছে আমার ডিউটি শেষ। আমার কলিগকে বলে দিয়েছি তোমাদের কথা। ফার্স্ট ট্রেনটা এলে ঘর ফাঁকা করে দিও। আর একটা কথা সুপ্রিয়, তোমার পিসিমাকে বোলো, আমি সামনের রবিবার দুপুরে বাড়ি যাচ্ছি। চিংড়ি মাছের মালাইকারি খাবো। আমার ধর্মদিদির হাতের মালাইকারি এখনো আমি ভুলতে পারিনি।' অশোকবাবু হাসতে হাসতে চলে যান। সুপ্রিয় কথা বলতে বলতে বেঞ্চে এসে বসে।
--'আমি কলকাতা থেকে হালিশহরে চলে আসি। পিসিমাকে সব ঘটনা খুলে বলি। পিসিমা শুনে বলেন, এখানে তোর যতদিন মন চায় থাক। আর এখান থেকেই তুই চাকরির চেষ্টা কর। তারপর একদিন ঈশ্বরের কৃপায় সত্যিই চাকরি পেলাম। মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের। আজ দুবছর হয়ে গেল আমার চাকরির। যাক, আমার কথা বাদ দাও- আপনি কোথায় যাবেন এখন? প্রথম ট্রেনতো আসতে আর আধঘণ্টার মতো বাকি।'
হিয়ার মুখে ভাবান্তর। কি বলবে কিছু ঠিক করতে পারে না। সুপ্রিয় বলে ওঠে, 'কি হলো, চুপ করে আছেন কেন? যাক, একটা কথা বলি, এখন ব্রহ্ম মুহূর্ত। চলুন প্ল্যাটফর্ম থেকে দৃশ্যটা উপভোগ করি। ভাললাগবে আপনার।'
ওরা দুজন প্ল্যাটফর্মে চলে আসে। দু'একজন করে মানুষ আসতে শুরু করেছে ট্রেন ধরার জন্য। সুপ্রিয় বলে, 'জানেন, মা বলতেন- ব্রহ্ম মুহুর্তে কেউ যদি একমনে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে তার সেই প্রার্থনা সফল হয়। নিন, আমরা প্রার্থনা করি।'
দুজনে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। এখন অন্ধকারও কাটেনি, আলোও প্রকাশ পাইনি। এমন একটা সন্ধিক্ষণ।
প্রার্থনা শেষে সুপ্রিয় বলে, 'একটা কথা বলবো, যদি কিছু মনে না করেন।' হিয়া বলে, 'বলুন।' 'আপনার চুপ থাকাতে আমি বুঝে গেছি- আপনার তেমন কোনো জায়গা নেই।' কথাটা বলে সুপ্রিয় হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, 'আপনাকে যদি সারা জীবনের মতো পেতে চাই, আপনি রাজি?'
হিয়া হাসিমুখে সুপ্রিয়র হতে হাত মেলায়। ওরা চলতে শুরু করে।