Breaking News
Abhishek: অভিষেককে ইডির হাজিরা দিতেই হবে! ডিভিশন বেঞ্চে জোর ধাক্কা তৃণমূল সাংসদের      ED: লিপস এন্ড বাউন্ডস প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের অভিষেককে তলব ইডির      Dengue: ডেঙ্গির থাবায় মৃত্যু আরও তিন জনের, নয়া পদক্ষেপ নবান্নের      ED: ইডিকে আগেই জানানো উচিত ছিল, অভিষেকের মামলায় মন্তব্য ডিভিশন বেঞ্চের      Abhishek: নিজের কথাই রাখছেন অভিষেক, যাচ্ছেন না ইডির তলবে      Delhi: লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে রাজঘাট থেকে তৃণমূলকে বের করে দিল দিল্লি পুলিস      Meeting: একদিকে ইডি, অন্যদিকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সোম-মঙ্গলের প্লান কষতে দিল্লিতে বৈঠকে অভিষেক      Abhishek: দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নজরে ৩ অক্টোবর      Accident: দুর্ঘটনার কবলে তৃণমূলের দিল্লিগামী বাস, আশঙ্কাজনক ১১ জন      Justic Sinha: জলে কুমির ডাঙায় বাঘ! রনংদেহী জাস্টিস সিনহার নির্দেশে মহাফাঁপরে ইডি ও অভিষেক     

অন্যান্য

Janmashtami: জন্মাষ্টমীর তিথি থেকে গোপালের প্রিয় ভোগ, জানুন বিশদে

আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তারপরেই সকলের প্রিয় গোপালের জন্মদিন। অনেকেই এখনও জানেন না বাংলা ক্যালেন্ডার মেনে জন্মাষ্টমীর (Janmashtami 2023) তিথি। বুধবার নাকি বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমী পালন করা উচিৎ, এই নিয়েও সন্দেহ রয়ে গিয়েছে অনেকের মনে। জানুন বিশদে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৬ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেল ৩ টে ৩৭ মিনিট গতে শুরু হচ্ছে অষ্টমী। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টে ১৪ মিনিটে শেষ হবে অষ্টমী তিথি। অনেকে জন্মাষ্টমী পুজোর পরের দিন নন্দোৎসব করেন। অষ্টমী গতে নবমী তিথিতে অনেকে নন্দোৎসব করবেন।

গোপাল কী খেতে ভালোবাসে, তা নিয়ে অনেকেই মনে প্রশ্ন থাকে। ভাদ্র মাসে তাল ফল হয়। এই তাল ছাড়া গোপালের ভোগ অসম্পূর্ন। এছাড়াও মালপোয়া গোপালের বিশেষ পছন্দের। অনেকে মনে করেন ছাপ্পান্ন ভোগ দিলেই গোপাল খুশি। তবে গোপালকে বাড়ির ছেলেই ভাবুন বা ভগবান, সাধ্যমতো সবকিছু নিবেদন করা যায় ননী-গোপালকে। লুচি-সুজি, বাসন্তী পোলাও নিরামিষ তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা নিবেদন করা যায়। তবে গোপালের প্রিয় খাবার মাখন দিতে ভুলে যাবেন না কিন্তু।

4 weeks ago
Speial story: "তরুণ সমাজ তোমাদের আশায় সমাজের নাগরিকবৃন্দ"

দেশের যুবসম্প্রদায় হলো শক্তির উত্স। দেশের মানুষ তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। তারা যদি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে কতটা সচেতন, তা একমাত্র তরুণ সমাজই অনুধাবন করতে পারে। এখন তরুণ সমাজকে প্রথমে দেশকে জানতে হবে। দেশের সমাজ সংস্কৃতিকে ভাল করে বুঝতে হবে। নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য় সমাজ সেবামূলক কর্মসূচী গ্রহন করতে হবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্য়া, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ভারতবর্ষের সংহতি বিনষ্ট করছে। তাই দেশের নাগরিক হিসাবে দেশ সেবার ক্ষেত্রে প্রত্য়েক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য় রয়েছে। দেশের জন্য় আমরা, দেশ না থাকলে, আমাদের অস্তিত্ব যে বির্পযস্ত, একথা উপলব্ধি করলে দেশ গঠনের উপযোগিতা চোখের সামনে ভেসে উঠবে। তাই দেশকে গঠন করার লক্ষ্য়ে দেশের সেবার প্রয়োজনীয়তা আছে। এই ব্য়াপারে সর্বাগ্রে তরুণ সমাজই একমাত্র উপযুক্ত-একথা বলাই বাহুল্য়।

 তরুণ সমাজকে ভাবতে হবে, রাতের গভীরে ফুটে আছে সকাল, তাকেই নিয়ে আসতে হবে এই জীবনে। যা কিছু অসত্য়, যা কিছু মিথ্য়া, তাকে অতিক্রম করে সত্য়কে প্রতিষ্ঠা করা মানবজীবনের সার্থকতা। একথা তরুণ সমাজকে ভাবতে হবে, বুঝতে হবে। আমাদের জীবনের সংগ্রামই হলো-অন্ধকার থেকে আলোয় আসা। রাত্রির অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়, একসময় অন্ধকার ভেদ করে ফুটে উঠবে সকাল। তখন সবকিছু দৃশ্য়মান হয়ে যাবে। অতএব তরুণ সমাজকে জাগ্রত থাকতে হবে, তাদের মাথায় নৈতিকতার আকাশ। সেখানে আলো তাদের ফোটাতেই হবে। মানুষের কাছে তরুণ সমাজ ঝড়ের বার্তা, আগাম জানিয়ে সেটা রোধ করার জন্য় তাদের এগিয়ে এসে, সমাজকে কলুষ মুক্ত করার জন্য় সতর্ক হয়ে কর্মে প্রবেশ করতে হবে। তরুণ সমাজকে ভাবতে হবে, জীবনের নানান অন্ধকারকে দূর করতে পারলে জীবন সত্য়ের আলোয় উদ্ভাসিত হবেই। 

a month ago
Rabindranath: এক সৃষ্টিশীল সাহিত্যের দরজায় আকাশচুম্বী রবীন্দ্রনাথ

সৌমেন সুর: বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব এক বিস্ময়কর ঘটনা। সাহিত্যে সবকিছু নতুন করে পাওয়ার আশায় যেন রবীন্দ্রনাথের প্রকাশ ঘটলো। উনি চিনিয়ে দিলেন গল্পে সংলাপের সন্নিবেশে শব্দের জাদুকাঠি। বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলা গদ্য ও বিহারীলাল চক্রবর্তীর বাংলা পদ্য যেন রবীন্দ্রনাথের কলমে পরিণত বয়সে পদার্পণ করলো।

শৈশবে বিশাল বারান্দা বিশিষ্ট বাড়ির অন্তঃপুরে বন্দী জীবন আর চার দেয়ালে বদ্ধ ক্লাসরুমের হাত থেকে মুক্তি পাবার পর, একের পর এক রবীন্দ্র প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে শুরু করলো। কখনো তিনি কবি, কখনো নাট্যকার, কখনো প্রাবন্ধিক, কখনো গল্পকার আবার কখনো তিনি সংগীত স্রষ্টা। তবে রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক উপলব্ধির মহোত্তম প্রকাশ তাঁর সঙ্গীতে। ভারতীয় মার্গ সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের মিলন ঘটিয়ে তিনি সংগীতে এক নতুন পথ সৃষ্টি করেন, যা পরবর্তীতে 'ভাঙা গান' নামে পরিচিতি পায়।

জমিদারি কাজে যখন শিলাইদহে কবি অবস্থান করেন, তখন বেশ কিছু বাউলের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এবং বাউল সম্প্রদায়ের গানের আধ্যাত্মিক চেতনা ও তার সাহিত্য কবির মনকে উত্তাল করে দেয়। লালন ফকিরের একটি গান 'আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে' গানটি কবিকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। এরপর কবি লালনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য ছটফট করতে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে লালনের সঙ্গে কবির সাক্ষাৎ হয়নি।

অন্যদিকে কবি চিঠি লিখতেন সযত্নে, চিঠিতে থাকতো গভীর অনুভূতি। তাঁর লেখা চিঠি অবশেষে পত্রসাহিত্য হয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। উপন্যাস লেখার বুননের থেকে কবি গল্পে অত্যন্ত বেশি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। পরিশীলিত ভাষা, পরিমার্জিত কাহিনীর বুনোট। সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ অজেয়। এক নতুন দিক নির্দেশ করে দিয়েছিলেন কবি। আধুনিকতাতেও তিনি পিছিয়ে নেই। চ্যালেঞ্জবশত লিখলেন ' শেষের কবিতা'। যে উপন্যাস মানুষের মনে এক বিশিষ্ট স্থান আদায় করে নেয়। সাহিত্যের দরজায় মহাকবি রবীন্দ্রনাথের অন্যতম একজন সৃষ্টিশীল প্রতিভাধর মানুষ হয়ে,  মানুষের মনে চিরকাল বিরাজ করে থাকতেন।

a month ago


Environment: আজ মনের মত পরিবেশের বড় অভাব

সৌমেন সুর: পৃথিবীতে প্রাণী সৃষ্টি হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ গড়তে বহু কোটি বছর লেগেছিল। তাই পরিবেশ ও প্রাণ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সমস্ত প্রাণই এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে মানব জীবন। পরিবেশ বোঝাতে গিয়ে আমরা সামাজিক, পারিবারিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের কথা বলছি। মানব জীবনে এই প্রত্যেকটি পরিবেশের গুরুত্ব অসীম, সুস্থ পরিবেশ মানুষকে মানবিক গুণের সমৃদ্ধ করে, দূষিত পরিবেশ মানুষকে করে অমানুষ। যেমন যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসমূলক বর্বরোচিত এক অমানবিক কর্মকাণ্ড। পরিবেশ দূষিত হলে এমন ভয়ার্ত কাণ্ডের উদ্ভব হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, পরিবেশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ নির্মল হওয়া একান্ত আবশ্যক। যদি কোনো ছাত্রছাত্রী পড়তে এসে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেকে মেলে ধরে, তাহলে তার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটলো, ক্যারিয়ারে পেরেক পোতা হয়ে গেল। কার সর্বনাশ হলো? হিসেব করে দেখুন আপনার নিজের। অথচ আপনার বাবা-মা কত কষ্ট করে আপনাকে পাঠিয়েছে একটা আশায়, তাদের সন্তান মানুষ হবে, তাদের পাশে দাঁড়াবে কিন্তু সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেল শুধুমাত্র আপনার ভুলের জন্য। আপনি দূষিত পরিবেশের দাস হয়ে গেছেন। যেখানে স্বপ্ন আশা বৃথা।

শিক্ষার শেষে মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন সে সামাজিক পরিবেশে গিয়ে পড়ে। এই পরিবেশে সে প্রত্যক্ষ করে একদিকে আদর্শ অন্যদিকে আদর্শ হীনতা, একদিকে মূল্যবোধ অন্যদিকে মূল্যবোধের অভাব, একদিকে সুনীতি অপরদিকে চরম দুর্নীতি, একদিকে ত্যাগ অপরদিকে লোভ- মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়, এদের হাতছানিতে। যে যেমন ভাবে প্রভাবিত হয় সে তেমনভাবেই সমাজে পরিচিত হয়। দূষিত পরিবেশের স্পর্শ আপনার গায়ে যাতে না লাগে, তার জন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। চক্রব্যূহের ফাঁদে কখনোই নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন দূরে সরে থাকতে। মনে রাখবেন জীবনে সাফল্য আপনাকে পেতেই হবে। Success is the best revenge. Bad Environment থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

a month ago
Durgapuja: দুর্গাপুজোকে কেন 'কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ' বলা হয় জানেন?

সৌমেন সুরঃ দুর্গাপুজোকে বলা হয় কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ। এই যজ্ঞের সূচনা লগ্ন মহালয়ার ক্ষণ থেকে। তত্ত্বগতভাবে মহালয়ার সঙ্গে দেবীপুজার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সাধারণভাবে এই দুটি উৎসবকে আমরা একই উৎসব রূপে চিহ্নিত করে থাকি। বিশেষ করে বাঙালির কাছে এই শুভ তিথিটি কাব্যিকভাবে স্থান পেয়েছে। দেবী পার্বতী তাঁর সন্তানদের নিয়ে কৈলাস থেকে আসছেন বাপের বাড়ি। পিতা হিমালয় আর মা মেনকার সঙ্গে মানব মনও অপেক্ষা করে থাকে কন্যা উমার উপস্থিতির জন্য। দেবী আসেন বাংলার কন্যা হয়ে। মানুষ কল্পনা করে এই মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবী কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি যাত্রা করেন। মহালয়ার অর্থ দেবী আগমনের সাত দিনের অপেক্ষা। আর ধর্মের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের মতে অর্থাৎ পন্ডিতের মতে 'পিতৃপুরুষ' উপাসনা ধর্মভাবনা সৃষ্টির কারণ। মহালয়ার দিনটি সেই পিতৃউপাসনার দিন। পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে চলে জলদান। সমস্ত অনুষ্ঠানটির মধ্যে আমাদের ভারতবর্ষের সংস্কৃতির মূল ভাবনাটি ফুটে ওঠে। মহালয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ। এক অমাবস্যা থেকে পরের পূর্ণিমা পর্যন্ত আমাদের আরাধনার কাল। সেই আরাধনার সূচনা হয় মহালয়ার পিতৃঅর্চনার মধ্যে দিয়ে। এরপরই দেবীপক্ষের মূল অংশে চলে যায়।

কাঠক সংহিতায় দেবী অম্বিকাকে শতরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে ' শরদ্বৈ অম্বিকা।' শরৎরূপী অম্বিকার পুজো বলেই তো শারদীয়া। পন্ডিতগন বলেন, এ হলো অকালবোধন। অকালবোধন বলা হয়েছে এইজন্য যে,  আমাদের ছ' মাসে দেবতাদের একদিন, অন্য ছ'মাসে একরাত। মাঘ থেকে আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ন। দেবতারা জাগ্রত থাকেন। শ্রাবণ থেকে পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন। দেবতারা নিদ্রিত থাকেন। ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। নিদ্রিত দেবতাকে জাগ্রত করেছিলেন বলে এই পুজোকে অকালবোধন বলে।

শস্যের সঙ্গে দেবীর নিগুঢ় সম্পর্ক। বেবির আর একটি রূপ হল শস্যবধূ। এই শস্যবধূকে বলা হয় নবপত্রিকা। নবপত্রিকায় কলা গাছের সঙ্গে থাকে কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, মানকচু, অশোক এবং ধান। এইভাবে বিভিন্ন শস্যের সঙ্গে দেবীকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেবীর শাকম্ভরী রূপটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শস্যদায়িনী রূপে দেবীর দশটি অস্ত্রের সঙ্গে দশ রকমের শাককেও যুক্ত করা হয়েছে। যেমন,  পাতা, অগ্র, মূল, কবীর, ফল, কাণ্ড, ত্বক, ফুল, অস্থিরূঢ়ক, কবুক। যাইহোক, আমাদের জীবনের নানা অংশ পিতৃপুরুষ বন্দনা থেকে শাকান্ন পর্যন্ত দেবীপুজোর সঙ্গে জড়িত।

এই পূজো আজ বিশ্ববন্দিত। প্রচুর মানুষের মনে ফুটে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা। কারণ সারা পুজো জুড়ে চলে অভাবনীয় অর্থনীতি। গরীব, দিনমজুর, অন্য শ্রেণীর মানুষ দুটো পয়সা হাতে পায়। সুখের বিলাসে দিন কাটায়। তাই এই মহাজাগ্রত সর্ব মানব মিলন পুজোকে কখনোই রাজনৈতিক কলুষতায় কলুষিত হতে দেওয়া উচিত নয়। আসুন এই পুজোকে কেন্দ্র করে মাকে প্রার্থনা জানাই- সবাই সুখে থাক, আনন্দে থাক, শান্তিতে বিরাজ করুক। জয় মা দুর্গা। তথ্যঋণ- পূর্বা সেনগুপ্ত

a month ago


Durga Puja: পুজোয় ফেরিওয়ালা মেয়ের চিন্তাভাবনায়... (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুরঃ (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের শেষ খন্ড) দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ষষ্ঠীর দিন মোটামুটি দর্শনার্থীদের ভিড়। বুনিদের দোকানটা ভালই চলছে। বুনি একমনে কাস্টমারদের খাবার দিয়েই চলেছে। আজ বুনিকে একটু অন্যরকম লাগছে। খুব ভাল করে সেজেছে ও। ওর রূপের টানে মানুষ বেশি করে ভিড় করছে। সন্ধে সাতটায় দোকান চালু হয়েছে। রাত দশটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। দোকানের সমস্ত মালপত্র ভ্যানে ওঠায়। একবুক আনন্দ নিয়ে বাবা মেয়ে ও বাচ্চা ছেলেটা ভ্যানে উঠে পড়ে।

বাড়ি এসে একটু ফ্রেশ হয়ে বুনির বাবা দিনান্তের আয়ের টাকা পয়সা গুলো গুনতে থাকে। একমুখ হাসি নিয়ে বুনিকে বলে, 'হাজার তিনেক টাকা লাভ হয়েছে।' বুনি খুশি হয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, আমি তোমার হাসিমুখটা দেখতে চাই। গতবছর মুখ হাড়ি করে ছিলে, তখনই আমি চিন্তা করেছিলাম, সামনের পুজোয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো।'

খাবারের জিনিস দ্বিগুন করে সপ্তমীতে চললো দুজনে দোকানে। মানুষের এত ভিড়, রাত নটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। অষ্টমীর দিনও তাই। সারা বাড়িতে মাত্র তিনজন প্রাণী। বুনি ও তার মা বাবা। প্রত্যেকের মনে চরম আনন্দ। সকাল সকাল পুজো দিয়ে বুনি খাবার বানাতে বসে যায়। আজ নবমী, খাবার চারগুন বেশি। বিকেলের রান্না শেষ। বুনি স্নান সেরে জিন্স ও কুর্তি পরে মালপত্র নিয়ে ভ্যানে উঠে পড়ে। সঙ্গে বাবা ও বাচ্চা ছেলেটি। আজ তিনটে ভ্যান। বুনির বাবা একটু ইতস্তুত করেছিল, চারগুন খাবার! যদি বিক্রি না হয় তাহলে তো- বুনি বাধা দিয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, ব্যবসা হলো সাপ লুডো খেলার মতো, বিক্রি হলে বিশাল ব্যাপার, না হলে হতাশা। দেখো বাবা, আজ শেষ দিন। ব্যবসায় একটু ঝুঁকি নিতে হয়। তুমি অত ভেবো নাতো, যা থাকে কপালে। মা নিশ্চই গরীবকে মারবেনা।'

আজ মানুষের ঢল নেমেছে। বুনির দোকানে ভীষণ ভিড়। সব ধরনের খদ্দের জমায়েত হয়েছে দোকানে। রাত একটার মধ্যে সমস্ত মাল নিঃশেষ। সবকিছু গুছিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফেরে বুনিরা। আজ বাড়ির সমান মনে প্রচন্ড আনন্দ।" বাবা মা টাকাপয়সা গুনে বুনিকে বলে, 'মা আমি সারাজীবন এত টাকার লাভ চোখে দেখিনি। ২৮ হাজার টাকা। সব তোর করিশ্মা।' বুনু প্রতিবাদ করে, 'না বাবা, আমি কেউ না, সব ঐ ওপরওয়ালা। উনি যদি সহায় না হতেন তাহলে আজকের এই আনন্দের মুখ আমরা কেউ দেখতে পেতাম! যাক বাবা, কাল আমাদের ছুটি। আমরা গঙ্গার ঘাটে মায়ের বিসর্জন দেখবো। আর মনে মনে বলবো, মা আবার এসো তুমি। সমস্ত গরীব দিনমজুরদের ঘরে আলো দেখাও, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারে' বাবা মা ভক্তিভরে হাতজোড় করে। তিনবার শব্দ করে ওঠেন, 'জয় মা দুর্গা।' দূর থেকে প্রথম ভোরের ঢাকের আওয়াজ ভেসে ওঠে। ঢাকিরা ঢাকে বিসর্জনের বোল তোলে। (সমান্ত)।

a month ago
Special Story: কন্যা উমা চিন্ময়ী রূপে সবার হৃদয়ে বিরাজমান

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) শ্রী শ্রী চণ্ডীর ঋষি মেধস মুনি বলেছেন- মহামায়া মায়ের ইচ্ছাতেই ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু ঘটছে। ইনি মহাশক্তি। সৃষ্টি স্থিতি বিনাশ করেন। ইনি যেমন, মানুষ অশুভ কর্ম করলে দুঃখ দুর্দশা প্রদান করেন, তেমনি তাকে বিশ্বাস ভক্তি করলে তাকে ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ প্রদান করেন। মহামায়া সর্বদা বর্তমান। এমন কিছু নেই ইনি করতে পারেন না। মোট কথা ইনি অঘটন-ঘটন পটিয়সী। ইনিই মহাশক্তি। এই মহাশক্তিই দুর্গা কালী লক্ষ্মী সরস্বতী নামে পরিচিত। মহাশক্তি সর্বদাই শক্তিমান ব্রহ্মকে আশ্রয় করে থাকে। এই ব্রহ্ম হল নিষ্ক্রিয় চলমানহীন। শক্তিকে আশ্রয় করেই তিনি সচল ও কর্মপ্রাণ হয়ে ওঠেন। এই নিষ্ক্রিয় জ্ঞানময় সত্তাকে বলে শিব। এই সদাশিবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শক্তিরূপী দেবী দুর্গা সক্রিয় ও লীলাময়ী হয়ে ওঠেন। তাই তিনি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় করেন। তাই দুর্গা হলেন ত্রিগুণাময়ী। কিন্তু রহস্য হলো, শিব দুর্গার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা। এই সম্পর্কটা এসেছে বিভিন্ন লোকগাথা ও পুরান কাহিনী থেকে। এর ফলে মহাজাগতিক দেবতারা বা দেবদেবীরা আমাদের ঘরে চলে আসেন। এদের নিয়ে নানা কাহিনীতে উঠে এসেছে, শিব পার্বতী একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না। শিব ছাড়া দুর্গা প্রেরণা লাভ করতে পারে না, আবার দুর্গা ছাড়া শিবের কোন কর্মে মন যায় না। এমনই হলো শিবশক্তির প্রবল আকর্ষণ।

বাঙালি পণ্ডিতদের আরও ধারণা হলো, এরা স্বামী-স্ত্রী মিলে হিমালয়ের স্বর্গরাজ্য কৈলাসে বাস করেন। ক্রমে ক্রমে এদের মধ্যে প্রেমের জোয়ার এলো। এক এক করে চারটি সন্তান হলো। যথাক্রমে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ । এবার বাঙালি কবিরা বর্ষার পর তাঁকে বঙ্গে দেখতে চায়। তাই মাতৃভক্ত কবি নজরুল লিখলেন, 'বর্ষ গেল, আশ্বিন এলো, উমা এলো কই/ শূন্য ঘরে কেমন করে পরান বেঁধে রই/ ও গিরিরাজ সবার মেয়ে/ মায়ের কোলে এলো ধেয়ে/ আমারই ঘর রইলো আঁধার/ আমি কি মা নই।' এখানে মা মেনকার এই আর্তি বাঙালি জননীর প্রতীক স্বরূপা। যাই হোক, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গনেশ এই পরিবার নিয়ে বাঙালি সমাজ সংস্কৃতিতে মেতে ওঠে। দেখতে দেখতে ষষ্ঠী থেকে দশমী এসে যায়। মা তাঁর পরিবার নিয়ে ফিরে যাবে কৈলাশে। মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। মাকে বিদায় জানাতে হবে। পাঁচটা দিন হই হই করে সবার আনন্দে কেটেছে। এবার বিষাদে ভরে যায় মন। মায়ের কানে কানে তাই বলে, 'আবার এসো মা, আবার এসো।' বাস্তবিকই বাঙালির মনের কোণে সারা বছরই উমাকে ধরে রাখার উন্মাদনা জাগে। কিন্তু বিসর্জন মানে প্রাণের মধ্যে পুনঃ আহ্বান। তাই গঙ্গায় বিসর্জন দিলেও চিন্ময়ীরূপে মা সবার হৃদয়ে বিরাজমান। তথ্য সংকেত-স্বামী বেদানন্দ

a month ago
Durga Puja: পুজোয় ফেরিওয়ালা মেয়ের চিন্তাভাবনায়... (১ম পর্ব)

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের ১ম খন্ড) সকাল থেকে আকাশটা কেমন মুখ ভার করে আছে। বুনির বাবা একটু চিন্তিত। চিন্তাটা স্বাভাবিক। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ফেরিওয়ালার দিন শেষ। সারা বছর ফেরী করার পর পুজোর চারটে দিন একটু বেশি ইনকামের আশায় বুনির বাবার মত অনেকেই হা করে বসে থাকে।। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করে বুনির বাবা। দিনান্তে তেমন লাভের মুখ হয়তো দেখতে পায় না, তবে যেটুকু হয় তাতে কোনোরকমে সংসার চলে যায়। সংসারের খরচ ছাড়া বুনির কলেজের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অপেক্ষা করতে থাকে পুজোর জন্য। বুনির বাবা অনেক আশা নিয়ে পুজোয় খাবারের দোকান দিয়েছিল রাস্তায়। কিন্তু মাথায় হাত তার। বিক্রি তেমন ভালো হয়নি। অর্ধেকটাই লস। খুব মুষড়ে পড়েছিল বুনির বাবা। এবছর আর দোকানের নাম করে না। কিন্তু বুনি ছাড়বার পাত্র নয়। বাবাকে বলে দোকান দিতে। ও বসবে দোকানে। কথাটা শুনে বুনির বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কলেজের পড়ুয়া মেয়ে বাবার সঙ্গে রাস্তার দোকানে বসবে!

আসলে বুনি তার বাবাকে বুঝতে পেরেছিল। সেই পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে তার বাবা। বর্তমানে অনেক কিছুর বদল হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছাপ বাবার ব্যবসায়ে নেই। বাবার ব্যবসার ধরন, গেট আপ, ব্যবহার, কথাবার্তা একেবারে ম্যার ম্যারে, সেকেলে। কোথায় চৌকস উজ্জ্বলতা থাকবে তা নয়- একদম বোগাস। এসব কিছু বুঝতে পেরে বাবার পাশে থাকার জন্য এগিয়ে এসেছিল সে। বুনি বাবাকে বলে, 'বাবা দোকানে থাকবে চা, ডিমটোস্ট, ঘুগনি আর চিলি চিকেন। তোমার ভয় নেই চিলি চিকেন আমি বানাবো। তুমি শুধু চা বানাবে। বাকি সব আমি সামলে নেব। সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলে থাকবে ব্যাস।'

বুনির কথা শুনে ওর বাবার মনে একটা চাপা আনন্দ ফুটে ওঠে। কোনো কথা বলেন না। মনে মনে ভাবেন, মেয়ের কি প্ল্যান আছে কে জানে। বুনির বাবা দিনমজুর,  ফেরিওয়ালা। জীবন যে কত সুন্দর, এ ফিলিংস বুনি ছাড়া এ পরিবারের আর কারো হয়নি। সবাই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে চলে, তবে সে উদ্দেশ্য কারো সফল হয়, কারো হয় না। দোচালের মধ্যে এই পরিবারের জীবন। পরিপূর্ণ সুখ কোনদিন কল্পনা করেনি। ( চলবে)

a month ago


Special story: মহামিলনের প্রতীক দেবী দুর্গার অর্থ ও মাহাত্ম্য কি

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) রথ যাত্রার দিন থেকে দেবীর কাঠামো তৈরি হয়, কাঠামো তৈরি থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গাপুজোর উপকরণ সংগ্রহের জন্য মালি, তাঁতি, কুম্ভকার, পতিতা, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শুদ্র, কায়স্থ সব শ্রেণীর মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন এই পুজোয়। তাই এই পুজো মহামিলনের পুজো অন্যদিকে শারদীয় উৎসবকেই বলা হয় মহামিলন উৎসব। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন এবং বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অন্তরের মিলনে প্রতিবছর নতুন করে জীবন দান করে, কারণ দেবীর শক্তি ও আসরিক শক্তির যে গুণাবলী তা মানুষের শরীরে বিদ্যমান। তাই বিজয়া দশমীতে মাকে বিসর্জন দেবার পর মাকে প্রার্থনা করি, মা আমাদের আসরিক শক্তিকে তুমি নাশ করো। দেবী শক্তি প্রদান করে আমাদের মানুষ করো। এটা করলে তবে সমাজ থেকে হিংসা-দ্বেষ হানাহানি কাটাকাটি ভুলে মানুষের আবার সুখ শান্তি লাভ করতে পারবে।

আমরা যে দুর্গা পুজো করি, এই দুর্গার অর্থ কি বলেছে? 'দ' অক্ষরটি দৈত্য নাশক 'উ' কার হল বিঘ্ননাশক, 'রেফ' হল রোগনাশক, 'গ' কার হল পাপনাশক এবং 'অ' কার হল শত্রুনাশক। তাহলে দৈত্য বিঘ্ন ভয় বা শত্রু হতে যিনি রক্ষা করেন তিনি দুর্গা।

ষষ্ঠীর দিন থেকে পুজো শুরু হয়। সকালে কল্পারম্ভ। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজো করার সংকল্প করে দুর্গা মন্ডপের একপাশে ঘর স্থাপন করা হয়। পুজোয় চণ্ডীপাঠ করতে হয় ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত। শুদ্ধ মনে এই দেবী মাহাত্ম্য পাঠ করা হয়ে থাকে। এদিন সন্ধ্যাবেলায় বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে বোধন করা হয়। এবং অধিবাস ও আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণ করা হয় এই বলে যে, পরের দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুজোর জন্য মন্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে। সপ্তমীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় ও চক্ষুদান করা হয়। অষ্টমীতে কুমারী পূজোর বিধান শাস্ত্রে আছে। এক থেকে ১২ বছর বালিকাকে কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। এক বছর বয়সের নাম হবে- সন্ধ্যা,  দুই বছর হলে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে-কালিকা, পাঁচ বছরে সুভাগা, ছয় বছরে-উমা, ৭ বছরের মালিনী, আট বছরের-কুঞ্জিকা, নয় বছরের কালসন্দর্ভা ইত্যাদি। তন্ত্রে কুমারীকে সাক্ষাৎ যোগিনী ও পরম দেবতা বলা হয়।

দেবী দুর্গার দশ হাত শ্রী শ্রী চন্ডিতে আছে, দেবতাদের পুঞ্জিভূত তেজ থেকেই এই দেবী মূর্তি আবির্ভাব হন তার দশ হাতে দশটি অস্ত্র আছে। দশ জন দেবতা অসুর নাচের জন্য দশ হাতের ১০ টি অস্ত্র প্রদান করেছেন। শিব দিয়েছেন ত্রিশূল, মহাকাল দিলেন খড়গ, বিষ্ণু দিলেন চক্র বায়ু দিলেন তীক্ষ্ণ বান অগ্নি দিলেন গদা যম দিলেন কাল দন্ড, বরুণ দিলেন নাগ পাশ, ইন্দ্র দিলেন অঙ্কুশ, বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার, আর বাহন হলেন সিংহ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে পশু ভাব আছে যখন পুরুষাকার সাধনভজনের মাধ্যমে মানুষ পরিণত হয় তখন পশুভাব কেটে গিয়ে দেবভাব জাগ্রত হয়। দেবীর চরণ তলে সিংহের সেই ভাবেরই প্রতীক।

a month ago
Special story:অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা)

একমাত্র বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজো সবচেয়ে বেশি আনন্দের। এই পুজোতেই দেখা যায়, মহামিলনের অবিশ্বাস্য় ছবি। মহামিলন বললাম এই জন্য় যে, বিবিন্ন জাতের মানুষেরা এই উৎসবে মিলিত হয়ে সমস্ত মানুষের সাথে আনন্দে লীন হয়ে যায়। যেমন কামার কুমোর, কুম্ভকার, ঝাড়ুদার, পতিতা, শোলা শিল্পী, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য়, শুদ্র, কায়স্থ, অবাঙালি সমস্ত শ্রেণীর মানুষ এই পুজো উৎসবে মেতে ওঠে আনন্দে। দৃশ্য়ত এ এক অভূতপূর্ব মহামিলন। শারদীয়ার এই পুজো যেন অগ্রিম জানান দেয়-আমি আসছি। সাদা কাশফুল, নীল আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া খণ্ড সাদা মেঘ, মেঘ রোদের খেলা, বর্ষার পর মাটির সোঁদা গন্ধ, শিউলি ফুলের সুবাস, সব মিলিয়ে দুর্গাপুজা যে আসন্ন, তা চোখ বুজে বলা যায়। মহালয়ার দিন থেকেই উৎসব শুরু। প্রথমে মহালয়ার তাৎপর্য তুলে ধরি আপনাদের কাছে। মহালয়া কথাটি এসেছে মহাআলয় থেকে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আবার বলা যায় মহৎদের আলয় বা পরমস্থান। 'মহা' 'লয়'- অর্থাৎ পরমলীন। মহতীদের লয় হয় যেখানে। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। এইদিন থেকেই মহাপুজা আরম্ভ।

এই মহাপুজা ঠিক কবে থেকে শুরু, তার হিসেব বলা মুশকিল। তবে মনে হয় দুর্গাপুজা শুরু পৌরাণিক কাহিনী-'রামায়ন' থেকে। কৃত্তিবাসী রামায়নে এই পুজার উল্লেখ আছে। ভক্তি, বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে এই পুজা করেছিলেন। তাই এই পুজাকে অকালবোধন বলা হয়। অকালবোধন কেন? দেখুন, আমাদের ছ'মাসে দেবতাদের একদিন। অন্য় ছ'মাসে দেবতাদের একরাত। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্য়ৈষ্ঠ, আষাঢ়- এই ছমাস দেবতাদের উত্তরায়ন। দেবতারা উত্তরায়নে জাগ্রত থাকেন। আর শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ- এই ছমাস দেবতাদের দক্ষিণায়ন। দেবতারা এই দক্ষিণায়নে নিদ্রিত থাকেন। এই দক্ষিণায়নে রামচন্দ্র মাকে আহবান জানিয়ে ছিলেন অর্থাৎ মাকে জাগালেন। অসময়ে মাকে বোধন করেছিলেন বলে এই পুজাকে বলা হয় অকালবোধন। অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।   

2 months ago


Life: এক নিমেষে জীবনটা চলে গেল...

সৌমেন সুর: এক নিষ্পাপ যুবকের  জীবনটা চলে গেল। চিরদিনের মতো। কয়েকজন আলটপকা সো কলড মনুষ্যত্বহীনের জন্য সে হারিয়ে গেল। কত আশা করে বাবা-মা একবুক স্বপ্ন নিয়ে, তাঁদের একমাত্র ছেলেকে যাদবপুরে পাঠিয়েছিলেন- তাঁদের ছেলে একদিন তাঁদেরকে দেখবে। নতুন ঘর বাঁধবে। স্বপ্নের ইরামত গড়বে। সব স্বপ্ন এক নিমেষে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পাশ আউট ছেলেরা কী করে হোস্টেল দখল করে থাকে বছরের পর বছর। কর্তৃপক্ষ কি কিছুই জানেনা। জানে না বললে অবিশ্বাসযোগ্য। জানলে, কেন প্রশাসনকে আগেভাগে জানানো হয়নি।

জে.ইউ-তে যে সুনাম একসময় ছিল এখন তার বিন্দুবিসর্গ নেই। এই ইউনিভারসিটির প্রতিটা ইটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অমানবিকতা, নেপোটিজম, ভায়োলেন্সের ছড়াছড়ি। উদ্ভব যখন হয়েছে, এর নিঃশেষ হলো না কেন? কোন শক্তির বলে মাথাচাড়া দিলো! আড়ালে কাদের মদত- সব প্রকাশ্যে আসুক। মানুষ বুঝুক এখানকার শিক্ষা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। কথা হচ্ছে এত সাহস পায় কোত্থেকে? কোন পেশীবলে তারা বলীয়ান- সব খুলে দেওয়া হোক। যারা দোষী তাদের চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

একটা জীবনের দাম দেওয়া যায় না। জীবনের দাম অনেক।  জীবন হেলায় ফেলায় নয়।  জীবন শেষ হতে এক মিনিট। কিন্তু জীবন গড়তে কয়েকশো কোটি মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এখনো কানে বাজে নিষ্পাপ যুবকের ফোনের কথা, 'মা, আমার খুব ভয় লাগছে। তোমরা আমাকে নিয়ে যাও।' তারা আর নিয়ে যেতে পারলো না, মাত্র কয়েকজন পাষণ্ড, পাশবিক , উদভ্রান্ত হত্যাকারীদের জন্য। যারা ৱ্যাগিং করে, সে ছাত্রই হোক আর শিক্ষকই হোক- তাদের ষড় রিপু ঠিক নেই। অনতি বিলম্বে তাদের সাইক্রিয়াটিসদের কাছে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করা দরকার। কারণ তারা অমানবিক, অমানবিক, অমানবিক।

2 months ago
Durgapuja: আসন্ন দুর্গাপুজোয় পশুবলি একদম নয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) আকাশের মেঘ আর রোদের খেলা দেখে, চোখ বুজে বলতে পারা যায় দুর্গাপুজো আসন্ন। এখন বেশকিছু মাঠের কিনারে সাদা কাশফুলের দোলা আর শিউলি ফুলের উল্লাস দেখে মনে হয়- মা আসছেন। মা অর্থাৎ দুর্গা মা। কোনো কোনো বাঙালির ঘরে কন্যা উমা মর্তে আসছেন। মায়ের কাছে কটা দিন মেয়ে আসছে তার পুত্রকন্যা নিয়ে। এই আনন্দে সারা বাংলায় সাজো সাজো রব।

দুর্গাপুজো মূলত শাক্ত পুজো। শক্তির আরাধনাই এখানে মূল বিষয়। রক্তের মাধ্যমে অশুভ অসুর শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং দুর্গাপুজো বা যে কোন শক্তির আরাধনায় পশুগুলি জড়িয়ে আছে রক্তপাতের মাধ্যমে শুভ শক্তির জয় আর অশুভ শক্তির পরাজয়। দুর্গাপূজোই পশু বলি নিয়ে নানা ঘটনার উল্লেখ আছে। মার্কেন্ডেয় পুরাণ-এর দেবী মাহাত্ম্য নিয়ে প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ও লোকশিল্পের গবেষক মোহিত রায় তাঁর 'রূপে রূপে দুর্গা' নামক বইটিতে লিখেছেন বোলপুরের আদি ইতিহাস। এক সময় রাজা সুরথ তাঁর রাজধানীর সুপুরে এক লক্ষ বলি দিয়ে দেবীকে পুজো দিয়েছিলেন। এক লক্ষ বলির পর তার রাজধানীর নাম বদলে হয় বলিপুর। কালক্রমের সেই বলিপুর হয়ে উঠল বোলপুর নামে।

খোদ কলকাতাতেই আছে ৪০০ বছরের পুরনো চিত্তেশ্বরী মন্দির। চিতপুরের চিতে ডাকাত এই মাকে পুজো করতেন। সুতরাং বলা যায় ডাকাত কালীর মতো ডাকাতের দুর্গাপুজোয় বলিদান নিত্য ঘটনা। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের বিজয় উৎসব পালনের জন্য বসন্তকালের দুর্গাপুজো শরৎকালে নিয়ে এসে নবপত্রিকা পুজোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজ করেছিলেন নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র ও কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব। এদের উৎসাহিত করেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। প্রমাণ হচ্ছে সপারিষদ ক্লাইভের উপস্থিতি ও একশো এক টাকা দক্ষিনা ও ঝুড়ি ঝুড়ি ফলদান। তিনি নব কৃষ্ণের বাড়িতে পশুবলি সহ পুজো দিয়েছিলেন শোনা যায়।

বর্তমানে বিভিন্ন বারোয়ারি এবং অধিকাংশ রাজবাড়িতে পশুবলি না হয়ে সন্ধিপুজোয় আঁখ, চালকুমড়ো, শশা প্রভৃতি বলিদান প্রথায় অনুষঙ্গ হিসাবে বলি দেওয়া হয়ে থাকে। শাক্ত পুরুষ মাতৃভক্ত রামপ্রসাদ সেনের এই গানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক- " মেষ, ছাগ, মহিষাদি কাজ কিরে তোর বলিদানে/ তুই জয় কালী জয় কালী বলে বলি দাও ষড়রিপুগনে।" অবলা পশুদের হত্যা করে পুজো- মা কখনই তা চায় না।  আসুন, আসন্ন দুর্গাপূজায় শপথ করি প্রাণী হত্যা করে পুজো আমরা কখনোই দেব না। এই প্রথায় আমরা ঘোরবিরোধী। তথ্য সংকেত- সুমিত তালুকদার

2 months ago
Celebration: ১৫ই অগাস্ট শপথের দিন

সৌমেন সুর: গৌরী কর্মকার। একটা নাম, একটা আবেগ। একটা নক্ষত্র। এত প্রতিভার মানুষ খুব কমই দেখা যায়। গৌরী ক্লাস সেভেনে পড়ে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। সুবারর্বন অঞ্চলে গৌরী থাকে। বিধবা মা ছাড়া সংসারের ওর আর কেউ নেই। কিছু কিছু মানুষ প্রতিভা নিয়েই জন্ম নেয় এই পৃথিবীতে। গৌরী তাদের মধ্যে একজন। যেমন লেখাপড়ায় তেমনি আঁকায় তেমনি কবিতা লেখায়। গৌরী এরমধ্যে শ'দুয়েক ছবি এঁকে ফেলেছে। তার আঁকা দেখে মনে হবে এই ছবি যেন কোন এক বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা। অঞ্চলের এক শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে ওর ছবি ক্যালিফর্নিয়ায় প্রদর্শিত হয়। সেখান থেকে খবর আসে ওর ছবি দর্শকদের ভালো লাগছে। এত কম বয়সে এত ট্যালেন্ট এটা দেখে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষ একটা প্রশংসা পত্র পাঠায়। গৌরীর মা সেটা যত্ন করে বাঁধিয়ে রাখেন ঘরে। পাড়া-প্রতিবেশী, বাইরের লোক সবাই গৌরীকে স্নেহ করে, ভালবাসে।

গৌরী প্রতিবছর ১৫ ই অগাস্ট একটা সাদামাটা অনুষ্ঠান করে। এই অনুষ্ঠানে দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বই-খাতা, পেন বিতরণ করে। গৌরী ও তার বন্ধুরা কোনরকম চাঁদা না তুলে,  প্রত্যেকে টিফিনের টাকা জমিয়ে- সেই টাকায় অনুষ্ঠান করে। এবার কেউ যদি স্বেচ্ছায় ডোনেট করে সেটা গ্রহণ করে। গৌরীরা চার বন্ধু। এরা চারজনই মেধাবী,  কর্মঠ। গৌরী এদের লিডার। দেখতে দেখতে ১৪ ই অগাস্ট এসে যায়। গৌরী ও চার বন্ধু মিলে ১৫ ই আগস্ট এর জন্য ফ্ল্যাগ কিনতে বেরোয়। সকাল সকাল চলে আসে, বড় রাস্তার দোকানে। একটা স্লিকের ফ্ল্যাগ কেনে। ফ্ল্যাগ কেনার পর গৌরী তিন বন্ধুকে বলে লজেন্স আর চকলেট কিনে মাঠে চলে আসতে। সবাই স্থান ত্যাগ করে।

গৌরী এক বুক আনন্দ নিয়ে ফ্ল্যাগটা ডান্ডায় ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে ফ্ল্যাগের দিকে তাকিয়ে। স্বাধীনতার পতাকাটা হাওয়ায় পত পত করে উড়তে থাকে। কিছুটা এগোতেই একটা বাইক অসাবধানতাবশত গৌরীকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। গৌরী ছিটকে লুটিয়ে পড়ে। ও দেখছে- উঁচু থেকে পতাকাটা নীচে নামছে। যন্ত্রণার কথা চিন্তা না করে, এক অদম্য শক্তিতে উঠে দাঁড়িয়ে ফ্ল্যাগটা হাতে ধরে ফেলে। মাটির নোংরা স্পর্শ করতে পারেনা পবিত্র পতাকাকে। এ দৃশ্য দেখে জড়ো হওয়া সব মানুষ গৌরীকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। গৌরীর শুকনো মুখে কষ্টার্জিত হাসি ফুটে ওঠে। এমন সময় দূর থেকে মাইকে ভেসে ওঠে দেশাত্ববোধক গান- "হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির নাহি ভয়....।"

স্বাধীনতার মান রক্ষার দায়-দায়িত্ব সমস্ত নাগরিকের। স্বাধীনতার ৭৬ বছরে কি পেলাম আর কি পেলাম না- সেই হিসাবে না গিয়ে, আসুন আমরা সবাই মিলে ১৫ ই অগাস্ট  শপথ করি, আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো।

2 months ago


Independence: স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির অবদান

সৌমেন সুর: বাংলার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, বাংলাতেই শুরু হয়েছিল ভারতের নবজাগরণ। রাজা রামমোহন রায় প্রথম নবচেতনার উদ্বোধন করেছিলেন। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র 'বন্দেমাতরম' মন্ত্র দিয়ে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এরমধ্যে সিপাহী বিদ্রোহ, নীলচাষ বিদ্রোহ, স্বাধীনতার আকুতিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে বাঙালি সেদিন পরাধীনতার জ্বালাকে প্রকাশ করেছিল।

১৯০৫ সাল। লর্ড কার্জন বাংলা ভাগ করতে চাইলেন। বাঙালি প্রতিবাদ জানালো। সভা,  সমিতি, মিটিং, মিছিলের প্রতিবাদ আরও গর্জে উঠল। এখান থেকে বাংলার মুক্তি সংগ্রাম শুরু। কবিরা কবিতা রচনা করলেন, ও দেশাত্মবোধের গান। অন্যদিকে স্বদেশী আন্দোলনের সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন জননায়ক। বহু মানুষকে তিনি স্বদেশী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে তিনি 'রাখি' পরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪২-৪৩ সাল পর্যন্ত বাংলার মুক্তি সংগ্রামের দ্বিতীয় ধাপ। মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন, লবণ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন বাঙালি দেশ প্রেমিকের সহযোগিতায় এক অন্য মাত্রা নেয়। ১৯৩০ সালে অবিভক্ত বাংলায় চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম। তৈরি হয় স্বদেশী সরকার। ১৯৩৯ শে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। গান্ধীজীর সঙ্গে নেতাজির মতের অমিল হয় নেতাজি দেশ ছাড়েন। ছাড়লেন কংগ্রেস। ১৯৪২ এর ৯ই অগাস্ট গান্ধীজী 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের ডাক দিলেন। পরের দিনই মহাত্মা গান্ধী সহ অনেক নেতার কারাবরণ হয়। শুরু হয় দেশ জুড়ে গণ বিপ্লব। তমলুকে মাতঙ্গিনী হাজরা ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতে নিহত হন। প্রথম শহীদ হন ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। ওদিকে দেশের পূর্ব সীমান্তে নেতাজীর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান। একেবারে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি আক্রমণ।

স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঘা যতীন, বিনয়-বাদল- দীনেশ, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনী, রাজবিহারী বসু, চারুচন্দ্র বসু,কল্পনা দত্ত, সুশীল সেনগুপ্ত, বসন্ত বিশ্বাস, এমনকি আরও কত বিপ্লবী বাঙালি নিজের প্রাণকে আহুতি দিয়েছিলেন তার অন্ত নেই। ১৯৪৭ সাল স্বাধীনতা এলো। তবে এই স্বাধীনতার অন্যতম দুই শরিক বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করে দিল চতুর ইংরেজ। এ এক নজির বিহীন অপমানিত ইতিহাস। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য। এবং এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সিংহভাগই বাঙালি।

2 months ago
Special story: আমরা সভ্য, না অসভ্য-কোনটা!

সৌমেন সুর: এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনায় নেমেছি- এক একসময় মনে হয় আমি কোন জগতে বাস করছি! সামান্য নিম্নবর্ণের মানুষ নদীতে স্নান করেছে বলে সেই নদীর জল অপবিত্র হয়ে গেছে। তাই তাকে উচ্চবর্ণের মানুষ অমানুষিকভাবে বাঁশপেটা করলো। বাঁশ নিয়ে যত শক্তি আছে শরীরে সেটা প্রয়োগ করা হলো। এটা সভ্যজগতের কাজ? আমরা বড়াই করি-সভ্যজগতে বাস করি, আমরা সভ্য। আসলে আমরা এখনো অসভ্য। কারণ আমরা এখনো দাঙ্গা লাগাই, দাঙ্গাই অংশ নিই। কুসংস্কারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, নিষ্পাপ শিশু কিশোরকে ধর্ষণ করি বর্বরোচিতভাবে। অদ্ভুদ এক সমাজে বাস করছি। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিষয়-জাতিভেদ। 

কোনো শিশু জন্মাবার সময় কোনো প্রতীকচিহ্ন নিয়ে জন্মায় না। কারণ সব মানুষই একটি জাতি। তাহলে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বমানব এক জাতি। মানুষ মাত্রই এক জাতি, এই ধারণা জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা বিভাজনের খেলায় মেতে সমাজে অসংখ্য জাতির প্রাচীর তুলে দিয়েছি। ঋগবেদের যুগে জাতিভেদ বলে কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে জাতি হয়ে ওঠে জন্মসূত্রে অর্জিত সামাজিক স্তর। অধ্যাপক ব্যাসামের মতে, ষোড়শ শতকে পোর্তুগীজরা হিন্দুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উপজাতিতে চিহ্নিত করে। সেই সময় থেকে 'Caste' শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কুসংস্কার মানুষের মনের জমিতে এমন গভীরে শিকড় চালিয়ে দেয়েছে যে, আজও জাতপাতের ভিত্তিতে সামাজিক অবিচার, অনিয়ম। কবি নজরুল একে 'জাতের নামে বজ্জাতি সব' বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। মানুষের কুসংস্কারকে আরও প্রশয় দিয়েছে ব্রিটিশ শাসক। কারণ এটা জিইয়ে থাকলে ওদের দিকে তাকাবার সময় থাকবে না। এদিকে মানুষের মুখটাকেও ঘুরিয়ে দেওয়া গেল। কালের চক্রে এটাই চলছে বর্তমানে। বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে জাতিভেদের চিন্তাভাবনা প্রবেশ করায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। স্বাধীনোত্তর যুগে জাতপাত নিয়ে কতবার যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। রাজনীতি থেকে জাতপাতের ভাবনাকে বিসর্জন না দিলে, জাতির সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।  

2 months ago