Breaking News
ED: ফের ইডি হাজিরা এড়ালেন সুকন্যা, 'মণীশ কী করেছে জানি না', জবাব অনুব্রতর      Ayan: শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়নের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বহু পুরসভার চেয়ারম্যানের, তবে কি ইডির ডাক পাবেন তাঁরাও?      Covid 19: ছয় রাজ্য করোনা প্রবণ, এখন থেকেই সতর্ক হতে কেন্দ্রের চিঠি      Bony: 'ভুল হয়ে গিয়েছিল, শুধরে নিলাম', টাকা ফেরতের পর বললেন বনি      Meet: অনুব্রতহীন বীরভূমের দায়িত্বে খোদ মমতা, সংখ্যালঘু সেলেও রদবদল      ED: কুন্তলের থেকে নেওয়া টাকা ইডিকে ফেরালেন বনি, সোমাও একই পথে হাঁটলেন      KIFF: কুন্তল প্রযোজিত ছবির স্ক্রিনিং কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে, টাকা সাদা করার ফন্দি?      DA: মার্চেই কেন্দ্রের আরও একদফা ডিএ ঘোষণা, কত বাড়তে পারে মহার্ঘ ভাতা?      Nabanna: শাহরুখের জায়গায় বাংলা পর্যটনের নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর দেব      Mamata: আদালত অবমাননার অভিযোগে মমতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন     

Special

Mirabai: মহা সাধিকা মীরা (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: রাস্তা দিয়ে বিয়ের শোভাযাত্রা দেখে রাজকুমারী চোখের পলক পড়ে না। সোজা মায়ের কাছে আবদার করে, 'মা আমার বর কই।' মা পড়লেন মহাফ্যাসাদে। কী করে মেয়েকে শান্ত করাবেন। অবশেষে মেয়েকে ধরে সোজা ঠাকুরঘরে এসে গিরিধারী লাল কে দেখিয়ে বলেন,' এই যে তোমার বর মেঘে তারিখে দেখে আপ্লুত হয়ে যায়।'

এরপর স্বয়নে স্বপনে কৃষ্ণ ছাড়া অন্য কিছু ভাবনা নেই মীরার। মীরাবাঈ কৃষ্ণের প্রিয়তমা মহাসাধিকা। চির জনমের মতো কৃষ্ণকে স্বামীরূপে বরণ করে নেয় মীরা। তার জগৎজুড়ে শুধু শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যার সৃষ্টি সেই গিরিধারী লাল তার স্বামী, মীরার একমাত্র ইষ্ট হয়ে উঠল কানাহাইয়া।

১৫১৬ সালে ১৩ বছর বয়সে মীরার বিয়ে হয় মেবারের রাজা রানা শঙ্খের ছেলে ভোজরাজের সঙ্গে। কিন্তু মীরার বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। তিনি হৃদয়ে শ্রী কৃষ্ণের আসনে কাউকে বসাতে পারেননি। চললো মানসিক অত্যাচার। নির্দেশ এলো রাজ পরিবারের ঐতিহ্য মেনে চলতে।

কিন্তু মীরা তার সিদ্ধান্তে অটল। কৃষ্ণের ভজন, পূজন ছাড়া তার অন্যকিছু ভালো লাগে না। এর মধ্যে মীরার জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তার স্বামী মোঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়। এতে মীরার জীবনে যা কিছু ছিল অনিত্য সব শেষ। একমাত্র চিরনিত্য রইলেন গিরিধারীলাল। সব বাঁধা ছিন্ন করে মীরা কৃষ্ণ প্রেমে নিজেকে সঁপে দিলেন।

রাজ অন্তপুরে মীরা যখন সাধন ভজনে বাধাপ্রাপ্ত হলেন, তিনি তখন নিকটবর্তী এক দেবালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানেই সাধনায় মগ্ন হলেন। মীরার মন চঞ্চল হয়ে উঠলো। এ রাজ্যে কেউ তাকে চায় না। একমাত্র আশ্রয় তার গিরিধারীলাল। তার জন্য অন্য কোনো আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই। আপন মনে ধ্যান করতে করতে কখন যেন একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। (চলবে)

3 weeks ago
Luchi: 'লুচি তুমি চিন্তনে মননে, বাজিমাত হয় তোমার স্মরনে'

সৌমেন সুর: প্রথমে লুচি শব্দটি কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে একটু ব্যাখ্যা করি। লুচি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত রুচিক থেকে, যার অর্থ খেতে ভালো। লুচির সঙ্গে বাঙালির প্রাণের যোগ অস্বীকার করা যায় না।

ঠাকুরবাড়ির দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, 'আমার লুচি ঘিয়ে না ভেজে জলে ভেজে দাও।' লুচির স্বাদ যেন অমৃত সমান। রবীন্দ্রনাথ পেনেটির বাগানে লুচি খেয়ে আমাদের জানান, 'সকালবেলায় এখো গুড় দিয়ে যে বাসি লুচি খাইতাম, নিশ্চয়ই স্বর্গলোকে ইন্দ্র যে অমৃত খাইয়া থাকেন, তাহার সঙ্গে তার স্বাদের বিশেষ কিছু পার্থক্য নাই।' লুচির কদর সর্বত্র।

লুচি খেতে ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুব কমই মেলে। পিকনিকে লুচি, শিকারে লুচি, বিয়েবাড়িতে সকালে হাজিরা দিতে পারলে লুচি মাস্ট। একটা জায়গায় লুচির বর্ণনা করা হয়েছে শুনলে জিভে জল আসতে বাধ্য। 'ঘিয়ে ভাজা তপ্ত লুচি, দুচারি আদার কুচি/ কচুরি তাহাতে খান দুই। /ছোঁকা আর শাক ভাজা মতিচুর বোঁদে গজা/ফলারের যোগার বড়ই।'

লুচি একই সঙ্গে সাত্ত্বিক ও রাজসিক। মানে কোন ব্রতে উপবাসভঙ্গে যেমন লুচি, তেমনি লুচি দিয়ে কষা মাংস লা জবাব। লুচি নিছক একটি রসনা বিলাস নয়, লুচি দিয়ে চিহ্নিত করা যায়, বাঙালি সমাজের শ্রেণীবিন্যাস, হদিশ পাওয়া যায় অনেক জটিল কূটনীতির।

তবে ইদানিং একদিকে কোলেস্টেরল, অন্যদিকে চাওমিন, পাস্তা পিজ্জার ধাক্কায় হিন্দু কী মুসলমান, সব বাঙালিই দেখছি আজকাল বেলুচিস্তানের বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন। আর বাংলা সাহিত্য তাই বোধহয় কনটেন্টে না হোক খাবার দাবারের বর্ণনায় এখন সত্যি সত্যিই আন্তর্জাতিক, লুচি সেখানে ব্রাত্য।

3 weeks ago
21 February: ভাষা আন্দোলনে আজ কোথায় বাঙালি, জানুন বিশ্লেষণ

প্রসূন গুপ্ত: ২১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার সব খবর বাদ দিয়ে বোধকরি ভাষা দিবস স্মরণের দিন। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো দিন, এমনটাই সোমবার রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সেই পুরাতন অথবা চিরকালীন গান গেয়ে চলেছে বাংলাদেশের আপামর নাগরিক। ৭১ বছর হয়ে গেলো উর্দু ভাষাকে সরিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার আত্মত্যাগের দিন। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সৃষ্টিই হয়েছিল ওপার বাংলার ভাষা বাঁচাও আন্দোলনের ফলে।

এখন সমগ্র বিশ্ব আজকের দিনটি নিজ নিজ ভাষার জন্য নতুন করে নিজের দেশে পালন করে। ভারত ভাগ হওয়ার ফলে পাকিস্তানে চলে গেলো এদেশের মুসলিমরা এবং উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে পাঞ্জাব ও বাংলার হিন্দু কিংবা শিখরা চলে আসলো ভারতে। পাকিস্তানে কি সংস্কৃতি রইলো অন্য কথা কিন্তু ব্যথিত হলো উদ্বাস্তু দুই বাংলার মানুষরা।

ওপার বাংলা থেকে যেমন বহু হিন্দু ভারতে চলে এসেছিলো তেমনই হাজার হাজার মুসলিম উদ্বাস্তু হয়ে চলে গিয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানে, যাদের অনেকেরই ভিটেমাটি ছিল কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায়। এই ভাঙন বোধহয় আম নাগরিক কেউই চাইনি। তাই বাঙালি বিভক্ত হয়ে গেলো দু'ভাগে। আজকের বাংলাদেশ কিন্তু পাকিস্তান মুক্ত। তারা আজ গর্বিত বাঙালি। তাদের জাতীয় ভাষা বাংলা এবং সমস্ত সরকারি কাজ হয়ে থাকে বাংলা এবং ইংরেজিতে। অন্যদিকে এই বাংলা কিন্তু ভারতের অঙ্গরাজ্য। এ রাজ্যের ভাষা বাংলা হলেও এবং এদেশে কোনও জাতীয় ভাষা না থাকলেও যুগ যুগ ধরে সরকারি বা বেসরকারি কাজ বা সইসাবুত হয়ে থাকে ইংরেজি ও হিন্দিতে সেখানে বাংলা ভাষার আলাদা কোনও স্থান আছে কি?

তবে এটাও সত্যি যে আজকেও ও দেশে রবীন্দ্রনাথ থেকে সাহিত্য সংস্কৃতিতে বাংলা যতটা বাধ্যতামূলক তেমন এ রাজ্যে কোথায়? খোদ কলকাতা ভরে গিয়েছে হিন্দিভাষীতে, তারা বাঙালির সঙ্গে কথা বলে হিন্দিতে উত্তরও পায় তাতেই যা কিনা দক্ষিণ ভারতে বা পাঞ্জাব বা ওড়িশা অথবা গোয়াতে চলে না। সর্বধর্মের মানুষ যেমন থাকবে তেমন বহু ভাষাভাষীও থাকবে কিন্তু তার মাঝেই এ বাংলার রাজধানী থেকে বাংলা কেমন সতীনের সন্তান।

4 weeks ago


Cartoon: কার্টুনের ১৫০ বছরের ইতিহাস এবং রূপান্তর

বাংলা শিল্প ও সাহিত্যের আঁতুড়ঘর হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। প্রথমে বলি, কার্টুন শব্দটি এসেছে ইতালীয় 'কারতন' শব্দ থেকে। মূলত এই শব্দ থেকেই কার্টুন শব্দের উৎপত্তি। কার্টুনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় কত গভীর আমার জানা নেই। তবে ওই রসের প্রকাশ দেখতে পাই প্রাচীন নাটকে ও ভাস্কর্যে। বাঙালি শিল্পে, সাহিত্যে, গানে, বিজ্ঞানে উন্নত হলেও এই শিল্পকে তেমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেনি। তবু বলব জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবন ঠাকুরের হাত ধরে এই শিল্পের পথ চলা শুরু।

বাঙালিকে যদি কেউ সত্যি সত্যি এডিটোরিয়াল কার্টুনের স্বাদ দিয়ে থাকেন তবে তিনি হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী ওরফে পিসিএল। উনার বিশ্লেষণের ধার এতটাই ধারালো ছিল যে সেই সময় সমাজে হাসতে হাসতে হুল ফোটাতেন। কাফি খাঁ, পিসিএল একই আর্টিস্ট ছদ্মনামের আড়ালে যুগান্তর, অমৃতবাজার পত্রিকার পাতায় পাঠকদের জমিয়ে রাখতেন। সে সময় মানুষ মুখিয়ে থাকতেন জনপ্রিয় কার্টুন দেখতে। বাংলা কার্টুন জগৎ বাঙালিকে কেবল সেই সময় নয়, আজও রসেবসে ডুবিয়ে রেখেছেন, তিনি হলেন সুকুমার রায়। শুধু ছবি আঁকা নয় তাঁর ক্যারিকেচার ছিল বিশ্ব মানের।

যারা বাংলার বুকে স্থান করে নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম চন্ডী লাহিড়ী, অমল চক্রবর্তী, রেবতী ভূষণ, এস কুট্টি প্রমুখ।  ১৫০ বছরে পা কার্টুনের। বর্তমানে এসে গেছে মুঠো খবরের দিন। আমি নিশ্চিত বাঙালি মুঠো ভরে ছড়িয়ে দেবে তার হাস্যরস সারা দুনিয়ার বুকে। তথ্যঋণ: সেন্টু 

4 weeks ago
Vivekananda: বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা, জানুন সেই কাহিনী

সৌমেন সুর: বিবেকানন্দ শিক্ষা চিন্তার মূলে রয়েছে বাস্তবতার প্রেক্ষিত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জনগণের সার্বিক দুরাবস্থার একমাত্র প্রতিকার করতে পারে যথার্থ শিক্ষা। তিনি বলছেন, এমন শিক্ষা চাই যাতে ভেতরে নিদ্রিত শক্তি জাগ্রত হয়। ভিতরে শক্তিকে তিনি বলেছেন ধর্ম। বিবেকানন্দ উক্ত ধর্মকে বলেছিলেন শিক্ষার ভিতরকার জিনিস। তার ভাষায় ধর্মটা যেন ভাত, আর সবগুলো তরকারি। শুধু তরকারি খেলে হয় বদহজম, শুধু ভাতেও তাই।

অর্থাৎ শিক্ষাকে প্রথমে ধর্মমুখী হতে হবে। না হলে সব কিছুই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বিবেকানন্দ কথিত ধর্ম কোন রিচুয়াল আচারসর্বস্ব পুজোআচ্চা নয়। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে যে অনন্ত শক্তি নিদ্রিত আছে, তাকেই তিনি ধর্ম বলেছেন। ধর্ম হচ্ছে মানুষের ভিতরে যে ব্রহ্মত্ম প্রথম থেকে আছে, তারই প্রকাশ। আর শিক্ষা মানুষের ভিতরে যে পূর্ণতা প্রথম থেকেই বিদ্যমান, তার প্রকাশ।

অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে মানুষের ভেতর যে অনন্ত শক্তি আছে, তার পূর্ণ প্রকাশ হলো আমাদের প্রকৃত শিক্ষা। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে শুধু দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ হয় না, জীব থেকে মানব, মানব থেকে মহামানব এবং শেষ পর্যন্ত দেবত্বের পূর্ণ প্রকাশ ঘটে।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এখানে গোড়ায় গলদ। ভিতরের অনন্ত শক্তি জাগানোর বিজ্ঞানসম্মত প্রয়াস আজও অবহেলিত। বিবেকানন্দ বলছেন, মানুষের ভিতরেই সব কিছু আছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে মানুষ যতটা জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে ততটাই আবিষ্কার করে।

যে যত নিজের মনের আবরণ উন্মোচন করতে পারে সে ততখানি শিক্ষিত। স্বামীজি আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা দিতে বলেছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি আত্মনির্ভরতার চর্চা না থাকে, তাহলে মানুষের ভেতরে বাসা বেঁধে থাকা সুপ্ত লোভ কখনই প্রশমিত হবে না। বিবেকানন্দের কাছে ধর্ম হলো মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত পূর্ণ শক্তির প্রতীক। সে পূর্ণ শক্তি সম্পূর্ণ প্রকাশ হলো শিক্ষা।

তথ্যঋণ: স্বপন কুমার ঠাকুর

4 weeks ago


Story: প্রথম দূরবীন তৈরির কারখানা

সৌমেন সুর: বোলপুর শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য আশ্রমের অধ্যাপক জগদানন্দ রায় আকাশ পর্যবেক্ষক রাধাগোবিন্দ চন্দ্রের কাছে একটি চিঠি লিখেন। সেই চিঠি থেকে হুগলির একটি দূরবীন তৈরীর প্রতিষ্ঠানের হদিশ মেলে। হুগলি প্রতিষ্ঠানের ধর এন্ড ব্রাদার্সের পুরো নাম ছিল এস কে ধর এন্ড ব্রাদার্স। বস্তুত এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতের প্রথম দূরবীন প্রস্তুতকারক।

ধর অ্যান্ড ব্রাদার্স সম্পর্কে বলা যায়, এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হুগলির ঘুটিয়া বাজারের নগেন্দ্রনাথ ধর। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স-সহ উদ্ভিদবিজ্ঞানে এমএ। এরপর আইন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে আইনজীবী হন এবং পরবর্তী সময়ে জজ সাহেব হিসেবে বিভিন্ন শহরে উচ্চপদে চাকরি করেন। সুযোগ্য রাজ কর্মচারী ছিলেন বলেই তখনকার ইংরেজ সরকার তাকে রায়বাহাদুর সম্মান প্রদান করেছিলেন। ১৯২৬ সালে হাভার্ড মানমন্দির রাধা গোবিন্দকে একটি দূরবীন উপহার দিলে, এর স্ট্যান্ড তৈরির জন্য রাধাগোবিন্দ দূরবীনটি হুগলির ধর অ্যান্ড ব্রাদার্সে পাঠালেন।

দূরবীনটি দেখে নগেন্দ্রনাথ যে কী পরিমান আনন্দ পেয়েছিলেন, তা জানা যায় তাঁর লেখা একটা চিঠি থেকে। চিঠিতে মহানন্দে প্রাপ্তি স্বীকার করেছিলেন। বলাবাহুল্য যত্নের সঙ্গে দূরবীনটির জন্য একটি ইক্যুইটোরিয়াল স্ট্যান্ড তৈরি করে নগেন্দ্রনাথ, রাধাগোবিন্দকে পাঠিয়েছিলেন। ধর অ্যান্ড ব্রাদার্সের তৈরি দূরবীন সেকালে সেন্ট জেভিয়ার্স, প্রেসিডেন্সি, হুগলি কলেজের মতো এদেশের বহু কলেজ ও দেশীয় রাজাদের লাইব্রেরীতে স্থান পেয়েছিল। এবং শত শত শিক্ষার্থীর প্রয়োজনে মিটিয়ে ছিল। এছাড়া কুচবিহার মহারাজ, গায়কোয়াড় মহারাজ এবং রবীন্দ্রনাথের মতো গুণগ্রাহীরা হুগলির কারখানায় তৈরি দূরবীন সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা প্রদর্শনীতে ধর অ্যান্ড ব্রাদার্স, দূরবীন তৈরিতে স্বর্ণপদক লাভ করেছিল। দুঃখের কথা বহু বাঙালি প্রতিষ্ঠানের মতই ধর অ্যান্ড ব্রাদার্স দূরবীন তৈরি সংস্থার কোন অস্তিত্ব আজকের দিনে নেই। ১৯২৯ সালে নগেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরেই এ দেশে তৈরি প্রথম দূরবীন কারখানাও অস্তমিত হয়। তথ্যঋণ: রণতোষ চক্রবর্তী

a month ago
Abanindranath: যাত্রাপালা লেখায় ও অভিনয়ে অবনীন্দ্রনাথ (শেষ পর্ব)

রবীন্দ্রনাথ নিজে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যাত্রাপালা লেখা নিয়ে উৎসাহ দিয়ে ছিলেন। তখন অবন ঠাকুর মন পালা লেখার নেশায় মত্ত। তিনি একটা করে পালা লিখতেন আর নাতি-নাতনিদের পড়ে শোনাতেন। নাতি-নাতনিরা খুব খুশি হত। এভাবেই অবনীন্দ্রনাথের দিন কাটতো। ছবি আঁকায় তার মন বসছিল না। কেউ ছবি আঁকার কথা বললে তিনি খুব বিরক্ত হতেন।

যখন রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখা নাটক মঞ্চস্থ করতেন, তখন মঞ্চসজ্জা থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাজসজ্জার ভার পড়তো অবনীন্দ্রনাথের উপর। নিজে অভিনয় করতে গিয়ে সব সময় কমিক চরিত্র করতে ভালোবাসতেন। কমিক চরিত্রে এতো ভালো অভিনয় করতেন, যার জন্য রবীন্দ্রনাথ ওর কথা ভেবে নাটকে একটি কমিক চরিত্র তৈরি করে রাখতেন। অবনীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালের দিকে রামকাহিনী থেকে নানান খন্ড চিত্র নিয়ে পালা লিখতে শুরু করেন। ১৯২৬-২৭ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শুরু করেন।

একে অপরের বিপরীতে এলেন। আবার রবীন্দ্রনাথই, অবনীন্দ্রনাথকে লেখার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। ১৯৩৮ সাল থেকে অবন ঠাকুরকে ছবি আঁকায় আবার ফিরতে দেখা গেল। ১৯৩০ সালে প্যারিসে তাঁর প্রথম ছবি প্রদর্শন এবং পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছবির প্রদর্শনী হয়। শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ লেখা থেকে গেলেন ছবি আঁকাতে আর অবনীন্দ্রনাথ ছবি আঁকা থেকে গেলেন যাত্রাপালা-নাটক লেখাতে।

কবিকঙ্কন চণ্ডী, কৃষ্ণ লীলা সিরিজে আমরা দেখতে পাই একেবারে ভিন্ন অবনীন্দ্রনাথকে। উচ্চমার্গীয় শিল্প ভুবন ছেড়ে তিনি নেমে এসেছেন একেবারে নিম্নবর্গীয় মানুষের লোকশিল্পের জগতে। তাঁর লেখার ভুবন এসে মিলেছে যেন ছবির ভুবনে। অবনীন্দ্রনাথ মানব হৃদয়কে একবার ছবি দিয়ে অনুভূতি জাগানোর যেমন চেষ্টা করেছেন, তেমনি অভিনয়ের মাধ্যমেও চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো।

a month ago
Abanindranath: যাত্রাপালা লেখায় ও অভিনয়ে অবনীন্দ্রনাথ (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: অবনীন্দ্রনাথের বিশেষ ক্ষমতা ছিল নানাবিধ বানানো গল্প দিয়ে ছোটদের আবিষ্ট করে রাখবার। এই ক্ষমতা দেখে রবীন্দ্রনাথ একদিন তাঁকে ডেকে বললেন, 'অবন তুমি লেখ না কেন? যেমন করে মুখে মুখে গল্প বানিয়ে ছোটদের বলো, তেমন করেই লেখো।' অবনীন্দ্রনাথ বললেন, 'আমি কি আর লিখতে পারবো। বানান-টানানের ঠিক নেই।' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'সে আমি দেখে দেব, তুমি লেখো।' একদিন এভাবেই আবির্ভূত হলেন বাংলা সাহিত্যে আর এক ঠাকুর। ছবির মতো গল্প লিখে যাওয়া অবন ঠাকুর। একে একে 'শকুন্তলা','ক্ষীরের পুতুল', 'নালক', 'রাজকাহিনী','বুড়ো আংলা' প্রভৃতি। মূলত ছোটদের জন্য লেখা।

যাত্রাপালা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উৎসাহ দিয়েছিলেন অবন ঠাকুরকে। এরপর লেখায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিশির ভাদুরি আসতেন অবন ঠাকুরের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে পরামর্শ করতে। ঠাকুরবাড়িতে বসতো চাঁদের হাট। অবনীন্দ্রনাথের যাত্রা দেখে রবীন্দ্রনাথ প্রচুর প্রশংসা করতেন। 'বাল্মিকী প্রতিভায়' রবীন্দ্রনাথ হয়েছিলেন বাল্মিকী আর অবন ঠাকুর হয়েছিলেন ডাকাত। এরপর ডাকঘরে সেজেছিলেন মোড়ল। সাড়া ফেলে দেওয়া সেই অভিনয়, মানুষ দেখেছিল এক অসাধারণ অভিনয়। সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, ব্যথা-বেদনা উদাসী নয়নে হতচকিত হয়ে চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ।

গলা ভারী করে ভ্রু কুঁচকিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, তা দেখে দর্শক আসনে যারা থাকতেন তাঁদের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। এমনই অভিনয়ে মাতিয়ে রাখতেন অবনীন্দ্রনাথ। (চলবে)

a month ago


Special Story: সৃষ্টির সব পর্বেই রয়েছে ভগবানের স্পর্শ (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: স্রষ্টা সৃষ্টির আদি সময়ে যেমন তিনি পূর্ণরুপে বিরাজমান ছিলেন, তেমনি সৃষ্টির এই নিত্যপথ চলার মধ্যে দিয়ে নিজেরই মহিমায় হয়ে রয়েছেন আপ্লুত। আত্মাই ছিলেন একমাত্র বিরাজিত সমগ্র সৃষ্টির প্রথমে। তিনিই অদ্বিতীয় হয়ে সৃষ্টির কর্ম সূচনা করেছেন। তিনি আত্মসচেতনে ভরপুর থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছে জাগ্রত করলেন সৃষ্টির। তিনি ইচ্ছাময় হয়ে উঠলেন, লোকসমূহ সৃষ্টি করলেন। সৃষ্টির সূচনা করলেন ভগবান এই লোকসমূহ দিয়ে। সমগ্র সৃষ্টির কেন্দ্রে স্থাপন করলেন মানবের এই চেতনা।

বিশ্বমাঝে স্বতঃই হয়ে চলেছে ভাঙা-গড়া। জীবনে আসা এবং চলে যাওয়া এবং পিছিয়ে পড়া রয়েছে স্বতঃই প্রকৃতির অনাবিল অবদান। ভগবান স্বয়ং যেন সবই করেছেন নিয়ন্ত্রন। তিনিই ছন্দময় গতিময় হয়ে জীবনকে লালন করে চলেছেন।

জীবন গঠনের জন্য চাই জীবনের দর্শন ও প্রত্যয়। দর্শনটি হতে হবে শুদ্ধ আর বহু ব্যপ্ত। প্রত্যেকের মধ্যে বিরাজ করছে বিপুল সম্ভাবনা। জীবনের সম্ভাবনাগুলো যখন হযে ওঠে কার্যকরী, ক্রমে গড়ে ওঠে ব্যপ্তি। একজন মানুষের জীবন তখন হয়ে ওঠে বহুজনের আশ্রয়দায়ী। একজনের মধ্যে সুপ্ত হয়ে থাকা সম্ভাবনা বিকাশ ক্রমে বহু মানুষজনকে যুক্ত করে দেয়। বৈদিক ঋষিগণ স্বতঃই চেয়েছেন সত্য, জ্ঞান, কর্মের সমন্বয় জীবন মাঝে। সামবেদের ঋষিগণ প্রসঙ্গ আনলেন ভক্তির। ভক্তির অনিবার্য অঙ্গ হলো শ্রদ্ধা-বিশ্বাস-ভালোবাসা। এই সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ভগবৎ প্রেম। এই বন্ধনে বন্দিত হয় ভগবান ও ভক্ত। জীবনের সমস্ত পর্বই ভগবানের স্পর্শ সততই বিরাজমান।

তথ্য ঋণ: রমাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

a month ago
Special Story: সৃষ্টির সব পর্বেই রয়েছে ভগবানের স্পর্শ (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: সৃষ্টির পেছনে বিরাজ করছে স্রষ্টার ইচ্ছে। ভগবানই সৃষ্টির দ্যোতনা এনেছেন। একের পর এক সৃষ্টির পর্ব এসেছে। কোনওটি প্রথমে কোনওটি পরে। এই প্রসঙ্গে ডারউইন থেকে বহুজন ইভল্যুশনের তত্ত্ব দিয়েছিলেন। ডারউইন 'অরিজিন অফ স্পেসিস' একটি সামান্য পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষার দ্বারা অনুমানের উপর দাঁড় করিয়েছেন সিদ্ধান্তগুলি। ছোট্ট দ্বীপের মাঝে ক্ষুদ্র প্রাণের বেড়ে ওঠা আর ধ্বংস হওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রজাতির পরম্পরা ও চরিত্র নির্মাণ করেছেন। বহু সহস্র বৎসর এই বিশ্বাস বয়ে নিয়ে আসছে যে, সমগ্র সৃষ্টিই ভগবানের দান। তিনি পঞ্চভূত রচনা করে প্রকৃতির মাঝে জীবন সৃষ্টি-ধারণ ও লালনের পটভুমি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির আদি রচনার বীজ মহাকাল স্বয়ং দান করেছেন প্রকৃতির পটভূমিতে।

অন্যদিকে জীবনধারনের জন্য ভোগের বাস্তবিক প্রয়োজন রযেছে। বৈদিক সভ্যতার ঋষিগণ এই সিদ্ধান্তে সকলে একমত হলেন যে, মানবের পক্ষে এক সাযুজ্যপূর্ণ জীবন গড়ে তোলার জন্য চারটি বিভিন্ন বিভাগ প্রয়োজন। এই চারটি বিভাগকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছেন ঋষিগণ। এরা হলো ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ। ধর্মই হতে হবে জীবনের ভিত্তি। ঋষিগণ যখন ছাত্র শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন, সেই শিক্ষার মধ্যে অনেকগুলি বিভাগ ছিল। শিক্ষার প্রথম অঙ্গ হলো চেতনার জাগরণ, মনের মালিন্য দূর করে বিশুদ্ধ মনের অধিকারী হওয়া, আর বিশুদ্ধ চরিত্র গঠন। জগতের প্রতি সহনশীল ও জগতের সমস্ত বস্তু প্রাণের জন্য মনের প্রস্তুতি গড়ে তোলা। (চলবে)

a month ago


Middle Class: মধ্যবিত্তের বাজেট কোথায়? কতটা সুরাহা পেলেন আম আদমি, বিশ্লেষণে পরিবহণমন্ত্রী

স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ মন্ত্রী (পশ্চিমবঙ্গ সরকার): শোনা যাচ্ছিলো ২০২৪-কে কেন্দ্র করে অর্থাৎ আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে বোধহয় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তদের সুবিধা হবে কিন্তু তাঁর দিশা কোথায়? ৭ লক্ষ বাৎসরিক আয় থেকে কর ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ যার মাসিক রোজগার ৫৮ হাজার টাকা, প্রশ্ন ক'জন এই রোজগারের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত এটা তো প্রত্যক্ষ করের বিষয় কিন্তু পরোক্ষ কর তো তাকে দিতেই হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমছে কি? প্রয়োজন তো ক্রেতার, কেনবার ক্ষমতা পাচ্ছে কি?

অর্থনীতির প্রশ্নে এই ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট করই আমাদের অনেক সময়ে বোকা বানিয়ে দেয়। বাজেট অর্থনীতির প্রথম পাঠ, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেকোনও শিল্পের  ক্ষেত্রে উৎপাদন তখনই সার্থক হবে যখন ক্রেতার কেনার ক্ষমতা থাকবে। আমাদের প্রথম সংকট কিন্তু পেট্রোলিয়ামজাত বিষয়। করোনা আবহ থেকে যেভাবে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা ভারতের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বলা যেতে পারে। এই মুহূর্তে শতাধিক টাকার বিনিময়ে লিটারপ্রতি পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে, তথৈবচ ডিজেল এবং গ্যাস। উৎপাদিত দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতেই দাম হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর কারণে। অথচ আজও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর দাম ভারতের তুলনায় কম।

কাজেই মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না। পরিবহণমন্ত্রী হিসাবে এটা আমার মস্ত মাথাব্যথার কারণ। সিগারেটের দাম বাড়লো, পাশাপাশি টিভির বা মোবাইলের দাম কমলো, এই দিয়ে কি পেট ভরবে? নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যবের মূল্যহ্রাস হলো কী? এছাড়া ১০০ দিনের কাজের বিষয় কোনও বার্তা কোথায়? ৩৮ হাজার শিক্ষকের নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে ২ কোটি মানুষ কর্মের খোঁজে। কৃষকদের ক্ষেত্রে ছাড়ের বা অর্থলগ্নির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে পরিষ্কার নেই। আপাত দৃষ্টিতে জমজমাট বাজেট মনে হলেও ধোঁয়াশাই রয়ে গেলো বাজেট। (অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত)

2 months ago
Special: অমৃতের স্বাদ নোনতা, জানুন মহিলা কবি কামিনী রায়কে

সৌমেন সুর: উনিশ শতকের মহিলা কবি ও সাহিত্যিক হিসাবে যে স্বীকৃতি তাঁদের প্রাপ্য ছিল, তা তারা পাননি। তৎকালিন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ছিলেন পুরুষদের হাতের পুতুল। শিক্ষা,অধিকার, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা,কিছুই তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। উনিশ শতকে নারীমুক্তি ও নারীশিক্ষা নিয়ে যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়েছিল, তারই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বাংলার নারীরা আপন ভাগ্য জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই সেই সময়ে মহিলা কবি সাহিত্যিকদের কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে ব্যক্তিগত প্রেম, ভালোবাসা, প্রতিবাদ বিষাদ, শোক, আত্মকথা, আশা নিরাশা, প্রার্থনা, সুখ-দুঃখ ও পরাধীনতার মুক্তির বার্তা।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি কামিনী রায়। তিনি যে একদিন কবি হবেন, শৈশবেই তাঁর প্রতিভা দেখে বোঝা গিয়েছিল। মাত্র ৮ বছর বয়সে কবি লেখা শুরু করেন এবং ১৫ বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আলো ও ছায়া' প্রকাশিত হয়। পরাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার শৃংখলামোচনে কবি নিজেকে উৎসর্গ করে লিখেছেন-'মা আমার' কবিতায় - 'সেই দিন ও চরনে ডালিদিনু এ জীবন / হাসি-অশ্রু সেইদিন করিয়াছে বির্সজন / হাসিবার কাঁদিবার অবসর নাহি আর / দুঃখিনী জনমভূমি মা আমার মা আমার।'

কবি জানতেন, আত্মশক্তি মানুষের আসল শক্তি। আত্মবিশ্বাস মানুষের মনে শক্তি যোগায়। তাই তিনি মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস জাগাতে লিখলেন-'হাত পা তো সকলেরই আছে /  সকলের জোর আছে গায় / মাথা পারে সব খাটাতে / কে কাহার অনুগ্রহ চায়।'

জায়গার অভাবে অনেক কথা ছিল-বলতে পারলাম না। তবে শুধু কামিনী রায় নয়, নীরজাসুন্দরী দেবী, তরু দত্ত, স্বর্নকুমারী দেবী আরো অনেকেই উনিশ শতকে যোগ্য সম্মান পাননি।

2 months ago
Special: হারিয়ে যাওয়া এক নক্ষত্র, জানুন নটি বিনোদিনীকে

সৌমেন সুর: আজ আপনাদের কাছে এমন একজন নক্ষত্রের নাম করব, যিনি কালের স্রোতে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই মহিয়সী নারীর অভূতপূর্ব অভিনয়ে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ আশীর্বাদ করে বলেছিলেন,'তোর চৈতন্য হোক।'

বিনোদিনী দাসী। ১৮৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নাট্যকার ও নাট্যশিক্ষক গিরীশচন্দ্র ঘোষ বিনোদিনীকে প্রথম থিয়েটারে নিয়ে আসেন, যখন ওর বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বয়সেই সমগ্র বাংলার বুকে অভিনয় শিল্পে রীতিমতো সাক্ষর রেখে কিংবদন্তী হয়ে পড়েন। সীতা, দ্রৌপদী, রাধা, কৈকেয়ী ও শ্রীচৈতন্য চরিত্রে অভাবনীয় অভিনয় করেন। প্রায় ৮০টি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। বিনোদিনী এত প্রতিভাময়ী হওয়া সত্ত্বেও অমৃতলাল বসু, গিরীশ ঘোষ-এর মতো ব্যক্তিত্বরা বিনোদিনীর মর্যাদা দিতে পারলেন না সমাজের ভয়ে। সেই অবস্থা থেকে গোটা বাঙালি জাতটাই আর উঠে আসতে পারল না।

বিনোদিনীর অভিনয়ের একটি নাটকের সংলাপ ও গান 'হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়'-আজও শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। নটি-বিনোদিনী নামের মধ্যে এমন একটা গভীরতা, সম্মান প্রকট হয়ে পড়ে-যার প্রমাণ, নান্দীকার থিয়েটার তাঁদের 'নটি বিনোদিনী' প্রোডাকশন প্রায় ২০০ রজনী হাউসফুল হয়েছিল। এখনও তাঁর নাম শুনলে মানুষ জড়ো হয় হলে। স্টার থিয়েটার গড়ার পেছনে বিনোদনীর অবদান, ত্যাগ অনস্বীকার্য। আজ ১৫০ বছর পরেও বিনোদিনীর নাম উপেক্ষার আড়ালেই রয়ে গেল। কেন?

2 months ago


Murti: রক্ত-মাংসের সরস্বতী অন্নপূর্ণাদেবী, আল্লাউদ্দিন খাঁ-র মেয়ে! রয়েছে আরও এক পরিচয়, জানেন

সৌমেন সুর: অন্নপূর্ণাদেবী ছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র ছোট মেয়ে। তাঁর আসল নাম রোশনারা আলি। মহারাজা ব্রিজনাথ সিংয়ের রাজসভার প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। মহারাজা উস্তাদের মেয়ের নাম রাখেন অন্নপূর্ণা। যখন এই কন্যার জন্ম হয়, তখন সারাদেশজুড়ে চলছে দুর্ভিক্ষ। সনাতন ধর্মমতে অন্নপূর্ণাদেবী হলেন অন্নদাত্রী। তাই মহারাজা নাম দেন অন্নপূর্ণা। আলাউদ্দিন রাজার দেওয়া নাম বাদ দেননি। তাই তার নাম রওশন আরা অন্নপূর্ণাদেবী। ছোটবেলা থেকেই অন্নপূর্ণাদেবীর সংগীতের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড। এ নিয়ে সংসারে প্রচণ্ড অশান্তিও হয়। সেই সময় রাজদাসী, দেবদাসী, বারাঙ্গনা ছাড়া কোনও সাধারণ নারী সংগীত পরিবেশন করবেন, এ কথা ভাবাই যেত না। অগত্যা আলাউদ্দিন মেয়েকে তালিম দিলেন না।

কিন্তু অন্নপূর্ণা লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়ের তালিম দেওয়া দেখাতেন আর সেটি রেওয়াজ করতেন। পরে আলাউদ্দিন মেয়ের প্রতিভা দেখে, ওকে তালিম দেওয়া শুরু করলেন প্রথমে ধ্রুপদী কন্ঠসংগীতের তালিম, পরে সেতার শেখেন অন্নপূর্ণাদেবী। উস্তাদ আলাউদ্দিনের কাছে সংগীতের তালিম নিতে আসেন রবিশংকর। এখানে অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে রবিশংকরের আলাপ হয়, পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেতার বাজনায় অন্নপূর্ণাদেবীর নাম সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ভালবেসে আনন্দে অন্নপূর্ণাদেবীকে মুর্তিমতী সরস্বতী বলে আখ্যা দেন।

এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই অসম্ভব প্রতিভাময়ী শিল্পীর ঠিকমতো মূল্যায়ন আমরা করে উঠতে পারলাম না। অন্নপূর্ণাদেবী ছিলেন প্রচার বিমুখ। পণ্ডিত রবিশংকরের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকেই তিনি অন্তরালে নিভৃত জীবনযাপন করেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সংগীতানুষ্ঠান করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তবে বদ্ধ জীবনযাপনে তাঁর সাধনা থেমে থাকেনি। দেশের বহু প্রথম সারির শিল্পী তাঁর শিষ্য ছিলেন। যেমন পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, ওস্তাদ বাহাদুর খাঁ, ওস্তাদ আশিস খাঁন, পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া প্রমুখ।

2 months ago
Raj Bhawan: আজ রাজভবনে রাজ্যপালের 'হাতেখড়ি'! আমন্ত্রিতদের তালিকায় কারা

প্রসূন গুপ্ত: সিভি আনন্দ বোস, নতুন রাজ্যপালের তাই নাম। জানা গেলো সিভি আনন্দ অবধি ঠিক আছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় বিশেষ করে কেরালা ও তামিলনাডুর অধিবাসীরা নেতাজি সুভাষকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করেন। ফলে অনেকেরই নাম সুভাষ বা বোস। রাজ্যপালের নাম ওভাবেই এসেছে। আনন্দ বোস একেবারেই ব্যতিক্রমী চরিত্র। উচ্চ শিক্ষিত, বহু বিষয়ে বিস্তর পড়াশুনো এবং দেশের প্রশাসনিক বিষয়ে বহু দায়িত্ব সামলেছেন। বোসের লেখা বহু বই আছে যা কিনা দেশের সম্পদ মনে করেন অনেকেই।

রাজ্যপাল প্রচারের আলোর বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। যা কিনা প্রাক্তন রাজ্যপাল ধনকরের একেবারেই উল্টো পথ। তিনি মনে করেন সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে যখন দায়িত্ব পেয়েছেন, তখন সেই কাজ নিপুনভাবে করা উচিত। এই রাজ্যপাল নিয়োগের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে না জানিয়ে কেন বারবার রাজ্যপাল নিয়োগ করা হচ্ছে। অমিত বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতে মমতাকে জানিয়েছিলেন, ইনি অত্যন্ত কাজের মানুষ এবং প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা করে চলতে ভালোবাসেন, দিদির নিশ্চয় পছন্দ হবে।

বাস্তবিক আপাতত তাই সত্যি হয়েছে। রাজ্যপাল যেমন খুশি এ রাজ্যে এসে, তেমন মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে পেয়ে আনন্দিত। যা কিনা তিনি মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি শিক্ষাবিদ ও সিস্টার নিবেদিতার আচার্য সত্যম রায়চৌধুরীর আমন্ত্রণে গত ২৫ ডিসেম্বর তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যপাল। বিষয় নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্যের শতবর্ষ। সেদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলার তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু শেষ বক্তা হিসাবে রাজ্যপাল মানুষের মন জয় করে নিলেন। তিনি বলেছিলেন, সাহিত্য জানতে গেলে রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে। রবি ঠাকুরের কাবুলিওয়ালার 'মিনি'-কে জেনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর পরিবারের কাছে।

তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র না পড়লে ভারতীয় সাহিত্য অসম্পূর্ণ থাকবে। তিনি জানান, তিনি বাংলা সাহিত্য পড়েছেন ইংরেজি অনুবাদে। কিন্তু আসন্ন ৫ বছরে তিনি বাংলা শিখে তাঁর বহু লেখা বইয়ের মতো বাংলাতেও বই লিখবেন। তিনি আবেদন করেন তাঁকে বাংলা শিখতে এবং বুঝতে সহযোগিতা করতে।

অবশেষে তাঁর সেই প্রচেষ্টা বাস্তবের দিকেই যাচ্ছে। আজ সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় তিনি কোনও পণ্ডিতের কাছে বাংলার 'হাতেখড়ি' নেবেন। অর্থাৎ লক্ষ্য তাঁর বাংলা শিক্ষার দিকে। তাঁর এই অনুষ্ঠানে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং বিদ্বজন। মমতা অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন সপার্ষদ। উপস্থিত থাকবেন বিজেপি, বাম, কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিরা বলে আপাতত সংবাদ। কিন্তু থাকবেন না বলে খবর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভ কাজে রাজনীতি থাকছেই, এই প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে আসছে।

 

2 months ago