সংসদে ঢুকে হানা এবং রঙিন ধোঁয়া ছড়ানোর কাণ্ডে ছড়িয়েছে উত্তেজনা। সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তিতেই নতুন সংসদ ভবনের লোকসভা কক্ষে দুই যুবকের হানা। বুধবারের এই ঘটনার পরেই গ্রেফতার করা হয় চারজনকে। সেই রাতেই আটক হয়েছিল বিক্রম নামে এক ব্যক্তি। তারপর এদের সকলের সূত্র ধরেই উঠে আসে এই ঘটনার মূলচক্রী ললিত ঝাঁর নাম। তারপর গ্রেফতার হয় পঞ্চম ব্যক্তি ললিত ঝাঁ। এরপরেই ললিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দিলি পুলিসের হাতে উঠে আসে একের পর এক তথ্য। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে, রাজস্থানের নাগৌর জেলার বাসিন্দা মহেশ কুমাওয়াতকে। তিনিও ঘটনার দিন দিল্লিতে ছিলেন, পুরো ষড়যন্ত্রের তিনিও এক অংশ।
জানা গিয়েছে, ললিতদের গোটা পরিকল্পনায় তৈরি ছিল দুটি প্ল্যান। যাকে বলে 'প্ল্যান এ' এবং 'প্ল্যান বি'। সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে যদি নীলম এবং অমল ব্যর্থ হতেন, তবে বিক্ষোভ দেখাতেন কৈলাশ এবং মহেশ নামে ললিতের অপর দুই বন্ধু। শুধু তাই না, এই ধোঁয়া কাণ্ডের পর, যাতে সহজেই ললিত রাজস্থানের গেস্ট হাউসে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন, সেই কারণে ঘটনার একদিন আগে থেকেই তাঁর নিজের আইডি দিয়ে রাজস্থানের গেস্ট হাউস বুকিং করে রেখেছিলেন ললিত। জানা গিয়েছে, রাজস্থানের ওই গেস্ট হাউস থেকেই সংসদে ধোঁয়া কাণ্ডে ললিতের সহযোগী সাগর, মনোরঞ্জন, নীলম এবং অমলের মোবাইল ফোন ললিত পুড়িয়ে দেন প্রমাণ লোপাটের জন্য। হার্ডডিস্কের মাধ্যমে প্রমাণ জোগাড়ের জন্য যার ধ্বংসাবশেষ ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিস।
এই ঘটনায় বারবার উঠে আসছে ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব নামে একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপের কথা। এই গ্রুপেই সংসদে হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিস সূত্রে খবর। গত দেড় বছর ধরেই এই পরিকল্পনা চালাচ্ছে ললিত। এমনকি, সংসদের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা নিয়ে বহু দিন ধরে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করছিলেন এই পুরো দল। জেরার পর জানা গিয়েছে, সাতটি স্মোক বম্ব নিয়ে সংসদে ঢোকার পরিকল্পনা করেছিল ললিতরা। দিল্লি পুলিসকে ললিত আরও জানায়, তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা সংসদের ভিতরে ও বাইরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু তা তাঁরা বাস্তবায়িত করতে পারেননি।
সবমিলিয়ে যা বোঝা যাচ্ছে, ললিতকে জেরা করে ধীরে ধীরে খুলছে সংসদের ধোঁয়া কাণ্ডের বহু জট। ধীরে ধীরে বাইরে আসছে পরিকল্পনা ঘিরে আসল তথ্য। ইতিমধ্যেই লোকসভার নিরাপত্তাকে, ঘটনার পর আরও জোরালো করতে ক্যাবিনেট বৈঠক সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে, ললিতদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল সংসদে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ দেখানো। এখন দেখার বিষয়, দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেলের তদন্তে সংসদে ঢুকে হানা এবং রঙিন ধোঁয়া কাণ্ডে আরও কী কী তথ্য বেরিয়ে আসে।