ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের একটি বৈশিষ্ট আছে যে, দলের নেতার বিরুদ্ধে যাওয়ার। একেবারে স্বাধীনতার আগে পরে অসংখ্য উদাহরণ আছে। নেতাজির বনিবনা হয় নি গান্ধীজির সঙ্গে, কাজেই দল ছেড়েছিলেন তিনি। এমন ঘটনা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সঙ্গেও হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে নেহেরুর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন আম্বেদকর। কিন্তু তখন প্রকাশ্যে সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলতেন না। কথা শুরু হলো ১৯৬৯ থেকে, যখন কংগ্রেসের সিণ্ডিকেটপন্থীরা ইন্দিরার উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করলো।
ইন্দিরা দলটাই ভেঙে দিলেন। আবার জরুরি অবস্থার সময়ে অনেকেই দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। ৭৭এ লোকসভায় ইন্দিরা পরাজিত হলে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। এরপর রাজীবের আমলে তো ক্ষমতায় থাকা অধিকাংশ রাজ্যেই গোষ্টিদ্বন্দ্ব প্রবল ছিল। দলটিও ভেঙেছিল। এ রাজ্যে গনি খান, সোমেন মিত্রদের যেমন একটি লবি ছিল তেমন প্রিয়দাশ, মমতাদের অন্য লবি ছিল। এই সংস্কৃতির জন্ম যেমন ইন্দিরার তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর হয়েছিল তেমনটি আজকেও বিদ্যমান। প্রতিটি রাজ্যে কংগ্রেসের একাধিক গোষ্ঠী কোনও না কোনও কারণে একে অন্যের বিরুদ্ধে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলে থাকে। এই সমস্ত কারণে মোদির আমলে বিজেপির কংগ্রেস ভাঙানোটা অনেক সোজা ছিল।
সম্প্রতি কর্নাটকে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে কংগ্রেস। বাংলার পরে বিজেপিকে এতটা পর্যদস্তু হতে দেখা যায় নি কিন্তু তার পরেই শুরু হয়েছে কে মুখ্যমন্ত্রী হবে তাই নিয়ে দ্বন্দ্ব। যদিও সিদ্ধারামাইয়া কংগ্রেসের স্বাভাবিক পছন্দের ছিল কিন্তু বাগড়া দিয়েছিলেন আর এক দাবিদার শিবকুমার। এই শিবকুমার যথেষ্ট বলিষ্ঠ নেতা এবং চিরকাল কংগ্রেস দলটাই করেছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কবলে পরে হাজত পর্যন্ত হয়েছিল তাঁর এবং রেকর্ড ভোট জিতেছেন তিনি। তিনি কর্ণাটকের রাজ্য সভাপতিও বটে। তিনি আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্তও বটে। তিন দিন ধরে দিল্লিতে নানান বাকবিতণ্ডার পর স্থির হয়েছে সিদ্ধারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন এবং শিবকুমার তাঁর ডেপুটি। শনিবার শপথ অনুষ্ঠান। রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও এদিন আমন্ত্রিত। যদিও তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে আসবেন তৃণমূল নেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সে সব তো ঠিক আছে তবে বিজেপি কিন্তু কর্নাটকে ভবিষ্যতের মোহরা পেয়ে গিয়েছে।