মণি ভট্টাচার্যঃ আপাতত কালীঘাটের কাকুর ঠিকানা বেহালা (Behala) ফকির পাড়া নয়। আগামী ১৪ দিনের জন্য কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের ঠিকানা ইডির (ED) হেফাজত। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অভিষেক-কুন্তলের একটা পৃথক মামলায় সিবিআই অস্বস্তিতে রয়েছেন অভিষেক। এবার কালীঘাটের কাকুর গ্রেফতারি। এতে কি কোনও ভাবে অস্বস্তি বাড়াবে যুবরাজ অর্থাৎ অভিষেকের। যদিও এ ঘটনায় বিজেপি সহ বাদবাকি বিরোধী দল গুলি কাকুকে কান স্বরূপ অভিষেককে মাথা হিসেবেই দাবি করছেন। তাঁদের মত কানে টান পড়ছে, এবার মাথার পালা। যদিও এসব তথ্য উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি 'নবজোয়ার'কে ঢাকতেই এই চক্রান্ত।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে ইডির দফতরে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইডি সূত্রে খবর, অভিযুক্ত এই কাকু তাঁর ফোন থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কিত সমস্ত চ্যাট তদন্তের গতি বুঝে উড়িয়ে ফেলতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু আগেই তাঁর মোবাইল গুলি বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই মোবাইলের তথ্য নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা করে সমস্ত কথা তিনি অস্বীকার করেন। এই বিষয়ে উত্তর দিতে চান নি। এছাড়া ইডির সূত্রে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নাম উঠেছে কাকুর ৩ টি কোম্পানির নাম। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল লিপ্স এন্ড বাউন্স। অভিষেকের এই কোম্পানির সিইও ছিলেন কাকু। সে সঙ্গেই এই কোম্পানির জয়েন্ট ডিরেক্টর ছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের পরিবার। অভিযোগ এই কোম্পানি থেকে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
যদিও কালীঘাটের কাকু বা কুন্তল এই প্রসঙ্গে অভিষেকের মুখে কিন্তু অন্য সুর। অভিষেক জানিয়েছেন তিনি কুন্তলকে চেনেনই না। চেনেন না কাকুকেও। সূত্রের খবর, কালীঘাটের কাকু এবং কুন্তল দুজনেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা লেনদেনে যুক্ত বলে দাবি ইডির। অভিযোগ কুন্তলকে পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড দিতেন কাকু। কুন্তল ওই তথ্য দিতেন মানিককে। ওই চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে যেত পার্থ, মানিক ও কাকুর কাছে। গ্রেফতার হওয়ার পর বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তলের মুখে শোনা গিয়েছিল এই কালীঘাটের কাকুর নাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘটনায় কিভাবে জড়িয়ে গেল অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
পূর্বেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তলের চিঠি প্রসঙ্গে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। জেরা শেষে বেরিয়ে এসে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তোপ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা উল্টো। বিজেপির আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারির মতে, 'কালীঘাটের কাকু অভিষেকের যুবা দলের সংঘটক। এই কুন্তল, শান্তনু, এদেরকে বাছাই করে তুলে আনা। আর ওই কোম্পানির মাধ্যমে এই দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হত। আর ভাগ পৌঁছে যেত অভিষেকের কাছেও।' একই দাবি বাম নেতা শতরুপ ঘোষের। শতরুপের দাবি, 'কালীঘাটের কাকু নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম হোতা। মাথা কে সেটা সবাই জানে। তদন্ত ঠিক চললে এর পরে কালীঘাটের ভাইপো, তারপর কালীঘাটের পিসি সব গারদে যাবে।'
যদিও এমন দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পক্ষে কুনাল ঘোষের দাবি, অভিষেকের নবজোয়ারে পরিকল্পিতভাবে হামলা আর এই হামলার দায় চাপতেই এই চক্রান্ত করেছে বিজেপি। পাশাপাশি 'নবজোয়ার' প্রকল্পকে ভয় পেয়েছে বিজেপি। কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে দলের বা অভিষেকের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। তাও স্পষ্ট করেন তিনি।