মণি ভট্টাচার্য: নেহাত লজ্জাই বটে এবং এ লজ্জা সবারই। কথা বলছি রাষ্ট্রের একপ্রান্ত মণিপুর ও অন্যপ্রান্ত মালদহের ঘটনা নিয়ে। না, দুটি ঘটনা আমি গুলিয়ে না ফেললেও, উভয় ক্ষেত্রেই যে আমাদের মানবিকতা ও সমাজতান্ত্রিক অবক্ষয় হয়েছে সেটা বলা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কিছু ঘটনায় প্রশাসন কিংবা পুলিস, এদের কিছুই করার থাকে না, তখন সহায় হয় কেবল মানুষই। যেমন ধরুন এই মালদহ কিংবা মণিপুর। উভয় ক্ষেত্রেই একটি বড় অংশের মানুষ কেবল এই দৃশ্যগুলো দেখেছে, উপভোগ করেছে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে উপভোগ করেনি, তাহলেও তাদের পক্ষে এই ঘটনার দায় এড়ানো অসম্ভব। কারণ তারা হয়তো চাইলেই এই ঘটনাগুলি আমাদের লজ্জার কারণ হওয়া থেকে রুখতে পারত।
দীর্ঘদিন ধরেই অশান্ত মণিপুর। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে একদল যুবক দুটি মহিলাকে যৌন নিগ্রহ করতে করতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সিএন-ডিজিটাল)। যা নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা দেশ। এরপর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও নড়েচড়ে বসেন এবং এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও এ ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এরপরই গ্রেফতার হয় এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত এক যুবক। এরপর ওই যুবকের বাড়ি ঘর ভেঙে পুড়িয়ে দেন স্থানীয় মহিলারাই।
অন্যদিকে, মালদহে লেবু চুরির অপবাদে দুই মহিলাকে ভরা বাজারের সামনে কার্যত জুতোপেটা করলেন মহিলারাই। মারধর করা হল বিবস্ত্র অবস্থায়। সেই অবস্থাতেই পুলিস চুরির অভিযোগে নির্যাতিতা মহিলাদেরই গ্রেফতার করল। এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় এই ঘটনায় জড়িত থাকা পাঁচ অভিযুক্তকে।
কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই। পৃথক ধরনের দুই ঘটনাতেই প্রশাসন ও পুলিস দায় এড়াতে পারে না। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছেই। কিন্তু সমান ভাবে দায়ী ওই মানুষ গুলিও যারা এই দুর্বিসহ অন্যায় হতে দেখেও চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। বাধা তো দেনই নি, বরং অন্যায় দেখে এক প্রকার উল্লাস করছিলেন।
মণিপুরের ঘটনা সামনে আসতেই, যেমন বিক্ষোভ প্রতিবাদ দেখিয়েছে দেশ, তেমনই মালদহের ঘটনা সামনে আসতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য তথা গোটা দেশ। কিন্তু প্রশ্ন কেবল রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসনকে নিক্ষেপ করে বা তীরে বিধে নয়। প্রশ্ন মানবিকতার, প্রশ্ন মানবিক ন্যায়দণ্ডেরও। মনিপুরের ঘটনা কিংবা মালদহের ঘটনা, এই ঘটনায় যারা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কিংবা ওই অন্যায়ের ভিড়ে মিশে গিয়েছিলেন, তারা চাইলেই কি এই ঘটনার রুখতে পারতেন না, হয়তো পারতেন। কিংবা পারতেন না। প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্ন অন্যায় রোখার চেষ্টা করেছিলেন কি! উত্তর যদি না হয়, তবে বিবস্ত্র নারীকে হেনস্তার লজ্জা শুধু রাষ্ট্রের কিংবা প্রশাসনের নয়, লজ্জা আমার এবং আপনারও।