
প্রসূন গুপ্ত: অবশেষে আইএসএল (ISL) ট্রফি জয় করলো শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগান দল। থুড়ি এটিকে মোহনবাগান (Mohunbagan)। যদিও শনিবার রাতেই উল্লাসিত দলের কর্নধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা দলের এটিকে নামটিকে বিদায় দিলেন, এবার থেকে নতুন মোড়কে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস। কিন্তু সাহেবদের ১৯১১-তে পরাজিত করা মোহনবাগান সমর্থকরা চায়, স্বাধীনতার লড়াইয়ে প্রথম ক্রীড়া দল স্বনামেই বিরাজমান হোক।
আরব সাগরের তীরে কাজু আর ফেনির গন্ধে ম-ম করা অথবা চিরকালের বাঁধা না মানা বাঙালির রোমান্টিকতা খোঁজা গোয়া কিন্তু বঙ্গবাসীকে বেড়াতে যাওয়ার বোনাস দিল আইএসএল ট্রফি। পমফ্রেট ফ্রাইয়ে শনিবার রাতে উপস্থিত বাঙালি আনন্দ করতে পারেনি। মন পড়ে রয়েছে মানিকতলা বা মালদা বাজারের গলদা চিংড়ির দিকে। রবিবার বোধহয় ধর্মতলার নিউ মার্কেটে কুঁচো চিংড়িও পাওয়া যাবে না।
আজ টুটু বোস বা মন্ত্রী অরূপ রায়ের বাড়ির লাঞ্চের মেনু কী জানতে উৎসুক ঘটি-বাঙাল সবাই। আজ আর ঘটি বাঙালের ঝগড়া নেই। আমরা পারছি না তা বলে বাংলায় ট্রফি আসবে না তা মোটেই চাই না, বলেই ফেললেন বাঙাল মন্ত্রী ইস্টবেঙ্গলের গোড়া সমর্থক পার্থ ভৌমিক। দিলীপ ঘোষকে খুশি মনেই ট্রফি জয়ের শুভেচ্ছা জানাবেন কি গর্বিত কাঠ বাঙাল রূপা গাঙ্গুলি?
বহুদিন বাংলায় ট্রফি নেই। আজকাল আর আই লিগ, আইএফএ শিল্ড বা ডুরান্ড ইত্যাদি ট্রফির দিকে নজরই নেই কলকাতার দুই প্রধানের। এখন তো আর জ্যোতিষ গুহ বা ধীরেন দেরা ক্লাব চালান না বা ওই ঐতিহ্য রাখাও সম্ভব নয়। ওসব অতীত মূল্যহীন। এটা ফেল কড়ি মাখো তেলের যুগ। কোটি কোটি টাকা ঢালো দল গড়ো। কে বাঙাল কে ঘটি কিছু আসে যায় না। যদি এমন হয় যে, গোটা দলটিতেই অবাঙালি বা বিদেশী দরকার তো কোই পরোয়া নেহি। দলের নামের আগে বা পরে যদি স্পনসরের নাম বসাতে হয় তবে তাই সই। হচ্ছেও তাই। আজকের বাজারে ট্রফি নিয়ে কেউ পাত্তা দেয় না। দুই দলের সুস্থ শত্রুতাটিও বিদায় নিয়েছে। টার্গেট একটিই আইএসএল ট্রফিতে কটা জয় জরুরী তাই ভাবো।
কিন্তু মালিকরা কি ভাবল তা নিয়ে কী আসে যায়। আজও দুই ক্লাবে খ্যাপা দর্শকের প্রাচুর্য, তারা জয় চায় ট্রফি চায়, তা ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ হোক না কেন।
সেই জয়ই পেল মোহনবাগান। মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা রাতেই এসে গেল কর্মকর্তাদের কাছে। এল শুভেচ্ছা ইস্টবেঙ্গল সহ বিভিন্ন ক্লাব থেকে। শুভেচ্ছা তো চিরকালীন কিন্তু ওপার থেকে আসা উদ্বাস্তুদের একটা গর্বের জায়গা ছিল ইস্টবেঙ্গল, কিন্তু তার হতশ্রী অবস্থা দেখে ওপার থেকে আসা মানুষগুলো ভাবে কবে আর স্বনির্ভর হবো।