ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল। রাত পোহালেই ফাইনালের মঞ্চ কাঁপাতে নামবে চির প্রতিপক্ষ দুই দল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামটি ইতিমধ্যেই রঙিন হয়ে সেজে উঠেছে। বিগত বছর গুলিতে ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেছে হলুদ জার্সির অস্ট্রেলিয়া। ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া যে কতটা ভয়ানক সেটা ভারত টের পেয়েছিল ২০০৩ সালে। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল, যেখানে অসিরা সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বাধীন ভারতকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিল। যদিও এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। ওদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছিল ভারতের কাছে হেরে। যদিও বিশ্বকাপে যত দিন এগিয়েছে, দু'দলেরই খেলায় বেশ বদল এসেছে। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার যে খেলোয়াড়দের লড়াই ম্যাচটিকে উভয় পক্ষের পক্ষে সুইং করতে পারে, সেটা যাচাই করল সিএন।
বিরাট কোহলি বনাম অ্যাডাম জাম্পা
একদিবসীয় বিশ্বকাপের ২০২৩ সংস্করণে বিরাট কোহলির বিস্ময়কর পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে। বিরাট এই বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ব্রহ্মাস্ত্র। ক্রিজে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দক্ষতা এবং স্ট্যামিনা বিরাটকে সবার থেকে আলাদা করেছে। ১০টি ইনিংস খেলে ৭১১ রান করে কোহলি এই টুর্নামেন্টে অন্য সমস্ত ব্যাটারদের থেকে অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছেন। ফাইনাল জেতাতে গেলে বিরাটকে অ্যাডাম জাম্পার কৌশলী লেগ-স্পিনকে বুদ্ধিমানের সঙ্গেমোকাবিলা করতে হবে। জাম্পা এখনও পর্যন্ত ২২টি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের আউট করেছেন। জাম্পা ভারতীয় কন্ডিশন উপভোগ করেছেন এবং রবিবার কোহলির উইকেট নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে বিরাট কোহলি জাম্পার ৩১ বল খেলে ২৯ রান করেছেন, যেখানে ছিল কেবল ১টি বাউন্ডারি।
রোহিত শর্মা বনাম জোশ হ্যাজেলউড
রোহিত শর্মা এই বিশ্বকাপে দারুন সাফল্য অর্জন করেছেন এবং শান্ত ও ক্ষুরধার মস্তিষ্কে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রোহিত দায়িত্ব নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে স্কোরিং রেট বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছেন। কখনও কখনও সহজেই বিপক্ষকে নিজের উইকেট দিলেও গত কয়েকটি ম্যাচে ধারাবাহিকতা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। এবং প্রথম পায়ারপ্লেতে ভারতকে ভালো শুরু দিয়ে দারুন স্কোরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন। এই বিশ্বকাপে তিনি ৫৫০ রান করেছেন। ৪০০০-এর বেশি রান করা ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক-রেট (১২৪.২৫) নিয়ে ফাইনালে নামবেন। কিন্তু জোশ হ্যাজলউডের সুশৃঙ্খল সীম বোলিংয়ের বিপক্ষে রোহিতকে লড়াই করতে হবে। যা সহজ হবে না। বিশ্বকাপ ইতিহাসে রোহিত শর্মা হ্যাজেলউডের ২৩ বল খেলে মাত্র ৮ রান করেছেন এবং ১ বার আউট হয়েছেন।
মহম্মদ শামি বনাম ডেভিড ওয়ার্নার
হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরি প্রথম দিকে ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু মহম্মদ শামি প্রথম ম্যাচেই বিশ্বকাপের মঞ্চে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ম্যাচ খেলে, শামি এই বছরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী (২৩)। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শামির সেভেন স্টার পারফরম্যান্স অসি শিবিরে বিপদের ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নারকে শিকার করা কঠিন হবে। ওয়ার্নার অভিজ্ঞ ওপেনার। যিনি অস্ট্রেলীয় ইনিংসকে খুব সহজেই গড়ে তুলতে পারে একটি পাহাড় সমান ইনিংসে। একদিবসীয় ক্রিকেট ইতিহাসে শামি ১০ বার ওয়ার্নারের বিপক্ষে খেলেছেন, যেখানে ওয়ার্নার ৩ বার শামির বলে আউট হয়েছেন। এছাড়া শামির ১১৭ বল খেলে তিনি ১০৩ রান করেছেন।
জসপ্রিত বুমরা বনাম মিচেল মার্শ
ভারতের পেস স্পিয়ারহেড জসপ্রিত বুমরাহ এখন পর্যন্ত ১৮টি উইকেট নিয়েছেন। টুর্নামেন্টে প্রদর্শিত বোলারদের মধ্যে তার সর্বনিম্ন ইকোনমি রেট রয়েছে। ব্যাটাররা তার শক্তিশালী ইয়র্কার সামলাতে হিমশিম খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া পাওয়ারপ্লেতে বুমরার সঠিক লাইন, গতি ভারতকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে নিঃসন্দেহে। যদিও মিচেল মার্শ অলরাউন্ডার হিসেবে, টপ অর্ডারে বিস্ফোরক ব্যাটিং করছেন। এবং গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৭ রান করে নিজেকে ভয়ানক প্রমান করেছেন। যদিও বিশ্বকাপ ইতিহাসে বুমরার ৬ বল খেলে মার্শ একটিও রান করতে পারেননি। বরং মার্শ একবার আউট হয়েছেন বুমরার বলে।
রবীন্দ্র জাদেজা বনাম গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
জাদেজা ও ম্যাক্সওয়েল, উভয়েরই ব্যাট এবং বলের মাধ্যমে খেলা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে এবং উভয়ই ফাইনালে একে অন্যের থেকে আরও ভালো করার চেষ্টা করবে। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে জাদেজা ম্যাক্সওয়েলের থেকে শক্তিশালী হলেও, ব্যাট হাতে ম্যাক্সওয়েল কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে তা সবাই জানে, কারণ আফগানদের বিরুদ্ধে তার অতিমানবীয় ডাবল সেঞ্চুরি এখনও সবার মনে তাজা। আর তাই ম্যাক্সওয়েলের অপ্রতিরোধ্য বল-স্ট্রাইকিংয়ের বিরুদ্ধে জাদেজার বাঁহাতি স্পিন ম্যাচের অন্যতম সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত হতে পারে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ম্যাক্সওয়েল, জাদেজার ৯ বল খেলে মাত্র ৮ রান করেছেন, এবং একবার আউটও হয়েছেন।