
প্রবাসী বাঙালি হলেও মনেপ্রাণে কিশোর কুমার ছিলেন শতকরা একশো ভাগ বাঙালি । বাঙালি খাবারের প্রতি তাঁর বিশেষ দুর্বলতা ছিল। লুচি, ছোলার ডাল, বেগুন ভাজা তাঁর খুব প্রিয় ছিল । তবে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা ছিল রকমারি বাঙালি মাছের পদ আর মিষ্টির প্রতি । মা গৌরী দেবী রকমারি বাঙালি রান্না করে খাওয়াতেন । বড় বৌদি শোভা দেবীও ছিলেন কলকাতার মেয়ে। তিনি নানান রকমের মাছের পদ রান্না করে আদরের ছোট দেওরকে খাওয়াতেন।
প্রথমা স্ত্রী রুমা দেবী ছিলেন কলকাতার বাঙালি। ওনার রান্নার হাতও ছিল খুব ভালো । তিনি নানান রকমের মাছ, মাংসের বাঙালি পদ রান্না করে কিশোর কুমারকে খাওয়াতেন। ইলিশ ভাপা, ট্যাংরার ঝাল, ভেটকি সর্ষে, চিংড়ির মালাইকারি, কাতলা কালিয়া প্রভৃতি মাছের পদ ওনার খুব প্রিয় ছিল।
কলকাতায় এলে উত্তম কুমারের ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে নেমন্তন্ন থাকত । সুপ্রিয়া দেবী নিজের হাতে ইলিশ ভাপা, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, ফুলকপি দিয়ে ভেটকি মাছের ঝোল রান্না করতেন । উত্তম কুমারের পাশে মাটিতে বসে কলাপাতায় জমিয়ে খেতেন কিশোর কুমার ।
গায়ক, সুরকার শ্যামল মিত্র খুব ভাল মাছ রান্না করতেন । তা শ্যামলবাবু তখন মুম্বইতে থাকতেন । কয়েকটি হিন্দি-বাংলা ডাবল ভার্সান সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর কাধে । সেই সময় একদিন রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে কথায় কথায় কিশোর কুমার জানতে পারেন যে শ্যামল মিত্র খুব ভালো মাছ রান্না করতে জানেন । সেই শুনে কিশোর কুমার শ্যামল মিত্রকে বললেন, আমায় কবে মাছ রান্না করে খাওয়াবেন? আমি মাছ খাবো । সেই কথা শুনে শ্যামল মিত্র বেজায় খুশি হয়ে বললেন, যে কোনো ছুটির দিনে চলে আসুন কিশোরদা । দিন ঠিক হলো ।
নির্ধারিত দিনে শ্যামল মিত্রের খারের ফ্ল্যাটে কিশোর কুমার এলেন । শ্যামল মিত্র খার বাজার থেকে অনেক বাঙালি মাছ এনে নানান পদ রান্না করেছিলেন । কিশোর কুমার খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন সেদিন । যাবার আগে শ্যামল মিত্রকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, শ্যামলবাবু খুব তৃপ্তি পেলাম।