
ধর্ম নয়, কিন্তু ফুটবল এক সময় রেষারেষিতে পরিণত হয়েছিল বঙ্গ সমাজে | ৮০ র দশকের ঠিক আগে এই ঝগড়া শুধু কথায় নয়, মারামারিতে পরিণত হয়েছিল। যার জেরে ১৯৮০ তে দু-দলের খেলার মধ্যে ইডেন গার্ডেনে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের | বোধহয় এটাই সবচেয়ে কলঙ্কময় ১৬ অগাস্ট |
আসলে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুরা নিজেদের একটা ক্লাব থাকা উচিত মনে করে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তৈরি হয়নি। বরং অবিভক্ত বাংলায় ঘটি-বাঙাল বিভক্ত হয়েই এই ক্লাবের জন্ম ১০০ বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু দেশভাগের পর ওপার থেকে আসা বেশিরভাগ মানুষই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক হয়ে যায় | অন্যদিকে আদি কলকাতার বিশিষ্ট মানুষদের সাথে এদেশীয়রা, যাদের ঘটি বলা হয়, তারা মোহনবাগান | খেলার দিন বিভিন্ন এলাকায় নিশ্চয়ই চায়ের কাপে তুফান উঠত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিষ্টিমুখ করে খেলার শেষে মিলনও হত |
কবে যে এই দুই দলের খেলার নাম ডার্বি হয়ে গেল, কে জানে | ইস্ট-মোহনের খাওয়াদাওয়াতেও কিন্তু সুক্ষ্ম ফারাক ছিল | মোহনবাগান মানেই নাকি চিংড়ি মাছ আর ইস্টবেঙ্গল মানেই ইলিশ মাছ | এটাও বেশ মজার। যদিও মোহনবাগানের ধীরেন দে ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসতেন। আবার ইস্টবেঙ্গলের জ্যোতিষ গুহ কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি খেতে ভালোবাসতেন |
এ বাংলার মানুষ যেমন লুচি, আলুর ছেঁচকি দিয়ে জলখাবার বা বিকেলের টিফিন সারতেন, তেমনই ওই বাংলার মানুষ জলখাবারের মধ্যে ভাতই পছন্দ করতেন | আজও উত্তরবঙ্গ কিংবা ত্রিপুরার মানুষ সকাল-বিকেল বা রাতে ভাত খেয়েই থাকেন, যা বাংলাদেশের মানুষেরও পছন্দের | কিন্তু নানান মিষ্টি খেতে বাঙালরা যেমন ঘটিবাড়িতে হানা দিতেন, তেমনই ঘটিরা সর্বদা বাঙালবাড়ির রান্না খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন | আজকাল অবশ্যই এসব নিয়ে কেউ ভাবে না। কারণ বাজারে রোল-চাউমিন কিংবা ধোসার আমদানি হয়েছে, যা বাংলার তৈরি খাদ্য নয় | ঘটিরা যেমন ঝাল খাবার ধরেছেন, তেমন বাঙালরা লঙ্কা কমিয়েছেন | এখন দুই বাঙালির মধ্যে বিবাহের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে | কিন্তু তাই বলে কি ইস্ট-মোহন নিজেদের ঐতিহ্য হারিয়েছে ? নিশ্চই না |