
লটারিতে (lottery) ফেরে ভাগ্য! তবে ১০০ জনের মধ্যে একজনের। বাকি ৯৯ জন হয় সর্বস্বান্ত। তবুও একজন হওয়ার দৌড়ে, নেশায় পরিণত হয় স্বল্প রোজগেরে লাখ লাখ মানুষের। সরকারি আয়ের উৎস হিসেবে লটারি টিকিট কাটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। এ তো গেল লটারির মাধ্যমে লক্ষ্মী প্রাপ্তি। অর্থাৎ অর্থপ্রাপ্তির গল্প। তবে এরই পাশাপাশি আরও একটি গল্প রয়েছে। লটারির টিকিট কেটে বিত্তবান বা ধনী নয়, সুযোগ রয়েছে সরস্বতী লাভের অর্থাৎ জ্ঞানলাভের। নদিয়ায় (nadia) এই ধরনের কাজে খুশী সকল বইপ্রেমীরাই।
বাংলার খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকদের মূল্যবান লেখা। দু-একবার লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়ার সুযোগ হলেও, অত্যাধিক দাম হওয়ার কারণে, তা কখনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি অনেকেরই। পাঠ্যপুস্তকের যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক না কিনে উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতার বই কেনার সামর্থ্য থাকে না অনেকেরই। এই ধরনের বেশকিছু আত্মউপলব্ধি নিয়ে শান্তিপুর "আমাদের ঠেক" সংস্থার পক্ষ থেকে অভিনব এক লটারি চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে, প্রাইভেট টিউশন এবং কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন লটারি টিকিট। যে টিকিটের প্রথম পুরস্কার হিসেবে থাকছে রবীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় পুরস্কার অক্সফোর্ড ডিকশনারি, তৃতীয় পুরস্কার শরৎসমগ্র এভাবেই উপেন্দ্রকিশোর সুকুমার রায়, বিভূতিভূষণ, শরৎচন্দ্র, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলামসহ এক এবং অদ্বিতীয় মূল্যবান ১৪ টি বই থাকছে পুরস্কার হিসেবে। থাকছে ৩৬ টি সান্তনা পুরস্কার, এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের বই-ই থাকবে। যার মধ্যে বাদ যাচ্ছেনা, বিভিন্ন গোয়েন্দা গল্প, হাসির কবিতা প্রবন্ধ, চাষবাস, রান্নাবান্না, খেলাধুলা। আগামী ১৪ ই মে নির্ধারিত হতে চলেছে ২০০০ বইপ্রেমীর ভাগ্য পরীক্ষা হবে।
উদ্যোক্তারা জানান, "খরচ বাদে সমস্ত লভ্যাংশ খরচ করা হবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে এবং দুস্থদের বই বিতরণের মাধ্যমে। কারণ প্রত্যেকেই কম-বেশি কর্মের সঙ্গে যুক্ত আছি আমরা। একঘেয়ে কাটাতে মামার চায়ের দোকানে আসা, কাজের ফাঁকে খুব কম সময়ে পেলেও সেখান থেকেই বিভিন্ন মানুষকে তাঁদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কর্মে অনুপ্রাণিত করা, রক্তদান, বস্ত্রদানের মতো বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পূরণে ইচ্ছা জাগে সকলের। তাই মাঝেমধ্যেই পিছিয়ে পড়া পরিবারকে সমাজের মূল স্তরে আনার নানান রকম চেষ্টা করে থাকি। তবে এবারের উদ্যোগ সম্পূর্ণ আলাদা, বিভিন্ন লাইব্রেরীগুলিতে পাঠক লুপ্তপ্রায় হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ লকডাউনে এবং বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধনে স্বল্প দামে কেনা এন্ড্রয়েড মোবাইলে হাতের মুঠোয় চলে আসছে গোটা পৃথিবী। তাই বই পড়ার আগ্রহ কমছে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের। সকলে না হলেও কিছু মানুষ যদি এই বই পাওয়ার পর পড়ে সেখানেই আমাদের সার্থকতা।"
অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লটারি কাটার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারাও জানায়, অনেকদিন লকডাউনে পরিবার প্রধানের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। সংসারের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তার মধ্যে পড়াশোনার বই এর খরচ বেড়েছে অনেকটাই। এ ধরনের প্রবন্ধ উপন্যাস গল্পের বই অভাবী পরিবারের কাছে আড়ম্বরতা ছাড়া কিছু নয়।