
জামাইষষ্ঠী একটি হিন্দু পরব বা রীতি। শোনা যায়, মা ষষ্ঠীকে পুজো দিয়ে পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনা করেন বাড়ির গৃহিণী। তবে জামাইষষ্ঠী নামটি কেন? আসলে সব মায়েরা চান, তাঁর কন্যা বিয়ের পর সুখে থাকুক শ্বশুরালয়ে গিয়ে এবং তাঁর জামাই দীর্ঘজীবন লাভ করুক। সেই কারণেই জামাইষষ্ঠী পালিত হয়ে থাকে।
আগেরদিনে জামাইষষ্ঠী মানে বাড়িতে একটা মিনি উৎসব। যৌথ পরিবার ছিল এক সময়। বাবা-কাকা-জেঠার মধ্যে যাঁরই কন্যা থাকুক, এক বা একাধিক তাঁদের জামাই সহ নিমন্ত্রণ থাকত শ্বশুরালয়ে। বিশাল খাওয়া-দাওয়া সকাল থেকে রাত। তারপর উপহার সহ বাড়িতে ফিরে যাওয়া।
প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তী প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আরে বাবা, একটা দিন এই ষষ্ঠী, কেমন জানি বিয়ের দিনের খাতির ফিরে আসতো, তো খারাপ কিসে? তিনি বলেছিলেন, তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে উত্তরবঙ্গে। ফলে দারুণ দারুণ টেস্টি রান্নার স্বাদ তিনি সেখানে পেয়েছিলেন। জামাইষষ্ঠী বাদ দিয়েও স্ত্রী আরতির হাতের রান্নাটি ছিল নাকি অভূতপূর্ব।
বামেরা, বিশেষ করে সিপিএম ধর্ম মানে না। কিন্তু তাদের অনেকেই জামাইষষ্ঠীর খাওয়া উপভোগ করেছেন। জ্যোতি বসু খাদ্যরসিক ছিলেন। ওই দিনটিতে বিশেষ কিছু না থাকলেও স্ত্রীর কাছ থেকে নাকি নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি উপহার পেতেন এবং এই দিনে ডিনার বাড়ির বাইরেই সারতেন জ্যোতিবাবু। বিধাননগরের প্রথম দিকের চেয়ারম্যান দিলীপ গুপ্ত ছিলেন গোঁড়া কমিউনিস্ট। তিনি জানিয়েছিলেন, ধর্ম নিয়ে কী হবে। কিন্তু পূর্ববঙ্গীয় শাশুড়ির হাতের রান্না খেতে তাঁর নাকি জিভ বাধা মানত না। মজা করেই বলতেন, তাঁরা বাঙালি। অতএব খাওয়াদাওয়াতে কোনও সিস্টেম মানতে হবে কেন? সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি উত্তর কলকাতায়। বিয়ের পর চুটিয়ে জামাইষষ্ঠীর খাওয়া খেতেন। মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বসু আদ্যন্ত ঘটি। কিন্তু টুটুবাবুর শাশুড়ি ছিলেন ওপার বাংলার। ফলে তাঁর হাতের চিতল মাছের মুইঠ্যা খেতে ষষ্ঠীর দিনটিই আদর্শ ছিল।
আজকের দিনে ওই স্মৃতি আগলে লাভ নেই। জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠান সত্যি কমে গিয়েছে অনেকটাই। দুটি বছর করোনা আবহে অনুষ্ঠান বাতিল ছিল। কিন্তু তাই বলে এই বছর চোব্যচোষ্য জমিয়ে খাওয়া হবে, এমন আশা কই? দামের যা বহর, তাতে কবজি ডোবাবে কোথায় আজকের জামাইরা?