
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫০ বছর উদযাপন। প্রতি বছর এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের তিন সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ভারতেও এই দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
১৬ ডিসেম্বরের ভোর এক অন্যরকম ভোর বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের প্রতি জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্প অর্পণ করে থাকেন।
বাংলাদেশের লক্ষাধিক লড়াকু মানুষের রক্তে রাঙানো আজকের এই স্বাধীনতা। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু ভারতীয় সেনারও মৃত্যু হয়েছিল। প্রাণ দিয়েছিলেন নোবাহিনীর লেঃ কমান্ডার রজতকুমার সেন। করাচি আক্রমণ করে জিতে ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবহর আইএনএস কুকরি যখন ফিরে আসছিল দেশে, তখনই তা আক্রান্ত হয় পাকিস্তানি ডুবোজাহাজ দ্বারা। সেখানেই মৃত্যু হয় লেঃ কমান্ডার রজতকুমার সেনের।
১৯৭২-এ প্রয়াত লেঃ কমান্ডার রজতকুমার সেনকে মরণোত্তর বীরচক্রে ভূষিত করেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি। স্ত্রী শ্রীমতী অনিতা সেন সেই সম্মান গ্রহণ করেন। আজ ৫০ বছর পর তাঁর স্মৃতি রোমন্থনে স্ত্রী অনিতাদেবী। সন্তানহীনা অশীতিপর বৃদ্ধা আজও চোখ বুজলে দেখতে পান সেদিনের ছবি।
এখনও কোথাও সাইরেনের আওয়াজ পেলে মন ভারাক্রান্ত হয় তাঁর। ১৯৭১-এর এই দিনে ডুবো জাহাজের টর্পোডো হানায় ডুবে গিয়েছিল কুকরি। ক্যাপটেন ছিলেন মহেন্দ্রনাথ মৌলা।সেই বাহিনীর লেঃ কমান্ডার ছিলেন রজতকুমার সেন। সেদিন থেকে আজও তিনি একা। তবে জীবন থেকে সরে আসেননি। পরিবার তাঁর বেশ বড়। ভাইপো, তাঁর পরিবার এবং ভাইপোর ঘরের নাতনি অর্থাৎ পুতি আদ্রিতাকে নিয়ে সময় কাটে তাঁর। ভালোবাসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। শহিদের স্ত্রী হিসেবে কেন্দ্র সরকারের সাহায্য পেয়েছেন। নানা সমাজসেবামূলক কাজ তিনি করেছেন।
দীর্ঘ ৫০ বছর নেহাত কম সময় নয়। আজও ঘরের দেওয়ালে টাঙানো বীর শহিদের ছবি থেকে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন অনিতা দেবী। চোখের কোনে নোনা জল চিকচিক করে ওঠে।তবু অফুরাণ প্রাণশক্তিতে ভরপুর অনিতাদেবী সব কিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।