প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা, তার উপর লাগাতার আন্দোলন, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ, আদালতের কড়া দাওয়াই, হাজার টানাপোড়েন, সব কাটিয়ে অবশেষে রবিবার রাজ্যে (West Bengal) হয়ে গেল প্রাথমিক টেট (Primary TET) পরীক্ষা। মোটের উপর রাজ্যজুড়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই টেট হয়েছে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু রাজ্যজুড়ে চালচিত্র বলছে অন্য কথা। শহর কলকাতা (Kolkata) থেকে জেলা, একাধিক জায়গায় উঠে এল চরম ভোগান্তি আর অব্যবস্থার ছবি। অনেক পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক ছিল না, রবিবার বলে যানবাহন কম ছিল। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা দিলে পরিবহণের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।
এদিকে শুধুমাত্র যানবাহন সমস্যাই নয়, পরীক্ষাকেন্দ্র খুঁজতে গিয়েও হাঁড়ির হাল পরীক্ষার্থীদের। টেট পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ভুল নিয়ে বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ডে রয়েছে ভুল ঠিকানা। সল্টলেক লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ এডি ব্লকে কিন্তু এডমিট কার্ডে লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ বিডি ব্লক উল্লেখ করা রয়েছে। অভিযোগ, হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করলেও কোন রকম সহযোগিতা করা হয়নি। কোন্নগর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে টেট পরীক্ষার সিট্ পড়ে। কিন্তু পিনকোডে ভুল থাকার জন্য অনেকেই পৌঁছন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্যা নগর স্কুলে। আবার এক স্কুলের বাইরে নোটিস দেখা যায় যে সেখানে নয়, পরীক্ষা রয়েছে সোদপুরের একটি স্কুলে। এরপরেই বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীদের গাড়ি করে নির্দিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে বিষয় থেমে থাকেনি এখানেই। অন্যান্য বিভ্রান্তির সঙ্গেই দেখা গেল হয়রানির আরও এক চিত্র। শাঁখা পলা খুলিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নির্দেশ, আর যার ফলে অগত্যা মহিলাদের সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে খুলতে হয় শাঁখা। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি, অথচ ব্যাগ বাইরে কোথায় রাখবেন তাও কিছু নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। ফলে ব্যাগে ফোন, পার্স ফেলে মানসিক অশান্তির মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কড়াকড়ি করতে গিয়ে সেটা বারাবারিতে পরিণত হয়েছে, দাবি পরীক্ষার্থীদের।
তবে টেট পরীক্ষা শেষ হলেও শেষ হয়নি অশান্তি। কলকাতার প্রখ্যাত দেশপ্রিয় পার্ক তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে বিক্ষোভে সামিল হলেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছিলেন। পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম বায়োমেট্রিক। কিন্তু তাঁদের সেই পদ্ধতি সম্পন্নই হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে বায়োমেট্রিক না হলে তাঁরা অনুপস্থিত বলে বিবেচিত হবেন বলে আশঙ্কা, আর তাতেই বিক্ষোভে সামিল পরীক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও খবর। যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান হবে ততক্ষণ স্কুলেই অবস্থান করবেন বলে হুঁশিয়ারি পরীক্ষার্থীদের।
অপরদিকে দূর্ঘটনার কবলে টেট পরিক্ষার্থী। সিউড়ির মাঝি গ্রাম থেকে হেতমপুরে টেট পরিক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন পরীক্ষার্থী শুভশ্রী দে। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে চারচাকা গাড়ি। ঘটনায় আহত শিশু সহ তিনজন। এদিন সকালে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে একটি গাড়িতে চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে টেটের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়িতে কলেজের একজন কর্মী ছাড়াও ছিলেন পুলিশকর্মীরা। সাঁইতাড়া ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি গাড়িটি মুখোমুখি ধাক্কা মারে একটি পিক আপ ভ্যানে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কোতুলপুর থানার পুলিশ। এরপরই তড়িঘড়ি পুলিশের অপর একটি গাড়িতে করে প্রশ্নপত্র চাতরা রামাই পন্ডিত কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি দাবি করেন, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা। এই আয়োজনকে সফল করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ধন্যাব্দ জানান। পাশাপাশি পুলি প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসায় সরব ছিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল।