
'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা', রাত পোহালেই ঘরে ঘরে দিদি-বোনেদের মুখে উচ্চারিত হবে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনার এই মন্ত্র। করোনা আর লকডাউনে একটা বছর কেমন সব ঝিমিয়ে গিয়েছিল। বিশেষত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে দূরে থাকার জন্য অনেকের পক্ষেই এমন একটা বিশেষ দিনে হাজির হওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এবছর সব প্রতিকূলতাকে একপাশে সরিয়ে রেখে বাঙালি মেতে উঠেছে উৎসবে। ভাইফোঁটার জন্য চলছে কেনাকাটি। প্রায় শেষের দিকে প্রস্তুতি। মিষ্টির দোকানের ভিড়টা গত বছরের তুলনায় এবার খারাপ নয় বলেই মনে করছেন বিক্রেতারা। বাঙালির আনন্দ-উৎসব, বিশেষত ভাইফোঁটা মানেই মিষ্টি। সব নিয়ম ভেঙে যায় এই সময়টায়। কারণ এরপরই তো ফিরে যেতে হবে রোজনামচার জীবনে। তাই বিজয়ার আগের দিন থেকেই মিষ্টির দোকানগুলিতে হিড়িক পড়ে মিষ্টি কেনার। এবার দেখা যাচ্ছে ফিউশন মিষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ভ্যারাইটি রসগোল্লা, পান্তুয়া, লবঙ্গলতিকা আরও কত কী.....
আর তার সঙ্গে থাকে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া। বাঙালির উৎসব মানেই পেটপুজো। ভাইফোঁটার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় রকমারি পদ রান্না। সকালের মেনুতে থাকে লুচি-আলুরদম অথবা লুচি-ঘুগনি বা পরোটা। সঙ্গে মিষ্টি মাস্ট। দুপুরের স্পেশাল মেনুতে পোলাও, মাংস, মাছ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, মাটন কষা, পাঁচ রকমের ভাজা। আর মিষ্টি।
তবে মিষ্টির দোকানে আগের সেই উপচে পড়া ভিড় এবার আগের দিন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। আগে দোকানের কর্মচারীরা পুরোদমে ক্রেতাদের ফরমাস শুনেও কুলিয়ে উঠতে পারতেন না। ভাইফোঁটায় মিষ্টির দোকানে বোনেদের হুড়হুড়ি বাঙালির আদি ঐতিহ্যেরই ধারক এবং বাহক। তবে তাতেও পড়েছে ভাটা। তবু এবারে কিছুটা হলেও বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি দোকান মালিকদের।
মিষ্টির দোকানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "এবার স্পেশাল মিষ্টি সেরকম কিছু করা হয়নি। যা মিষ্টি বিক্রি হয় সারা বছর, তাতে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে মাত্র। যার দাম যা ছিল, সেটাই রাখা হয়েছে। একেই ক্রেতা কম, তার ওপর যদি দাম বাড়ানো হয়, তাহলে তো সেরকম ক্রেতাই পাওয়া যাবে না।"
উত্তর কলকাতার এক মিষ্টির দোকানের কর্ণধার বলেন," গত বছর করোনার ভয়ে বাজার একদমই খারাপ ছিল। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবছর বাজার অনেকটাই ভালো বলে মনে হচ্ছে।"