নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষিতে দুটি মামলায় মুখবন্ধ খামে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মঙ্গলবার ইডি ও সিবিআই রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি ভরা এজলাসে ইডি ও সিবিআই বেশকিছু বিস্ফোরক তথ্য সামনে নিয়ে আসে। ইডি জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সম্পর্কিত যে তথ্য ইডির হাতে তুলে দিয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখেছে যে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর মালিকানায় ৮ টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যে সম্পত্তিগুলি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে।
ইডি বিচারপতিকে জানায় তারা নিশ্চিত এই সম্পত্তিগুলি সোজা পথে আসেনি। আর সেই কারণেই এই সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াকরণ করার পাশাপাশি এই সংস্থার যাঁরা কর্ণধার রয়েছেন, এই সম্পত্তির গুলির সঙ্গে যাঁদের নাম জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের সমন পাঠানোর কাজ ইডি শুরু করে দিয়েেছে।
বিচারপতি সিনহাকে ইডি জানিয়েছে, ওই সম্পত্তির মূল্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা।লিপস অ্যাণ্ড বাউন্ডসের সিইও পদে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তা স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বলেছিলেন, এই কোম্পানি কোনও অনৈতিক কাজ করেনি। ইডি ১০ পয়সার অনিয়ম হয়েছে দেখাতে পারবে না।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি অভিষেকের অলক্ষ্যে এই বিপুল শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের। ইডির দাবি অনুযায়ী যা সবটাই হয়েছে ঘুরপথে।
এদিকে ইতিমধ্যে এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছে ইডি। তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে সিএন-এ একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি এই কোম্পানির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। যা হয়েছে তিনি সবটাই জানেন। কিন্তু তিনি এও বলেছিলেন এই সংস্থার যারা মাথারা রয়েছেন তাদের অনুমতিতেই তিনি সমস্ত কাজ করতেন।
লিপস এণ্ড বাউন্ডসের পাশাপাশি মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে আর একটি সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি নিয়েও আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের কথায় পরিষ্কার এই কোম্পানিকে সামনে রেখে নিয়োগ দুর্নীতিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু যেখানে সব থেকে খটকা লাগছে সকলের সেটা হল, এই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের যোগাযোগের প্রসঙ্গ। মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিচারপতিকে জানিয়েছিলেন, এই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ২০১২ সালে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কোম্পানি ছিল। আর এখানেই আবারও খটকা। জানা যাচ্ছে এই কোম্পানি লিপস এণ্ড বাউন্ডসেরই আর্থিক সহযোগী হিসেবে কাজ করতো।
এখান থেকই প্রশ্ন উঠছে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কোম্পানি, সে কীভাবে নিয়োগের ওএমআর শিট তৈরির বরাত পেল সেই সময় একাধিক যোগ্য কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি কেন টেন্ডার পেল? তদন্তকারী সংস্থার মতে এই কোম্পানিকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোনও টেন্ডারই ডাকা হয়নি।
তবে কি এক্ষেত্রে লিপস এণ্ড বাউন্ডসের প্রভাবশালী কর্ণধারদের মদতেই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি এই সুযোগ পেয়েছিল ? আর বোর্ড কিভাবে এই অনভিজ্ঞ কোম্পানির হাতে নিয়োগের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ টেন্ডার ছাড়াই তুলে দিয়েছিল। কার কথায় এতবড় সীদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড ? যেখানে এতগুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত জড়িত। তবে কি এই দুটি কোম্পানি অর্থাত্ এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে বোর্ডের কোনও সমঝোতা হয়েছিল? এই সমস্ত প্রশ্নগুলিকে জোড়া লাগিয়ে তদন্তের এগিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।