মণি ভট্টাচার্য: 'আমাদের স্কুলে যারা আসে, তাদের মধ্যে কেউই চার চাকা কিংবা বড় বাড়িতে স্কুলে আসেন না। হয় সাইকেলে আসেন, খুব বড় জোর হলে অটোতে আসেন। সে কারণেই ব্যস্ততম রাস্তার পাশের স্কুলে কোন পুলিসি পাহারা নেই। কিন্তু আশেপাশের বেসরকারি স্কুলগুলোতে কিংবা স্কুলের বাইরে রাস্তায় পুলিসি পাহারা আছে।' লরির ধাক্কায় বেহালার শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পুলিসকেই দুষলেন বরিশা হাইস্কুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কিছুতেই যেন এই দুঃখ থেকে বেরোতে পারছে না তিনি। পারবেনই বা কি করে? সকালবেলা স্কুলে ঢুকেই তাদের স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সৌরনীলের মৃত্যুর খবর পান। ছুটে গিয়ে সৌরনীলের বাবাকে আহত অবস্থায় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ভর্তি করেন তারাই।
সূত্রের খবর, ছোট্ট ক্ষুদে সৌরনীলের স্কুল অর্থাৎ বরিশা হাই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১০০০ জন। প্রায়সই স্কুল শুরুর সময় যানজট লেগে যায় ওই রাস্তায়। স্কুলের তরফ থেকে অভিযোগ সেই সময়ও যানজট নিয়ন্ত্রণে কোন পুলিশকে দেখা যায় না। এমন কি? বহুবার স্কুলের সাইকেলে চুরি হয়েছে অথচ সেই সাইকেল চোর কে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই অভিযোগ স্কুলের তরফে। পাশাপাশি স্কুলের অভিযোগ পুলিসের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে এখনও অবধি বেশ কয়েকজন পড়ুয়া সামান্য অসুস্থ হয়েছে, স্কুলের তরফে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাও করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
শুক্রবার ভোর বেলায় বাবার হাত ধরে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন বরিশা হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সৌরনীল। অভিযোগ সে সময় বেপরোয়া গতিতে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মাটির লরির ধাক্কায় প্রাণ যায় সৌরনীলের। গুরুতর অবস্থায় তার বাবা এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরপরই সৌরনীলের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। এই বিক্ষোভ একসময় রণক্ষেত্রের আকার নেয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ বাঁধে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিসকে। ঘটনার প্রায় দু ঘণ্টা পর মৃতদেহ কে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিস।
অন্যদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েল। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখন এই এলাকা গুলিতে দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। তাছাড়া লরি চালক ও লরিটিকে আটক করা হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত সাজার ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এসব কিছু শুনতে নারাজ স্থানীয়রা, এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা এ ঘটনার পিছনে পুলিসকেই দায়ী করছেন।