
মনি ভট্টাচার্য: দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ, পাল্টা অভিষেকের (Abhishek Banerjee) হুঙ্কার, পাশাপাশি আইনি সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের (Central Agency) মোকাবিলার চেষ্টা। কুন্তলের (Kuntal Ghosh) চিঠি সংক্রান্ত মামলায়, সিবিআই বনাম অভিষেকের সিনেমায় অভিষেক কি নায়ক হয়ে গেল! যদিও দীর্ঘ সাড়ে ৯ ঘন্টা পর নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে মমতার পথে হেঁটে বিজেপিকেই টার্গেট করেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
কিন্তু অভিষেক নায়ক কিভাবে! গত তিনবছর আগে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে অভিষেক একই রকম ভাবে বিজেপিকে নিশানা করেছিলেন। শনিবারও ঠিক তেমনই লাগল অভিষেককে। অভিষেক নিজেই স্পষ্ট করলেন তাঁকে কেন ডাকা হয়েছিল। কুন্তল ঘোষের চিঠিতে তাঁর নাম থাকায় তাঁকে ডাকা হয়। তিনি বেরিয়েই বললেন,'যারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাঁদেরও সময় নষ্ট, আর আমারও সময় নষ্ট।' কিন্তু কেবল কোনও অভিযুক্তের চিঠিতে তাঁর নাম পেলেই তাঁকে ডাকা হবে কেন! অভিষেক কিন্তু এখানেই বিঁধলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
অভিষেককে মূলত রমেশ নন্দী বনাম পশ্চিমবঙ্গের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তলব করেছিল সিবিআই। যে মামলাটি গত বছর মে মাসে ৯ তারিখে দায়ের করা হয়। ওই মামলাটিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৩৪ ধারা সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৭,৭এ ও ৮ নম্বর ধারা রয়েছে। আইনজীবীদের মতে চাকরির প্রতারণা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুর্নীতি হলেই এই ধারা গুলি প্রযোজ্য। এই মামলায় ১৬০ সিআরপিসি অনুযায়ী অভিষেককে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডাকা হয়েছে। সিবিআইয়ের তলবে এক রাতেই হাজিরা দিয়েছেন অভিষেক। যদিও এই মামলায় অভিষেককে তলব করার মধ্যে তেমন কিছুই কিন্তু দেখছে না আইনজীবী মহল। বরং আইনজীবী মহল মনে করছেন এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে, সেটা অতি ক্ষুদ্র বিষয়।
তবে প্রশ্ন উঠছে অভিষেক কেন জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের ভিত্তিতে বারবার আদালতে ছুটছেন। সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। তাতে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হবার কি দরকার ছিল? যদিও বিজেপি এটাকে ভয় হিসেবেই দাবি করেছেন। কিন্তু একজন সাধারন মানুষ হিসেবে অভিষেক কিন্তু বারবার বলেছে,'আমি এই মামলায় কোনও ভাবেই নেই, এই মামলার ত্রিসীমানায় নেই। তবে আমাকে কেন ডাকা হবে।' যদিও সিবিআইয়ের জেরা থেকে বেরিয়ে অভিষেক বিজেপিকে দুষে বলেন,'সারদায় সুদীপ্ত সেন তো অধীর, শুভেন্দু, সুজন বাবুদের নাম লিখেছিল চিঠিতে, তাঁদের ডাকা হয়েছে? আমাকে ডাকা হলো কারণ আমি বিজেপির কাছে বশ্যতা স্বীকার করি নি।' একদিকে অভিষেক সিবিআইকে তদন্তে সাহায্য করলেন, অন্যদিকে আইনি পথে জাস্টিস গাঙ্গুলি সহ সিবিআইকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করলেন। মোটের উপর সিবিআইয়ের জেরা সেরে বেরিয়ে এসে অভিষেক যে আপাতত নায়ক সেটা কিন্তু রাজনৈতিক মহলের দাবি।
প্রথমত, অভিষেক জেরা শেষে বেরিয়ে এসেই বলেছে, 'পারলে সিবিআই আমাকে অ্যারেস্ট করুক।' যেমন টা তিন বছর আগে বলেছিলেন। এই বক্তব্যটুকু বর্তমানে চলা সমস্ত বিতর্কে জল ঢালার জন্য যথেষ্ট। ঠিক তেমনই এই মন্তব্য অভিষেক অনুগামীদের বাড়তি অনেকটা অক্সিজেন দেবে সেটা সবারই জানা।
দ্বিতীয়ত, 'নবজোয়ার'। নবজোয়ার নিয়ে একটু হলেও অস্বস্তিতে ছিল তৃণমূল। কারণ সিংহভাগ জায়গাতেই অভিষেক বেরিয়ে যাওয়ার পর ব্যালট নিয়ে মারপিট, ও বিশৃঙ্খলা হয়েছে, যা অভিষেকের অপছন্দ ছিল। সেকারণে অভিষেক মেজাজও হারিয়েছেন বেশ কিছু বার। কিন্তু ঘটনাচক্রে অভিষেকের এই সিবিআই হাজিরা বাড়তি প্রাণ দেবে নবজোয়ারে। সেজন্যই বোধহয় বিজেপিকে দুষলেন এবং বললেন, 'নবজোয়ারের উন্মাদনা দেখেই, চক্রান্ত করে এই যাত্রা বন্ধ করার চেষ্টা করছে বিজেপি।' ফলে এখানেই নবজোয়ারের বাড়তি অক্সিজেন জোগানের কাজ সেরে রাখলেন অভিষেক।
গোটা ঘটনার ফলশ্রুতি হিসেবে শনিবার রাতে অভিষেকের হুঙ্কার যে গরুপাচার, কয়লাপাচার, শিক্ষা দুর্নীতিতে অস্বস্তিতে থাকা তৃণমূলকে অনেকটা পুনর্জীবিত করবে সেটা যেমন ঠিক। তেমনই সিবিআই, জাস্টিস গাঙ্গুলি, জাস্টিস সিনহা ও বিরোধীদের প্লটে আপাতত অভিষেক যে নায়ক সেটা কিন্তু স্পষ্ট।