মঙ্গলবার কোচবিহারের (CoochBehar) দিনহাটা থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই লক্ষে সোমবার কোচবিহার পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্মসূচি শুরুর ঠিক একদিন আগে টুইট করে অভিষেককে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার টুইট করে তিনি লেখেন, ‘তৃণমূল নব জোয়ার হল একটি প্রথম অভিনব রাজনৈতিক প্রয়াস। এই প্রয়াসের জন্য আমি অভিষেক এবং দলের কর্মীদের জনসংযোগ যাত্রা শুরু করার জন্য আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। এই যাত্রা রাজ্যজুড়ে হবে।’ সোমবার বিকেলে কোচবিহার পৌঁছে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। পরদিন থেকে শুরু করবেন জনসংযোগ যাত্রা (Janasangjog Rally)।
এই কর্মসূচিতে আগামী ৬০ দিনের সূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করে ৬০তম দিনে তা সাগরে এসে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের এই কর্মসূচর ঘোষণা করেন অভিষেক। পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থী খুঁজতে ২৫০টি জনসভা করবেন তিনি, সঙ্গে হবে ৬০টি অধিবেশন। ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার পাশাপাশি ৩,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করবেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তিনি অস্থায়ী ছাউনিতে রাত্রিযাপন করবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে রবিবার রাজ্য এবং জেলাস্তরে নির্বাচনী কমিটি গঠন করল তৃণমূল।
রাজ্যস্তরের এবং জেলাস্তরের কমিটির কাজ কী হবে সে বিষয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের ২২ জন শীর্ষ নেতা। জেলাভিত্তিক ৮টি জোন তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক জোনের একটি করে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে ৬ থেকে ১০ জন তৃণমূল নেতাকে। এই কমিটিগুলির কাজ হবে গোটা প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরি করা থেকে শুরু করে যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তাঁরা যাতে সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্রামবাংলার মতামত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ইনচার্জ এবং কো-ইনচার্জদের বিশেষভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। রাজ্যস্তরের যে নির্বাচনী কমিটি তৈরি করা হয়েছে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। কমিটির বাকি সদস্যেরা হলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মানস ভুইয়াঁ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ ২২ জন নেতা। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২২টি জেলাকে ৮টি ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটকে (Panchayat Vote) শিয়রে রেখে জনসংযোগ বাড়াতে সম্প্রতি জোড়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। নাম দেওয়া হয়েছে 'জনজোয়ার' ও 'গ্রাম বাংলার মতামত।' অভিষেকের এই কর্মসূচির প্রথম সভাস্থল কোচবিহারের সভার আগেই বড় ভাঙন তৃণমূলে। সূত্রের খবর, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ প্রায় এক হাজার কর্মী শাসকদল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) নাম লিখিয়েছেন।
যার পরে সিএন-ডিজিটালকে কোচবিহারের বিজেপি জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, 'শুরুর আগেই ভাটা জোয়ারে!' যদিও এসবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি সোমবার সিএন ডিজিটালকে বলেন, 'এসব করে বা প্রচার করে বিজেপি কিছুই করতে পারবে না। চক্রান্ত করে অভিষেকের সভা বানচাল করার ধান্দা বিজেপির, আর কিছুই না।'
পঞ্চায়েতের আগে ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ এই নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে এই কর্মসূচির শুভ সূচনা। ঠিক তার আগে কোচবিহারের হাজারের অধিক কর্মী, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিলেন বিজেপিতে। মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মৃত্যুঞ্জয় রায় ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জীব চন্দ্র রায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় যথেষ্টই অস্বস্তিতে শাসকদল।
অভিষেকের (Abhishek Banerjee) সভা ও কর্মসূচীর আগেই ধুন্ধুমার কোচবিহার। তৃণমূলের (TMC) দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তিতে উত্তপ্ত হলো কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ (Mekhliganj) এলাকা। দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাথা ফাটল ২ জনের। সূত্রের খবর সরকারি পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিটে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেখলিগঞ্জের গোয়েন্দা পাড়া এলাকা। তৃণমূলের দুই পক্ষই একে অপরের মধ্যে বাঁশ দিয়ে, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারপিট শুরু করে। বর্তমানে এলাকা থমথমে। এলাকায় বিশাল পুলিস বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ওই এলাকায় পথশ্রী প্রকল্পের যে রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে, সেটিতে তৃণমূলের কিছু নেতা তৃণমূলের অন্য এক গোষ্ঠীর কিছু লোকের জমির উপর থেকে, বলপূর্বক তৈরি করছে বলে অভিযোগ। ফলে ওই এলাকায় আজ অর্থাৎ রবিবার পথশ্রী প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে দু'পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। তারপর হাতাহাতি। যা বদলে যায় সংঘর্ষে। এ ঘটনায় মাথা ফেটে আহত হয়েছেন ২ জন। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল জেলা সভাপতি বলেন, 'এটা পারিবারিক ঝামেলা, এখানে তৃণমূলের যোগ নেই।'
মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই (CBI)। নির্দেশনামায় কোন কাণ্ডে এই তলব উল্লেখ নেই। দায়ের হওয়া এফআইআর-র ভিত্তিতে সৌমেন নন্দী বনাম রাজ্য সরকার মামলায় হাইকোর্টের ১৩ এপ্রিলের অর্ডার মেনে এই তলব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূল সাংসদকে (Abhishek Banerjee) নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে হবে মঙ্গলবার। এই মর্মেই নোটিস পৌঁছেছে রাজ্যের শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে। কিন্তু এই সিবিআই তলবেও বিজেপির ইন্ধন দেখছে তৃণমূল।
সোমবার দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি অভিষেক আতঙ্কে ভুগছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ওরা যেভাবে মাথা ঘামাচ্ছেন মানুষ বুঝতে পারছেন দিল্লিতে বিজেপির পথের কাঁটা তৃণমূল। তৃণমূলকে দমন করা, ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। তাই এজেন্সি দিয়ে, সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলছে। আজ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সিবিআইয়ের পাঠানো নোটিশে কোথাও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের যোগসূত্র নেই। কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ এপ্রিলের নির্দেশের প্রেক্ষিতেই এই নোটিশ।'
এদিকে, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই সিবিআই তলব প্রসঙ্গে জানান, 'মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকে জানলাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই ডেকেছে। সূত্রের খবর জীবনকৃষ্ণ সাহার সঙ্গে বিভিন্ন লোকের কথোপকথনের রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। আগামি দিনে উনাকে এই রেকর্ডগুলো কষ্ট দিতে পারে। ঘনিষ্ঠজনের নাম জড়িয়ে যেতে পারে। এখন যা রটছে, তা কিছু হলেও বটে। এমনকি সাম্প্রতিককালে সেগুলো সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।'
বাংলার বকেয়া টাকা দিয়ে দিলে রাজনীতি (Politics) ছেড়ে দিতে রাজি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শুক্রবার বীরভূমে সিউড়ির সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। তারই জবাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় টুইট করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'বাংলার বকেয়া ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিন, তবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া তো দূর, আমি রাজনীতিও ছেড়ে দিতে রাজি।' শুক্রবার দু'দিনের সফরে রাজ্যে পা রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
শুক্রবার রাজ্যে পা রেখে অনুব্রত মণ্ডলের গড় বীরভূমে, তিনি একটি সভা করেন। সেখানেই রাজ্যের দুর্নীতি, অশান্তি-হিংসা-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করেন। ওই সভা থেকেই স্পষ্টতই বলেন, 'ভাইপো যতই চাক না কেন, ভাইপো মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবে না।' এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন টুইটে হৈ-চৈ ছড়িয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
ইতিমধ্যেই ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা ইত্যাদি নিয়ে বাংলার বকেয়ার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় সরব হয়েছেন মমতা এবং অভিষেক। সম্প্রতি রেড রোডে বকেয়া টাকার দাবিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধারনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিভিন্ন সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই বিষয়ে সুর চড়িয়েছেন। হুংকার দিয়েছেন দিল্লি অচল করে দেওয়ার। সামনেই পঞ্চায়েত, বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। যদিও শুক্রবার ৩৫টি আসন নিয়ে ২৪ সালে, মোদিকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর দাবী জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এ অবস্থায় বাংলাকে বঞ্চনা করার দাবিতে বকেয়া অর্থ চেয়ে অভিষেকের টুইট, সেটা যে কেন্দ্রকে তোপ সেটা স্পষ্ট করলেন ওই টুইটেই।
পরপর বিস্ফোরক হাইকোর্টের বিচারপতি (Judge) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। যারপরেই তৃণমূলের নিশানায় বিচারপতি। নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা অবধি পৌঁছাতে না পারলে, আমি জানি কি করতে হয়। সিবিআই-ইডিকে উদ্দেশ্য করে এমনটাই বললেন বিচারপতি অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বৃহস্পতিবার সিবিআই-ইডির বিরুদ্ধে করা কুন্তলের অভিযোগ নিয়ে বিশেষ নজর দেন। নির্দেশ দেন সিবিআই-ইডিকে নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিস। এমনকি তিনি নির্দেশ দেন, প্রয়োজনে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে কুন্তলের সামনে বসিয়ে জেরা করতে পারবে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রথমবার বিচারপতির মুখে নাম এলো অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের। যারপরেই তৃণমূলের নিশানায় কুনাল ঘোষ। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কুনাল ঘোষ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কটাক্ষ করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি লেখেন, 'যদি রাজনীতি করতে হয় চেয়ার ছেড়ে আসুন, চেয়ারে বসে রাজনীতি করবেন না।' এর পরেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'তৃণমূল কাউকে সন্মান করতে জানে না, সন্মানীয় বিচারপতিকে এভাবে হুমকি দিয়ে বিচার ব্যাবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তৃণমূল।'
পাশাপাশি সোমবার ইডি-সিবিআইয়ের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি ইডির আধিকারিকদের বলেন, 'নিয়োগ দুর্নীতির '‘মাথা’' তো দূর অস্ত, তদন্তে নেমে দুর্নীতির ‘'কোমর'' পর্যন্ত ঠিকভাবে পৌঁছতে পারেননি। তবে এবার যদি নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি, তা হলে আমি জানি কী করতে হবে।' বৃহস্পতিবার কুন্তলের চিঠির মামলার শুনানি চলাকালীন কড়া বার্তা দিয়ে এমনটাই জানালেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি শুনানি চলাকালীন নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুললেন। বিচারপতির দাবি, নিয়োগ মামলায় যাঁদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা ‘দালাল’। অবৈধ ভাবে নিয়োগের টাকা আসলে কোথায় পৌঁছেছে, তা দ্রুত তদন্ত করে বার করার বার্তাও তিনি দিয়েছেন।
নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় এবার কি বিপাকে পড়তে চলেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)! বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নিয়োগ দুর্নীতিতে (Scam) ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায়, প্রয়োজনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি (ED)। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে লেখা ওই চিঠি নিয়ে অভিষেক এবং কুন্তলকে প্রশ্ন করতে পারবেন ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল এখনও জেলবন্দি। তাঁকে আদালতে হাজির করানোর সময় কুন্তল একাধিক বার বলেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করার জন্য ‘চাপ’ দিচ্ছে। জেল থেকে ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করে চিঠিও লিখেছিলেন কুন্তল। সেই চিঠিতেও হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতার অভিযোগ ছিল, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। কুন্তলের অভিযোগপত্র প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল হেস্টিংস থানায়। সম্প্রতি নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও একই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কুন্তল। বুধবার কুন্তলের অভিযোগের বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টে তুলেছিল ইডি। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার অভিষেক সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও নির্দেশ, আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের কোনও থানা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই এবং ইডির আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারবে না। কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া হেস্টিংস থানাও কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলেও তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহিদ মিনারের সভা থেকে দেওয়া অভিষেকের বক্তৃতার অংশ তদন্তের বাইরে রাখা উচিত নয়। ২৮ এপ্রিল ইডি এবং সিবিআই এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। প্রয়োজন মনে করলে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো রেকর্ডও করতে পারবে।
প্রসূন গুপ্ত: একেকটি ভোট মানে একেক রকম প্রস্তুতি। লোকসভায় প্রচার মানে জাতীয় রাজনীতি। থাকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চিন-পাকিস্তান কিংবা গত ৫ বছরের সার্বিক প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে তরজা। তেমনই বিধানসভায় থাকে রাজ্যের উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা, নারী নিরাপত্তা বা কর্মসংস্থান। পুরো বা পৌরসভা মানে এলাকার জল, রাস্তা ইত্যাদি নিয়ে প্রচার। সেরকম পঞ্চায়েত ভোটের সিংহভাগে থাকবে গ্রামের কথা, জমির বা ফসলের কথা এবং অবশ্যই ভূমিহীনদের জন্য অন্য কাজে রোজগারের কথা। তবে ভারত মূলত কৃষি প্রধান এবং শ্রমনির্ভর দেশ। তাই কৃষক এবং শ্রমিক যেদিকে, জয় সেদিকেই হয়ে থাকে। এই হিসাব দেখে সরকারি দল বা বিরোধীরা চেষ্টা করে যেভাবেই হোক বিভিন্ন পঞ্চায়েত দখল করা। দখল করা বললেও কাজটি কঠিন।
প্রতিদিনের লড়াই থেকে এ দেশের কৃষকরা বেঁচে থাকার তাগিদ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যতিক্রম নয় এ বাংলাও। সামনে পঞ্চায়েত ভোট কাজেই উচিত প্রচার অভিযানে সমস্ত দলের নেমে যাওয়া, মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তৃণমূল বেশ কিছুদিন হলো প্রচার অভিযানে নেমেছে পক্ষান্তরে। এদিকে এখনও প্রস্তুতিতেই রয়েছে প্রধান বিরোধী বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রচার এখনও শুরুই হয়নি এবং সিপিএম অতি গোপনে তাদের আস্তিনের তাস বের করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন প্রসারের দায়িত্বে যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহ থেকেই প্রচারে নেমেছেন। খোঁজ নিচ্ছেন সেই অঞ্চলগুলি, যেখানে গত লোকসভা এবং বিধানসভায় তাঁদের দল খুব খারাপ ফল করেছে। যথা ডুয়ার্স বা বাঁকুড়া-পুরুলিয়া। বাঁকুড়ায় লোকসভার দুটি আসনই বিজেপির দখলে, সাথে বিধানসভার অধিকাংশ আসনও। যদিও গত পৌরসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার সবকটি পুর ভবন তৃণমূলের হাতে। কিন্তু পঞ্চায়েতে জয় না আসলে লোকসভায় তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কাজেই কাল বিলম্ব না করে অভিষেক দুর্বল কেন্দ্রগুলিকে বেছে নিচ্ছেন।
বুধবার বাঁকুড়ার ওন্দাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক তুরুপের তাস হিসাবে তুলে ধরলেন ১০০ দিনের কাজের কথা। তিনি জানেন, এই বাঁকুড়া জেলা প্রবল গরমে খরার কবলে পরে। তিনি বক্তব্যে জানালেন যে , ধর্ম নয় বাঁচতে গেলে দরকার অর্থ। এই ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেন না এবং তাই দিল্লিতে দরবার করতে হবে এবং কোটি প্রতিবাদ পত্র নিয়ে তিনি দিল্লিতে যাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা প্রকল্পে যে বাঁকুড়া অধিবাসী সুবিধা পাচ্ছেন তাও জানালেন অভিষেক যদিও ট্রাম্প কার্ড ওই ১০০ দিনের কাজ।
মণি ভট্টাচার্য: সর্বভারতীয় তকমা হারানোর পর বাঁকুড়ায় (Bankura) প্রথম সভা করছে তৃণমূল (TMC), আর ওই সভার পোস্টারকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক (Controversy)। সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার ওন্দায় তৃণমূলের সভার পোস্টার অনুযায়ী তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বুধবার সভা করবেন। যা নিয়েই বিতর্ক। বিজেপির দাবি (BJP), সম্প্রতি সর্বভারতীয় দলের তকমা হারিয়েছে তৃণমূল। অথচ তারপরেও বাঁকুড়ায় অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সভা করবেন কীভাবে? যার উত্তরে তৃণমূলের দাবি, সর্বভারতীয় তকমা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দলের নাম পরিবর্তন করার নির্দেশ কমিশন দেননি।
কমিশনের নির্দেশে সর্বভারতীয় তকমা হারিয়েছে তৃণমূল-সহ আরও দুটি দল। যে দল আর সর্বভারতীয় নয়, সেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হয় কী করে? এই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও এর পাল্টা তৃণমূলের একাংশের দাবি, তৃণমূল দলের আসল নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। এই নাম পরিবর্তনের নির্দেশ এখনও দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সিএন-ডিজিটালকে বাঁকুড়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, 'কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আছে, এ বিষয়ে এখনও আইনি সাহায্যের পথ খোলা আছে। ফলে আমরা এখনই কমিশনের সিদ্ধান্ত মানছি না।'
তৃণমূলের জেলা সভাপতির এই বক্তব্যের পর তৃণমূলকে 'দু'কান কাটা' বলে কটাক্ষ করেন বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের বিজেপি সভাপতি বিলেশ্বর সিংহ। বুধবার বিলেশ্বর সিংহ সিএন-ডিজিটালকে বলেন, 'তৃণমূলের দু'কান কাটা, নইলে এরকম করত না। যদিও ওরা এর আগে কখনও নির্বাচন কমিশনকে মেনেছে নাকি! এবার মানবে না সেটাই তো স্বাভাবিক।'
আজ অর্থাৎ সোমবার দুপুর ৩টের সময় রাজ্যের, সমস্ত যুব এবং মাদার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা ও ব্লক, সভাপতিদের নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং করবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। আর কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে এই মিটিং। এই ভার্চুয়াল মিটিং পঞ্চায়েত ভোটের আগে, দলের নিচু স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
এখনও দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে ঘোষণা করতে পারে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন৷ সেই কারণে শাসক-বিরোধী সবপক্ষই নির্বাচনের প্রস্তুতিতে পুরোপুরি লেগে পড়েছে৷ আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সোমবার জরুরি সাংগঠনিক বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তৃণমূল সূত্রে খবর মিলেছে, সমস্ত জেলার জেলা সভাপতি, বিধায়ত ও ব্লক সভাপতিরা থাকবেন সেই বৈঠকে৷ সেখানেই নির্বাচনের একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷
এছাড়া আলিপুরদুয়ারে দলীয় সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ১ কোটি চিঠি প্রদান করবেন তিনি। এই মিটিংয়ে কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে স্বাক্ষর গ্রহণ ও পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি শুরু করবেন বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। এছাড়া এ ধরণের মিটিংয়ে দলের নিচু স্তর ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে জনসংযোগ বাড়বে সেটা বলাই বাহুল্য।
১০০ দিনের টাকা-সহ বিভিন্ন বকেয়ার দাবি নিয়ে ধর্নায় (Protest) বসেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী (CM), সরব হয়েছিলেন দলের অধিকাংশ। এবার আলিপুরদুয়ারে দলীয় সভায় গিয়ে ১০০ দিনের টাকা না দিলে দিল্লি স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। পাল্টা পুরোনো টাকার হিসাব চাইলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)।
শনিবার আলিপুরদুয়ারের সভায় পঞ্চায়েত ভোট, চা শ্রমিকদের নিয়ে বললেও, ১০০ দিনের কাজ প্রসঙ্গ টেনে মূলত টার্গেট করেন বিজেপিকে। শনিবারের সভা থেকেই অভিষেক বলেন, '২৫ জন সাংসদকে নিয়ে টাকা চাইতে দিল্লি গিয়েছিলাম, দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিট মন্ত্রী দেখা করেননি।' তিনি বিজেপির উদ্দেশ্যে আরও বলেন, 'পারলে রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করুন, বাংলার মানুষকে আমি ভাতে মারতে দেব না।' শনিবার এই সভা থেকেই তিনি হুঙ্কার দিলেন, 'আপনারা সই করুন। ৪ লক্ষ সই দিন আলিপুরদুয়ার থেকে, আমি ১ কোটি চিঠি দেব বাংলা থেকে, দেখি কতদিন কান বুজে থাকে কেন্দ্র।' তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন শনিবার, 'আপনারা সঙ্গে থাকুন, টাকা আমি ছিনিয়ে আনবই।'
ওদিকে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীও ধর্না করেছেন ৩০ ঘন্টা। অভিষেকের দাবিও ঠিক একই। কিন্তু বিভ্রান্তিটা অন্য জায়গায়। চলতি সপ্তাহেই, শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি একটি লিস্ট দেখিয়ে দাবি করেন, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে, ইউপিএ আমলে ২০০৬-২০০৭ থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থবর্ষ অবধি ১৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলা। এনডিএ অর্থাৎ বিজেপির আমলে ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষ অবধি, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৫৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলা। এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার বলেন, 'কংগ্রেসের থেকে বিজেপি আমলে বেশি টাকা পেয়েছে বাংলা। এই টাকার হিসেব কেন প্রকাশে আনছেন না সরকার?' সুকান্ত আরও অভিযোগ করেন, 'তৃণমূল ওই টাকা লুটে খেয়েছে।'
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বঞ্চনার অভিযোগে হুঙ্কার দেওয়া যায়, ধরণায় বসা যায়। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলন করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের হিসাব দেওয়া যায় না! যদিও সাধারণ মানুষের কি এই হিসাব দেখার নিয়ম আছে? সব থেকে বড় কথা হলো কজনেরই বা এই হিসাব দেখার প্রয়োজন আছে! কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে রাজ্য রাজনীতির এই টাল-বাহানার মধ্যে প্রশ্ন অনেক, সন্দিহানও অনেক, কিন্তু উত্তর কই!
প্রসূন গুপ্ত: তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে, না হয়নি, তা নিয়ে জল্পনার স্থান নেই। সম্প্রতি কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো বিভিন্ন জেলায় কিছু রদবদল করেছিলেন। মূলত দায়িত্বে থাকা নেতাদের মাথার উপর ফের অঘোষিত পর্যবেক্ষক বসিয়েছেন দলের সুপ্রিমো। এই পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই আদি তৃণমূল নেতা অর্থাৎ অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম, মলয় ঘটক প্রমুখ। এই পরিবর্তনে দলের একটি অংশের কাছে প্রশ্ন এসেছিল, তবে কি যুব মহল অর্থাৎ যা কিনা অভিষেকের পছন্দের, তারা বাতিল হবে? পরে অবশ্য মমতা জানিয়েছিলেন, যুবরাই ভবিষ্যৎ কিন্তু এখনই সময় হয়নি ভোট দাঁড়ানোর। জল্পনা এমন হয়েছিল যে, মমতাই কি দলের রাশ নিজের হাতে নিলেন? তিনিই কি প্রচারের মুখ আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে?
এত প্রশ্নের উত্তর একটাই, কোনও সন্দেহ নেই তিনিই মুখ। শেষ পর্যন্ত সব প্রার্থী ঠিক করার লিস্টে তিনিই টিক চিহ্ন বসাবেন। তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা কি? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফর করলেন এবং সব সাংসদের নিয়ে বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন বা প্রতিবাদের কাজটি সারলেন। দেখা গেল দুই হাউসের সদস্যরা অভিষেককেই এগিয়ে দিলেন পরিষদীয় নেতা থাকা সত্ত্বেও।
একদিকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে মমতা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর গেলেন তেমনই শনিবার থেকে অভিষেক শুরু করছেন বিভিন্ন জেলা সফর। ২০২১-এ বিশাল জয় এলেও বর্তমানে শিক্ষা থেকে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকার বিব্রত। সমাপ্ত সাগরদিঘি উপনির্বাচন, যা কিনা মুসলিম অধুষ্যিত, পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট কিন্তু মমতার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা।
কাজেই সাগরদিঘির মন কি সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে, প্রশ্ন তৃণমূল হাইকমান্ডে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে দুই প্রধান নেতাই বেড়িয়ে পড়ছেন ভোটের খোঁজে। অভিষেক ইদানিং বারবার ডুয়ার্স অঞ্চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার কারণ এই অঞ্চলে সব থেকে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল গত বিধানসভা নির্বাচনে। আলিপুরদুয়ারে একটিও আসন পায়নি তাঁরা। কাজেই অভিষেক আলিপুরদুয়ার থেকেই তাঁর প্রচার শুরু করছেন।
অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী নেতা বারবার চেষ্টা করেছেন পঞ্চায়েত ভোট এখুনি না করার। কিন্তু বাদ সেধেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে ভোট হচ্ছে আপাতত ঠিক। মে মাসেই ভোট বলেই অন্দরের খবর এবং ভোট পরিচালনা করবে রাজ্য প্রশাসন। তাই সাংগঠনিক প্রস্তুতির দায় অভিষেকেরই।
'অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নাম বলানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।' কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) এই বিস্ফোরক মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক (Politics) শোরগোল। শিক্ষা নিয়োগকাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ কুন্তল ঘোষের অভিযোগ সরাসরি কেন্দ্রীয় সংস্থার দিকে। বৃহস্পতিবার কুন্তলকে ব্যাঙ্কশালে স্পেশাল আদালতে তোলা হয়। সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'জোর করে আমাকে দিয়ে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাম বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ইডি।' এমনকি তিনি আরও বলেন, 'গোটা ঘটনা বিচারককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।' কুন্তলের এই অভিযোগ নিয়ে শোরগোল সৃষ্টি হয়েছে।
অবশ্য কুন্তল আগেই দাবি করেছিলেন যে, ‘প্রভাবশালী’দের নাম বলার জন্য তাঁর উপর চাপ দিচ্ছেন তদন্তকারীরা।' তবে সেই সময় কোনও নাম উল্লেখ করেননি তিনি। বৃহস্পতিবার অভিষেকের নাম করলেন তিনি। তাঁর আইনজীবীও তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার এই কাণ্ডে তাপস মণ্ডলকে প্রভাবশালীর নাম বলবেনা কিনা এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, 'কুন্তলের মুখেই শুনুন।' যদিও এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কুন্তল ঘোষকে জিজ্ঞেস করা হলে, প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ্যে আনলেন কুন্তল। এর আগেও কুন্তল অভিষেকের দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করছেন। দাবি করেছেন, তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে এনেছেন নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির নাম।
হিসেবে গরমিল, তাই টাকা আটকে আছে, অভিষেকের (Abhishek Banerjee) প্রশ্নের জবাবে জানালেন কেন্দ্রীয় (Central) কৃষি সচিব (Agriculture Secretary)। সূত্রের খবর, ১০০ দিনের কাজে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে দিল্লির কৃষি ভবনে গিয়েছেন অভিষেক-সহ ২৫ জন সাংসদ। সূত্রের খবর, বুধবার তাঁরা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর দেখা না পেয়ে হাজির হন কেন্দ্রীয় কৃষি সচিবের ঘরে। কেন্দ্রীয় কৃষি সচিবের কাছেই তাঁদের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি তুলে দিলেন।
বুধবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নেতৃত্বে ২৫ জন সাংসদের একটি প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লির কৃষি ভবনে যান। কিন্তু মন্ত্রীর দেখা না পেয়ে সচিবের কাছেই নিজেদের দাবির কথা জানান সাংসদরা। সচিবের সঙ্গে কথোপকথনে অভিষেক বলেন, '১০০ দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ এলে প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত করুন, আদালতে যান, কিন্তু রাজ্যের প্রাপ্য মিটিয়ে দিন।' টাকা আটকে রাখার কারণ হিসাবে কেন্দ্রীয় কৃষি সচিব হিসাবে গরমিলের কথা জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই ওই মন্তব্য করেন অভিষেক।
রাজ্যগুলি থেকে নেওয়া রাজস্বের একটা অংশই কেন্দ্র পুনরায় রাজ্যগুলিকে পাঠায়, এ কথা জানিয়ে অভিষেকরা বলেন, 'কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখায় বাংলার ১৭ লক্ষ পরিবার পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। তাই তাদের স্বার্থে বকেয়া ৭ কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক।'
আর কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে আটকে থাকা টাকা আদায়ে ‘সক্রিয়’ হতে চাইছে তৃণমূল। গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার’ দাবিতে রেড রোডে দু’দিনের ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্নার শেষে, আন্দোলনকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তারপরই রবিবার দিল্লি সফরে যান অভিষেক।
বুধবার অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) শহীদ মিনারে কেন্দ্রের (Central) বঞ্চনা ও জনবিরোধী নীতি নিয়ে একটি প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে তিনি বিজেপিকে (BJP) তির্যক আক্রমণ করেন। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিলকে জড়িয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাংসদ পদ বাতিলের দাবি করেন। পাশাপাশি অভিষেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্র সরকার বাংলার বহু টাকা আটকে রেখেছে, এছাড়া তিনি বুধবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও অভিষেকের বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা।
শহীদ মিনারের সভা থেকে রাহুল গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ার দাবি করে বুধবারের সভায় অভিষেক বলেন, 'যদি সামান্য বক্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ যায়, তবে মোদির কেন যাবে না, তিনি তো রাজ্যে ২০২১ সালে নির্বাচনী প্রচারে এসে, 'দিদি, ও দিদি' এভাবে ডেকে মহিলাদের ব্যঙ্গ করেছেন, তবে ওনার বেলায় আলাদা নিয়ম কেন?' সিএন-ডিজিটালের পক্ষ থেকে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, 'ওনাকে দিদি বলব না তো কি পিসি বলব, অভিষেকের পিসি হতে পারেন উনি কিন্তু আমাদের দিদিই। মোদীজি যেটা ডেকেছে সেটা ঠিকই বলেছে।' এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আসলে সব দুর্নীতিগ্রস্তদের এক হতে হবে, তৃণমূল দুর্নীতিতে কোনঠাসা, সে জন্যই এতদিন বিরোধিতা করতে এখন এক হতে চাইছে।'
বুধবারের সভামঞ্চ থেকে অভিষেক দাবি করেন, বিপুল অংকের টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া, প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা, পাশাপাশি আবাস-যোজনার টাকা, ১০০ দিনের কাজ সমস্ত কিছুর টাকা আটকে রেখেছে, যার ফলে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কয়েক লক্ষ সাধারণ মানুষ।' এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ' টাকা জনগণের, জনগনের টাকা দেখভালের দায়িত্ব মোদির, যদি দেখা যায় টাকা মাঝপথে তৃণমূলের পকেটে যাচ্ছে তাহলেও কেন দেবে, কিছু করার দরকার নেই দিদির দূত, প্রোগ্রামটি দেখুন, দেখবেন মানুষ কীভাবে অভিযোগ করছে, দিদির দূতেরা বলে দেবে কী চরম দুর্নীতি হয়েছে, যে কারণে দিদির দূত প্রোগ্রাম বন্ধ।'
তিনি বুধবার এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার তো টাকা দেবে বলে হিসাব চেয়েছিল, সরকার সৎ হলে হিসাব দিলো না কেন, কোন টাকা কীভাবে ব্যবহার করেছে, এর হিসাব দিচ্ছে না কেন, তারমানে চুরি করেছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে হিসাব দাও টাকা নাও, হিসাব নেই টাকা নেই।'
বুধবারের সভা থেকে অভিষেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধেও আঙুল তোলেন, তিনি বলেন, 'গত ২২ মাসে আমাদের রাজ্যে ২১টি ঘটনা সিবিআই-ইডি তদন্ত করছে, বিজেপি চক্রান্ত করে এসব করাচ্ছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।' পাশাপাশি অভিষেক বুধবার বলেন, 'সব চেষ্টা করে দেখুন, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে, শহীদ মিনারে মৃত্যুবরন করব।' অভিষেকের এই বক্তব্যকেও কটাক্ষ করে রাহুল সিনহা বলেন, 'ও তো অনেক বার এসব বড় বড় কথা বলেছে, ওকে মৃত্যুবরন করতে হবে না, ওকে কারাবরণ করতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'এখানে যে বিজেপির নাম করছে, কেন্দ্রের ক্ষমতা নেই ইডি-সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার। যদি কোনও প্রমাণ থাকে আদালতে দিক, সব তদন্ত কোর্টের নির্দেশেই হচ্ছে।'