
শেষবারের মতো এবারও ইডি (ED) অফিস থেকে বেড়িয়ে কেন্দ্র-সহ বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তবে ২০২২-র মার্চে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন দিল্লিতে আর এবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO Complex)। শুক্রবারও কয়লা-কাণ্ডে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। প্রায় ৭ ঘণ্টা বাদে ইডি দফতর থেকে বেরোন তিনি। আগের বারের মতোই মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমের। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, 'এর আগে দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল, এবার আদালতের নির্দেশে কলকাতায় ডেকেছে। এটা আমার নৈতিক জয়। আমি সমনের চিঠি বৃহস্পতিবার হাতে পেয়েছি। যদিও সংবাদ মাধ্যম আগেও খবরটা করেছে। বিজেপির একমাত্র পথের কাঁটা তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক ভাবে লড়তে পারছে না। তাই বারবার হেনস্থা করা হচ্ছে। তবে তদন্তে সহযোগিতা করব, তিন বার কেন ৩০ বার ডাকলেও আসব। আমার স্ত্রীকেও তিন বার তলব করা হয়েছে। আগেও যে কথা বলেছি, আজকেও বলছি যদি ৫ পয়সাও নিয়ে থাকি প্রমাণ হয়, তাহলে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে রাখবেন, ফাঁসিকাঠে ঝুলবো। কিন্তু প্রমাণ করুন পাঁচ পয়সা নিয়েছি।'
তিনি জানান, ইডি-সিবিআই জুজু দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমি মাথা নত করার মতো ছেলে নই। দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ কী আমরা জানি। অনেক বাঙালির রক্তের বিনিময়ে দেশে স্বাধীনতা এসেছে। তাই আগের নিজের ছেলেকে দেশপ্রেমের পাঠ শেখান। আপনার ছেলে বিসিসিআইয়ের সচিব হয়েও দেশের পতাকা হাতে নিতে অস্বীকার করেছেন। এভাবেই অমিত শাহকেও নিশানা বানান অভিষেক।
পাশাপাশি পাচার-কাণ্ডে ফেরার বিনয় মিশ্রের সঙ্গে নাকি ৮ মাস আগে শুভেন্দু অধিকারীর কথা হয়েছে। এই অভিযোগ এদিন তোলেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর দাবি, 'শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন আপনার কেস আমি দেখে নেব। আমার দাবির স্বপক্ষে অডিও ক্লিপ আদালতে দিতেও রাজি, তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হোক। দ্বীপরাষ্ট্রে নাকি রয়েছেন ফেরার অভিযুক্ত। পাচারের টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে গিয়েছে।' এদিকে, সুপ্রিম কোর্টেও শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন রক্ষাকবচ পেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামি সোমবার পর্যন্ত তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। অভিষেকের দায়ের করা এই মামলায় পরবর্তী শুনানি আগামি সোমবার।
কয়লা-কাণ্ডে ইডি জিজ্ঞসাবাদের মুখোমুখি তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। প্রায় ৫ ঘন্টা পার, সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO Complex) তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এ অবস্থায় বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আজ বড় কিছু ঘটতে পারে, আপনারা দেখতে থাকুন। এই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এদিন বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি (Sukanta Majumder) বলেন, 'দিদি ঘুরে আসার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে গিয়েছেন। দিদির প্রিয় কেষ্ট জেলে আছেন। যদি বোঝাপড়া থাকতো এঁরা জেলে যেতেন না। আগামি দিনে কেউ কেউ যেতে পারেন। আজকেও বড় কিছু ঘটতে পারে। আপনারা লক্ষ্য রাখুন।'
সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্যের পরেই তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন জানান, 'সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যে দুটো কথা স্পষ্ট হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটিং করেন না। কারও সঙ্গে আপস করে না। আর দ্বিতীয় ইডি, সিবিআই এখন আর নিরপেক্ষ নয়। বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে চলে। সেটাই আজ উনি ভুল করে হলেও ঠিক বলে ফেলেছেন।' কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর আবার খোঁচা, 'দিদি-মোদীর সেটিং আছে, ভাইপোর ভয়ের কোনও কারণ নেই।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'বড় কিছু হওয়ার গল্প কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী সব জানেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যখন চিটফান্ড-কাণ্ডের তদন্ত করছে, তখন কুণাল ঘোষ বলেছিলেন চিটফান্ডে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যিনি সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন, তিনি এখনও জেলের বাইরে। তাই বড় কিছু ঘটেনি। কিন্তু ঘটতে পারতো।'
প্রসূন গুপ্ত: ২৯ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, কী সুন্দর বক্তব্য রেখেছে অভিষেক। আবার হয়তো ওকে নোটিস পাঠাবে কোনও গোয়েন্দা সংস্থা। একই সুর দলনেত্রীর ভাষণের আগে শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও। তাঁর আশঙ্কা ছিল, ২১ জুলাইয়ের পরদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই জনসভার ৪-৫ দিনের মধ্যে হয়তো তৃণমূলের ফের কাউকে ডাকতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই জানা গেল শুক্রবারে ইডি, কয়লা কাণ্ডে ডেকে পাঠিয়েছে অভিষেককেই। যদিও ২৮ অগাস্ট তাঁর কাছে নোটিস গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
অভিষেককে এর আগে যতবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ডেকেছে, ততবার তিনি কিন্তু পরম দর্পে দেখা করতে গিয়েছেন। যদিও সাক্ষ্য দিতে ডাকা তবু কেন্দ্রীয় সংস্থার তলবে সাড়া দেওয়ায় আগ্রহ দেখায় কে? তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বিষয়ে অভিষেক অকুতোভয়, কারণ কী? এই নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বিস্তর। বিশেষজ্ঞদের ভাবনায় যা উঠে আসছে, তা খানিকটা এরকম।
১) অভিষেক এই বিষয়ে কিছু জানেন না। ফলে তাঁর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চেও তা জানিয়েছেন। অথচ সিবিআই বা ইডি ডাকলে যে কোনও রাজ্য বা পশ্চিমবঙ্গে অনেকে হাজিরা এড়ায়। সম্প্রতি এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে অনুব্রত বা পার্থর বেলাতে। শেষ পর্যন্ত দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
২) অভিষেক তৃণমূলের সংগঠন আরও জোরদার করার দায়িত্বে। তিনি জানেন যদি নানা বাহানায় তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তবে দলের মধ্যে বিশেষ করে তৃণমূলস্তরে ভুল বার্তা যাবে।
৩) সারা দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি নানা দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। বিরোধীরা মনে করছে ২০২৪-এর আগে মোদী সরকার এভাবে চাপে রাখতে চাইছে বিরোধীদের। কিন্তু এটাও সত্যি যে, আজ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ছন্নছাড়া অবস্থা। বিভিন্ন রাজ্যে অবিজেপি সরকার ভেঙে যাচ্ছে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। তবে কি বিরোধী বলে আর কিছুই থাকবে না? এই প্রশ্ন এখন জাতীয় রাজনীতির অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
৪) আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন বিশেষজ্ঞদের মত, বর্তমান বিশ্বে একনায়কতন্ত্রের রাজনীতি চলে না। কারণ গণতন্ত্রের হত্যা মানেই রাষ্ট্রপুঞ্জের চাপ আসবে। বিদেশি বাণিজ্য এবং বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজেই সমস্ত দলের উপর চাপ সৃষ্টি করাটা বিজেপির মতো শক্তিশালী দলের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে মমতা বা অভিষেকের উপর অহেতুক চাপ যে অমিত শাহরা করছেন না তা বলাই বাহুল্য। অভিষেক এটা জানে ফলে অকুতভয় হয়ে সহযোগিতা করছেন এজেন্সিগুলিকে।
শুক্রবার ইডির (ED Summon) কলকাতা দফতরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) ডেকে পাঠানো হয়েছে। নেপথ্যে কয়লা পাচার মামলা। আর কেন্দ্রীয় সংস্থার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো (Opposition)। বিজেপি (BJP) নেতা অনুপম হাজরা কটাক্ষের সুরে বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীই তো বলে দিয়েছেন কে কে চোর। এবার দেখার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কবে ইডি নোটিস আসে। আশা করব যাদের ডাকা হচ্ছে, তাঁরা তদন্তে সহযোগিতা করবেন।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, 'এগুলো কোনও খবর নয়। পিসি-ভাইপো সব জানেন। বিশেষ করে ভাইপো এই পাচার নিয়ে সবচেয়ে বেশি জানেন। জ্যোতিষী না হলে কী করে পিসি সব জানলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক থেকেই উনি সব জেনে গিয়েছেন।'
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, এর আগেও ডেকেছে। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু দেখছি না। মুখ্যমন্ত্রী হয়তো বা নিজের সূত্র থেকে বিষয়টা আন্দাজ করেই একটা আভাস দিতে পেরেছিলেন।
এদিকে, ফের আগামী শুক্রবার কয়লা কাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকেছে ইডি। যদিও ২৮ তারিখ রবিবার তাঁকে নোটিস মেইল করা হয়েছে। এমনটাই সূত্র মারফৎ খবর। এবার তাঁকে যেতে হবে ইডির কলকাতা দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে বিশেষ আধিকারিকরা আসছেন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। তিনি অবশ্যই আইনি পরামর্শ নিয়েই ইডি সমনে সাড়া দেবেন। পর্যবেক্ষকদের কাছে রহস্যময় বিষয় এই যে সোমবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, ২১ জুলাইয়ের মেগা সমাবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কে বলতে পারে আজকের সমাবেশের পর (পড়ুন ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান) ৪-৫ দিনের মধ্যে আবার কারও ডাক আসতে পারে। এই আশঙ্কাই খানিকটা আক্রমণের সুরে করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
প্রসূন গুপ্ত: ফের আগামী শুক্রবার কয়লা কাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকেছে ইডি। যদিও ২৮ তারিখ রবিবার তাঁকে নোটিস মেইল করা হয়েছে। এমনটাই সূত্র মারফৎ খবর। এবার তাঁকে যেতে হবে ইডির কলকাতা দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে। জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে বিশেষ আধিকারিকরা আসছেন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। তিনি অবশ্যই আইনি পরামর্শ নিয়েই ইডি সমনে সাড়া দেবেন। পর্যবেক্ষকদের কাছে রহস্যময় বিষয় এই যে সোমবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, ২১ জুলাইয়ের মেগা সমাবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কে বলতে পারে আজকের সমাবেশের পর (পড়ুন ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান) ৪-৫ দিনের মধ্যে আবার কারও ডাক আসতে পারে। এই আশঙ্কাই খানিকটা আক্রমণের সুরে করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
সেই সম্ভাবনাকে উসকে দিয়ে চিঠি একদিন আগে এলেও, মেয়ো রোডের সমাবেশের ঠিক ৪ দিনের মাথায় খোদ অভিষেকেরই ডাক পড়লো ইডি দফতরে। এদিকে, সোমবার ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। সাধারণত ২৮ অগাস্ট প্রতিষ্ঠা দিবস, কলকাতার মেয়ো রোডেই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রাথমিক বক্তব্য ছাত্র সভাপতি বা দু-একজন বক্তা বক্তব্য রাখার পর প্রধান বক্তা হিসাবে মঞ্চে আসেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। এবার দলের নাম্বার টু অর্থাৎ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন অন্যতম বক্তা। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে অভিষেক এখন তৃণমূলের কোনও প্রধান অনুষ্ঠানে প্রথমসারির বক্তা।
কারণ অবশ্য অনেক। এই মুহূর্তে সারা বাংলা-সহ যেখানে তৃণমূলের অবস্থান আছে সেখানেই অভিষেক, কারণ সংগঠনকে মজবুত করা দরকার। শোনা যায়, দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা অন্তত তেমনটাই জানেন। দলের সংগঠন দেখবেন তিনিই এবং শেষ কথাও তিনি বলবেন| সোমবারের সমাবেশে তৃণমূলের আদি নেতারা মোটামুটি সকলেই ছিলেন এবং যাঁরা ভাষণের মাঝে নেত্রীর নাম উল্লেখ করেন। গতকাল কিন্তু মানুষ দেখলো বা শুনলো অন্য কথা। ববি হাকিমের মতো প্রবীণ নেতার মুখেও তৃণমূলের আগামী নেতা হিসেবে অভিষেকের নাম। মমতা ঘনিষ্ঠ অন্য নেতা তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও বক্তব্য শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদের সঙ্গে জুড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ।
এখন প্রশ্ন, কেন অভিষেকের নাম রাজ্যের একাধিকক মন্ত্রীর মুখে। রাজনৈতিক মহলে শোনা গিয়েছে, ইডি বা সিবিআই তদন্তে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কম্পন শুরু হয়েছে। তখন একমাত্র অভিষেক নিয়মিত যাচ্ছেন ইডির ডাকে সাড়া দিতে। বেশ কয়েক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে এসে দাপটে কেন্দ্রকে সমালোচনার সুরে বিঁধছেন তিনি। বারবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে। সোমবারও তাঁর অন্যথা হয়নি।
সোমবার মেয়ো রোডে (Mayo Road) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে কড়া বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata)। এদিন এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের উদ্দেশে বিদেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভায় মমতা এবং অভিষেকের আক্রমণের মূল নিশানায় ছিল রাজ্যের বিরোধী দলগুলো। সেই আক্রমণের পাল্টা এসেছে গেরুয়া শিবির (BJP) থেকে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, 'আমাকে, অভিষেককে চোর বলছে। সবাই চোর আর ওরা সাধু এটা হতে পারে না।'
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জানেন কে কী করেছেন। উনি পশ্চিমবঙ্গের মাটি এবং মানুষ ছেনেন,স এভাবেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চেনেন। মা যেমন ছেলের দোষ ত্রুটি জানেন, সেভাবেই প্রত্যেককেই উনি মাতৃস্নেহে লালিত পালিত করেছেন।'
এদিকে, এদিন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সম্পত্তিবৃদ্ধি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সেই মামলা প্রসঙ্গে শমীক ভট্টাচার্য জানান, যিনি মামলা করেছেন, তিনি প্রতিক্রিয়া দিতে পারবেন। এখানে সব ব্যাপারে মামলা চলছে। আমাদের বিরুদ্ধে এবং আমার বিরুদ্ধেও মামলা চলছে। আমাদের জিজ্ঞাসা করলে কোর্টে উত্তর দেব।
পাশাপাশি এদিন অভিষেকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই বিজেপি নেতা বলেন, 'কয়লা চুরি-গোরু চুরিতে যে অভিযুক্ত বিএসএফ তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিসের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিস ব্যবস্থা নেবে। তারপর বিএসএফ-র কেউ প্রতিবাদ মিছিল করেছে? না আমাদের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীরা রাস্তায় নেমেছেন? দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স। তৃণমূলের অসুবিধা কোথায়? ওদের কাছে যদি খবর থাকে প্রমাণ দিক কারা চোর।'
এমনকি, জয় শাহ প্রসঙ্গে কড়া অভিষেকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি মুখপাত্র বলেন, 'কে জয় শাহ? বিজেপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, না পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক। আর যে তৃণমূল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের নিচে নেতাজির ছবি রাখে সে এই সমালোচনা করছে!'
ঠিক কী কী বললেন শমীক ভট্টাচার্য--
মেঠো ভাষণ আর আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় অনেক ফারাক। মাঠে ময়দানের ভাষণ সাধারণত একটা হৈহৈ বা হওয়া গরম করা কথাই পেশ করেন রাজনীতিবিদরা। বাম জমানায় প্রমোদ দাশগুপ্ত এ বিষয়ে এক্সপার্ট ছিলেন কিন্তু হওয়া গরম ভাষণ কোনও দিনও জ্যোতিবাবু বা বুদ্ধদেববাবুরা দিতে পারতেন না। কংগ্রেসি সংস্কৃতির ভাষণও সে প্রকার। তাঁরা কখনও নরেন্দ্র মোদীর মতো মেঠো বক্তৃতা দিতে পারেন না, যা ইন্দিরা পারতেন। মেঠো ভাষণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীনতা উত্তর যুগে অন্যতম সেরা। তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে হিন্দি ইংরেজি ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে ভাষণ দিয়ে থাকেন চিরকাল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারেই ভিন্ন চরিত্রের। তাঁর উঠে আসা মাত্র কয়েক বছর কিন্তু নিজেকে গড়েপিঠে তৈরি করেছন। এবং কখনও নরম, কখনও গরম ভাষণ দিলেও তার মধ্যে যুক্তি সর্বদা এমন ভাবেই খাড়া করেন যে মানুষ, যারা শ্রোতা তারা ভাবেন, তাই তো এমনটাই ঘটেছে।
ব্যতিক্রম ছিল না সোমবারও। ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান একদিন উদযাপন করে টিএমসিপি। এই অনুষ্ঠানে প্রথমে বক্তব্য রাখেন অরূপ বিশ্বাস এবং ববি হাকিম। এরপরেই অভিষেক তাঁর ভাষণে প্রথমে ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। তৃণমূল সাংসদ বলেন, 'ঘরে ঘরে গিয়ে গরিব ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য।' এরপর তিনি আস্তে আস্তে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ান। তাঁর বক্তব্যের সিংহভাগ ছিল অমিত শাহ ও তাঁর পরিবারকে আক্রমণ। তিনি সোজাসুজি বললেন, 'কয়লা গরু পাচারের দায়ে কার? কেন্দ্রীয় পুলিস কী করছে এবং তাদের মন্ত্রী অমিত শাহ দায় এড়াতে পারেন কি?' অর্থাৎ প্রকারান্তে অনুব্রত থেকে অন্যান্য নেতাদের আগে কয়লা-গোরু পাচার-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় পুলিস জবাব দিক।
এরপরই রবিবারের হাই ভোল্টেজ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিরাট-হার্দিক-রোহিদের জয়ের প্রসঙ্গ টানেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিশানা করেন বিসিসিআই সচিব তথা অমিত শাহের পুত্র জয় শাহকে। একটি ছবি এবং ভিডিও সোশাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ভারত জেতার পর গ্যালারিতে বসা জয় শাহকে কোনও এক ক্রীড়া অনুরাগী একটি জাতীয় পতাকা হাতে দিতে চাইছে, সেই তেরঙ্গা নিতে অস্বীকার করছেন অমিত পুত্র।
এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, 'এটা দেশ-বিরোধী কাজ অতএব জয়কে অবিলম্বে ক্রিকেট বোর্ড থেকে বহিষ্কৃত করা হোক।' পাশাপাশি দেশের নানা প্রসঙ্গ তুলে বলেন, 'সংবাদ মাধ্যম সত্যিটা তুলে ধরুন।' অবশ্য তিনি দলনেত্রীর মতো মিডিয়াকে আক্রমণ করেননি।'
ঠিক কী কী বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়?
কোনও সন্দেহ নেই যে আজও তৃণমূল কংগ্রেস দলের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজও দলের শেষ কথা তিনিই বলেন। এমনটাই মনে করেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু একটা সম্ভাবনাও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভাবাচ্ছে, সুচিন্তিতভাবে কি দলের সংগঠনের দায়িত্ব কোনওভাবে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই হস্তান্তর হচ্ছে? খানিকটা এমনটাই সত্যি মনে করেন সাংসদ তথা প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের হাওড়ার সাংসদ প্রসূনবাবু টেলিফোন সাক্ষৎকারে সিএন পোর্টালকে জানালেন, নতুন পুরাতন বলে দলে কিছু নেই। দিদিই আমাদের আদর্শ কিন্তু অভিষেক দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এতো অল্প বয়সে এই অভিজ্ঞতা খুব কম মানুষের আছে। যা এখন পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, দল কি তবে অভিষেকের ফর্মুলা মেনে এক ব্যক্তি এক পদ নিয়ে চলেছে?
তিনি বললেন, 'এটা খারাপ কীসে? দীর্ঘদিন ধরে একই নেতারা সবধরনের ক্ষমতা দখল করে রয়েছেন এটা ঠিক নয়, এতে আত্মম্ভরিতা বাড়ে। দায়িত্ব সবসময়ে ভাগ করে দিতে হয়।' প্রসূনবাবু বললেন, 'দলের অন্দরে ১ শতাংশ মানুষেরও যদি কোনও কেলেঙ্কারি মানুষের সামনে চলে আসে তবে সেটা তো দলেরই সংকট। তাই পরিবর্তন যদি আসে মন্দ কী?'
এই সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রসূন জানান, অভিষেক কারও উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ছেলে নয়। বরং সর্বদা আলোচনা করে সকলের অভিমত জানতে চান, যেটা তাঁদেরও ক্ষেত্রে হয়েছে দিল্লিতে। প্রশ্ন করা হয়, অভিষেক তো সব তরুণদের দায়িত্ব দিতে চাইছে? প্রসূনবাবু বলেন একদম বাজে কথা, ও উপযুক্ত মানুষকেই খুঁজে নিচ্ছে যেখানে বয়স কোনও সমস্যা নয়।
বাস্তবেই কিন্তু তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষা কেলেঙ্কারির কারণ এক লহমায় দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। তেমনই শুক্রবার অনুব্রত মণ্ডলকে সরিয়ে দেওয়া হলো পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্ব থেকে। বাকি রইলো বীরভূম, সে তো সময়ের অপেক্ষা|
এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংগঠনিক দায়িত্ব অভিষেকের (Abhishek) কাঁধে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ ছাড়াও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও বটে। তাঁর নেতৃত্ব হয়তো মেনেও নিচ্ছেন দলের ছোটবড় নেতারা। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এঁরা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Bandyopadhyay) অস্বীকার করছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে মমতাই দলের মুখ এবং সারা বাংলায় তিনি ভোটের প্রার্থী বলে দাবি করেন, সেখানে নতুন মুখের আবির্ভাব?
দক্ষিণ কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই বড় বড় হোর্ডিং (Hoarding) অভিষেকের ছবি সমৃদ্ধ। যেখানে ক্যাপশন আছে "আগামী ৬ মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল"। এছাড়াও হোর্ডিংয়ে আছে "ঠিক যেমন মানুষ চায়"। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, সম্প্রতি দলের জেলা শহর ইত্যাদির নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রী হয়েছেন, যাঁরা নাকি অভিষেক ঘনিষ্ঠ।
অন্যদিকে, বিরোধীরা বিশেষ করে সিপিএম-কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি ব্র্যান্ড শিন্ডে। অর্থাৎ যেভাবে শিবসেনা ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এনডিএ, তেমনটাই নাকি হতে চলেছে বাংলায়, অভিষেক হয়তো নতুন মুখ। এ কথাকে আমল দেওয়া হয়নি তৃণমূলের পক্ষ থেকে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, হোর্ডিংয়ে যা লেখা আছে তা তো অভিষেক সরাসরি বলেইছেন। এতে দলে বিভেদের কী আছে?
তবুও প্রশ্ন উঠছে অনেক। প্রথমত, ২১ জুলাইয়ের আগে দলের কর্মীদের জানানো হয়েছিল, নিজের ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার করা চলবে না। অভিষেক নিজে বিভিন্ন সভায় বলেছেন, দলের একজনই নেত্রী, বাকি সবাই কর্মী। এরপরেও ব্যতিক্রমী ওই হোর্ডিং এল কীভাবে? জানা গেল, 'আশ্রিতা' এবং 'কলরব' নামক দুটি সংস্থা এই হোর্ডিং লাগিয়েছে। যদিও দুটি সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই, কিন্তু ওই সংস্থার মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ঘোরতর তৃণমূলী।
এবার খেলা দিবসের পর নতুন খেলা কোনদিকে যায়, সেটাই দেখার।
বৃহস্পতিবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছন, সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে 'পার্থ কাণ্ডের'র পর দলের কন্ট্রোল অনেকটাই নিয়েছেন অভিষেক। নতুন যে মন্ত্রীরা রাজ্য ক্যাবিনেটে অন্তর্ভুক্ত হলেন, তাঁরাও নাকি সকলেই অভিষেক ঘনিষ্ঠ। এক ব্যক্তি এক পদের ফর্মুলাতে এবার নাকি দল চলবে। যিনি প্রশাসনে থাকবেন, তাঁকে প্রশাসনিক কাজ করতে হবে। যাঁরা সংগঠনের দায়িত্বে এসেছেন, তাঁরাই দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখবেন। এবারে জেলায় জেলায় যে পরিবর্তন হল, তার অনেকটাই ব্র্যান্ড অভিষেকের ফর্মুলাতে হয়েছে বলেই ঘাসফুলের অন্দরে সংবাদ। ফলে একদিকে টিম নবান্নতে যেমন অভিষেকের নজর থাকবে, তেমনই দলের অন্দরেও নাকি চলবে নজরদারি।
বাকি ছিল পার্লামেন্টের সদস্যদের দায়িত্ব। বৃহস্পতিবার দেখা গিয়েছে মমতা থাকলেও, সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক সারলেন অভিষেকই। সেদিন রাতেই তৃণমূলের সব সাংসদ একত্রিত হন সুখেন্দু শেখর রায়ের বাড়িতে। লোকসভায় দলের চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্বর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতা সকলের সঙ্গেই সামান্য কিছু কথাবার্তা সারেন। এরপর সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অভিষেক।
উপস্থিত ছিলেন সকলেই, নতুন সংযোজন আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা এবং বিজেপি ফেরত অর্জুন সিং। সংসদের অবস্থান প্রথমে জেনে অভিষেক তাঁদের অভিযোগের সুরে পরিষ্কার জানান, যে ভাবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্য দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সংসদের দুই কক্ষে সোচ্চার হতে হবে। বক্তা হিসেবে থাকবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মহুয়া মৈত্রদের মতো বাগ্মি সাংসদরা।
সংসদীয় রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শত্রুঘ্ন সিনহার ভাষণের উপরেও দলের আস্থা আছে। এবার ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং অবশ্য বিরোধী বেঞ্চে বসবেন। অর্থাৎ তাঁর প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখবে ট্রেজারি বেঞ্চ।এদিকে, 'মা কালী' নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মহুয়া মৈত্রকে দেখা গিয়েছিল সকলের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠতে। শোনা গিয়েছে উপরাষ্ট্রপতির ভোটে নাকি শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু দিল্লি আসছেন। তিনি এখনও তৃণমূলের সাংসদ। কিন্তু এই ভোটে তো তৃণমূল অংশ নিচ্ছে না।
দিব্যেন্দুর সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিনিও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের অনুশাসন মেনে ভোটে অংশ নিচ্ছেন না। অন্যদিকে শিশির অধিকারীও ভোট দেবেন না বলে খবর।
নবান্নের অলিন্দে গুঞ্জনের ছায়া , পরিবর্তিত হতে চলেছে মমতা মন্ত্রিসভা। এই ইঙ্গিত নবান্নে বসে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।তবে সিএন পোর্টাল কিন্তু পার্থ বিদায়ের খবর সবার আগেই জানিয়েছিল সেই মোতাবেক আজকের এই প্রতিবেদন। জানা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রিসভার পরিবর্তন আনতে চলেছেন। আমূল পরিবর্তন নাকি মন্ত্রীহীন দফতরগুলোতে নতুন মুখ আসবে তাই নিয়ে চলেছে জল্পনা। আগামী সোমবার ১ অগাস্ট ফের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাবিনেট ডেকেছেন। বৃহস্পতিবারের পর ফের কেন মন্ত্রিসভার বৈঠক তাই নিয়েই জল্পনা চলেছে।কিন্তু পরিবর্তন যদি হয়ে তবে তা কীভাবে?
১) সমস্ত মন্ত্রীরা ( মুখ্যমন্ত্রী ব্যতিত ) পদত্যাগ করতে পারেন। তারপর ফের নতুন মন্ত্রিসভায় আসতেও পারেন।
২) শূন্যস্থান পূর্ণ হতে পারে।
৩) অনেকেই বা কেউ কেউ বাতিল হতে পারেন , আসতে পারে নতুন মুখ।
জল্পনা এই কারণে রাজ্যপাল ভবন সূত্রে নাকি জানা গিয়েছে, ফের শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো যদি পরিবর্তন হয় তবে কোন দফতরগুলোর উপর নজর দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে ১) শিল্প ও বাণিজ্য ২) পঞ্চায়েত ৩) শিক্ষার মতো দফতরগুলির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হতে পারে। দলের হাইকমান্ড চাইছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নজর রয়েছে তাদের হয়তো বাদ দেওয়া হতে পারে। অথবা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দেখতে পারেন। জল্পনায় শোনা যাচ্ছে শশী পাঁজা-সহ বেশ কয়েকজন গুরুদায়িত্ব পেতে পারেন। নতুন মুখের মধ্যে বাবুল সুপ্রিয়র নাম রয়েছে। সমস্তটাই ঠিক করবে দলনেত্রী নিজে। অবশ্য এই বিষয়ে অভিষেকের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।জেলাস্তরের পরিবর্তনও হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে।
দ্রুত নিয়োগ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ। ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূল সাংসদের অফিসের বাইরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন দুই চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একজন মেরি মণ্ডল এবং পিয়ালি প্রামাণিক। গুরুতর অসুস্থ মেরিকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে নবান্ন থেকে তাঁদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মাঝে আট বছর কেটে গেলেও নিয়োগ হয়নি। এদিকে, আগে থেকে বলা না থাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের দেখা করতে বাধা দেয় পুলিস। তারপরেই অবস্থান শুরু করে তাঁরা।
এদিকে, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে শিক্ষক নিয়োগে চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বললেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি শহিদুল্লাহ। ৮ আগস্ট ফের বৈঠক বলে জানান তিনি । ২০১৬ সালের প্রথম এসএলএসটি তালিকাভুক্ত সকলের চাকরির আশ্বাস দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ৮ জনের এক প্রতিনিধি দল বৈঠক করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অভিষেকের বৈঠকে হাজির শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধিরা বলেন, "অভিষেক জানিয়েছেন, একদিনে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে আলোচনা যে ভাবে হয়েছে তা ইতিবাচক হওয়ায় আমরা খুশি।" আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত চাকরি দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অভিষেক।
দলের সব পদ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) অপসারিত করা হয়েছে। দল (TMC) থেকেই সাসপেন্ড তিনি। বৃহস্পতিবার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল তৃণমূল। এদিন সন্ধ্যায় পার্থ-কাণ্ডে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তার আগে কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই এই সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি বলেন, 'তৃণমূল মানুষের দল। আমরা মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। কেউ অন্যায় করলে তৃণমূল রেয়াত করে না। সে যত বড়ই নেতা হোক। পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের পাঁচটি পদে আসীন ছিলেন। সবক'টি পদ থেকেই অপসারিত করা হল তাঁকে। এটাই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সব সদস্যদের সিদ্ধান্ত।'
তিনি জানান, যদি কেউ অভিযুক্ত হয়ে থাকে, প্রমাণ হলে তৃণমূল তাঁকে সহযোগিতা করবে না। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। একটা সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নিয়েছেন। আমরা জানতে চাই, মানুষ জানতে চায় এত কালো টাকার উৎস কী। তদন্তকারী সংস্থা খুঁজে বের করুক। এই কালো টাকার দায় এড়াতে পারে না কেন্দ্র। তদন্ত একটা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করুক ইডি। আট বছর পেরিয়ে গেলেও সারদা-কাণ্ডে ইডির চার্জশিট নেই। আমরা চাই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হোক। দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁরা শাস্তি পাক।'
দলের সাংসদ তথা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ভারতে এমন কোনও দল নেই, যারা ছয় দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিহিংসার শিকার পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে দলকে ব্যবহার করা যাবে না।'
এসএসসি নিয়োগের অচলাবস্থা নিয়ে এবার হস্তক্ষেপ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিয়োগের দাবিতে ৫০০দিন শহরের রাজপথে বসে চাকরিপ্রার্থীরা। এই আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আন্দোলনকারী নেতা সইদুল্লার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে, এক বছরের বেশি সময় ধরে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান করছেন। এঁরা মূলত এসএলএসটি অর্থাৎ শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষা বিষয়ে নবম-দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থী। তৃণমূল সূত্রে খবর, আন্দোলনকারীদের নেতা শহিদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে অভিষেকের দফতরের।
প্রতিবাদীদের জানানো হয়েছে, অভিষেক তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুক্রবারই গান্ধী মূর্তির পাদদেশের ধর্না মঞ্চে যেতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের জন্য শূন্যপদ তৈরির কথাও বলেছিলেন তিনি। সেই শূন্যপদের হিসাব দিতে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন।
উপরাষ্ট্রপতি ভোটে ভোটদান থেকে বিরত থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা করলেন দলের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তিনি জানান, যেভাবে বিরোধীদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রার্থী হিসেবে মার্গারেট আলভার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের ৩৫ জন সংসদ, তাও আলোচনা করা হয়নি। এদিন কালীঘাটে তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে প্রায় ৮৫% সাংসদ ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তের পরেই স্পষ্টতই প্রশ্নের উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি বিরোধী ঐক্যে ফাটল? এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'উপরাষ্ট্রপতি ভোটে তৃণমূল ভোট দিচ্ছে না মানে বিরোধী ঐক্যে ফাটল! এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। একসঙ্গে লড়াই করার আরও অনেক জায়গা আছে।' অভিষেক বলেছেন, 'প্রতিটি দলের আলাদা আলাদা আইডোলজি রয়েছে।গণতান্ত্রিক দেশে পৃথক আইডোলজি থাকবে। আইডোলজিক্যালি সাপোর্ট করতে পারিনা এনডিএ প্রার্থীকে। শুধুমাত্র কংগ্রেস নয়, বিরোধী দলগুলিকে সিবিআই দিয়ে হেনস্থা করছে বিজেপি। ওরা ধোঁয়া তুলসি পাতা?'
এদিকে, তৃণমূলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'কংগ্রেসকে কলুষিত করার চেষ্টা। বিজেপির হয়েই কাজ করছে তৃণমূল। একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের গলায়। তিনি বলেছেন, 'বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করল না তৃণমূল।'