
প্রসূন গুপ্তঃ অবশেষে তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন তাঁদের 'ইন্ডিয়া' জোটের অন্যতম সঙ্গী কংগ্রেসকে লোকসভা নির্বাচনে সঙ্গী হিসাবে চান। পরিষ্কার বার্তা এটাই যে, জোট ফর্মুলা মেনে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাথী হিসাবে চান কিন্তু কোনও ভাবেই সিপিএমকে নয়। এবারে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে সিপিএমও তো জোটের বিভিন্ন বৈঠকে গিয়েছে তবে কেন ছুৎমার্গ? অভিষেক এই বিষয়ে একটি কথায় জোর দিয়েছেন যে কংগ্রেসকে নিয়ে তাঁদের কোনও ছুৎমার্গ নেই, কিন্তু সিপিএমের সঙ্গেও জোট করার প্রশ্ন নেই।
অভিষেক এখন মোটামুটি তৃণমূল দলের দায়িত্বে আছেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর কথাই চূড়ান্ত হিসাবে গ্রহণীয় তা দলের কর্মী নেতাদের কাছে পরিষ্কার। পাঠকদের নিশ্চই মনে আছে মুম্বই বৈঠকের আগে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একেবারে ভোরে তাঁর দিল্লিতে বৈঠক হয়েছিল ১০ নম্বর জনপথে। বৈঠকের সারাংশ নানান মিডিয়া নানান ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। অতি সক্রিয় কিছু পোর্টাল বা কংগ্রেসের কিছু বামঘেঁষা নেতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল যে, নেহাতই অভিষেকের আবেদনে রাহুল সারা দিয়েছেন। আদত ঘটনা তা মোটেই ছিল না। রাহুল এবং অভিষেক গোপন বৈঠকে জোট পদ্ধতি বা কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ ইত্যাদি নিয়েই কথা বলেছিলেন। পরে তা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গের প্রেস বৈঠকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
এটা আমাদের আগের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল যে, সিপিএম তৃণমূলের জোট হওয়া অসম্ভব এবং ক্ষেত্র বিশেষে কংগ্রেসের সঙ্গেও জোট সম্ভব নয়। এরপরেই ঝোলা থেকে বিড়াল বের করে সিপিএম জানালো যে, তারা জোটের সমন্বয় কমিটিতে থাকছে না। শেষ বক্তব্যে বাকি শরিকরা যে বিরক্ত তা বলাই বাহুল্য। কংগ্রেসের একটা অংশ মনে করে সিপিএমের বর্তমান রাজনৈতিক শক্তি একেবারেই নামমাত্র। যতটুকু যা অবশিষ্ট তা রয়েছে কেরালায়। কাজেই পশ্চিমবঙ্গে খামোকা তাদের সাথে থেকে লাভ কি বরং তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে বিজেপির আসন কমবে এবং কংগ্রেসের আসন আসতে পারে অতএব সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াও। অবিশ্যি রাজ্য কংগ্রেসে কৌস্তভ বাগচীর মতো কেউ কেউ আছেন যাঁরা মোটেই তৃণমূলের জোট চান না। কার্যক্ষেত্রে কৌস্তভেরই ডানা ছাটা পড়েছে। বার্তা অবশ্যই দিল্লির হাইকমান্ডের।
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলার শুনানিতে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। বুধবার দুপুরের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সেই মতই এদিন দুপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী জমা দিলেন তার হলফনামা। ইতিমধ্যেই লিখিত বয়ান আদালতে জমা করেছে সব পক্ষই। শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রাখল আদালত।
এদিনের মামলায় রাজ্যের আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, কলকাতা পুলিসের পক্ষ থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্সের অফিস থেকে যে ১৬ টি ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ফরেনসিক রিপোর্ট এই আদালতে জমা পড়েছে। আদালত এ বিষয়ে শুনানিও গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইডির পক্ষ থেকে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে আবেদন জানানো হয়েছে, কলকাতা পুলিস তাদের হেনস্থা করছে। একই বিষয় নিয়ে দুটি আদালতে কি করে আবেদন জানায় ইডি? বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, আমার সহযোগী বিচারপতির এজলাসের বিষয় নিয়ে আমি কখনই নির্দেশ জারি করতে পারি না, আপনারা প্রয়োজনে আপিলে যেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড সংক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনের যৌক্তিকতার মামলায় ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেয় CFSL কলকাতা। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, CFSL রিপোর্ট ফাইলের পেনড্রাইভ থাকবে কলকাতা পুলিসে। ১৯ সেপ্টেম্বরের সব পক্ষকে দিতে হবে হলফনামা। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সময় নিয়ে বুধবার জমা দেন হলফনামা। এবার সমস্ত পক্ষের হলফনামা খতিয়ে দেখে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় পরবর্তী শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্ট, সেটাই দেখার।
প্রসূন গুপ্ত: রাজনীতিতে সৌজন্য থাকাটা আবশ্যিক কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারতের রাজনীতির ধরণটি হয়েছে, কে কাকে কতটা কুবাক্য বলতে পারে তার নগ্ন প্রতিযোগিতা। এ বছর শেষের দিকে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর জন্ম শতবর্ষের শুরু। জানা নেই সরকার তাঁর বিষয়ে কি ভাবনা ভেবেছে। কয়েক বছর আগে আর এক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম শতবর্ষ হয়ে গেলো নীরবেই। দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রীর জন্ম শতবর্ষ মানুষ জানতেই পারলো না। অথচ এই ইন্দিরার অবদান সর্বজন বিদিত। সরকারে অন্য দল থাকলে বিরোধিতার জন্য নিশ্চিত কিছু দল তো থাকবে কিন্তু এই বিরোধী বিষয়টিই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের স্থানে চলে গিয়েছে। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সৌজন্যবোধ।
রবিবার ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। বিশ্বকর্মা পূজোর দিন জন্মেছিলেন তিনি। ১৯৫০ এর আজকের দিনে। আজ ঘটনা চক্রে বিশ্বকর্মা পূজো নেই, হবে সোমবার। কিন্তু সাধারণত ১৭ সেপ্টেম্বরেই পূজো হয় কাজেই মোদীকে অনেকেই ভালোবেসে 'নব্য বিশ্বকর্মা' বলে থাকে। ৭৩ পূর্ণ করে প্রধানমন্ত্রী ৭৪ এ পা দিলেন। আগের দিন হলে বলা যেত মোদীজির আর এক বছর হাতে আছে কারণ তাঁদেরই নিয়ম ৭৫ এর পর প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে সরে যেতে হয়। কিন্তু তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই 'নিয়ম' নয়। কাজেই বিজেপির বিভিন্ন কর্মী সমর্থক এই জন্মদিনকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকায় অনুষ্ঠান করছে।
বিরোধীদের দিক থেকে মোদী কত শুভেচ্ছা পেলেন জানা নেই কিন্তু আজকের রাজনীতির বুদ্ধিমান নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কয়েক মাস বাদে লোকসভা নির্বাচন। মোদী, অভিষেক দুজনই প্রার্থী হবেন এবং ভাষণে দুই ব্যক্তিত্ব পরস্পরকে ছেড়ে কথা বলবেন না কিন্তু জন্মদিন যে কোনও মানুষের কাছে একটি ব্যক্তিগত সুখের দিন কাজেই সৌজন্য দেখতে ক্ষতি কোথায়?
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সম্পত্তির খতিয়ান দেখবে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) সাতদিনের মধ্যে সমস্ত হিসেব জমা দিতে হবে আদালতে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে সেরকমই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ইডির কাছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার বেশ কয়েকটি বিষয় জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রথমত, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির খতিয়ান চেয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। মোট ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ওই সংস্থার সব সদস্যদেরই সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে ইডিকে। একইসঙ্গে সংগঠনের স্মারকলিপি, সংস্থার রেজিস্ট্রেশনের তারিখও জানাতে হবে ইডিকে।
বিচারপতি সিনহার আরও নির্দেশ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যে সব টলি অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের নাম উঠে আসছে, তাঁদেরও সম্পত্তির খতিয়ান রিপোর্ট হিসেবে জমা দিতে হবে ইডিকে। বিচারপতি সিনহার এই নির্দেশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
একদিন আগেই রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। তবে এখনই যে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হবে না, এই মর্মে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন ইডি-র আইনজীবী। শেষ পর্যন্ত বুধবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সকাল ১১টা ৪০ নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন অভিষেক। চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। অবশেষে ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর সিজিও থেকে বেরলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। ছাতা হাতে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল সিজিও (CGO Complex) থেকে। আর সিজিও থেকে বেরিয়ে আসতেই ইডিকে আক্রমণ করে মন্তব্য করলেন, 'নির্যাস শূন্য নয়, মাইনাস ২।'
বুধবার সিজিও থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, 'আগে জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস শূন্য বলেছিলাম, আজ বলছি মাইনাস ২। শুধু সময় নষ্ট। যাঁরা ইডি-র দফতরে কাজ করছেন, তাঁদের কোনও দোষ দিই না আমি। তাঁরা তাঁদের কর্তব্য পালন করছেন।' এছাড়াও তাঁর মন্তব্যে উঠে আসে ফেলুদা-জটায়ু প্রসঙ্গ।
আগের দিনও গিয়েছিলেন, এদিনও গেলেন কালো টি-শার্ট পরেই। এই কালো টি-শার্ট পরেই কখনও দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে, কখনও কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে আসতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শেষবার সিজিও-তে এসেছিলেন মে মাসে। এদিকে অভিষেককে ইডির তলব নিয়ে এদিন সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার পোস্ট করতে থাকে তৃণমূলের যুব সেল। ট্রেন্ড হতে থাকে #ABJhukeganaki. এজেন্সি রাজনীতির অভিযোগ তুলে পড়তে থাকে একের পর এক পোস্ট। আইটি সেলকে হাতিয়ার করে অভিষেকের সমর্থনে সুর চড়াতে থাকেন তৃণমূলের যুব ব্রিগেড।
ইডি দফতরে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এদিন সকাল ১১টা ১২মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে ইডির (ED) দফতরের উদ্দেশে রওনা দেন অভিষেক। ১১টা ৩৪ মিনিটে সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO Complex) কালো গাড়িতে ঢুকতে দেখা যায় সাংসদকে। বুধবার ইন্ডিয়া-র বৈঠকে উপস্থিত না থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাকেই সাড়া দিলেন অভিষেক।
বুধবার সকাল থেকেই পুলিসি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় সিজিও চত্বর। জানা গিয়েছে, স্কুল নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিষেককে তলব করা হয়েছে। তাপস মণ্ডল, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বয়ান, কুন্তল ঘোষের চিঠি, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে তাঁর ভূমিকা কী, সেই বিষয়ে এদিন অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর।
এদিন, দুপুর ১২টা নাগাদ জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু হবে সিজিও কমপ্লেক্সের পাঁচতলায় ইডি-র দফতরে। উপস্থিত থাকবেন দু’জন অ্যাসিস্টেন্ট পদমর্যাদার অফিসার। এই ঘরে ভিডিয়ো রেকর্ডিং হবে বলে ইডি সূত্রে খবর।
এদিকে, বুধবারই দিল্লিতে ইন্ডিয়ার বৈঠক রয়েছে। সেখানে যে তিনি থাকছেন না, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্তের মুখোমুখি হতে ভয় পান না । কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকের দিনই কেন তলব? এই প্রশ্নেই সরগরম রাজনীতি।
প্রসূন গুপ্তঃ বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর। ব্রিটিশদের কাছে অপয়া দিন। কিন্তু ১৩ আবার মমতার 'লাকি' তারিখ। জল্পনা, কল্পনা ও ভাবনা ইত্যাদিতে সরগরম মিডিয়া মহল কারণ বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন ইডি দফরে। বিজেপির নানান নেতা এবং তাদের কাছের পোর্টালগুলি অনেকদিন ধরে প্রচার করেছে যে, এবারে অভিষেককে শিক্ষা দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। চুপ করে নেই সিপিএমের মুখপাত্ররাও। কিন্তু তেমন কিছুটি হচ্ছে না বলে অন্দরের খবর।
বুধবার বিরোধীদের 'ইন্ডিয়া' জোটের প্রথম সমন্বয় বৈঠক দিল্লিতে এবং বৈঠকটি হচ্ছে প্রবীণ নেতা শারদ পাওয়ারের বাড়িতে। অভিষেক এই সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য কাজেই তিনি ওই বৈঠকে হাজির থাকবেন বলেই কথা ছিল কিন্তু এই দিনেই ইডির জরুরি তলব তাঁকে।
গত রবিবার অভিষেক নিজেই ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন যে, 'ইন্ডিয়া'র প্রথম বৈঠকে তিনি যাতে উপস্থিত থাকতে না পারেন সে কারণেই তাঁকে ইডি ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, বিচারপতি অমৃতা সিনহা সম্প্রতি ভর্ৎসনা করে ইডির কাছে জানতে চেয়েছেন যে কেন অভিষেককে ডাকা হচ্ছে না। ১৪ সেপ্টেম্বর এই বিচারপতির এজলাসে হাজির হচ্ছেন ইডির কৌঁসুলি, সে কারণেই নাকি ১৩ তে অভিষেকের তলব।
মঙ্গলবার অন্য এক এজলাসে ইডির আইনজীবী জানিয়েছেন যে, অভিষেককে গ্রেফতারের প্রশ্নই নেই। তাঁকে 'শিক্ষা কাণ্ডে' কিছু প্রশ্নের জন্যই ডাকা হয়েছে। অতএব অভিষেক ফের সন্ধ্যায় আগের মতোই মিডিয়ার সামনে তাঁর বক্তব্য পেশ করবেন বলেই ধারণা।
অন্যদিকে তিনি 'ইন্ডিয়া'র বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না জেনে জোটের নেতারা জানিয়েছেন, অভিষেক এখন আর শুধু তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক নন, তিনি জোটের অন্যতম নেতা। কাজেই কোনও ঘটনা হলে তার বিরুদ্ধে জোট, জোটবদ্ধ হবে। আপাতত এই বিষয়ে সিপিএম কোনও মন্তব্য করছে না, অন্যদিকে জোটের প্রথম বৈঠকে তাদেরও কোনও প্রতিনিধি থাকছে না। থাকবেন সিপিআই এর সাংসদ ডি.রাজা।
'ইন্ডিয়া' নয় ইডি (ED)। আজ, বুধবার বেলা ১১.৩৪ মিনিটে সিজিও কমপ্লেক্সে ফের হাজিরা দিলেন তৃণমূল (TMC) কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তার আগে মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, আগে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা। নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার বার্তাও দিয়েছেন অভিষেক। মঙ্গলবারই তৃণমূলের তরফের রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানিয়ে দেন, ইডিকে ভয় পান না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ, বুধবার দিল্লিতে প্রথমবার ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় ও নির্বাচনী কৌশল কমিটির বৈঠক হতে চলেছে। দুটি কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সবার আগ্রহ ছিল, ইন্ডিয়া জোট নাকি ইডি, কোথায় যাবেন অভিষেক ? কিন্তু মঙ্গলবার ইডি নিয়ে তাঁর স্পষ্ট বার্তায় সেই জল্পনায় যবনিকা পড়ে।
যদিও বুধবার অভিষেক ইডিতে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। রক্ষাকচবের ব্যাপারে আদালত জানিয়ে দেয়, নতুন করে কোনও রক্ষাকবচের প্রয়োজন নেই। কারণ, ইডি আগেই এ ব্যাপারে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। আদালতকে ইডি জানিয়েছে, অভিষেককে ডাকা হলেও, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।
স্পেন সফরের আগে অভিষেককে ইডির তলব নিয়ে ফের কেন্দ্রকেই তোপ দেগেছিলেন তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করেছিলেন, অভিষেককে অহেতুক হেনস্থা করা হচ্ছে। মমতার দাবি, অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। শেষবার ইডির দফতরে প্রায় ৯ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
তদন্তকারী সংস্থা, তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই ডাকতে পারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁকে কখনোই অভিযুক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এমনকী, কোর্টের এমন কোনও নির্দেশ নেই, যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমন পাঠানো যাবে না। বারবার ইডি থেকে আদালত এই কথা বলছে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের আইনজীবীকে। তাহলে ইডি সমনে এত আপত্তি কেন, তদন্তে সহযোগিতা করতে এত আপত্তি কেন অভিষেকের? এই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। একইভাবে আদালতে ইডিরও প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সংস্থার সমনের বিরোধিতা কেন করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? উল্লেখ্য ১৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার নতুন করে ইডির কলকাতা অফিসে ডাকা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রবিবার এক্স অ্যাকাউন্টে নিজেই সেই তথ্য দেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। একইভাবে সোমবার নবান্নে সুর চড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীরও। তিনি বলেছিলেন, বারবার অভিষেককে হেনস্থা করা হচ্ছে। ওর বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই। এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি।
যদিও মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি সমন পাঠানোয় সমর্থন জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, এমনটাই মঙ্গলবার স্পষ্ট করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়লে অন্য ব্যবস্থা। তাও কেন এত বিচলিত তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড? ইডির সম্মুখীন না হয়ে কি কিছু লুকোতে চাইছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ? তাই কি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি? রাজ্য রাজনীতির অন্দরে কান পাতলে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নগুলো। কিন্তু তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ইডি সমন প্রসঙ্গে আবার আক্রমণাত্মক। দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং পার্থ ভৌমিক মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন বুধবার ইডি তলবে সাড়া দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিরদাড়া সোজা। মন্ত্রী শশী পাঁজার অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডার দেখেই তাঁকে সমন পাঠানো হচ্ছে।
শাসক দল-সহ রাজ্যের দুই জোড়া মন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ব্যাট ধরলেও সুর নরম করতে চাইছে না বিরোধী শিবির। একসঙ্গেই অভিষেককে ইডি তলব প্রসঙ্গে পাল্টা আক্রমণে বাম-আইএসএফ-বিজেপি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর শ্লেষাত্মক মন্তব্য, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে অপরাধ করে কোর্টের বেঞ্চিতে বেঞ্চিতে ঘুরে বেড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির আবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, টি-টুয়েন্টি না হোক পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট খেলুক ইডি। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিরও সুর চড়া। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য অভিষেককে ইডি তলবে খুব একটা আশা দেখছেন না। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের আবার নাম না করে অভিষেককে খোঁচা, নিজেকে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোনও কারণ নেই।
এভাবেই এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে অভিষেকের দরবার, এক কোর্ট থেকে অপর কোর্টে অভিষেকর আবেদন ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। একইভাবে প্রশ্ন, কেন রক্ষাকবচের জন্য প্রাণপাত করছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। মুখে অভিযোগ প্রমাণ হলে ফাঁসির দড়ি পরে নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও, ইডি সমন পেলেই কোর্টে দৌড়! এটা কি আদতে দ্বিচারিত নয়, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি-র তলব করা নিয়ে ফের মুখ খুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বারবার অভিষেককে বিনা কারণে হেনস্থা করা হচ্ছে।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে ইডির বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, অভিষেককে তলব করে নতুন প্রজন্মের উপর আক্রমণ করতে চাইছে ইডি। পাশাপাশি, নতুন প্রজন্মও কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
রবিবার সন্ধের সময় টুইট করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, বুধবার তাঁকে হাজিরা দেওয়ার জন্য ডেকেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ওই দিনই আবার বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে। ওই কমিটির সদস্য রয়েছেন স্বয়ং অভিষেক।
এর পাশাপাশি সোমবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চন্দ্রবাবুকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে আমি সেটা ভালোভাবে দেখছি না। তদন্ত হতে পারে। কিন্তু তাই বলে কাউকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।"
ফের অভিষেককে তলব ইডির (ED)। তাও বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনই তাঁকে তলব করেছে ইডি। নিজেই টুইট করে এমনটা জানালেন তৃণমূল সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
রবিবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, যে কমিটির আমিও একজন সদস্য। কিন্তু ইডি ওইদিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে। এই মাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।’ ঘটনাচক্রে, যে দিন অভিষেককে ইডি তলব করেছে, তার ঠিক এক দিন আগেই বিদেশ সফরে রওনা হচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
FIRST meet of INDIA’s coordination comm is on 13th Sept in Delhi, where I'm a member. But, @dir_ed conveniently served me a notice just now to appear before thm on the VERY SAME DAY! One can't help but marvel at the TIMIDITY & VACUOSNESS of the 56-inch chest model. #FearofINDIA
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) September 10, 2023
রবিবার রাতে করা নিজের এই পোস্টের সঙ্গে একটি হ্যাশট্যাগও জুড়ে দিয়েছেন অভিষেক। ‘ফিয়ার ইন ইন্ডিয়া’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অভিষেক আদতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই কটাক্ষ করেছেন, এমনটাই মত বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বড়সড় প্রতিশ্রুতি দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন ৩১ ডিসেম্বরের আগেই আলাদা মহকুমা হবে ধুপগুড়ি। এর সঙ্গে হাসপাতাল, স্কুল সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ধুপগুড়িকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। শনিবার সেখানে উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তাঁর সেই সভা থেকেই ফের মহকুমা ঘোষণার দাবি তোলা হয়। সেখানেই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধুপগুড়িকে আলাদা মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন অভিষেক।
সভার পৌঁছনোর আগেই একাধিকবার অভিষেকের কনভয় দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন তিনি। দোহমনি বাজার সহ এলাকার যে সমস্ত রাস্তা খারাপ রয়েছে সেগুলি নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও সব রাস্তা সারাই করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও শোনা গেছে অভিষেকের মুখ থেকে।
অমিত শাহের দিল্লির পুলিশের বাধায় কার্যত ধাক্কা খেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি চলো কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লির রামলীলা ময়দানে আগামী দোসরা অক্টোবর ধরনা দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। তৃণমূলের সেই ধরনার অনুমতি দিল না দিল্লি পুলিস। ফলে ফের সংঘাতের রাস্তাই তৈরি হল বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই টাকা ফেরত আনতেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
অভিষেকের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছেন তৃণমূল নেত্রীও। কিন্তু দিল্লির পুলিসের এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপির কলকাঠি দেখছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। তৃণমূলের অভিযোগ, তৃণমূলের শক্তির কাছে আগে থেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছে দিল্লি পুলিস।
প্রসূন গুপ্তঃ বুধবার রাত থেকেই সমস্ত রাজনীতি যেন ১০ জনপথে থমকে গেলো। এদিন মূল বৈঠকের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী সেরে ফেললেন 'হোমওয়ার্ক'। খবর ছিল মঙ্গলবার রাতেই অভিষেক নাকি প্রশান্তকিশোর বা পিকের সাথে বিকেলের বিমানে দিল্লি চলে গিয়েছেন। খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর মমতা বিরোধী একাংশের বক্তব্য ছিল নিশ্চিত চাপে পরে অভিষেক দিল্লিতে সেটিং করতে গিয়েছেন। কিন্তু কারওর মাথায় এটা এল না যে বিজেপির ঘোরতর বিরোধী ভোট সংগঠক পিকেকে কেন নিয়ে যাবেন অভিষেক। পর দিনই মুম্বইতে মূল 'ইন্ডিয়া'র বৈঠক। কিন্তু যতটুকু আভাস পাওয়া গেলো তা, অভিষেক নাকি রাহুলের সঙ্গেই একান্ত বৈঠক করতে চান অথবা রাহুল চেয়েছেন অভিষেকের সাথে বসতে এবং পিকে এর 'মাধ্যম'। এমনটিও শোনা গেলো শুধু অভিষেক রাহুল নয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়াল না থাকায়, অভিষেক রাহুলের সঙ্গে বৈঠক সেরে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরে যে 'হঠাৎ' হলোটা কি?
বুধবার একেবারে ভোরে (সময় আন্দাজ ৬.৩০) ১০ জনপথে রাহুল ও অভিষেকের ব্রেকফাস্ট বৈঠক হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এই বৈঠকে ঠিক কি আলোচনা হয়েছে তার খবর কোনও মাধ্যমের কাছে নেই। তবে অভিজ্ঞাতায় এটা বলা যায় যে, আসন্ন ভোটের আগে স্ট্রাটেজি কি হবে বা বিজেপির তরফ থেকে কি কি চাপ বা পরিকল্পনা হতে পারে এটা নিশ্চই আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আপাতত বিরোধী দলের প্রধানমন্ত্রীর মুখ না থাকলেও কাকে অনেকটা দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে এই ২৬ দলের জোটে ভাঙা এনসিপি আছে, ভাঙা শিবসেনা আছে এবং সর্বদা পাল্টে যাওয়া উচ্চাকাঙ্খী নীতীশ কুমারও রয়েছেন। অতএব এই দলের প্রাথমিক মুখ কোনও ভাবেই হয়তো শারদ পাওয়ার বা নীতীশবাবুকে দেওয়া যাবে না।
যদিও বৃহস্পতিবার ২৬ বিরোধী দলের কোনও কেউ কেউ মূল দায়িত্বে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর অনেকটাই ভরসা করছে সোনিয়া বা রাহুল। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ যদি এই ২৬ দলের কারুর উপর আসে বা দল ভাঙানোর চেষ্টা হয় তবে সম্মিলিত ভাবে বিরোধীরা ভারত জুড়ে নানান আন্দোলনে নামতে পারে বলেই গুঞ্জন। নির্ভর করছে ৩১ অগাস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর।
তাঁর পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁরা দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করতে জানেন না।' তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে এভাবেই আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, তাঁর পদবী মোদী বা চোকসি নয়, বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথা নীচু করতে জানেন না তাঁরা। একইসঙ্গে বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, তৃণমূলকে ধমকে-চমকে লাভ নেই। তৃণমূলকে কেউ দমাতে পারবে না।
বিদেশে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চোখের চিকিৎসার জন্য। সেইসময় একটা খবর রটেছিল যে, অভিষেক আর ফিরবেন না। পালিয়ে গিয়েছেন। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলেই বিরোধীদের উদ্দেশে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি পালানোর লোক নন।
অভিষেক বলেন, 'আমার পদবী মোদী নয়, আমার পদবী চোকসি নয়, আমার পদবী মাল্য নেই, আমার পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা মাথা উঁচু করে লড়তে জানি। মাথা নীচু করে বশ্যতা স্বীকার করে দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করতে জানি না।'
একই সঙ্গে এদিন অভিষেকের বক্তৃতায় উঠে আসে পঞ্চায়েত প্রসঙ্গ। যেখানে তৃণমূল সাংসদের দাবি, গণতান্ত্রিকভাবে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে তৃণমূল জিতেছে। তাঁর কথায়, শাসকদলের থেকে বিরোধীরা বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে, এ ঘটনা বিরল। বাংলার ইতিহাস কেন,. ভারতবর্ষের ইতিহাসে আপনারা দেখাতে পারবেন না।' পঞ্চায়েত প্রসঙ্গ তুলে আগামী দিনে লোকসভা ভোটে জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।