দীপিকা দাস: 'ফিল্ম ব্যান করার অধিকার কারোর নেই। দিদি যদি একবার ছবিটি দেখতেন'। আক্ষেপ ও ক্ষোভের সুর 'দ্য কেরালা স্টোরি' (The Kerala Story) ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেনের (Sudipto Sen) কন্ঠে। 'দ্য কেরালা স্টোরি', এই ছবি নিয়ে সারা দেশজুড়ে ঝড় বয়ে চলেছে। একাধিক বিতর্কের মাঝেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলায় (West Bengal) এই ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ঠিক তারপরেই বাংলার সংবাদমাধ্যমে প্রথম সিএন ডিজিটালকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। ঠিক কী বলেছেন তিনি।
প্রথমত সিনেমাটি বাংলায় নিষিদ্ধ হয়েছে। তার উপর পরিচালক নিজেই বাঙালি। সেকারণেই হয়তো আক্ষেপের সুর 'দ্য কেরালা স্টোরি'র নির্মাতা সুদীপ্ত সেনের গলায়। মঙ্গলবার দেওয়া সিএন ডিজিটালে সাক্ষাৎকারে বলেন, 'প্রথমে আশ্চর্য লাগল, কারণ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না, পরে দুঃখও হলো যে আমার নিজের রাজ্যেই যদি লোকেরা না দেখে তবে, সারা বিশ্বে যাঁরা দেখছেন ছবিটি, তাঁদের সামনে কী করে মুখ দেখাই।' ওই একই প্রসঙ্গে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপও দাগেন এবং বলেন, 'কথায় আছে, পশ্চিমবঙ্গ সবার আগে ভাবে, তারপর সারা ভারতবর্ষ ভাবে, সেই ঐতিহ্য থেকেই ভেবেছিলাম। 'পদ্মাবত' নিয়ে সারা ভারতবর্ষে আন্দোলন হয়েছিল তখন মমতা দিদি তার সমর্থনে ছিলেন। মহুয়া মৈত্রজি বিবিসির ডকুমেন্টরির জন্য বলেছিলেন। আমরা তো শুধু ছবি বানিয়েছি। আমি সাতবছর এই ছবিতে সময় দিয়েছি। এখন তাঁরা ছবিটি দেখলেন না, না দেখেই কিছু লোকের কথা শুনে ব্যান করে দিলেন, ফলে এটা খুব দুভার্গ্যজনক।'
এই সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর সিনেমা ব্যান করায় কোথাও কী পক্ষপাত তুষ্ঠ উঠে আসছে?এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'একদম, আমি পলিটিশিয়ান নই, তবে ফিল্মমেকার হিসাবে খুব আঘাত পেয়েছি।' এই রাজনৈতিক আচরণের প্রশ্নে মমতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, 'এরকমভাবে দু'রকমের রাজনীতি করার কী মানে হয়? মমতা দিদি বাংলার রাজনীতির আইকন, ওনারই এরকমের হিপোক্রিটিক চেহারা, আমি মেনে নিতে পারিনা। আমার এখনও মনে হয়, দিদি ফিল্মটা দেখলে এখনও মত বদলাতে পারেন ও উনি সবাইকে বলবেন ফিল্মটা গিয়ে দেখে আসুন।'
এতক্ষণ ধরে তাঁর গলায় ক্ষোভের সুর পাওয়া গেলেও এবারে তাঁর গলায় যেন আক্ষেপের সুর। ওই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে আইন-শৃঙ্খলার প্রবলেম হবে, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার প্রবলেমটা তো তারাই ক্রিয়েট করে শোগুলো বন্ধ করলেন। পশ্চিমবঙ্গে খুব ভালো ব্যবসা হয়েছিল চারদিন, গোটা দেশে এমনকি কাশ্মীরেও কোনও বিরোধ নেই। কাশ্মীরে এই সিনেমা দেখে দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন সেখানকার স্থানীয়রা।'
সম্প্রতি এই সিনেমা নিষিদ্ধ করার পর বঙ্গে যে রাজনীতির পারদ চড়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং মানুষ কোনটা দেখবে কোনটা দেখবে না, সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন বহু সাধারণ মানুষ। সেদিক থেকে কার্যত ব্যাকফুটে তৃণমূল সরকার। এভাবে কোনও জিনিসকে নিষিদ্ধ করলে মানুষের আগ্রহ যে বেড়ে যাবে সেটাও মানছেন সকলেই। এই বিষয়ে সিনেমা নির্মাতা সুদীপ্ত সেন বলেন, 'লোকেরা তো ফিল্মটি দেখবেনই, ব্যান করে কী লাভ হবে। ছবিটি টিভিতেও আসবে পরে ওটিটিতেও আসবে। ওনারা আটকাতে পারবেন না। শুধু শুধু ইতিহাস লিখলেন।' এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'উনি কারোরই ভালো করলেন না। না রাজ্যের মুসলমানদের জন্য ভালো করলেন, না হিন্দুদের জন্য ভালো করলেন। আমি যে বাংলাকে নিয়ে গর্ব করি সারা পৃথিবীতে, সেই বাংলার ব্যবহার দেখে আমার ভালো লাগলো না।'
বঙ্গে এই সিনেমা ব্যান করা নিয়ে আইনের পথে যে হাঁটবেন সেকথা আগেই সিএন ডিজিটালকে জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। দেশের শীর্ষ আদালতে পরিচালক সুদীপ্ত সেনের আবেদনের শুনানি আজ অর্থাৎ বুধবার। মঙ্গলবার রাতে সিএন ডিজিটালকে একথা নিজের মুখে জানালেন তিনি। 'ফিল্মটা দেখানো হবে কি হবে না, সেটা সিবিএফসি ঠিক করবে। সিবিএফসি ছবিটাকে ছাড়পত্র দিলে আর কারোরও কোনও অধিকার নেই ব্যান করার। এই ছবি ভারতবর্ষে সবার দেখার অধিকার আছে। আমি দিদিকে এখনও হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আপনি নিজে ফিল্মটা দেখুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। এগুলো ইনটেলেকচুয়াল আর্টের ব্যাপার, তাই নিজে দেখে সিদ্ধান্ত নিন। গুন্ডা প্রকৃতির লোকজনের কথা শুনে দিদি ফিল্ম বন্ধ করে দেবেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।'
'দ্য কেরালা স্টোরি' ছবির একটি গান লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। যে গানটি পাঁচবার নামাজ পড়া এক ব্যক্তি লিখেছেন।' এই তথ্যও সিএন ডিজিটালকে নিজেই জানালেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি কার সেকিউলারিজমের উদাহরণ দেব? ধর্ম কারোর সম্পত্তি নয়, সবাই সবার জন্য ভাবেন। এমন অনেক লোক প্রথমে বিরোধ করছেন, পরে আমাকে মেসেজ করে জানিয়েছে যে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। এগুলোর ছবি পরে আমি টুইটার ইনস্টাগ্রামেও শেয়ার করব।'