
শুভশ্রী মুহুরী: বাংলা সিনেমা জগতে নব জোয়ার এনেছিলেন তিন পরিচালক, সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক (Satyajit-Mrinal-Ritwick)। তৎকালীন বাণিজ্যিক ছবির প্লট ভেঙে তুলে ধরেছিলেন জীবনের প্রতিচ্ছবি, সমাজের প্রতিভূ। পরিচালকেরা প্রয়াত হয়েছেন কবেই। কিন্তু সেই সাদা-কালো চিত্রনাট্যের মায়ায় আজও আবদ্ধ সিনেমাপ্রেমী বাঙালিরা। সেই সময়ে পরিচালকদের পাশাপাশি তাঁদের স্ত্রী-পরিবার সবাই আত্মিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়তেন। ভালো খারাপে একে অপরের পাশে দাঁড়াতেন। পরবর্তী প্রজন্ম কেবল তাঁদের গল্প শুনেছেন। তবে এবার সম্পর্কের লিখিত আখ্যান উঠে এলো এক চিঠিতে।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি চিঠি ঘুরপাক খাচ্ছে। পুরোনো হলদেটে এক কাগজে, খানিকটা ছিঁড়ে যাওয়া নীল কালিতে লেখা একটি চিঠি। যেমন তেমন চিঠি নয়। পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী চিঠি লিখেছিলেন মৃণাল সেনের স্ত্রীকে, তাও আবার মৃণাল সেনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে। বহু বছর পর মায়ের পুরোনো ব্যাগ ঘাটতে গিয়ে অমূল্য এই চিঠি খুঁজে পেয়েছেন মৃণাল পুত্র কুণাল সেন। সেই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। গীতা সেনকে কী লিখেছেন সুরমা ঘটক? সুরমা ঘটকের লেখা বানান, শব্দ গঠন এবং যতিচিহ্ন অপরিবর্তিত রেখে সেই চিঠি তুলে ধরা হল।
ঋত্বিক পত্নী সুরমা লিখেছেন, "গীতা আজ মৃণাল সেনের জন্মদিন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন মৃণালবাবুকে জানাচ্ছি। মৃণাল বাবুরা একটি যুগের প্রতীক। একটা স্বপ্ন নিয়ে-কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন জীবনের পথে-এরপর সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের পাতায় মৃণাল সেন নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে ও থাকবে। - আর সত্যজিতের পরে মৃণাল ও ঋত্বিক, বা ঋত্বিক ও মৃণাল শব্দ দুটি সবসময়ই একসঙ্গে উচ্চারিত হয়।"
মৃণাল সেনের সঙ্গে ঋত্বিক পত্নী সুরমার সম্পর্কের সমীকরণ কেমন ছিল, সেই উল্লেখ পাওয়া যায় এই চিঠির পাতা থেকেই। সুরমা ঘটক লিখেছেন, "মৃণালবাবু সবসময়ই আমার প্রতি সহানুভূতিশীল। মনে পড়ে আমাকে শ্মশান থেকে হাত ধরে উনির বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছিলে তুমি ও অনুপকুমার পরে বেলা ও নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি। সবাই মিলে সেদিন আমায় উদ্বার করে দিয়েছিলে।"
সুরমা চিঠিতে তাঁর জীবনে মৃণাল সেনের অবদান নিয়ে আরও স্মৃতিচারণ করেছিলেন। তবে নেটিজেনদের বুকে বিঁধছে চিঠির শেষের দিকের একটি লাইন। সুরমা আক্ষেপের সুরে গীতা সেনকে লিখছেন, "একটা যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের মধ্যেইতো মানুষ বেঁচে থাকে।"
সামাজিক মাধ্যমে মৃণাল এবং ঋত্বিক প্রেমীরা এই চিঠি রেখে দিতে চাইছেন তাঁদের টাইমলাইনে। একটা যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই চিঠির প্রতিটি শব্দ, বয়ে চলেছে সেই সময়কাল।