এই নববর্ষে বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে একেনবাবুর কীর্তি 'দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান' (The Eken Ruddhoswas Rajasthan)। সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে এসে সেলুলয়েডের পর্দায় অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র একেনবাবু। এ যাবৎকাল মুক্তি পাওয়া একেনবাবুর গল্পে বেশ কমিক রিলিফ পেয়েছেন বাংলার দর্শক। সদা হাস্যময় গোল-গাল চরিত্রের একেনবাবু থুড়ি অনিবার্ণ চক্রবর্তী (Anirban Chakraborty) দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট চরিত্র লালমোহন গাঙ্গুলি কিংবা রুদ্ধশ্বাস রাজস্থানের একেনবাবু অর্থাৎ অনির্বাণ চক্রবর্তীকে ফোনে ধরলেন সিএন ডিজিটালের প্রতিনিধি মুন্নি চৌধুরী। জানুন একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বললেন একেন্দ্র সেন।
প্রশ্নঃ রহস্য-কমেডিতে ভরপুর একেনবাবু। নববর্ষে বাঙালির জন্য কী বিশেষ উপহার রাখছে 'দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান?'
উত্তর: একেন বাবুর ৬টা সিজন ওয়েব সিরিজে হয়েছে। আর একটা ছবি গত বছর পয়লা বৈশাখে বড় পর্দায় রিলিজ হয়েছে। সেটা সাফল্য পেয়েছিল। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ বছর নববর্ষে আরেকটা ছবি রিলিজ হবে। শুরু হয় গল্প বাছা। নতুন বছরের উপহার বলতে, আগের বছর এই সময় একেন বাবুকে দেখতে পছন্দ করেছিলেন দর্শকরা। রহস্য, হাসি, মজা সবটা মিলিয়ে নতুন ভাবে একেন বাবুই নতুন বছরে উপহার দর্শকদের জন্য।
প্রশ্নঃ শহরের রাজপথে গোল-গাল হাসিমুখ মানুষটার পোস্টারে ছয়লাপ। কেমন অনুভূতি হয় এমন ভালোবাসা পেয়ে?
উত্তর: [একটু আমতা আমতা করে] প্রথম যখন বেরিয়েছিল আমার পোস্টার। সালটা ২০১৮। সে সময় খুবই আনন্দ পেয়েছিলাম। কারণ প্রথমবার যে জিনিসটা হয় সেটা অনেকটা স্পেশাল হয়। এখন খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি দেখতে দেখতে। তবুও ভালোই লাগে এখনো, সে কথা অস্বীকার করার জায়গা তো নেই।
প্রশ্নঃ আটবার একেনবাবুর চরিত্রে। একাধিকবার জটায়ুর চরিত্রে। গোয়েন্দার চরিত্রেই কি বেশি ফোকাস করতে চান?
উত্তর: এরকম কোনও পরিকল্পনা নেই। এর আগেও আমি একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেছি। ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে। একেন বাবু জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কারণ অল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার এই চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। ফেলুদার সঙ্গী হিসেবে জটায়ুর চরিত্রে করেছি। যদিও আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতেই বেশি উপভোগ করি।
প্রশ্নঃ জটায়ু-র চরিত্র মানে বাঙালির কাছে সন্তোষ দত্ত। সেখানে দাঁড়িয়ে এরকম আইকনিক একটা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকে সন্তোষ দত্তের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে দেখেছেন? নাকি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি?
উত্তর: [প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই] না, না। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার কোনও কারণই নেই। সেই দুঃসাহসও আমার ধারণা কোন অভিনেতার নেই। এক একটা চরিত্রের জন্য এক একজন মনে গেঁথে থাকেন। আর জটায়ু মানে সন্তোষ দত্ত এটা সারাজীবন মানুষের মনে থেকে যাবে। আমি এবং আরো অনেকেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সকলে যে যাঁর মত চেষ্টা করেছেন। সন্তোষ দত্ত জটায়ু হিসেবে এমন ভাবে সকলের মস্তিষ্কে ও মননে রয়েছেন, আমার মনে হয় না সেই জায়গায় পৌঁছানো কারোর পক্ষে সম্ভব। সুতরাং এটা আমার সৌভাগ্য যে ওই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আমি পেয়েছি।
প্রশ্নঃ শৈল শহরের পর একেবারে মরুভূমি। এরপর কী একেনবাবুর ডেস্টিনেশন সমুদ্র?
উত্তর: [কিছুটা উচ্ছ্বাসের সুরে] এখনও কিছু ঠিক হয়নি। সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে দর্শকদের সাড়ার উপর। কতটা ভালোবাসা দিচ্ছেন তার উপর। সেক্ষেত্রে আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
প্রশ্নঃ এ বছর বাংলা সিনেমার বক্স অফিস ততটা সাড়া ফেলতে পারেনি। ট্রেলারেই যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছেন, তাতে কী মনে হচ্ছে এটাই এবছরের প্রথম সুপারহিট সিনেমা হতে চলেছে?
উত্তর: এটা আমি একদমই বলতে পারবো না। তবে যবে থেকে ট্রেলার বেরিয়েছে, তখন থেকে দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছি। দর্শকরা যেভাবে ফিডব্যাক দিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে দর্শকরা আগ্রহী ছবিটা দেখবে বলে। তারপর কী হবে সেটা রিলিজ হওয়ার পরেই বোঝা যাবে। আমি একেবারেই আগে থেকে তা প্রেডিক্ট করতে পারিনা।
প্রশ্নঃ সৌমক, সুহত্র। আপনাদের এই ত্রয়ী জুটির একসঙ্গে কাটানো কোনও সেরা মুহূর্ত?
উত্তর: সেরা মুহূর্ত সেভাবে বলা মুশকিল। আমাদের তিনজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। কারণ আমরা তিনজনই একসঙ্গে তিনবার এই চরিত্রে অভিনয় করলাম। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ডিং হওয়ার কারণে কাজটা করা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। আর আমাদের যে ভালো বন্ডিংটা দর্শকরা হয়তো পর্দায় বুঝতে পারেন।
প্রশ্নঃ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজে, বড় পর্দায়। প্রত্যেকবারই নিশ্চয় কোনও না কোনও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। এবারের 'দ্য একেন' করতে গিয়ে বিশেষ কী অভিজ্ঞতা হল?'
উত্তর: আমি এর আগে জয়সলমিরে কোনওদিন যাইনি। এখানেই ছবিটা মূলত শুট হয়েছে। সোনার কেল্লা দেখা, এছাড়াও আরো অনেক জায়গা রয়েছে সেগুলো দেখা আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। দর্শকরাও অনেক অদেখার জায়গা ছবিতে দেখতে পাবেন।
প্রশ্নঃ বাঙালি গোয়েন্দা মানে, একটা গম্ভীর, হিরো-হিরো চরিত্রকে আমরা কল্পনা করে থাকি। কিন্তু একেনবাবু তো সম্পূর্ণ উল্টো। হাসি,মজা, সিরিয়াস সবটাই রয়েছে। এটাই কি তাহলে একেনবাবুর ইউএসপি?
উত্তর: একেবারেই তাই। আমারও তাই মনে হয়। অন্যান্য গোয়েন্দা চরিত্রের পাশাপাশি দর্শকরা একেন বাবুকে সে কারণেই হয়তো এতটা পছন্দ করেছেন। এর আগে এরকম গোয়েন্দা চরিত্র দেখা যায়নি। যাঁকে দেখলে মনে হয় না গোয়েন্দা। পাশের বাড়ির কেউ একজন মনে হয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে খুবই বুদ্ধিমান এবং স্মার্ট। হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে রহস্যের সমাধান করে ফেলেন একেন বাবু। তাই হয়তো এতটা জনপ্রিয়।
প্রশ্ন: একেন বাবু সিরিয়াস সময়েও হাসাচ্ছেন। সর্বদা কিছু না কিছু মজার বিষয় ঘটিয়ে চলেছেন। অনির্বাণ চক্রবর্তীও কি বাস্তবে এমন হাসি-খুশি থাকতে ভালোবাসেন? আর হাসাতে ভালবাসেন?
উত্তর: আমি একেবারেই হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসি। আমার চারপাশটা যদি চিন্তা মুক্ত হয় আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমি একেবারেই একেন বাবুর মতো নই।
প্রশ্নঃ পরপর দু'বছর নববর্ষে একেনবাবু। মানুষের এত ভালোবাসা, এত পাশে থাকার বার্তা পেয়ে কী মনে হচ্ছে? পরের নববর্ষেও আরেকবার দর্শকদের জন্য একেনবাবুকে নিয়ে আসবেন?
উত্তর: [অট্টহাসি হেসে] এটা সিদ্ধান্ত তো আমি নিতে পারি না। প্রযোজনা সংস্থা ঠিক করে। তবে এটা ঠিক, পরপর দু'বছর নববর্ষে একেন বাবু এসেছে। এবছর দর্শক কতটা পছন্দ করেন, তার ওপর খানিকটা নির্ভর করবে পরের ছবি কবে আবার হবে! ট্রেলারের প্রসঙ্গ তুলতেই, বেশ খুশি খুশি গলায় বললেন, ' হ্যাঁ, ট্রেলার দেখে অনেক সাড়া পেয়েছি। অগ্রিম বুকিংও অনেক জায়গায় হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু হল তো একেবারে হাউসফুল। এবারও আশা রাখছি দর্শক ভালোবাসা দেবেন। '
প্রশ্নঃ একেবারে শেষ প্রশ্ন, নিশ্চই আপনার কাছে সর্বভারতীয় স্তরের একাধিক অফার রয়েছে। সেরকম কোনও অফার এলে টলি জগত ছেড়ে কী সেখানে পাড়ি দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
উত্তর: না না। আমার কোনও কিছু নিয়েই খুব একটা পরিকল্পনা নেই। আমি এখানে যে কাজ করছি তা নিয়েও যে খুব পরিকল্পনা করি তা নয়। হিন্দিতে কিছু কাজ শেষ করেছি। সময়ের অভাবে কিছু করতে পারিনি। আগের থেকে অন্য কোথাও হয়তো কাজের কথা স্থির হয়েছিল সে কারণে কিছু কাজ করতে পারিনি। তবে অফার এলে অবশ্যই করবো। কিন্তু নিজের কাছে নিজে এমন কোন 'দিব্যি' দিয়ে রাখিনি যে করতেই হবে।